সাহিত্যিকা

সরস্বতী পূজা, কিছু কথা

সরস্বতী পূজা, কিছু কথা
অসীম সাহা, ১৯৭৭ ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং
শৈবাল সরকার, ১৯৭৭ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং

সরস্ ও বতী – এই দুই সংস্কৃত শব্দের সন্ধির দ্বারা সরস্বতী নামের উৎপত্তি। সরস্ শব্দের প্রচলিত আক্ষরিক অর্থ হ্রদ বা সরোবর। কিন্তু এটির অপর অর্থ “বাক্য”; আর বতী শব্দের অর্থ যিনি অধিষ্ঠাত্রী। এই নামটির আদিতে এক বা একাধিক নদীর সঙ্গে যুক্ত হলেও এই নামটির উভয় আক্ষরিক অর্থ হয় “যে দেবী পুষ্করিণী, হ্রদ ও সরোবরের অধিকারিণী” বা ক্ষেত্রবিশেষে “যে দেবী বাক্যের অধিকারিণী”। এর উপরেও সংস্কৃত ব্যাকরণ অনুযায়ী “সরস্বতী” শব্দটির সন্ধিবিচ্ছেদ করলে নামের অর্থ হয় “যা প্রচুর জল ধারণ করে”।

হিন্দুশাত্রের ঋগ্বেদে সরস্বতীর দেবী রূপে সর্বপ্রথম উল্লেখ পাওয়া যায়। দেবীর মান্যতা বিদ্যা, জ্ঞান, সংগীত, শিল্প, সংস্কৃতি, কলা, ও বাক্যের অধিষ্টাত্রী দেবী রূপে। আর সরস্বতী, লক্ষী ও পার্বতীর একত্রে হিন্দুশাত্রে ত্রিদেবী নামেও উল্লেখ পাওয়া যায়। বৈদিক যুগের প্রারম্ভ হতে আজকের আধুনিক যুগ পর্যন্ত সরস্বতী হিন্দুধর্মের একজন অন্যতম প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অধিষ্টিতা। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ধর্মবিশ্বাস অনুযায়ী তিনি কখনো দ্বিভূজা, আবার কখনো বা চতুর্ভূজা মূর্তিতে পূজিতা হন। দ্বিভূজা মূর্তিতে তাঁর হাতে থাকে পুস্তক ও বীণা, চতুর্ভূজা মূর্তিতে থাকে পুস্তক, বীণা, অক্ষমালা, ও কলস। হিন্দুধর্মে এই প্রতিটি বস্তুরই প্রতীকী অর্থ আছে।

যদিও সরস্বতী বৈদিক দেবী, তথাপি সরস্বতী পূজা বর্তমান রূপটি আধুনিক কালেই প্রচলিত হয়েছে। প্রাচীন কালে তান্ত্রিক সাধকেরা সরস্বতী-সদৃশ দেবী বাগেশ্বরীর পূজা করতেন। ঊনবিংশ শতাব্দীতে পাঠশালায় প্রতি মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে ধোয়া চৌকির উপর তালপাতার তাড়ি ও দোয়াতকলম রেখে পূজা করার প্রথা ছিল। শ্রীপঞ্চমী তিথিতে ছাত্রেরা বাড়িতে বাংলা বা সংস্কৃত পুস্তক, বা শ্লেট, দোয়াত ও কলমে সরস্বতী পূজা করত। ইতিহাসে গ্রামাঞ্চলেও এই প্রথার বিবরন পাওয়া যায়। ক্রমে ক্রমে শহরে ধনীরাই সরস্বতীর প্রতিমা নির্মাণ করে পূজা আরম্ভ করেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরস্বতী পূজার প্রচলন হয় আনুমানিক বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে।

