বিজ্ঞানী কবি বিনয় মজুমদার-যেমন দেখেছি
কৌশিক বন্দোপাধ্যায়, ১৯৭৮
কবি ও বিজ্ঞানী বিনয় মজুমদারকে আমি দেখেছি।
এভাবে বলার কারণ হল ২০০৪ সালের এক বসন্তের মধ্যাহ্নে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতের এক বিরল অবকাশের সময়ে তিনি ইতিমধ্যেই এক জীবন্ত কিম্বদন্তী – নানা পত্র-পত্রিকায় নিজেকে “কবিতার শহীদ” বলে উল্লেখ করতেন। সর্বোপরি তিনি একান্ত নিভৃতচারী- মানুষজনের সঙ্গ সচেতনভাবে পরিহার ও প্রত্যাখানে সর্বদা সচেষ্ট থাকতেন। সেই পরিহারের পরিখা অতিক্রম-“যেন পেরিয়ে এলেম অন্তবিহীন পথ।”
উপলক্ষ একটা ছিল – সেই কর্তব্যের তাগিদেই বি ই কলেজ, শিবপুরের দুই প্রাক্তনী গেছিলাম আমাদের এক প্রতিবেশী ও কেন্দ্রীয় যুবকল্যান দপ্তরের আধিকারিক অভিজিৎ বসুকে পথনির্দেশক সঙ্গী করে। এর আগে আমার আকৈশোর বন্ধু ও কবিতীর্থ পত্রিকার সম্পাদক উৎপল ভট্টাচার্যের মুখে ও পত্রিকার মারফৎ বিনয় মজুমদারের সাহিত্যকৃতির সঙ্গে অল্প পরিচিত ছিলাম এবং স্বাস্থ্যের সংবাদও পেতাম। তখন কবি ভগ্নস্বাস্থ্য অবস্থায়- কিছুকাল আগে কলকাতার বাঙ্গুর ইন্সটিটিউট অফ সাইকিয়াট্রি হাসপাতাল থেকে আরোগ্য লাভ করে ফিরেছেন। তৎকালীন মাননীয় মন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মহাশয়ের ব্যক্তিগত উদ্যোগে কবিকে ঐ হাস্পাতালে স্থানান্তর ও চিকিৎসা সম্ভব হয়েছিল বলে শোনা গেছিল। এই পর্বের কিছুটা বিবরণ মেলে কবির “হাসপাতালে লেখা কবিতাগুচ্ছ” বইটিতে। কবির গুনমুগ্ধ উৎপলের সঙ্গে আমাদের কথোপকথনের মধ্যে কবির প্রসঙ্গ চলে আসতো। তাঁর মত প্রতিভাধর মানুষ কেন এবং কীভাবে লোকচক্ষুর অন্তরালে ও কার্যত সংস্কৃতি-অভিমানী শিক্ষিত বাঙালী সমাজের বিস্মৃতির গভীরে নিমজ্জিত হয়েছেন- এই সব বিষয় আমাদের বিচলিত করত। ততোদিনে বিনয় মজুমদারের থেকে বয়োকনিষ্ঠেরাও নানা সাহিত্য-পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন; অথচ বয়োজ্যেষ্ঠ তো বটেই, যোগ্যতর হওয়া সত্ত্বেও তাঁর প্রতি উদাসীনতা ছিল চরম। মজার ব্যাপার – হাংরি আন্দোলন ও কৃত্তিবাস পর্বে কবির যারা খুবই ঘনিষ্ঠ সহযাত্রী ছিলেন, তাঁরাই তখন সরকারী-বেসরকারী বহু প্রতিষ্ঠানের শীর্ষে বসে ছিলেন দীর্ঘকাল ধরে। সেই উজ্জ্বলতার একটি ক্ষীণ রশ্মিও বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী গ্রাম শিমূলপুরে পৌছয় না।
