সাহিত্যিকা

গল্পের আসর

গল্পের আসর
ম্যাঞ্চেশ্বর ইউনাইটেড, ভ্যালেন্টাইন’স ডে, কেটো ডায়েট
@শান্তনু দে, ১৯৮৯ মেটালার্জিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং

ম্যাঞ্চেশ্বর ইউনাইটেড
আমি সুরজিত সেনগুপ্তর ফ্যান, আর এই লেখাটাই হোক সুরজিৎ সেনগুপ্তের স্মৃতির উদ্দেশ্যে আমার শ্রদ্ধাঞ্জলি।

শিয়ালদা স্টেশনের টিকিটঘরে গিয়ে বললাম, যে ট্রেনটা সবথেকে আগে ছাড়বে, তার একটা টিকিট দিন, আমি সাত, আটটা স্টেশন যাবো। আমার হাতে এডুয়ারডো গ্যালিয়ানোর সকার ইন সান অ্যান্ড শ্যাডো বইটার দিকে আড় চোখে তাকিয়ে টিকিটবাবু মুচকি হেসে বললেন, “চোদ্দ নম্বর প্ল্যাটফর্মে যান আর আপনি এগারো নম্বর স্টেশনে নামুন। ওঁনার কোলে, বহু পুরনো একটা স্পোর্টস ম্যাগাজিন দেখতে পেলাম…কাভার পেজে জোহান ক্রূয়েফের ছবি।

অথচ আমার আজকের দিনটা শুরু হয়েছিল অন্য কাজের দিনের মতই … ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে ইলেকট্রিক কেটলে চা বানিয়ে বারান্দায় গিয়ে দেখি আকাশ একদম মারকাটারি টাইপের সুন্দর নীল, ঠিক যেমন পাহাড়ে দেখা যায় পেঁজা পেঁজা তুলোর মত মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে। বাতাসে একটা হাল্কা পুজোপুজো গন্ধ। চোখ বন্ধ করে একটু কন্ট্রেন্সেট করলে ঢাকের ঢ্যাম কুর কুর দিব্বি শোনা যায়। উল্টো ফুটের চায়ের দোকানের সামনে, এক ভদ্রলোক ধবধবে দুধসাদা ধূতি পাঞ্জাবী পরে এক প্রকাণ্ড বাইকের উপর বসে বসে চা সিগারেট খাচ্ছেন। মেজাজে ধোঁয়া ছাড়ছেন। শালা, ভাবখানা এমন যেন দুনিয়ায় কোন ডেডলাইন নেই, ক্লায়েণ্ট নেই, মীটিং, অফিস পলিটিক্স, গার্লফ্রেন্ডের ফালতু বায়না, বাইকের ইএমাই… এসব কিসসু নেই। দেখে হিংসেয় গা জ্বলে গেল। তখনই ঠিক করলাম, আজ ছুটি। মোবাইলটা বন্ধ করে একটা ড্রয়ারে চালান করে দিয়ে রাস্তায় বেড়িয়ে পড়লাম। উল্টো দিকের ফুটপাতের দোকানে বসে চা আর প্রজাপতি বিস্কুট খেতে খেতে দেখি বাচ্চারা স্কুলে যেতে শুরু করেছে… ঘুম ঘুম চোখ, দু পায়ে রাশি রাশি অনিচ্ছা, অথচ পিঠে দশ মনি ব্যাগ। দু একটাকে চিনি…ছুটির দিনগুলোতে আমার কাছে আস্টেরিক্স, টিনটিন বা পুরনো ইন্দ্রজাল কমিক্স নিতে আসে। একটা বাস সামনে এসে গতি কমায়, শিয়ালদা, শিয়ালদা বলে হেল্পার ছেলেটি চেঁচিয়ে ওঠে … কিছু না ভেবেই দৌড়ে গিয়ে বাসটায় উঠে পড়লাম। তারপর শিয়ালদা।