হিন্দুদের, বিশেষত পূর্ব ভারতের একাংশ সরস্বতীর পূজা করেন মাঘ মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথির দিনটিতে, এই বিশেষ দিনটি বসন্তপঞ্চমী বা শ্রীপঞ্চমী নামেও উল্লেখিত হয়। ধনী দরিদ্র নির্বিশেষে বাঙালীদের ঘরে ঘরে এই পূজা হয়, আর এই বিশেষ দিনটিতে শিশুদের হাতেখড়ি অনুষ্ঠানের (প্রথম অক্ষর শিক্ষার অনুষ্ঠান) আয়োজনও করা হয়। ভারতবর্ষের অনেক জৈন ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরাও সরস্বতীর পূজা করেন। বিদ্যা ও সঙ্গীতের দেবীর আরাধনা পূর্ব ভারতের একটি অন্যতম প্রধান হিন্দু উৎসব এবং এই পূজা উপলক্ষে বিশেষত ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বিশেষ উৎসাহ উদ্দীপনা পরিলক্ষিত হয়। এইদিন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ছাত্রছাত্রীদের গৃহ ও সর্বজনীন পূজামণ্ডপে দেবী সরস্বতীর পূজা করা হয়। এই পূজার অঙ্গস্বরূপ সন্ধ্যায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সর্বজনীন পূজামণ্ডপগুলিতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন হয়। পরের দিনটি শীতলষষ্ঠী নামে পরিচিত।

ঋগ্বেদে সরস্বতী নামের অর্থ নদী ও বিদ্যার গুরুত্বপূর্ণ এক দেবী, উভয়ই। প্রাথমিক পংক্তিগুলিতে শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে সরস্বতী নদী অর্থে এবং দৃশদ্বতী সহ বিভিন্ন উত্তরপশ্চিম ভারতীয় নদীর নামের সঙ্গে একই সারিতে। তারপর সরস্বতীকে এক নদী দেবতা হিসেবে উপস্থাপনা করা হয়েছে। ঋগ্বেদের দ্বিতীয় মন্ডলে সরস্বতীকে শ্রেষ্ঠ মাতা, শ্রেষ্ঠ নদী ও শ্রেষ্ঠ দেবী হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে:
অম্বিতমে নদীতমে দেবিতমে সরস্বতি— ঋগ্বেদ ২.৪১.১৬
সরস্বতী মাতৃকাগণের মধ্যে শ্রেষ্ঠ, নদীগণের মধ্যে শ্রেষ্ঠ, দেবীগণের মধ্যে শ্রেষ্ঠ।

ঋগ্বেদের দশম মন্ডলে সরস্বতীকে প্রবহমান জলের আরোগ্যদাত্রী ও পাবনী শক্তির দেবী হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে:
অপো অস্মান মাতরঃ শুন্ধয়ন্তু ঘর্তেন নো ঘর্তপ্বঃ পুনন্তু।
বিশ্বং হি রিপ্রং পরবহন্তি দেবিরুদিদাভ্যঃ শুচিরাপুত এমি।। — ঋগ্বেদ ১০.১৭
অর্থাৎ মাতৃস্বরূপা জলসমূহ আমাদের পরিশুদ্ধ করুন, যাঁরা ননীর দ্বারা শোধিত হয়েছে, তাঁরা আমাদের ননীর দ্বারা পরিশুদ্ধ করুন, কারণ এই দেবীগণ কলুষ দূর করেন, আমি এদের থেকে উঠে আসি পবিত্র ও পরিশুদ্ধ হয়ে। — জন ম্যুয়ারের অনুবাদ অবলম্বনে

ঋগ্বেদের দশম মণ্ডলে সরস্বতী “জ্ঞানের অধিকারিণী” নামে পরিচিত। ঋগ্বেদের পরবর্তী যুগে রচিত বেদগুলিতে (বিশেষত ব্রাম্মণ অংশে) সরস্বতীর গুরুত্ব আরও বৃদ্ধি পায়। এই গ্রন্থগুলিতেই শব্দটির অর্থ “পবিত্রতাদানকারী জল” থেকে “যা পবিত্র করে”, “যে বাক্য পবিত্রতা দান করে”, “যে জ্ঞান পবিত্রতা দান করে” অর্থে বিবর্তিত হয় এবং শেষ পর্যন্ত তা এমন এক দেবীর আধ্যাত্মিক ধারণায় রূপ গ্রহণ করে যিনি বিদ্যা, জ্ঞান, শিল্প, কলা, সংগীত, সুর, কাব্য-প্রতিভা, ভাষা, অলংকার, বাগ্মীতা, সৃজনশীল কর্ম এবং যা কিছু একজন মানুষের অন্তঃস্থল বা আত্মাকে পবিত্রতা দান করে তার প্রতিভূ হয়ে ওঠেন।