এটা অস্বীকারের কোন অবকাশ নেই যে আমরা যখন এ বিষয়ে উদ্যোগ নিয়েছিলাম তখন পর্যন্ত কবির ঝুলিতে সাহিত্য-পুরস্কার কার্যত শূন্য, যদিও তাঁর অনেক আগেই প্রথম কাব্যগ্রন্থ- “ফিরে এসো চাকা” প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই বিনয় মজুমদার বাংলা সাহিত্যে স্থায়ী আসন অর্জন করে নেন এবং জ্যোতির্ময় দত্ত প্রমুখ সুধী অনুবাদকের সৌজন্যে তার ইংরাজি অনুবাদও ততদিনে আন্তর্জাতিক খ্যাতি লাভ করে।
প্রসঙ্গে ফেরা যাক- একটি সর্বভারতীয় সাহিত্য-সংস্থা প্রতি বছরেই বিভিন্ন ভাষার প্রবীণ ও নবীন সাহিত্যিকদের যথাক্রমে ‘ভারত ভাষাভূষণ’ ও সাহিত্যশ্রী উপাধিতে ভূষিত করতেন। সংস্থার পশ্চিমবঙ্গ শাখার এই সংক্রান্ত সভায় সর্বসম্মতিতে কবির নাম মনোনীত হয় – প্রস্তাবক হিসাবে সুযোগ মেলে, কারণ সে সময়ে কয়েক বছর পশ্চিমবঙ্গ শাখার দায়িত্ব সম্পাদক হিসেবে এই প্রাবন্ধিকের ওপরে ছিল। ২০০৩ সালে “অখিল ভারতীয় ভাষা সাহিত্য সম্মেলন” সংস্থার পক্ষ থেকে মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরে সর্বভারতীয় অধিবেশনের মঞ্চে দেশের অন্যান্য সাহিত্যিকদের সঙ্গে ‘ভারত ভাষাভূষণ’ উপাধি প্রাপক বিনয় মজুমদারের নামও ঘোষিত হয়। সংবাদটি তখন ‘বর্তমান’ দৈনিকে প্রকাশিত হবার ফলে বহুজনের দৃষ্টিও আকৃষ্ট হয়।
যাই হোক, ভালোয় ভালোয় কাজটি সম্পন্ন হবার পর বাকি থাকলো এই সম্মাননার শংসাপত্র ও স্মারক কবির হাতে তুলে দেওয়া। ব্যাধি ও বার্ধক্যজনিত দুর্বল দেহে তাঁর পক্ষে কলকাতার অনুষ্ঠানে আসার সাধ্য বা সাধ কোনটাই ছিলো না। এর পরে একদিন সকালে গেলাম, সঙ্গী দুজন সাহিত্যপ্রেমী, বি ই কলেজের প্রাক্তনী দেবাশিস গাঙ্গুলি ও কেন্দ্রীয় যুবকল্যাণ বিভাগের আধিকারিক অভিজিৎ বসু। গন্তব্য বনগাঁ সংলগ্ন শিমূলপুর গ্রাম, রেল স্টেশনের নাম ঠাকুরনগর। শোনা গেলো কবি ঐ স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম অঞ্চলের আশেপাশেই নাকি বেশির ভাগ সময় থাকেন, স্থানীয় কিছু ছেলেছোকরাদের সঙ্গে- জ্যামিতির নানা আঁকজোক ও জটিল হিসাব নিয়ে। প্রসঙ্গত তিনি গণিতে অসামান্য প্রতিভার পরিচয় রেখেছেন- এবং শোনা যায় যে তাঁর গবেষণামূলক পাণ্ডুলিপির খাতাগুলি গ্রন্থাগারে রক্ষিত আছে।