টিকিটমাস্টার লোকটার কথায় কিছু একটা আকর্ষণ ছিল, তাই অমান্য করতে পারলাম না। ঠিক গুনে গুনে এগারো নম্বর স্টেশনে নামলাম। সুনসান স্টেশন প্ল্যাটফর্ম, বাইরেই একটা মান্ধাতার আমলের কারখানার শেড … চিমনি দিয়ে হাল্কা হাল্কা ধোঁয়া ছাড়ছে। সামনে দিয়ে একটা মেঠো রাস্তা চলে গেছে, রাস্তার ধারে একটা বট গাছ, তার ধার ঘেঁসে একটা চায়ের দোকান বটগাছের তলায় সিঁদুর মাখা একটা পাথর। ফুল বেলপাতা দিয়ে সাজানো। ঠিক তার পিছনেই একটা ছোট মাঠ, আছে বাঁশের গোলপোষ্ট। ছোট্ট মাঠ কিন্তু যত্নের ছাপ আছে… ঘাস সমান ভাবে কাটা, চুন দিয়ে মারকিং করা। মাঠের ও পাশে ধান ক্ষেত…দুরে গা ঘেঁষাঘেঁষি করে মন্দির আর মসজিদ পেরিয়ে গ্রামের আভাস।

গুটি গুটি পায়ে বটতলায় এসে দেখি, গাছের গায়ে অপটু হাতে লাল কালিতে লেখা ‘বাবা ম্যাঞ্চেশ্বরের থান’। একটা সিঁদুর মাখানো কালো পাথরে ফুল বেল পাতা চড়ানো, সামনে দু একটা কয়েন। এ আবার কোন দেবতা? তেত্তিরিশ কোটী দেবতার মধ্যে আছেন না সম্প্রতি নতুন জন্মালেন? ভাবতে ভাবতে চায়ের দোকানের সামনে যেতেই, আবার চমক। দোকানের বাইরে সাইন বোর্ডে লেখা, ম্যাঞ্চেশ্বর ইউনাইটেড টি শপ। শতছিন্ন একটা লাল টি শার্ট পরে এক মধ্য বয়স্ক লোক বসে আছেন। আমায় দেখে হেসে বলল ‘আসেন বাবু আসেন, দোকানের ভিতরে এসে বসেন।‘
বাঁশের দরমার দোকান… হোগলা পাতার ছাউনি… একটা কেরোসিন স্টোভে চায়ের বন্দবাস্ত, ছোট ছোট কয়েকটা বয়ামে বিস্কুট, বাদামের নাড়ু, সস্তা চানাচুরের প্যাকেট এইসব রাখা আছে। দোকানের সব দেওয়ালে ফুটবলারদের ছবি…পেপার থেকে কাটা। ক্রূয়েফ, রুনি, বেস্ট, ক্যান্টোনা, রায়ান গিগস, এমন কি ব্রায়ান রবসন… বাকি অনেক কটাই চিনলাম না। এই বার নামের রহস্য কিছুটা ক্লিয়ার হল।
– কিন্তু এটা তো ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড হবে, ম্যাঞ্চেশ্বর লিখেছেন কেন?
– বাবু, ভোম্বলকে তো তাই বলেছিলাম … কিন্তু এই পাড়া গাঁয়ে কেই বা ওসব জানে বলুন। ভুল করে ম্যাঞ্চেশ্বর লিখে দিল। আমারও মাথায় একটা বুদ্ধি এল, পাথরটাকে সিঁদুর ফুল বেলপাতা দিয়ে বাবা ম্যাঞ্চেশ্বর করে দিলাম। লোকে আসতে যেতে দু এক টাকা দিয়ে যায়, তাতেই আমার প্লেয়ারদের দুধটা, ডিমটা, মাঝে মাঝে চিকেন স্যুপ। মিড ডে মিলের খাওয়ায় কি আর প্লেয়ার হয়, বাবু?
– বলেন কি, টীম ও আছে না কি আপনার! তো ,টিমের নাম কি … ম্যাঞ্চেশ্বর ইউনাইটেড ?
লাজুক হাসি দেখে বুঝতে পারি আমার অনুমান ঠিক… জিজ্ঞাসা করি …”আপনি কে ? জোসে মরিনহো ?”
– না, বাবু, আমি ফাগুয়া, ফাগুয়া সেন
– তা কখন আসবে আপনার টিমের গিগস, রুনি, রোনাল্ডোরা?
– এরা সব একানের কারখানার লেবারদের ছেলেপুলে বাবু, পাশের গ্রামের কিছু চাষির ছেলে পুলেও আছে। ইস্কুলে গেছে… ছুটি হলেই সব এখানেই চলে আসবে।

