সাহিত্যিকা

ক্যানভাস

ক্যানভাস
রামু দত্ত, ১৯৭৯ ইলেকট্রনিকস ও টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং

নীল ক্যানভাসে নানা রঙের তুলিতে
ফুটে ওঠা এমন ভোরবেলা
দেখা হয়নি বহুদিন, বহুবছর।

আজ ধোঁয়া-কুয়াশা-মেঘ
কেউ আসেনি করতে আড়াল
ধূসর বা কালো পর্দা টাঙিয়ে।
আমার শহুরে চোখের সামনে
নিঃশব্দে নীরবে জন্ম নিচ্ছে দিন।

ধীরে ধীরে এ দিন আকাশে শিশুর মতো
পা ফেলে , পা ফেলে ধরার মাটিতে।

থাক না কিছুক্ষণ এভাবে থমকে দাঁড়িয়ে।

পূর্ণতা পাক ঢের ঢের দেরিতে।
ঘাসের ডগায় শিশিরবিন্দু
জ্বলে থাক আরো কিছুক্ষণ
হোক না দেরি ফড়িং আর প্রজাপতির
মিঠে রোদ মাখার হুড়োহুড়ি।

আজকের এই মিষ্টি সকাল
তোমায় দিলেম উপহার।

********

পূবে উদীয়মান নবসূর্যকে চাক্ষুষ করার জন্য
ভীড় পাহাড়ে পাহাড়ে, সাগরতীরে।
নিদেন পক্ষে বিশাল ধানখেতের ধারে বা
নির্জন ছোটো ইষ্টিশানে।
সবাই তাকিয়ে দিকচক্রবালের পানে।
প্রতীক্ষা শক্তিমান তরুণ দিবাকরের।

নদী বা সরোবরে শরীর ডুবিয়ে প্রণাম
‘জবাকুসুম সঙ্কাশং কাশ্যপেয়ং ..’।

কবিরা বসে যান কালি কলম নিয়ে
সদ্যজাত দিনকে বরণ করতে।
মানস চক্ষে দেখেন –
সূর্যের আলো কেমন ভাবে হাসালো শিশিরবিন্দু,
বাগানের রঙিন ফুল,
আর ঘাসেরডগায় ডানা মেলে বসে থাকা ফড়িং।

গোধূলিতে পশ্চিমে সূর্য অস্ত যায় একাকী।
দিন শেষ, কাজও শেষ।
কোথায় বিদায় জানানোর ঘটা?
রেস্তোরাঁ নাচঘরে জ্বলে ওঠে স্ফূর্তিবাতি
সব আনন্দই ছিলো সূর্যাস্তের প্রতীক্ষায়।

নটে গাছটি মুড়িয়ে একাকীত্বের গহ্বরে প্রবেশ

********

প্লাস্টার খসা চিলেকোঠায় বাজে প্রেমের সুর
উত্তাল এক, অন্যজন নিস্তরঙ্গ শান্ত।
তখন ধরায় শঙ্খচিল ডাকা বিষণ্ণ দুপুর
সব প্রেমিকের কথা তখন প্রেমিকা যদি মানত।

সে নিঝুম দুপুরের কেউ লেখেনি রূপকথা
মেঘ ছিল, আকাশে ওড়েনি পক্ষীরাজ।
বন্য হয়নি নেহাতই তখনও সাদামাটা এক গাথা
নায়ক নায়িকা কেউ‌‌ ছিল না ছিল না ফন্দিবাজ।

বিধির লিপিতে ছিল অন্য কিছু লেখা
ছিল কামনা, তবু হৃদয়ে বিস্তর দ্বন্দ্ব।
ইচ্ছে বিধির সংলাপ হোক একা একা,
চিলেকোঠার ঘ্রাণে শুদ্ধ প্রেমের গন্ধ।

অবসর মেঘ খোঁজে আজ সেই ঘর
যেন পাকুরগাছে দোলে ছিন্ন ঘুড়ি,
ঝাপসা চোখে নামলো এসে দামোদর
অশ্রুজলে বালিশ ভেজায় একাকী এক বুড়ি।

********

হেড আপিসের বড়ো বাবু, লোকটি সদাই ব্যস্ত
দুনিয়ার সব কাজ যেন তাঁর ঘাড়েতেই ন্যস্ত।

সাত সকালেই এসে আপিস চোখ কপালে ওঠে
শতেক মেসেজ ইন বক্সে, চা খাওয়া তাঁর লাটে।

ঘর সংসার গেছেন ভুলে কাজেই আছেন ডুবে
ভাবেন হাড়ভাঙ্গা খাটলে পরে ফুরাবে কাজ তবে।

এ আপিসের লোকগুলো সব ধুর্ত ফাঁকিবাজ
দেখি কাজের নামে অষ্টরম্ভা কুঁড়ের মহারাজ।

হিসেব দপ্তরে আছে এক নাম নিত্যানন্দ
মুখে সদাই হাসির ছোঁয়া। কাজ? শুধুই কাব্য ছন্দ।

এক সকালে ডাকেন তারে ‘বলি রহস্যটা কি –
হাসি খুশি সদাই দেখি মারছো নাকি ফাঁকি?’

মুচকি হেসে বলে নিতাই কি যে বলেন স্যার?
আপনি হলেন মহাপুরুষ আমরা কোন ছাড়?

মনে না নেন যদি একটা কথা বলি
চিরবিদায়ের আগেও ‘ইনবক্স’ হয় না খালি।

বেশি কাজ করলে তবেই ওপরের পদ পাকা
তখন আরো আসবে যে দায় টেবিল রয় না ফাঁকা।

এরই মাঝে সময় করে সংসারে দিই সময়
ওরাই দেয় সুখ শান্তি, জীবন মধুময়।

মনে গাঁথা কবির কথা, ভয় করি না আর
‘ওরে ভীরু, তোমার হাতে নাই এই ভুবনের ভার।’

*******

Sahityika Admin

Add comment