হিমির গপ্পো
@অঙ্কিতা মজুমদার, ২০০৯ ইলেকট্রনিকস ও টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং
অসীম’দা বলেছিল মে মাসের মাতৃদিবস উপলক্ষ্যে একটা লেখা দিতে, আর আমি বেমালুম ভুলেই গিয়েছিলাম। অসীম’দা হেভি রাগারাগি বকাঝকা করার পরে আমার ফেসবুক থেকে কয়েকটা ছড়া দিলাম।
আসলে ২০২৪ এর ২১ নভেম্বর থেকে আমাদের জীবনে হিমি আসার পরে আমার লাইফ স্টাইলটাই যেন পাল্টে গেছে। হিমি এখন পাঁচ মাসের। এই পাঁচ মাসে হিমির কার্যকলাপ যাই দেখি, সবই যেন নতুন নতুন লাগে।
হিমির প্রতিটা প্রথমই আমার কাছে ছবির মত স্পষ্ট।
আমি হিমির প্রথম ভ্যাকসিনটা দিয়েই শুরু করছি।
হিমির প্রথম ভ্যাকসিন
শুন শুন সুধীজন, শুন দিয়া মন
হিমির ভ্যাকসিন গাথা করিব বর্ণন।
প্রথম যে ভ্যাকসিন, দেড় মাসে তার
জানুয়ারি শুরুতেই, এক রবিবার।
বিকেল বিকেল হিমি পৌছিয়ে যায়
টিকা নিতে, ভীড় দেখে খুব চমকায়।
অগত্যা খাওয়া, ঘুম, ঘোরাফেরা শেষে
জনা তিরিশের পরে তার ডাক আসে।
এমনি সে ব্রেভ গার্ল, ভয় ডর নেই
তবুও প্রথম টিকা – বুক কাঁপবেই।
খানিক কান্নাকাটি, চিৎকার খুব
ভ্যাকসিন নেওয়া শেষে হিমিবুড়ি চুপ।
বাড়ি ফিরে আসতেই রাত হয়ে যায়।
মায়ের চিন্তা ভারী, কী জানি কী হয়।
প্রথম টিকায় খুব জ্বর আসে নাকি
হিমির কষ্ট হবে, আর বাদবাকি
ওষুধ দিয়েছে লিখে, জ্বর ও ব্যথার
খাওয়ালেই হাতেনাতে পাবে উপকার।
রাতটা ভালোই কাটে, ঘুমানোর পরে
ভোররাতে হিমিবুড়ি কুইকুই করে।
মা গায়ে হাত দেয়, ধুম জ্বর তার
একশো ছাড়িয়ে, বলে থার্মোমিটার।
পাপা ক্যালপল দেয়, তড়িঘড়ি করে
মায়ের কপালে রেখা – যদি জ্বর বাড়ে।
থেকে থেকে উষ্ণতা মেপে দেখে মা
আধ ঘন্টা হল, জ্বর কমে না।
হিমিবুড়ি চুপচাপ, শুধু কোলে শুয়ে
মাঝে মাঝে চোখ খুলে দেখে চেয়ে চেয়ে।
খাওয়া দাওয়া মূলতুবি, ছলছলে চোখ।
মার বুক ধুকপুক, মেয়ে ঠিক হোক।
একঘন্টার মত অপেক্ষা শেষে
হাত পা ঠান্ডা হয়ে জ্বর কমে আসে।
হিমিবুড়ি খেতে চায়, খেলাধুলা করে
তাই দেখে মার মন আনন্দে ভরে।
সেইদিন সন্ধ্যায় আরো একবার
জ্বর আসে ভালোমত, তবে এইবার
মা জানে সেরে যাবে, একটু সময়
ওষুধ তো পড়ে গেছে, আর নেই ভয়।
পরদিন ঠিকঠাক, একেবারে ফিট
মা পাপা ভীষণ খুশী, হিমি নেইল্ড ইট।
*******
যবে থেকে হিমিবাবু এসেছেন, আমার এক নতুন খেলা হয়েছে, ছড়া বানানোর খেলা। সেই বাড়ি নিয়ে আসার পর দিন থেকে হিমির সাথে কথা বলার সময় কত যে হিজিবিজি ছন্দ মেলাই মুখে মুখে। অভি বলে রেকর্ড করে রাখবি। রেকর্ড করে রাখা মুখের কথা নাকি! তারই ভেতর কিছূ পরে লিখে রাখি আবার করে ছন্দ মিলিয়ে। সেরকমই সেদিন হিমিবাবুকে খাওয়ানোর সময় এক দত্যির ছড়া বানাচ্ছিলাম। তিনিও খেতে খেতে চোখ গোল গোল করে শুনছিলেন। দারুন মজা লাগছিল। পরে লিখে রাখলাম মোটামুটি একইরকম ছড়া। লেখা হলে বেশ মজাই পেলাম। তাই ভাবলাম এখানে রেখে যাই।
ডিডি মনস্টার আর হিমির গপ্পো
একটা বিশাল দত্যি থাকে ভীল পাহাড়ের গুহায়
রাত্রি হলে বাইরে এসে রোজই আগুন পোহায়।
লোকে বলে দানোর নাকি ডিডি মনস্টার নাম।
আদতে সে অন্য জাগার, ঝিলপাড়ই তার ধাম।
অনেক আগে লড়াই করে রাক্ষসেদের সাথে