কবির বাড়িটি স্টেশনের কাছেই, সবদিক খোলাজমির মাঝে একতলা ছোট বাড়ি- সামনে একটু দালান। সামনে গিয়ে দেখি বাড়িটি ফাঁকা-কোন জনমানুষের দেখা নেই। আমরা যখন চিন্তিত হয়ে ফিরবো কিনা ইতস্তত করছি, তখনই চোখে পড়লো পরনে লুঙ্গি, ছোট চুল এক বৃদ্ধ ব্যক্তি এক তরুণের সঙ্গে আমাদের দিকেই আসছেন। কাছাকাছি হতেই কবি জানতে চাইলেন- আমরা কেন এসেছি, কোথা থেকে ইত্যাদি। সংক্ষেপে নিজেদের পরিচয় দিয়ে কলকাতা থেকে আসছি বলাতে বিশেষ ভাবান্তর তো নয়ই বরং বাক্যালাপের কোন আগ্রহই দেখা গেলনা। তাঁর ভাবভঙ্গীতে মনে হলো যে আর কথা না বাড়িয়ে আমাদের ফিরেই যেতে বলছেন। “মানুষ নিকটে এলে প্রকৃত সারস উড়ে যায়” – এটা তাঁরই পঙক্তি।
এমন অদ্ভুত আচরণের একটা ইতিহাস আছে। আগেই জানা গেছে যে বিনয় মজুমদার তাঁর একদা সহযাত্রী সুপ্রতিষ্ঠিত কবি ও তথাকথিত বন্ধুদের কাছে বিস্মৃত ও পরিত্যক্ত একটি নাম। কলেজ স্ট্রিট পাড়ার প্রকাশকরা তাঁর কবিতার বই বিক্রি করে ব্যবসা করেন, অথচ কবির প্রাপ্য টাকা তো দূরের কথা, ঠিকমত সৌজন্য প্রকাশ ও যোগাযোগ রাখার প্রয়োজন বোধ করেন না। অন্য এক কবি তাঁর বিষয়ে সম্প্রতি লিখেছিলেন যে কলকাতা তাঁকে আঘাতে আঘাতে একদা জর্জরিত করার ফলে তাঁর এই মুখ ফিরিয়ে নেওয়া ও অবিশ্বাস। ১৯৭০ সালে কবি তাঁর পিতামাতার শিমূলপুরের বাড়িতে চলে এসে তাঁদের সঙ্গে বাস করতে থাকায় তাঁর মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে। বিনয় মজুমদারের স্লেটার হস্টেলের সহপাঠী ইঞ্জিনিয়ার শিশির কুমার নিয়োগীর ভাষায় –‘শিবপুর বি ই কলেজের প্রাক্তনী হিসেবে আমরা বস্তুতঃ কিছুই করিনি কবির জন্যে। বি ই কলেজের প্রাক্তনীদের মধ্যে হকি খেলোয়াড় ক্লডিয়াস, লেখক নারায়ণ সান্যালরা যে স্থান পান, সেই স্থান বিনয় কখনো পাননি। অথচ বিনয় মজুমদারের মত প্রতিভাবান কবি ও মানুষ অন্য কোন দেশে জন্মালে এবং অন্য কোন প্রতিষ্ঠানের ছাত্র হলে অনেক কিছুই হয়তো পেতেন। বি ই কলেজ অকৃতজ্ঞ। বনগাঁ অঞ্চলের এক বিনয়-ভক্ত মানুষ টেলিফোনে আমাকে বলেছিলেন, ”আপনারা কলকাতার মানুষেরা স্বার্থপর। দমদম স্টেশনের ওপাশে যারা থাকেন তাঁরা লোক দেখানো। সবই করেন। আপনারা কবির প্রতি ভালবাসা দেখাতে যাবেন না। আমরা যা করার করেছি। আপনারা এলে ঠাকুরনগর-বনগাঁর মানুষেরা ভালভাবে নেবেনা।“ কবির কাছাকাছি যে সব সম্পাদক ও প্রকাশকেরা কবির লেখা নিয়ে প্রকাশ করে কবিকে মাসের পর মাস, বছরের পর বছর ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট-এ রেখেছেন তাঁদের অবদানের কথা কে অস্বীকার করবে?’
