সাহিত্যিকা

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

আজকের সে দুর্গা আর এ দুর্গা এক নয়, সে অভাগিনী একটি মেয়ে আর ইনি জগজ্জননী। শরৎকালে এনার আগমনের প্রতীক্ষায় আপামর বাঙালী, আর এই শরৎকালেই অভাগিনীর আত্মা ন্যায়বিচারের প্রতীক্ষায়। রাবণের সঙ্গে যুদ্ধের সময় শ্রীরামের অকালবোধনের কারনে কিনা জানা নেই। কাল কি আশ্চর্য শক্তিশালী, একটি ঘটনা একটি জাতির পুজোর আনন্দের মানসিকতাকেই বদলে দিলো।

অকালবোধনই হোক বা বাসন্তীপুজো, আমাদের দুর্গাপুজো দেবতার আরাধনার চেয়েও সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন হিসেবেই বেশী পরিচিত। মহালয়ায় স্তোত্রপাঠ, মন্ডপসজ্জা, আলোকসজ্জা, ঢাকের আওয়াজ, নতুন সাহিত্য পত্রিকা, নতুন জামাকাপড়, সপরিবারে মায়ের কৈলাশ থেকে আগমন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ধুনুচি নাচ, সারারাত ধরে ঠাকুর দেখা, সব মিলিয়ে আমাদের এ শুধু ঠাকুর পুজো নয়, সামগ্রিকভাবে একটি উৎসব। কিন্তু আজ কোথাও যেন একটা নিরানন্দের করুণ সুর বেজে উঠেছে। সত্যের পরাজয়ের আশঙ্কায় বিচারের বাণীর প্রতীক্ষায় একটি গোটা জাতি অপেক্ষমাণ।

দেবী দুর্গার পূজাকে কেন্দ্র করে এটি আজ পৃথিবীব্যাপী একটি মহোৎসব। পূজা সংস্কৃত শব্দের অর্থ প্রার্থনা বা উপাসনা। হিন্দুধর্মে, পূজার উদ্দেশ্য দেবতার প্রতি ভক্তির একটি আচার অনুষ্ঠান। এটি বিশুদ্ধতা, শান্তি এবং প্রশান্তির প্রয়াস, একটি পবিত্র উদ্দেশ্য যা শ্রদ্ধা ও সম্মানের সাথে সম্পাদিত হয়।

পুরাণে বলে চৈত্রমাসের শুক্লপক্ষের বাসন্তী পুজোই প্রকৃত দুর্গাপূজা। রাজ্য হারানো রাজা সূরথ সমাধি নামক এক বৈশ্যের সঙ্গে মিলে বসন্তকালে ঋষি মেধসের আশ্রমে দুর্গা মুর্তি গড়ে তার আরাধনা করেন, যা বাসন্তীপুজো নামে পরিচিত হয় এবং সেটাই চলতে থাকে যতদিন না রামচন্দ্র সীতা উদ্ধারের সময় শরৎকালে আশ্বিনমাসে দেবীর অকালবোধন করেন।

দুর্গার পূজা হয় আশ্বিন বা চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষে। মহালয়া বা পিতৃপক্ষের দিন থেকেই মূলত পূজার আনুষ্ঠানিক উৎসবের সূচনা হয়, যদিও এ দিনটির তাৎপর্য মূলত ভিন্ন। এই তিথিকে পিতৃপক্ষও বলা হয়ে থাকে। এই দিনে পিতৃপক্ষের শেষ এবং দেবীপক্ষের শুরু হয়। এই মহালয়া তিথিতে আমরা আমাদের পূর্বপুরুষের স্মরণ করি, পূর্বপুরুষের আত্মার শান্তি কামনা করে অঞ্জলি প্রদান করি। সনাতন ধর্ম অনুসারে এই দিনে প্রয়াত আত্মাদের মর্ত্যে স্মরণ করা হয়, প্রয়াত আত্মার যে সমাবেশ হয় তাকেই মহালয় বলা হয়। মহালয় থেকে মহালয়া। পিতৃপক্ষেরও শেষদিন এটি। মহালয়াতে যারা নদীতে অঞ্জলি প্রদান করেন পূর্বদের আত্মার শান্তির জন্য, তারা শুধু পূর্বদের নয়, পৃথিবীর সমগ্র শুভ ও শান্তির জন্যও প্রার্থনা ও অঞ্জলি প্রদান করেন। যাদের পুত্রকন্যা নেই , যাদের কেউ নেই আজ স্মরণ করার তাদের জন্যও অঞ্জলি প্রদান করতে হয়।

মহাভারতে একটি কাহিনী বর্ণীত আছে যে: দাতা কর্ণের মৃত্যুর পর তাঁর আত্মা স্বর্গে গমন করলে, তাকে স্বর্ণ ও রত্ন খাদ্য হিসেবে প্রদান করা হয়। কর্ণ ইন্দ্রকে এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে ইন্দ্র বলেন, কর্ণ সারা জীবন স্বর্ণই দান করেছেন, তিনি পিতৃগণের উদ্দেশ্যে কোনোদিন খাদ্য প্রদান করেননি। তাই স্বর্গে তাকে স্বর্ণই খাদ্য হিসেবে প্রদান করা হয়েছে। কর্ণ বলেন, তিনি যেহেতু তার পিতৃগণের সম্পর্কে অবহিত ছিলেন না, তাই তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে পিতৃগণকে স্বর্ণ প্রদান করেননি। এই কারণে কর্ণকে ষোলো দিনের জন্য মর্ত্যে গিয়ে পিতৃলোকের উদ্দেশ্যে অন্ন ও জল প্রদান করার অনুমতি দেওয়া হয়। এই পক্ষই পিতৃপক্ষ নামে পরিচিত হয়।এই কাহিনির কোনো কোনো পাঠান্তরে, ইন্দ্রের বদলে যমকে দেখা যায়। আমাদের শাস্ত্রে পিতৃপক্ষ ও দেবীপক্ষ নিয়ে এরকম অনেক কাহিনী প্রচলিত আছে।

আসুন, আজকের এই দিনগুলোতে আমরা সবাই এক হয়ে অশুভ শক্তির বিনাশের জন্য আদ্যাশক্তির আরাধনা করি। সাহিত্যিকার সম্পাদক, লেখক ও পাঠকদের সবাইকে জানাই শারদীয়ার শুভেচ্ছা। প্রার্থনা করি অশুভের বিনাশ হোক। সত্যের বিচার হোক। শুভ ও মনুষ্যত্বের জয় হোক।

– সাহিত্যিকা সম্পাদকমন্ডলী
– সরসিজ মজুমদার, ১৯৭১ সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং
– অসীম দেব, ১৯৭৭ ইলেকট্রনিক্স ও টেলিকম্যুনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং
– সোহম দাসগুপ্ত, ১৯৭৭ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং
– শ্রুতি গোস্বামী, ২০০৪ আর্কিটেকচার

This Artwork is made by Suman Kumar Dutta

Sahityika Admin

1 comment

Leave a Reply to Dhiman Chakraborty Cancel reply

  • অনবদ্য সম্পাদকীয়..
    এক্কেবারে অন্যরকম 🙏🙏❤️❤️