সাহিত্যিকা

আমার কয়েকটি কবিতা

আমার কয়েকটি কবিতা
সোহম দাশগুপ্ত, ১৯৭৭ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং
পুণ্যবান
বিয়ে বাড়ি যাবে বলে রাধুনী আমার
ছুটি নিল, সেই থেকে টিকি নেই তার।
গিন্নী বলেন ওগো এইতো সুযোগ,
কতকাল খাইনি যে হোটেলের ভোগ।
এই কটা দিন দিয়ে হেঁশেলে তালা,
মোগলাই চাইনিজে সারি দুইবেলা।
বাজারের ঝামেলাও কমবে তোমারি,
এক ফোনে এসে যাবে হোম ডেলিভারি।
সোহাগিনী গিন্নীর বায়না শুনে,
কুল কুল ঘামি আমি ভরা ফাগুনে।
একেই ইনফ্লেশন, জ্বলছে বাজার,
মানিব্যাগখানি হায় কঙ্কালসার।
তার উপর গিন্নীর শখ বলিহারী,
দেবা ন জানন্তি- এরই নাম নারী!
মিনমিন করে বলি, খোকনের মা,
গতমাসে ডাক্তার বলেছেন না-
কোলেষ্টেরলটা বেড়েছে আবার,
অ্যাভয়েড করবেন তেলের খাবার।
ওজনটা কমে যদি আরও কেজি বারো,
উপসম হতে পারে হাঁটুর ব্যথারও।
তাই বলি, এক ঢিলে দুই পাখী মারি
বহুকাল মনে মনে বাসনা আমারই-
কতোবার স্বপ্নেতে দেখেছি গো রাতে
হেঁশেলে রাঁধছি আমি তোমায় খাওয়াতে।
পাত পেড়ে তুমি খাও, পাখা নাড়ি আমি,
এতোদিনে শুনেছেন অন্তর্যামী!
বলি খোকনের মা, মোর প্রাণাধিকে,
বঞ্চিত ক’রনাগো এ পুণ্য থেকে।
******
যুদ্ধ নয় শান্তি চাই (A Soldier’s Kiss)
যুদ্ধের আসল চেহারাটা না দেখলেও এই দৃশ্যগুলোর থেকে তার ভয়াবহতা আন্দাজ করা যায়। অসীমের যুদ্ধের থীমে একটা টেনিসনের পুরোনো কবিতার (Home They Brought Her Warrior Dead, Alfred Lord Tennyson) অনুবাদ মনে পড়ে গেল।
অনুবাদ- সোহম দাশগুপ্ত
Photo of a young man in a soldier uniform, came home after a long absence and meeting his son and wife at the door

 

