সাহিত্যিকা

ভালোবাসা

ভালোবাসা
@তাপস বিশ্বাস, ১৯৭৬ সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং

মানুষের জীবনে বিভিন্ন পর্বে কবিতা আসে, কখনো মূর্তিময়ী প্রেমিকার রূপ ধরে আবার কখনো বা নিষ্কলুষ বা প্লেটোনিক ভালোবাসার ছোঁয়ায় । সময়ের সাথে সাথে সে কবিতা পালটে যায়, কবিতা থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে – কিন্ত এবার!!
কবিতা

প্রথম যেদিন তাকে দেখলাম
ভোরের ওই কুসুম আলোয় সদ্য কিশোরী সে।
দীঘল চোখের তারায় জ্বলে ওঠা হঠাৎ আলোর ঝিকিমিকি,
দুই কাঁধ বেয়ে নেমেছে উছল কেশপ্রপাত,
জগতের যত বিস্ময় ঘিরে আছে তাকে,
তার চোখের তারার ঝিলিকে।

যখন সে চলে যায় আকাশের সীমানা ছাড়িয়ে
চোখের তারায় যেন বর্ষার মেঘ ছায়া ফেলে,
সে হাসলেই টাটকা শিউলি ঝরে পড়ে,
ভালো না বেসে কি পারা যায়, বাসলাম তাকে –
লিখলাম একের পর এক চিঠি – প্রেমপত্র।
সাহস হোল না দিতে, যদি লজ্জা পায়
তার শতগুন লজ্জা বিঁধবে আমায়।
লিখলাম, ছিঁড়লাম কতবার,
তবু তো হোল না কোন পিয়নের যাওয়া আসা।

এরপর যৌবন এলো, সদ্য যৌবনা এক নারী।
মাতাল করা সুগন্ধ ছড়াল বাতাসে।
মনে হয় দেখি শুধু দূর থেকে দেখি –
যৌবনের এত রঙ! চোখে ধাঁধা লেগে যায়।
মনে হয় চলে যাই দূরে আরও দূরে
কাছে থাক স্তাবকের দল।
দূর থেকে ভালবেসে আবার লিখব চিঠি,
নিশ্চয়ই সরাবে সে অচেনার ভিড় কৈশোরের চেনা হাত ধরে।
ঠিকই পৌঁছে যাব সদ্য-যৌবনার কাছাকাছি।

কোন এক বর্ষার দিনে, কোন এক চৈত্র দুপুরে
পাশাপাশি বসব লাল শিমূলের তলায়,
টুপটাপ্ ঝরবে বৃন্ত থেকে সদ্য খসে যাওয়া শিমূলের ফুল,
কথার মালা গাঁথা হবে,
চলে যাব স্থান কাল সময়ের বাধা পেরিয়ে স্বপ্নের অনন্ত আলোকে।

সে চিঠি হয়নি দেওয়া,
জীবন তখন আমাকে ফেরাতে চায় বাস্তবে।
বলে – পায়ের তলার মাটি আগে শক্ত কর,
প্রেম ট্রেম পরে হবে, সময় তো পড়ে আছে।

তারপর-
নিজেকে কিছুটা সবে গুছিয়ে নিয়েছি,
ফিরলাম ফেলে আসা কৈশোর আর
যৌবনের পথ ধরে।
সে তখন দেখি –
হাস্যে লাস্যে ঠারে ঠোরে অচেনা রহস্যময়ী এক,
কাছে যেতে ভয় হয়, হৃদস্পন্দন বেড়ে ওঠে।
তবুও কি প্রেম নিষ্কৃতি দেয় –
অজানার টানে হোক সে আগুন, ছুটে যেতে চায়।

যাইনি যে একেবারে সেটা সত্যি নয়,
পাইনি যে একেবারে সেটাও সত্যি নয়।
অনেক বাগান ঘুরে কবিতা আজ শান্ত স্নিগ্ধ ধীময়ী।
কাছে গেলে আগুনের হল্কার বদলে
এক নরম আলো
আর পূজার ফুলের সুগন্ধ ঘিরে ধরে।

এক বুক শ্বাস নিয়ে আবার তাকে
ভালবাসতে মন চায় –
কবিতাকে, আমার কবিতাকে।
আজ তাকে পাশে এসে বসতে বলি,
তার হাতে হাত রেখে বসি,
কোনদিন শান বাঁধানো পদ্মদীঘির ঘাটে
কোনদিন নীল সমুদ্রের নির্জন বালুকাবেলায়,
কোনদিন কাঞ্চঞ্জঙ্ঘার কোলের আদরে,
আর ভয় নেই কবিতাকে হারাবার।

সে কথা দিয়েছে –
আমাকে ছেড়ে যাবে না কোথ্থাও , কোন দিনও।

*******

Sahityika Admin

1 comment

Leave a Reply to অজয় কুমার বসাক Cancel reply