প্রাচীন হিন্দু সাহিত্যে সরস্বতী নানা নামে পরিচিত। উদাহরণস্বরূপ উল্লেখ করা যায় ব্রম্মাণী (ব্রম্মার শক্তি), ব্রাহ্মী (বিজ্ঞানের দেবী), ভারতী (ইতিহাসের দেবী), বর্ণেশ্বরী (অক্ষরের দেবী), কবিজিহ্বাগ্রবাসিনী (যিনি কবিগণের জিহ্বাগ্রে বাস করেন) ইত্যাদি নাম। আবার সরস্বতী বিদ্যাদাত্রী (যিনি বিদ্যা দান করেন), বীণাবাদিনী (যিনি বীণা বাজান), পুস্তকধারিণী (যিনি হস্তে পুস্তক ধারণ করেন), বীণাপাণি (যাঁর হাতে বীণা শোভা পায়), হংসবাহিনী (যে দেবীর বাহন রাজহংস) ও বাগ্দেবী (বাক্যের দেবী) নামেও পরিচিত।
অপর ব্যাখ্যা অনুযায়ী, “সর” শব্দের অর্থ “সার” বা “নির্যাস” এবং “স্ব” শব্দের অর্থ “আত্ম”। সেই অর্থে “সরস্বতী” নামের অর্থ “যিনি আত্মার সার উপলব্ধি করতে সহায়তা করেন” অথবা “যিনি (পরব্রম্মের) সার ব্যক্তির আত্মার সঙ্গে মিলিত করেন”।

বাংলা ভাষায় দেবী সরস্বতী বিভিন্ন নামে পূজিতা হন। বাগদেবী, বীণাপাণি, পদ্মাসনা, হংসারূঢ়া, সারদা, শতরূপা, বাণী, ভারতী, হংসবাহনা, শুক্লা, শ্বেতভূজা, বাঙ্ময়ী, ইত্যাদি বিভিন্ন নামে। এছাড়াও ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রদেশে দেবী বিভিন্ন নামে পূজিতা। তেলেগু ভাষায় চদুবুলা তাল্লি বা শারদা নামে। কোঙ্কণি ভাষায় শারদা, বীণাপাণি, পুস্তকধারিণী ও বিদ্যাদায়িণী নামে। কন্নড় ভাষায় শারদে, শারদাম্বা, বাণী ও বীণাপাণি নামে, তামিল কলৈমগল, নামগল, কলৈবাণী, বাণী ও ভারতী নামে।

প্রতিমা ও পূজা
ধ্যানমন্ত্রে বর্ণিত প্রতিমাকল্পে সরস্বতী দেবীকে শ্বেতপদ্মে আসীনা, শ্বেতবর্ণা, পদ্মলোচনা, মুক্তাহারে ভূষিতা ও বীণাপুস্তকধারিণী নারীমূর্তিরূপে কল্পনা করা হয়েছে।
বিবরণে আছে,
ওঁ তরুণ শকল মিন্দোর্বিভ্রতী শুভ্রকান্তিঃ কুচভরনমিতাঙ্গী সন্নিষণ্ণা সিতাব্জে।
নিজকরকমলোদ্যল্লেখনীপুস্তকশ্রীঃ সকলবিভবসিদ্ধ্যৈ পাতু বাগ্দেবতা নঃ।।
অর্থাৎ, “চন্দ্রের নূতন কলাধারিণী, শুভ্রকান্তি, কুচভরনমিতাঙ্গী, শ্বেতপদ্মাসনে (উত্তমরূপে) আসীনা, হস্তে ধৃত লেখনী ও পুস্তকের দ্বারা শোভিত বাগ্‌দেবী সকল বিভবপ্রাপ্তির জন্য আমাদিগকে রক্ষা করুন।”

আবার পদ্মপুরাণে বর্ণিত আছে,
শ্বেতপদ্মাসনা দেবী শ্বেতপুষ্পোপশোভিতা।
শ্বেতাম্বরধরা নিত্যা শ্বেতগন্ধানুলেপনা॥১
শ্বেতাক্ষসূত্রহস্তা চ শ্বেতচন্দনচর্চিতা।
শ্বেতবীণাধরা শুভ্রা শ্বেতালঙ্কারভূষিতা॥২
অর্থাৎ, “দেবী সরস্বতী আদ্যন্তবিহীনা, শ্বেতপদ্মে আসীনা, শ্বেতপুষ্পে শোভিতা, শ্বেতবস্ত্র-পরিহিতা এবং শ্বেতগন্ধে অনুলিপ্তা॥১॥
অধিকন্তু তাঁহার হস্তে শ্বেত রুদ্রাক্ষের মালা; তিনি শ্বেতচন্দনে চর্চিতা, শ্বেতবীণাধারিণী, শুভ্রবর্ণা এবং শ্বেত অলঙ্কারে ভূষিতা॥২॥