হেরে গিয়ে পালিয়ে আসে দুটাকা নিয়ে সাথে।
সেই থেকে সে হেথায় থাকে। আঁধার হলে পরে
খাবার খেয়ে ঢেকুর তোলে ভীষণ জোরে জোরে।
সেই ঢেকুরের আওয়াজ ভীষণ, তাতেই নাকি আবার
কয়েকজনের প্রাণপাখি সব বেরিয়ে গেল সেবার।
দেখতে দেখতে সবটা যখন জানাজানি হল
আশেপাশের মানুষ সবাই পালিয়ে চলে গেল।
এসব শুনে বলল হিমি, “যাব দত্যির বাড়ি
প্রয়োজনে একাই আমি রাখব লড়াই জারি।
এই না বলে চলল হিমি এক সকালে উঠে
খিদে পেলে খাবে বলে নিল কতক পিঠে।
দুদিন দুরাত পায়ে হেঁটে পৌঁছে গেল শেষে
সেই যেখানে ডিডি থাকে, পাহাড় নীলে মেশে।
দরজা খুলে ডিডি অবাক, পুঁচকে মতন মেয়ে
ভয় ডর নেই, অবাক চোখে দেখছে চেয়ে চেয়ে।
“এই মেয়ে তুমি করছটা কী? তোমার কিছূ চাই? ”
“আমি হিমি। কটা কথা বলতে এলাম ভাই।
তুমি নাকি ঢেকুর তোলো ভীষণ সব্বোনেশে
তাতেই নাকি মানুষ মোলো বিষম খেয়ে শেষে।
জানোনা তুমি ভয় দেখানো মোটেই উচিত নয়!
প্রতিবেশীদের ভালোবেসে, সঙ্গে থাকতে হয়।
প্রমিস কর এবার থেকে ঢেকুর তুলতে হলে
তড়িঘড়ি দরজা এঁটে ঘরেই যাবে চলে।
আমাকেও তো মাম্মা পাপা বার্প করিয়ে দেয়।
শুনেছ কখনো সেই আওয়াজে কেউ পেয়েছে ভয়!”
এই না বলে চলল হিমি, ধরল বাড়ির পথ
দত্যি ডিডি ভাবলে খানিক দাড়িতে দিয়ে হাত।
দত্যি নিজের ভুল বুঝলে দুঃখ পেল ভারী
সত্যি এমন ঢেকুর তোলে কোনো পুরুষ নারী!
তখন থেকেই ভয়াল ঢেকুর যায় না শোনা আর
ধন্যি ধন্যি করল সবাই হিমিকে বারেবার।
একে একে ভীল পাহাড়ের সবাই ফিরে এল।
স্যরি বলে ডিডি দত্যি বন্ধু সবার হল।
18th February 2015
*******
21st February 2025
আমাদের হিমিবাবু ৩ মাসের হলেন। ৩ মাসের হওয়া কি মুখের কথা নাকি! হিমি তো এখনও আমাদের ভাষা বলতে শেখেননি। তাই মা তার ভাষা অনুমান করে তার মনের কথা লেখার চেষ্টা করেছে।
হিমির ৩ মাস
তিন মাস পৃথিবীতে, সোজা কথা নাকি!
কতকিছূ শিখলাম – এসো লিখে রাখি
ভালো মেয়ে হতে গেলে দুধ খেতে হয়
ভাবছ ভীষণ সোজা! মোটেই তা নয়।
ঠিকঠাক টেকনিক, স্কিল শিখে তবে
প্রয়োজন মিটবে, খাওয়া দাওয়া হবে।
এইবার আমি যদি ঘুমানোই ধরি
খাটে শুয়ে ঘুমানোয় হল হাতেখড়ি।
মনে কর মার কোলে ঘুমিয়েছি সবে,
সাথে সাথে বিছানায় রেখে দেওয়া হবে।
মা পাপার কোলজুড়ে কত না আরাম
সেইসব ওম ছেড়ে শোওয়া শিখলাম।
তারপর ধর এই ইচ্ছেমতন
যায় নাকো ঘোরা মোটে যখন তখন।
তাইতো শিখতে হল চিল চিৎকার
নিজ মত জানানোয় কী যে দরকার।
খিদে, ঘুম, পেট ব্যথা – যেকোনো কিছুর
একটাই অস্ত্র – কান্নার সুর।
কোনোদিন হয়তোবা মন ভালো নেই
তাহলে তো ওঁয়া ওঁয়া কেঁদে ফেলবই।
মা পাপা ভাবলে বুঝি পেট ব্যথা খুব
এক ফোঁটা ওষুধেই হয়ে যাবে চুপ।
ওষুধের স্বাদ – সে কী বলব রে ভাই
নেহাত শিখিনি কথা। যা ইচ্ছা তাই
করে চলে দিবারাত বড় দুইজন,
চুপ করে মেনে নিই – কঠিন ভীষণ।
এখানেই শেষ নয়, লিস্টিটা বড়
যদিও এখন মোটামুটি সড়গড়।
আরো কত কিছুই না বাকি রয়ে গেছে
পৃথিবী আজব জাগা, গোলমাল আছে।
তারপরও তিনমাস মিঠে ঝাল টক
কেটে গেল, মন্দ কী! আসা ইস্তক
আহ্লাদে ভরপুর, আদর অগাধ
মা পাপার ভালোবাসা – আলাদাই স্বাদ।
**********
Add comment