সাহিত্যিকা

ফিশ ওর্লি ও নারায়ন সান্যালের মেয়ের বিয়ে….

ফিশ ওর্লি ও নারায়ন সান্যালের মেয়ের বিয়ে….
সূত্র : পঞ্চাশোর্ধে – নারায়ণ সান্যাল (১৯৪৮, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং)

পঁচাত্তর সালের ফেব্রুয়ারি মাসের কথা। নারায়ণ সান্যালের বড় মেয়ের বিয়ে। অতিথি ভোজনের দায়িত্বে বিজলি ক্যাটারার। নিমন্ত্রিতদের তালিকায় বিভিন্ন গণ্যমান্যদের মধ্যে আছেন ভাষাচার্য সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায়। হঠাৎ খবর এল ভাষাচার্য একটু আগেই এসে পড়েছেন, তাঁকে এখনি একটা সেমিনারে যেতে হবে। তাঁকে ঘরে বসিয়ে নারায়ণ সান্যাল ছুটলেন ছাদে বিজলী গ্রিলের ম্যানেজারের কাছে।
“আমার একজন অতি বিশিষ্ট অতিথি এসে পড়েছেন। আপনার মেন আইটেম কয়েকটি একটা প্লেটে সাজিয়ে দিন।”
একটু পরেই ম্যানেজার ভদ্রলোক একটি থালায় আহার্য সাজিয়ে নিয়ে এলেন। খেতে খেতে হঠাৎ সুনীতিবাবু একটি ভোজ্যদ্রব্যের দিকে তর্জনী নির্দেশ করে বললেন “ওটা কী?”
বিজলী গ্রিলের ম্যানেজার হেসে বললেন “ওটা ফিশ ওর্লী, খেয়ে দেখুন, ভেটকি মাছের স্পেশ্যাল আইটেম।”

“ফিশের কী?”
“আজ্ঞে ওর্লী।”

সুনীতি বাবুর চর্বণকার্য বন্ধ হল। সোজা হয়ে বসলেন তিনি।
“ফিশের ওর্লী মানে কী? কোন দেশের খাবার ?”
“ভেটকি মাছের ফিশ ওর্লী স্যার! ইয়ে মানে ওর্লী।”
“বানান কী?”

স্যুট পরিহিত ম্যানেজার গলার টাইটা আলগা করে দিয়ে আমতা আমতা করে বললেন “ও আর লয়ে রেফ দীর্ঘ ঈ।”
সুনীতিবাবু গম্ভীরভাবে বললেন “আমি রোমান বানানটা জানতে চাইছি।”
ম্যানেজার এবার আত্মসমর্পণ করে বললেন “ঠিক জানিনা। শুনেছি জার্মান, না জার্মান নয় ; ফ্রেঞ্চ বোধহয়।”
সুনীতিবাবু হাত গুটিয়ে নিলেন। বললেন “উঁহু, জার্মান ভাষায় ভাজাকে বলে Gebacken, অথবা Gebraten। ফরাসি ভাষায় ভাজা মাছ হচ্ছে Frit Poissons। ওর্লী তো জার্মান বা ফরাসি খাদ্য তালিকায় নেই। স্প্যানিশ ভাষায় ভাজা মাছ হচ্ছে Frito Pescado, ইতালিয়নে বলে Fritte Pesce। ওর্লী এল কোথা থেকে?”

মাথায় উঠল খাওয়া। বোঝা গেল ওর্লীর ব্যুৎপত্তি জানা না গেলে অচলাবস্থা কাটবে না। নারায়ণবাবু অসহায় ভাবে দাঁড়িয়ে। হঠাৎই তাঁর মেজদা বললেন “আজ্ঞে, আপাতত এল রান্নাঘর থেকে। স্রেফ মাছ ভাজা বলেই ধরে নিন না। ব্যুৎপত্তিগত না হোক উৎপত্তিগত হদিসটা তো পেলেন।”

হেসে উঠলেন সুনীতি বাবু। “তাই বলুন মাছ ভাজা, ওর্লী নয়। তাহলে উল্টে খাওয়া যেতে পারে। ওর্লীর এপিঠ ওপিঠ কিছুই জানিনা কিন্তু ভাজা মাছ উল্টে খেতে জানি।”

পরে বিজলী গ্রিলের ম্যানেজার নারায়ণবাবুকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন “উনি কে স্যার?”
“আমাদের জাতীয় অধ্যাপক সুনীতি বাবু, ভাষাবিদ।”
ম্যানেজার জিজ্ঞেস করলেন “আর কজন ভাষাবিদ আপনার অতিথি তালিকায় আছেন?”
নারায়ণবাবু বললেন “আর কেউ নেই। আপনি নির্ভয়ে ফিশ ওলী চালাতে পারেন।”
ভদ্রলোক হেসে বললেন “নাঃ, আর ভয়ের কী আছে ? ব্যুৎপত্তিগত না হোক উৎপত্তি তো জানা গেছে – রান্নাঘর।”

 

 

Sahityika Admin

1 comment

Leave a Reply to ভাস্কর দত্ত চৌধুরী Cancel reply

  • নারায়ণ সান্যালের এই গল্পটি আগেও পড়েছি, তবে উনি যে বি ই কলেজের প্রাক্তনী সে জানা ছিল না। সফল ইঞ্জিনিয়ার, সফল ঔপন্যাসিক।
    বাদল সরকারও তাই।