ক্ষেত্রবিশেষে দেবী সরস্বতী দেবী দ্বিভুজা অথবা চতুর্ভুজা এবং হংসবাহনা অথবা ময়ূরবাহনা রূপেও পূজিতা হন। উত্তর ও দক্ষিণ ভারতে সাধারণত ময়ূরবাহনা চতুর্ভুজা সরস্বতী প্রতিমার পূজা হয়। ইনি অক্ষমালা, কমণ্ডলু, বীণা ও বেদপুস্তকধারিণী। বাংলা তথা পূর্বভারতে সরস্বতী দ্বিভুজা ও রাজহংসের পৃষ্ঠে আসীনা।

শ্রীবাসন্তীপঞ্চমীর দিন সকালে দেবী সরস্বতীর পূজা হয়। সরস্বতীর পূজায় কয়েকটি বিশেষ উপচার বা সামগ্রীর প্রয়োজন হয়। যথা: আম্রমুকুল, দোয়াত কলম, অভ্র-আবীর, ও যবের শিষ। এই পূজায় বাসন্তী রঙের গাঁদা ফুলও প্রয়োজন হয়। লোকাচার অনুসারে, ছাত্রছাত্রীরা পূজার পূর্বে কুল ভক্ষণ করেন না। লোকাচারে পূজার দিন বিদ্যার্থীদের কিছু পড়া বা লেখাও নিষিদ্ধ। কবি, লেখক, গায়ক, যন্ত্রশিল্পী, নাট্যকার বা নৃত্যশিল্পী, প্রত্যেকেই তাদের যন্ত্রের আরাধনা এবং মা সরস্বতীর পূজায় দিন শুরু করেন। আর যথাবিহিত পূজার পর লেখনী-মস্যাধার (দোয়াত-কলম), পুস্তক ও বাদ্যযন্ত্রেরও পূজা করার প্রথা প্রচলিত আছে। পূজার পরদিন পুনরায় পূজার পর চিড়ে ও দই মিশ্রিত করে দধিকরম্ব বা দধিকর্মা নিবেদন করা হয়। এরপর পূজা সমাপ্ত হয়। সন্ধ্যায় বা পরের দিনে প্রতিমার বিসর্জন হয়।

পূজান্তে পুষ্পাঞ্জলি দেওয়ার প্রথাটি অত্যন্ত জনপ্রিয়।
বঙ্গভূমে শ্রী শ্রী সরস্বতী পুষ্পাঞ্জলি-মন্ত্র —
ওঁ জয় জয় দেবি চরাচরসারে, কুচযুগশোভিতমুক্তাহারে।
বীণাপুস্তকরঞ্জিতহস্তে, ভগবতি ভারতি দেবি নমস্তে॥
ভদ্রকাল্যৈ নমো নিত্যং সরস্বত্যৈ নমো নমঃ।
বেদ-বেদাঙ্গ-বেদান্ত-বিদ্যা-স্থানেভ্য এব চ॥
এষ সচন্দনপুষ্পবিল্বপত্রাঞ্জলিঃ ঐং সরস্বত্যৈ নমঃ॥

প্রণাম-মন্ত্র:
সরস্বতি মহাভাগে বিদ্যে কমললোচনে।
বিশ্বরূপে বিশালাক্ষি বিদ্যাং দেহি নমোঽস্তু তে॥

সরস্বতীর স্তবঃ
শ্বেতপদ্মাসনা দেবী শ্বেতপুষ্পোপশোভিতা।
শ্বেতাম্বরধরা নিত্যা শ্বেতাগন্ধানুলেপনা॥
শ্বেতাক্ষসূত্রহস্তা চ শ্বেতচন্দনচর্চ্চিতা।
শ্বেতবীণাধরা শুভ্রা শ্বেতালঙ্কারভূষিতা॥
বন্দিতা সিদ্ধগন্ধর্ব্বৈরর্চ্চিতা দেবদানবৈঃ।
পূজিতা মুনিভিঃ সর্ব্বৈর্ ঋষিভিঃ স্তূয়তে সদা॥
স্তোত্রেণানেন তাং দেবীং জগদ্ধাত্রীং সরস্বতীম্।
যে স্মরন্তি ত্রিসন্ধ্যায়াং সর্ব্বাং বিদ্যাং লভন্তি তে॥