She nor swooned, nor uttered cry:
All her maidens, watching, said,
‘She must weep or she will die.’
Then they praised him, soft and low,
Called him worthy to be loved,
Truest friend and noblest foe;
Yet she neither spoke nor moved.
Stole a maiden from her place,
Lightly to the warrior stepped,
Took the face-cloth from the face;
Yet she neither moved nor wept.
Rose a nurse of ninety years,
Set his child upon her knee—
Like summer tempest came her tears—
‘Sweet my child, I live for thee.’
তার যোদ্ধার নিষ্প্রান দেহ ওরা নিয়ে এলো ঘরে;
মূর্ছা গেলনা সে, কেঁদেও দিলনা সাড়া,
সঙ্গিনী ছিল যারা, সবাই উতলা স্বরে-
বলে, “কাঁদতেই হবে ওকে, নয় শোকেই যাবে ও মারা।”
তারপর নীচু স্বরে তারা প্রয়াতের নানা প্রশস্তি করে,
বলে, মানুষটা বড় প্রিয় ছিল সকলেরই,
বন্ধুও ছিল খাঁটি মতে বা মতান্তরে ;
তবু, রইলো সে নির্বাক, নিথর মুরতি ধরি।
মৃদু পায়ে ভিড় ঠেলে, তারই এক সঙ্গিনী
নীরবে দাঁড়ালো এসে যোদ্ধার দেহপাশে,
সন্তর্পনে সরালো চাদর, খুলে দিল মুখখানি;
তবুও পাষানী নিথর, আজ কান্না ভুলেছে সে।
অবশেষে এক নব্বই পার ধাইমা এগিয়ে গিয়ে
শিশুটিকে তার নিয়ে, দিতেই মায়ের কোলে,
কালবৈশাখী ধারা নামলো দুচোখ বেয়ে-
“বাঁচি আজ তোরই তরে, ওরে আমার প্রাণের ছেলে।”
******
কারণে অকারণে পুরোনো কথা মনে পড়ে যাওয়াটা বুড়ো বয়েসের একটা স্পষ্ট উপসর্গ। আজও তার ব্যাতিক্রম হলোনা। দুপুরে সোফায় একটু লম্বা হয়ে অসীমের “হিমাই” সিরিজের লেখাটার কথা ভাবছিলাম। কেন জানিনা, বিষয়টা বড্ড মনে ধরেছে! হঠাতই একটা পুরোনো কবিতা মনে পড়ে গেলো
তখনো জানিনা কেনইবা আমি ছেলে,
আর মেয়েরাই কেন মেয়ে?
বারণও করেনি কেউ-
কবিতার সাথে ঘর-বাড়ি খেলতে।
দুজনার সংসার, এবেলা পেতেছি-
ওবেলা ভেঙেছি; জানিওনা কতোবার-
হারিয়েছি অনায়াসে,
নীরব দুপুরে চিলেকোঠা ঘরে,
অতসী স্বপ্নে ভেসে।
খেলার ছলেই একদিন এলো সে যে,
রাঙা শাড়ি পরে ভোরের আকাশ সেজে।
শুধালো আমায়, বড় হবি তুই কবে?
এবার যে তোকে আকাশকে ছুঁতে হবে।
দু-হাত বাড়িয়ে যেই না ছুঁয়েছি তাকে,
সে বললো- ছিঃ, একি?
হাতদিয়ে কেউ আকাশকে ছোঁয় নাকি!
রং-তুলি নিয়ে বুলিয়ে আমার পিঠে-
এঁকে দিল দুটো ডানা,
আর আমিও হ’লাম পাখী!
******
গাঁঠবুড়ো
রোদে বসে হাঁড়িমুখো এক বুড়োহাবড়া,
রোজ লেখে কাঁড়িকাঁড়ি অ্যাব্রাক্যাডাব্রা।
মাঝে মাঝে লেখা ফেলে, পঞ্জিকা হাতড়ে
আচমকা ক্ষেপে ওঠে, কিলিবিলি গাত্রে।
তখনই সে পায় যাকে পশ্চাতে-অগ্রে,
খপ করে ধরে বলে, “আয় দিই রগড়ে!
কিলোদরে পুঁথি-নথি জাল দিয়ে হাঁড়িতে
বৈয়মে রেখেছি ভরে থরে-থরে বাড়িতে।
দুনিয়াতে আছে যত বোকা-গাধা-মুখ্যু
ধরে ধরে ব্যাটাদের ঘোচাবোই দুখুঃ।
শিকে ছিঁড়ে পড়েছি রে আজ তোর ভাগ্যে,
আয় বসি খাতা খুলে, ভণিতাটা থাক’গে।
গবেষণা, টবেষণা করিসনি জন্মে?
হাঁপাস না, জল খা, দু’ ছিলিম দম নে।
তারপরে কান খুলে শোন তোকে বলি যা,
মগজেতে হাজা তোর, ঘুণ ধরা কলিজা।
তুই ব্যাটা বোকাগাধা হবে আগে মানতে,
তারপরে শুধাসগে’ চাস যেটা জানতে?
কোন টাকে টাকা হয়, কোন টাক মন্দ,
চালুনির পিছনেতে কতগুলি রন্ধ্র?
কোন চাল ভাতে বাড়ে, কিসে হয় পান্থা,
কোন তালে লেখা হয় মন্দা-ক্রান্তা?
ব্ল্যাক টাকা সাদা হয় কি সাবানে কাচলে,
যাত্রাটা শুভ হয় কোন সুরে হাঁচলে
কতো কিলো ঘী খেলে ঘিলু হয় চাঙ্গা,
কতো পেগে ফুরফুরে, কত পেগে নাঙ্গা?
টনে টনে নিউটন, গ্রামে গ্রামে গ্রামসী,
পড়ে পড়ে হয়ে যাবি আম থেকে আমসি।
এখানেই শেষ নয় চানক্য, চার্চিল;
সিলেবাসে আরো আছে- সিয়াচীন, কারগিল।
কানে কানে সব তোকে ফোকোটেই বলবো,
কান খাড়া করে থাক, মাঝে মাঝে মুলবো।
কি বললি? চাসনা’কো, এতশত জানতে,
মুখপোড়া, বাড়ি যা’না, ফের ঘানি টানতে!
নাকে তেল দিয়ে শুয়ে থাক দিবা রাত্র,
তকা নয় কারো কাছে দমবার পাত্র!
******

Sahityika Admin

Add comment