এই সব কথাবার্তার মাঝেই তিন চারটে দশ থেকে চোদ্দ বছরের ছেলের দল দোকানের মধ্যে হুড়মুড় করে এসে বয়েম থেকে চানাছুর, বিস্কুট বের করে খেতে শুরু করে দিলো।
– আরে, দাঁড়া, দাঁড়া … এই সব খাস না। তোদের জন্যে আজ চিকেন স্যুপ বানিয়েছি।
দেখতে দেখতে প্রায় চোদ্দ পনের জনের একটা ছেলের দল, বাবা ম্যাঞ্চেশ্বরের থানের আশেপা্শে পাউরুটী আর মাটির খুরিতে স্যুপ নিয়ে বসে গেলো। ফাগুয়ার মুখে তখন সন্তানকে খাওয়ানোয় মায়ের তৃপ্তি। খেয়ে নিয়ে বাচ্চাগুলো দেখি বট গাছের কোলেই শুয়ে পড়লো।

একটু পরেই খেলা শুরু হয়। প্রথমে ওয়ার্ম আপ, দৌড় আর এক্সারসাইজ। তারপর দল বেধে খেলা। ফাগুয়া ভুল বলে নি। কয়েকটা ছেলের স্কিল লেভেল বেশ ভাল…ওই যে রোগা পাতলা ছেলেটা, মজিদ বোধ হয় নাম, ল্যাকপ্যাকে চেহারা কিন্তু বডির ভাঁজে দু,তিনটে ডিফেন্ডারকে ছিটকে ফেলছে… বা ওই গোলকিপারটা…প্রবীর নাম। যা সেভ দু একটা করলো ,ভ্যান ডার সার ও স্যালুট ঠুকত।
কথাবার্তায় যা জানা গেল ফাগুয়া এই পাশের কারখানাটায় কাজ করতো। অতিরিক্ত ফুটবল প্রেমে চাকরিটি খুইয়েছে। বিয়ে থা করে নি, ফুটবল নিয়েই আছে। প্রভিডেন্ট ফান্ড আর গ্র্যাচুইটির টাকায় এই চায়ের দোকান দিয়েছে। আর বাকি টাকা ব্যাঙ্কে রেখে তার সুদেই এই ফুটবল ক্লাব চালায়। কারখানার মেজবাবুও ফুটবল পাগল, উনিও কিছু সাহায্য করেন।

“শুধু একটা কথা ভাবি, এই যে বাচ্চাগুলোকে নিয়ে পরে আছি বাবু, এদের মধ্যে কেউ না কেউ নিশ্চয়ই একদিন বড় ক্লাবে খেলবে। একটু ভাল খাওয়া দাওয়া আর ট্রেইনিং, এরা পারবে বাবু, আমি ঠিক জানি।“
– মোহনবাগান, ইস্ট বেঙ্গল?
– না, বাবু… ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড বা বার্সেলোনা।
শুনে একটু থতমত খেয়ে যাই, পরে সামলে নিয়ে, গ্যারিঞ্চা, নেইমার, মেসির গল্পগুলো বলি। শুনে ফাগুয়া সেনের চোখদুটো উজ্জল হয়ে ওঠে।

খেলা শেষ। সন্ধ্যে হয় হয়…গ্রামে তখন মসজিদের আজান আর মন্দিরের শঙ্খধ্বনির সিম্ফনি। স্যার ফাগুয়া সেনকে আবার আসার কথা দিয়ে স্টেশনের দিকে রওয়ানা দিলাম, বুকে এডুয়ারডো গ্যালিয়ানোর বইটা চেপে ধরে। পরের উইকেন্ডেই আবার আসবো, বাবলাদাকে সঙ্গে নিয়ে…ও এবার সাবজুনিয়র মোহনবাগান টিমের কোচ হয়েছে যে।

ভ্যালেন্টাইন’স ডে
ভ্যালেন্টাইন’স ডে। আর তার সপ্তাহ খানেক আগে বা পরেই থাকে সরস্বতী পুজো। আজকাল শুনতে পাই (কোথায় আর শুনবো, এই ফেসবুকেই পড়ি)…সরস্বতী পুজোই নাকি বাঙালির ভ্যালেন্টাইন’স ডে। আমাদের সময় (এই আমাদের সময় কথাটা গত পঞ্চাশ বছর ধরে চলছে) নাকি এই দিনই হলুদ পাঞ্জাবী পরা ছেলেরা, বাসন্তী (হলুদ আর কী) মেয়েদের প্রপোজ করতো, ফুল দিতো, প্রেমপত্র দিতো বা নিদেন পক্ষে ঝারি মারতো। অনেকে আবার কবিতা লিখতো। একদমই ভুলভাল ন্যারেটিভ। ক্লাস এইটে পড়তেই। কারোর কারোর আবার ক্লাস সিক্স থেকেই আমাদের অনেকের স্টেডি গার্ল ফ্রেন্ড ছিল… কারোর ক্রিস এভার্ট (স্টেফি গ্রাফ বা গাব্রিয়েলা সাবাতিনি তখনও মার্কেটে আসেন নি, খুব সম্ভবতঃ তখনো ওরা নিজের নিজের বাড়িতে পুতুল খেলছে, টেনিস racket চোখেও দেখে নি), কারোর নাদিয়া কমেনেচি, আমার এক বন্ধুর গার্ল ফ্রেন্ড ছিলো টিনা মুনিম। আমরা এদের খুবই নির্ভরযোগ্য প্রেমিক ছিলাম, কেউ এদের ব্যাপারে কিছু বললে একদম ক্যালাকেলি লেগে যেতো। তবে আমাদের মধ্যে সরস্বতী পুজোর দিন পাঞ্জাবি পরার চল থাকলেও, হলুদ পাঞ্জাবি কাউকেই পরতে দেখি নি। মেয়েরাও শাড়ি পরলেও, হলুদ শাড়ি? মনে পড়ছে না।