দেবীভাগবতপুরাণে পরম কুস্মন্দেরে প্ৰথম অংশে দেবী সরস্বতীর জন্ম। তিনি বিষ্ণুর জিহ্বাগ্র থেকে উৎপন্ন হয়েছেন। তিনি বাক্য, বুদ্ধি, বিদ্যা ও জ্ঞানের অধিষ্ঠাত্রী দেবী; সকল সংশয় ছেদকারিণী ও সর্বসিদ্ধিপ্রদায়িনী এবং বিশ্বের উপজীবিকা স্বরূপিনী। চতুর্মুখ ব্রম্মা সর্ব প্রথম তাঁর পূজা করেন। এরপরে জগতে তাঁর পূজা প্রতিষ্ঠিত হয়। সরস্বতী শুক্লবর্ণা, পীতবস্ত্রধারিণী এবং বীণা ও পুস্তকহস্তা। যখন তিনি নারায়ণের থেকে সৃষ্ট হন তখন তিনি তাঁকে নারায়ণকে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করেন। পরে তিনি গঙ্গার দ্বারা অভিশাপ পান ও তিনি এক অংশে পুনরায় শিবের চতুর্থ মুখ থেকে সৃষ্ট হন ও ব্রহ্মাকে পতিরূপে গ্রহণ করেন। তারপর কৃষ্ণ জগতে তাঁর পূজা প্রবর্তন করেন, এবং মাঘ মাসের শুক্লাপঞ্চমী তিথিতে তাঁর পূজা হয়।

গঙ্গা, লক্ষী ও আসাবারী (সরস্বতীর পূর্ব জন্মের নাম) ছিলেন নারায়ণের তিন পত্নী। একবার গঙ্গা ও নারায়ণ পরস্পরের দিকে তাকিয়ে হাসলে তিন দেবীর মধ্যে তুমুল বিবাদ উপস্থিত হয়। এই বিবাদের পরিণামে একে অপরকে অভিশাপ দেন। গঙ্গার অভিশাপে আসবারী নদীতে পরিণত হন। পরে নারায়ণ বিধান দেন যে, তিনি এক অংশে নদী, এক অংশে ব্রহ্মার পত্নী ও শিবের কন্যা হবেন এবং কলিযুগের পাঁচ হাজার বছরের অবসানকালে সরস্বতী সহ তিন দেবীরই শাপমোচন হবে। এরপর গঙ্গার অভিশাপে আসাবারি মর্ত্যে নদী হলেন এবং পরবর্তীকালে ব্রহ্মার পত্নী হলেন ও শিবের চতুর্থ মুখ থেকে সৃষ্টি হয়ে তার কন্যা হলেন।

শুক্ল যজুর্বেদ
সরস্+বতী=সরস্বতী অর্থ জ্যোতির্ময়ী। ঋগ্বেদে এবং যজুর্বেদে বহুবার ইড়া, ভারতী, সরস্বতীকে একসঙ্গে দেখা যায়। বেদের মন্ত্রগুলো পর্যালোচনায় ধারণা হয় যে, সরস্বতী মূলত সূর্যাগ্নি। রামায়ণ রচয়িতা বাল্মীকি যখন ক্রৌঞ্চ হননের শোকে বিহ্বল হয়ে পড়েছিলেন, সে সময় জ্যোতির্ময়ী ব্রহ্মাপ্রিয়া সরস্বতী তাঁর ললাটে বিদ্যুৎ রেখার মত প্রকাশিত হয়েছিলেন।

তথ্যসংগ্রহ ও কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ উইকিপিডিয়া

এখন পরিবর্তনের যুগে সরস্বতী পূজার দিনটিকে অনেক ছাত্রছাত্রীরা বাংলার ভ্যালেন্টাইন ডে পালন করেন।

ছবি: কলেজ ক্যাম্পাস, ২০১৭

Sahityika Admin

Add comment