সাহিত্যিকা

কুমাউনের উজ্জ্বল তারা মুন্সিয়ারী

কুমাউনের উজ্জ্বল তারা মুন্সিয়ারী
©বিজিত কুমার রায়, ১৯৭৪, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং

বছর চারেক আগে এপ্রিল মাসে বেরিয়েছিলাম কুমাউন ভ্রমণে। একটি ২৫-২৬ জনের দল। আলমোড়া, কৌশানী, পাতাল ভুবনেশ্বরইত্যাদি হয়ে পৌঁছেছিলাম মুন্সিয়ারী। রাস্তাতে জ্যাম থাকতে বিকেলের বদলে সন্ধ্যা আটটাতে মিলাম ইন নামে এক হোটেলে উঠি। ওয়েদার বেশ খারাপ। তাপমান রাতে ২ ডিগ্রি। কোনরকমে গরম রুটি আর চিকেন কষা খেয়ে কম্বলের তলায়। ম্যানেজার বলে দিলেন সকালে পাঁচটার মধ্যে উঠে পড়তে।

সকালে উঠে পড়ে গরম জলে মুখ ধুয়ে বাইরে উঁকি মারলাম। সামনে আকাশে আবছা কিছু পাহাড়। গতরাতে বৃষ্টিতে মেঘ একেবারে নেই। দেখি অন্য ঘর থেকেও সবাই উঁকি মারছেন। তারপর ধীরে ধীরে অরুনোদয় হলো। পাঁচটি শৃঙ্গ কিছুটা পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। সব কম্বল জড়িয়ে তখন সামনের টেরেসে।

ধীরে ধীরে উনি দেখা দিলেন। সে যে কি অপূর্ব দৃশ্য তা বলে বা আমার মোবাইল ক্যামেরাতে তোলা ছবিতে বোঝানো যাবে না। পাঁচটি শৃঙ্গ ঝলমল করে উঠছে। দ্রৌপদীর পঞ্চপতির রান্নার পাঁচটি উনুনও।

হইহই করে সবাই ছবি তুললাম। এর মাঝেই আমাদের ট্রাভেল ক্যান্টিন থেকে গরম চা আর বিস্কুট দিয়ে গেলো। এতো সুন্দর দৃশ্য দেখে মনে ভরে গেলো। তখনও জানিনা এরপরে কী। শুধু ম্যানেজার বললেন সারাদিন ওই পাহাড় দেখতে থাকবেন। ঘন্টাতে ঘন্টাতে সৌন্দর্য্য পাল্টে যাবে।

স্নান করে মোগলাই পরোটার ব্রেকফাস্ট খেয়ে বেরোলাম। অল্প দূরেই নন্দাদেবী মন্দির। ঢোকার গেট দেখে মনে একেবারেই আনন্দ হলো না। কিন্তু ওপরে উঠে সবুজ বুগিয়াল মানে মাঠ আর ঝকঝকে পাহাড়ের ব্যাকগ্রাউন্ড এ সুন্দরী মন্দির। অবসার্ভেশন টাওয়ারে দারুন দৃশ্য। বহুদূরে পাহাড়ের শ্রেণী আর নীচে ঝকঝকে ক্ষেতের দৃশ্য। আর ফেরার সময় বিশেষ ধরনের উলের নানা সরঞ্জাম ও স্পাইসের সম্ভার দেখা আর কেনাও হলো।

ফিরে এসে আবার খোলা টেরেসে রোদে বসে জমিয়ে আড্ডা। দুপুরের খাওয়ার পর অল্প বিশ্রাম নিয়ে আবার ওই টেরেসে সূর্যাস্ত দেখার জন্য। কিন্তু পাহাড়ের নিয়ম মেনে মেঘে মুখ ঢাকতে লাগলেন সুন্দরী পঞ্চচুল্লী রেঞ্জ। প্রসঙ্গতঃ আমি ওখানে একটি দোকান থেকে পুরো রেঞ্জের ছবি প্রায় তিন ফুট চওড়া কপি নিয়ে এসেছিলাম। এখন আমার বসার ঘরে চোখের সামনে বাঁধানো দেখতে পাচ্ছি।

হঠাৎই যেন এক পলকে ঘোমটা সরে গেলো আর গেরুয়া লাল রঙে পাহাড় রাজি রঙিন হয়ে দেখা দিলো। বড়জোর দশ মিনিট ঝাঁকি দর্শন তারপর আবার মেঘে ঢেকে গেলো।

মুন্সিয়ারীর পঞ্চচুল্লী সুন্দরী দিনের সব সময়ে। আমি আমার অক্ষম হাতের কিছু ছবি সাথে দিচ্ছি। আর কতো সুন্দর বোঝাবার জন্য অন্যের পোস্ট করা ছবি সংগ্রহ করে দিলাম। তাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়ে।

আমাদের একটা স্মরণীয় দিন কাটলো আজকে সুন্দরীর সাথে।

18th June 2023

********

Sahityika Admin

Add comment