আমাদের কাছে সরস্বতী পুজো একটা স্বাধীনতা দিবস টাইপের দিন ছিলো। এই দিনই আমরা প্রথম সিগারেট খাই ক্লাস এইটে। তারপর বিয়ার -ক্লাস নাইনে, আর বাবার প্রসাদ? সেটা বোধ হয় ক্লাস ইলেভেনে। পাড়ার পড়াশোনায় যে সব থেকে ভালো ছেলে (এখনকার ভাষায় শর্মাজী কা বেটা), এসব ব্যাপারে সাধারণত তারাই হতো পাইওনিয়ার। সিগারেট খাওয়ার গন্ধ বাড়ি থেকে লুকোতে আমরা পেয়ারা পাতা চিবোতাম, আরো সব কী কী যেন করতাম … কিন্তু ফিফটি পার্সেন্ট কেসেই ধরা পরে যেতাম।

যাই হোক এই দিনের একটা আডভ্যান্টেজ ছিলো। ধরা পড়লেও পুজোআচ্চার দিনে রাম ক্যলানি খাওয়ার চান্স কম থাকতো। আমরা পাড়ার ছেলেপুলে চাঁদা তুলে পুজো করতাম। চার আনা, আট আনা, এক টাকা। একবার এক কাকু দু টাকা চাঁদা দিয়েছিল। পাড়ার ঠেকে আমরা দু দিন আলোচনা করেছিলাম এই নিয়ে। কেউ কেউ বললো উনি গ্রহান্তরের জীব। হতে পারে, না হওয়ার কিছু নেই। তবে আজকাল শুনি লোকে নাকি চাঁদা দেওয়ার আগে কুজ্ঝটিকা বানান জিজ্ঞেস করে। এরকম বোকা বোকা অভিজ্ঞতা আমাদের কোন দিন হয় নি। তা সেই পাড়ার ছোটদের বারোয়ারি পুজোর টি আর পি ছিল খুবই কম। কেউ ঠাকুর দেখতে আসতো না, অঞ্জলি দিতেও না। শুধু আমরাই নিজের নিজের বাড়িতে একবার অঞ্জলি দিয়ে ,,পাড়ার পুজোয় আবার অঞ্জলি দিতাম।

আর সন্ধ্যেবেলায় প্যান্ডেলের আশেপাশের আলোআঁধারিতে আমাদের স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানগুলো হতো।

কেটো ডায়েট
দুর্গতিনাশিনী দেবীর নিউ ইয়ার রেজোলিউশন ছিলো, এই বছরে অন্তত সাত কেজি ওজন কমাবেন। এমন নয় যে উনি বেশ পৃথুলা, কিন্তু সাবধানের মার নেই। আর সাত কেজিই কেন, পাঁচ বা দশ কেজি নয় কেন এরকম প্রশ্ন ওঁকে কেউ করে নি (আপনারাও করবেন না যেন)। আসলে উনি অত পাঁচ-সাত ভেবে ওটা ঠিক করেন নি। উনি বছর শুরু থেকেই লো কার্ব ডায়েট শুরু করেছেন, কেটো না কী বলে একটা … এই ২০২৫ সালে একটু কেঠো হয়েই ছাড়বেন। তিনবেলা হাঁটা, জিম আর যোগ ব্যায়াম। এবার দেখা যাক, ওঁনার রোগা হওয়ার সাধনা কেমন চলছে।

