সম্পাদকীয়
প্রাচীনকাল থেকেই আমাদের সনাতন ভারতবর্ষে গুরু-শিষ্য পরম্পরা চলে আসছে। “গু” অর্থাৎ অন্ধকার থেকে “রু” অর্থাৎ আলোর দিকে যিনি আমাদের নিয়ে যান তিনিই গুরু। হিন্দু শাস্ত্র অনুসারে আষাঢ় মাসের পূর্ণিমা তিথিতে, গুরু পূর্নিমা’র দিনে আমরা আমাদের গুরুদের স্মরণ করি।
“গুরুর্ব্রহ্মা গুরুর্বিষ্ণু গুরুর্দেবো মহেশ্বর।
গুরুরেব পরং ব্রহ্ম তস্মৈ শ্রীগুরবে নমঃ।।“
অর্থাৎ, আমাদের যিনি ব্রহ্মজ্ঞান দান করেন, সেই পরম গুরু ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বরকে আমার প্রণাম জানাই। আমাদের দেশে একটা প্রবচন আছে,
“গুরু গোবিন্দ দুয়ো খাড়ে, কাকে লাগু পায় ।
বালিহারি গুরু আপনে যিন গোবিন্দ দিয়ো বতায়ে।“
অর্থাৎ, গুরু এবং ঈশ্বর দু’জনেই যদি আমার সামনে এসে দাঁড়ান, তাহলে আমি গুরুকেই আগে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করব। কারণ, তিনিই আমাকে ঈশ্বরকে চিনিয়েছেন।
৫-ই সেপ্টেম্বর আমাদের জাতীয় শিক্ষক দিবস। আমাদের জীবনে শিক্ষকদের অবদান আজ এই পূণ্যদিনে আমরা কৃতজ্ঞতা’র সঙ্গে স্মরণ করি।
– দীপক চক্রবর্তী, ১৯৭৬ সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং
বর্ষে বর্ষে দলে দলে আসে বিদ্যামঠতলে
চলে যায় তারা কলরবে,
কৈশোরের কিশলয় পর্ণে পরিণত হয়
যৌবনের শ্যামল গৌরবে।
ভালোবাসি, কাছে ডাকি নামও সব জেনে রাখি,
দেখাশোনা হয় নিতি নিতি,
শাসন তর্জন করি’ শিখাই প্রহর ধরি,
থাকে নাকো, হায়, কোনো স্মৃতি!
ক ‘দিনের এই দেখা সাগরসৈকতে রেখা
নূতন তরঙ্গে মুছে যায়।
ছোট ছোট দাগ পা’র ঘুচে হয় একাকার
নব নব পদ-তাড়নায়।
জানে না কে কোথা যাবে, জোটে হেথা, তাই ভাবে
পাঠশালা, -যেন পান্থশালা,
দুদিন একত্রে মাতে, মেলে মেশে, ব’সে গাঁথে
নীতি-হার আর কথা-মালা।
রাজপথে দেখা হলে কেহ যদি গুরু ব’লে
হাত তুলে করে নমস্কার,
বলি তবে হাসি মুখে ‘বেঁচে বর্তে থাকো সুখে ‘,
স্পর্শ করি’ কেশগুলি তার।
ভাবিতে ভাবিতে যাই কী নাম? মনে তো নাই,
ছাত্র ছিল কত দিন আগে;
স্মৃতিসূত্র ধরি’ টানি, কৈশোরের মুখখানি
দেখি মনে জাগে কি না জাগে।
ঘন ঘন আনাগোনা কতদিন দেখাশোনা,
তবু কেন মনে নাহি থাকে?
‘ব্যাক্তি’ ডুবে যায় ‘দলে’ মালিকা পরিলে গলে
প্রতি ফুলে কে-বা মনে রাখে?
এ জীবন ভেঙে গ’ড়ে শ্যামল সরস ক’রে
ছাত্রধারা ব’য়ে চলে যায়,
ফেনিলতা উচ্ছলতা হয়ে যায় তুচ্ছ কথা,
উত্তালতা সকলি মিলায়।
স্বচ্ছতায় শুধু হেরি আমার জীবন ঘেরি ‘
ভাসে শুধু ম্লান মুখগুলি;
ভুলে যাই হট্টগোল অট্টহাসি কলরোল,
ম্লান মুখ কখনো না ভুলি।
কেহ বা ক্ষুধায় ম্লান কেহ রোগে ম্রিয়মাণ,
শ্রমে কারো চাহনি করুণ,
কেহ-বা বেত্রের ডরে বন্দি হয়ে রয় ঘরে,
নেত্র কারো তন্দ্রায় অরুণ।
কেহ বাতায়ন-পাশে চেয়ে রয় নীলাকাশে
যেন বদ্ধ পিঞ্জরের পাখি,
আকাশে হেরিয়া ঘুড়ি মন তার যায় উড়ি,
মুখে কালো ছায়াখানি রাখি’
স্মরিয়া খেলার মাঠ কেউ ভুলে যায় পাঠ,
বুদ্ধিতে বা কারো না কুলায়,
কেহ স্মরে গেহকোণ, স্নেহময় ভাইবোন
ঘড়ি পানে ঘন ঘন চায়।
ডাকিছে উদার বায়ু লয়ে স্বাস্থ্য লয়ে আয়ু,
ডাক শোনে ব’সে রুদ্ধ ঘরে,
হাতে মসি মুখে মসি, মেঘে ঢাকা শিশু-শশী
প্রতিবিম্বে মোর স্মৃতি ভরে।
আর সবি গেছি ভুলি, ভুলিনি এ মুখগুলি,
একবার মুদিলে নয়ন
আঁখিপাতা ভারী- ভারী, ম্লান মুখ সারি সারি
আকুল করিয়া তোলে মন।
Photo Courtesy: Nawab Drongo
I cannot teach anybody anything;
I can only make them think.
– Socrates
Add comment