সাহিত্যিকা

আমি, সেই আমি

আমি, সেই আমি
@প্রবীর কুমার সেনগুপ্ত, ১৯৬৯ ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং

সুন্দর আমি কোন দিনই নই, নেইতো রূপের ঠাট –
বয়স হয়েছে, বলি রেখা মুখে, ভুলেছি সাজের পাট ।
হাত পা বিকল, সহজে না নড়ে, শক্তি যে অনেক কম,
হাঁটা চলা সাথে বড় বড় শ্বাস নিতে হয় হরদম।

কখন কী করি সব ভুলে যাই, “মগজ” নিয়েছে ছুটি,
কত শত কাজ পরে থাকে বাকি, বেকার এ হাত দুটি।
মাঝে মাঝে যেন ভুলেই গিয়েছি কখন কী প্রয়োজন।
সকালে বিকালে কত কিছু ভাবি, শুধু আনচান করে মন।

আয়নাতে আর দেখি না নিজেকে, সদা লাগে মনে ভয়,
চোখের সমুখে এই “আমি” যেন সেই “আমি” আর নয়।
ভগ্ন শরীরে ঝুঁকে পড়া দেহে দেখায় বয়স ভার,
চিনতে পারি না বড় ভুল হয় – এই অবয়ব কার?

আগে কত কিছু সহজে করেছি, এখন পারি না আর
শরীরের জ্বালা মনে জ্বালা দেয় সইতে পারি না ভার।
বেশ বুঝে যাই – কোনো কাজই আর পারিনা আগের মতন,
সকল প্রয়াস বিফলেই যায়, যতই করি না যতন।

পুরানো দিনের সেই “আমি” আজ গিয়েছে অনেক দূরে –
তবু ঠিক জানি – সেই “আমি”টাই রয়েছে অন্তঃপুরে
তোমরা ভুলেছো মনের ভিতরে এখনও পুরানো “আমি”
তোমরা দেখেছো বাইরেটা শুধু ভেবেছো অস্তগামী।

আমি খুব জানি পুরানো ‘আমার’ নেই আর অবশেষ,
তবু কেন জানি ফিরে পেতে চাই পুরানো “আমি”-র রেশ।
তোমরা দেখেছো বাইরের রূপ, ভেবেছো ভিতর ফাঁপা,
এখনও কত না স্বপ্ন-আগুন ছাই দিয়ে আছে চাপা।

এখনও ভেবেছি উত্তাল নদী সাঁতরিয়ে হব পার,
এখনও ভেবেছি পাহাড় চূড়ায় বহিব নিজের ভার।
কখনও ভেবেছি দুর্গম বনে সিংহের মুখোমুখি,
কখনও ভেবেছি আঁধার গুহায় একেলা সেথায় ঢুকি।

এখনও আমার হৃদয়ে রয়েছে অফুরান ভালোবাসা
এখনও আমার মন কেঁদে ওঠে যখন হারায় ভাষা।
এখন বয়স হয়েছে অনেক নিরিবিলি দিন কাটে,
সব কিছু তাই মেনে নিতে হয় দুনিয়া সমুখে হাটে।

শরীর আমার দুমড়ে মুচড়ে হয়ে গেছে কদাকার
তাই বলে আমি কখনও করিনি দুঃখ ও হাহাকার।
মনের গভীরে এখনও রয়েছে প্রেম ভালোবাসা বাকি,
এখনও দেখেছি কত অপরাধ ক্ষমা সুন্দর আঁখি।

পুরানো সে “আমি”, নুতন এ “আমি” নেই কোন ভুল তাতে,
দুই “আমি” তাই এগিয়ে চলেছে হাত রেখে দুই হাতে।
আমি তো চেয়েছি সকলের মাঝে এ ভাবেই বেঁচে থাকি –
মানুষের মত, মানুষের মাঝে, যতটা সময় বাকি।

১৬-০৬-২০২৫

*******

 

Sahityika Admin

1 comment

Leave a Reply to প্রদীপ কুমার বিশ্বাস Cancel reply

  • কবিতা আর ছবি মিলিয়ে ভালোই লাগলো।