সকাল বেলায় মাইল খানেক হেঁটে বাড়ি ঢুকেই দেখলেন, ফ্রিজে কয়েকটা রসগোল্লা আর চিত্রকূট আছে। টুক করে দুটোরই একটা করে মুখে পুরলেন, এই টেস্ট করলেন আর কী। এমনিতে চিত্রকূটের সাথে ওনার ছোটবেলার থেকেই প্রেম। শোনা যায় বিয়ের পরদিন শ্বশুরবাড়ি আসার আগে কাস্টমারি বিলাপের সিংহভাগ জুড়ে ছিল বেহালায় উত্তর কলকাতার মত ভাল চিত্রকূট পাওয়া যায় না, তাই নিয়ে! তারপর দুপুরে জিমে গিয়ে ঠিক চল্লিশ মিনিট ট্রেড মিল, রোয়িং, ক্রস ট্রেইনার ইত্যাদি যন্ত্রপাতি সহযোগে ব্যায়াম করে ফেরার সময় দেখলেন পাড়ায় একটা নতুন ক্যাফে হয়েছে…সারা পাড়া কফির গন্ধে একদম ম ম করছে, আর সেরকমই সুন্দর ভাবে সাজানো। টুক করে ঢুকে একটা কোল্ড কফি একটু বেশী করে আইস ক্রিম দিয়ে গলাধঃকরণ করলেন। এবার সন্ধ্যে বেলায় ইয়োগা ক্লাস।

সেদিন দেবী স্বপ্ন দেখেছেন, নিরালায় একা একা টেবিল ভর্তি ফাস্ট ফুড, নিয়ে বসেছেন। সেই ফুডকে নাকি টেকনিক্যালি জাঙ্ক ফুড বলে। পিৎজা, বার্গার, ফিঙ্গার চিপস, সসেজ, কোক। ওনার এক সন্ধ্যার খোরাক। একহাতে সামলাতে পারছেন না, সব্যসাচীর নারীরূপ ধারণ করেছেন। স্বপ্পটা বেশিক্ষণ অবশ্য টিকলো না, ঘুমের মাঝে কোক খেতে গিয়েই বিষম খেয়ে ঘুম ভেঙে গেলো।

দুর্গতিনাশিনী দেবীর পতিদেব, সদাশিববাবু কিন্তু এই সব ঝামেলায় নেই। উনি অফিস থেকে ফিরে নেটফ্লিক্স চালিয়ে সোফায় বসে ঢুলতে থাকেন। তা সেদিনও উনি নেটফ্লিক্স-এ নারকোস দেখতে দেখতে ঢুলছিলেন। দুর্গতিনাশিনী দেবী হন্তদন্ত হয়ে ইয়োগা ক্লাস থেকে ফিরেই বললেন,”উফ, আজ খুব টায়ার্ড লাগছে। আজ আর রান্নাবান্না করতে ভাল লাগছে না। আর এইসব ঘাস পাতা খেতে খেতে মুখেও চরা পড়ে গেল। ফোনে দুটো পিৎজা বলে দাও তো।”
সদাশিববাবু (ঢুলতে ঢুলতেই), “জঘন্য বানায়,আমার জন্য সেদ্ধ ভাত করে দাও।”
তারপর শুনলেন, “একটা রেগুলার ডাবল চিজ বার্স্ট চিকেন টিক্কা পিৎজা। কী বললেন? ডাবল চিজ বার্স্ট হয় না! যত্ত সব। ঠিক আছে ,চিজ বার্স্ট ই দিয়ে দিন।”

এই সব করতে করতে রাত দশটা বেজে গেল। সদাশিববাবু এখনো ঢুলছেন, কিন্তু দশটায় শুয়ে পড়াটা একটু দৃষ্টিকটু দেখায় বলেই এখনো ঘুমোতে যাচ্ছেন না। সেই ঢুলতে ঢুলতেই শুনলেন, দুর্গতিনাশিনী নিজের বোনকে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে ফোনে বলছেন, “এই এত তো চেষ্টা করছি, কিন্তু কিছুই হচ্ছে না। এই সপ্তাহেও এক কেজি ওজন বেড়ে গেছে।”
সদাশিববাবু চুপ করে একটু শুনলেন। তারপর বললেন,”কেঁদো না। ফ্রিজে একটা বোর্নভিল আছে, খেয়ে নাও।”

দুর্গতিনাশিনী কাঁদতে কাঁদতেই ফ্রিজের দিকে এগিয়ে গেলেন।

*******

Sahityika Admin

1 comment