সাহিত্যিকা

অবসরের ছড়া – সুদীপ রায়

অবসরের ছড়া
সুদীপ রায়, ১৯৭০ সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং

বিশ্ববাসী ‘বৃদ্ধ’ বলুক, আমরা মানি তা কি ?
কী যে বলে ? পঁচাত্তরটা বয়েস হল নাকি ?
হতেই পারি আমরা এখন একটু তো নড়বড়ে,
কেউ ভুগছি ব্লাডপ্রেসারে,কেউ বা হাই সুগারে।
কারো বা বাত, কেউ বা আবার হাঁটুর ব্যথায় কাৎ,
অনিদ্রা তে কেউ বা কাহিল ,জাগরণেরই রাত।
বেশির ভাগই পক্ককেশী কিংবা বিশাল টাক,
জোর কমেছে অনেক কিছুর সেসব কথা থাক।
তবুও আমরা বীরপুঙ্গব, চেঁচিয়ে আমরা বলি,
‘বয়েস টা তো সংখ্যা মাত্র’, বুক চিতিয়ে চলি।
কেউ বা আবার খুব রেগে যাই বললে ‘বুড়ো’, ‘বুড়ি’,
বলি ‘শালা জানিস আমার মনের বয়েস কুড়ি ?’
এসব কথা সত্যি হলেও, নেই কোনো তার ভার,
বাইরে থেকে শুনতে লাগে অক্ষম চিৎকার ।
আর কিছু নয়, এসব বলে, আত্মপ্রসাদ পাই, কমবয়সী … তাদের চোখে এসবের দাম নাই।
মজার ব্যাপার, কেউ বলি না ‘ইয়েস আই এম বুড়ো,
এন্ড আই এম প্রাউড টু সে দ্যাট, হান্ড্রেড পার্সেন্ট পুরো।’
দিক বা না দিক ব্যাংক লোন বা ক্রেডিট কার্ডের থালা,
যেটুক আছে, সাফিসিয়েন্ট,উই ডোন্ট কেয়ার .. শালা।
বিশ্ববাসী একটা কথা জেনেই রাখো সোজা,
আমরা কারো ধার ধারি না, নইকো কারো বোঝা।
শিশু, বালক, কিশোর, তরুণ ,যুবক, প্রৌঢ়, বুড়ো,
এই নিয়ে তো জীবনখানা, লাইফ সাইকেল পুরো।
আমরা তারই অঙ্গ, তোমরা নাম দিয়েছ ‘বুড়ো’,
বেশ করেছ, আমরা হলাম পিরামিডের চুড়ো।
এজেড ? হলেও, সঙ্গে আছে অভিজ্ঞতার ঝুলি,
বলতে পারি, আমরা সবাই এজিং গ্রেসফুলী।

আমাদের কথা
সুদীপ রায়, ১৯৭০ সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং

অবশেষে ষাট পেরিয়ে রিটারমেন্টের পরে,
অফিস তো নেই. পরোয়া সেসব কেনই বা সে করে ?
এখন শুধুই ছুটির মেজাজ রবিবারের ধাঁচে,
সবকটা দিন কাটিয়ে দিয়ে মনখানা তার নাচে।

ইচ্ছেমতো দেরি করে বিছনা ছেড়ে ওঠা,
এখন তো নেই বাজলে ন’টা অফিস পানে ছোটা।
নেইতো তার আর সকাল সকাল বাজার যাওয়ার তাড়া,
এখন শুধুই অলস বসে লেজখানিকে নাড়া।

দুপুর বেলা তারিয়ে কষে খানাপিনার ধুম,
খাবার পরেই ঢেকুর তুলে লম্বা সে ভাতঘুম।
ফেসবুকেতে লাইক মারা আর হোয়াটসঅ্যাপে চ্যাট,
এই হল তার দিন যাপনের রোজকার ফরম্যাট।

মাঝেসাঝে বউয়ের সাথে সাউথ সিটির মলে,
শপিং করে, ফিল্ম দেখে দিন কাটে ঝলমলে।
বিকেল বেলায় চপ, সামোসা কখন বা মোগলাই,
দেখলে এসব, মনটা যে তার উৎসাহে খাই খাই।

ঘড়িতে যেই আটটা বাজে, ছোটে টিভির কাছে,
ঘন্টা খানেক সঙ্গে সুমন শেষ হয়ে যায় পাছে।
কখন সখন সন্ধ্যেবেলায় বুজুম ফ্রেন্ডের বাড়ি,
দু একটি পেগ মাল চড়িয়ে সুখের আলাপচারী।

মাঝে মাঝে কোলকাতাতে হলে ভীষণ বোর,
ছেলে মেয়ের কাছে ছোটে বম্বে, ব্যাঙ্গালোর।
এসব নিয়ে ভালোই আছে, সুখেই আছে সে,
সুস্থ তাকে রেখো তুমি হে ভগবান হে।

Sahityika Admin

3 comments

  • তুমি তো সব সময়েই অনবদ্য

  • ছোট একটি ভুল ঠিক করে নেবার অনুরোধ রইলো। সুদীপ রায় ১৯৭০ মেকানিকাল , সিভিল নয় ।১৯৬৫-৭০ ,ওর রোল নম্বর ছিল আমার ঠিক পরে । আমি ও ১৯৭০ এর মেকানিকাল।
    এই পত্রিকার সব কিছুই আমাকে আনন্দ দেয় , আর এর মাধ্যমে মনের বয়স কমিয়ে আনার চেষ্টা করি । সম্পাদক মন্ডলী কে অনেক ধন্যবাদ ও শুভকামনা জানালাম।