বিশিষ্ট ইঞ্জিনিয়ার ও বিনয়-সুহৃদ শিশির কুমার নিয়োগীর কথার সারবত্তা অস্বীকার করা যায়না। এছাড়াও কবির তথাকথিত আত্মগোপন ও মনোরোগের অন্যতম কারণ তাঁর বহু-আলোচিত ব্যর্থ-প্রেম বলে অনেকে মনে করেন- পরে সে প্রসঙ্গে আসা যাবে।
তখন আমরা তিনজন বিনয় মজুমদারের মুখোমুখি এবং তিনি আমাদের সঙ্গে বাক্যালাপ শুরু করছেন না। আমরা সবাই অস্বস্তিতে তো বটেই, রীতিমতো উদ্বিগ্ন, পাছে আমাদের এতদিনের পরিকল্পনা ও প্রয়াস, শিবপুর, হাওড়া অঞ্চল থেকে আমাদের এতদূর কবি-সন্দর্শনে আসা সবই যদি বিফলে যায়-পরের কাছে তো বটেই, নিজেদের কাছেই কি উত্তর দেব? কিভাবে কবির আস্থা অর্জন করা যায় বুঝতে পারছিলামনা, কবির তরুণ সহচরের দিকে অসহায় চোখে আমরা তাকাচ্ছিলাম কোন ইঙ্গিতের বা আশ্বাসের আশায়। তখন মানসিক রোগ থেকে সদ্য আরোগ্যপ্রাপ্ত বিনয় মজুমদারের খামখেয়ালী-পনার নাগাল পাওয়া দুস্কর।
অবশেষে বরফ গললো- নিরুপায় হয়ে আমাদের বলতে হোল – আমরা বি ই কলেজ, শিবপুরের প্রাক্তনী, আপনার কলেজ-জীবনের কিছু গল্পও শুনেছি। সঙ্গে সঙ্গে প্রায় ভোজবাজির মত কাজ শুরু। কবির প্রশ্ন- এখনো কি ইন্সটিটিউট হলে আমার নাম লাগানো ফলকটা আছে? বি ই কলেজ স্টুডেন্টস ইউনিয়নের আমি প্রথম সভাপতি ছিলাম। কবির সুখস্মৃতি জাগ্রত হল। স্বভাবত অন্তর্মুখী, একাধারে সাহিত্য ও বিজ্ঞানে অসাধারণ প্রতিভাসম্পন্ন বিনয় মজুমদার নিজের পছন্দের ক্ষেত্র- অর্থাৎ সারস্বত-সাধনা ও কলেজ স্ট্রিটে সাহিত্যজগতের সঙ্গে আড্ডায় আগ্রহী থাকলেও, ছাত্রমহলে তাঁর জনপ্রিয়তা তাঁকে ছাত্রসমাজের নেতৃত্বে স্থাপিত করেছিল ১৯৫৬ সালে কলেজের শতবার্ষিকী উৎসবের সময়ে। কিন্তু কালের করাল গ্রাসে নিশ্চিহ্ন সেই ঐতিহাসিক ফলকটি যাতে খোদিত ছিল কবির নাম- সেটির পুনর্নির্মাণ ও সংরক্ষণ একান্ত প্রয়োজন। অসহায়ভাবে আমাকে উত্তর দিতে হলো যে আমি নিজে খবর নিয়ে আপনাকে জানাব। মিথ্যা অস্তিত্বের কথা বলে তাঁর মত বৃদ্ধকে স্তোকবাক্যে ভোলাতে সঙ্কোচ বোধ হল। তাঁর মত কলুষমুক্ত ব্যক্তির সামনে এটা হয়তো স্বাভাবিক। অল্প কিছু সৌজন্যমূলক কথাবার্তার পরে তাঁর হাতে তুলে দিলাম সর্বভারতীয় সাহিত্য-সম্মান-“ভারত-ভাষাভূষণ”-এর মানপত্র ও সামান্য সম্মান-দক্ষিনা। এবার ফেরার পালা। আমাদের যাত্রা-সঙ্গী শ্রী বসুকে কর্মসূত্রে নিয়মিত ঐ অঞ্চলে আসতে হত- তাঁর সূত্রে পরে জেনেছি কবি বেশ আনন্দিত হয়েছেন এবং পরে এক সময় তা প্রকাশ করেছেন তাঁর এই কবিতায় –
ভারত ভাষাভূষণ সম্মান
একটি দৈনিক পত্রিকা ‘বর্তমান’।এই দৈনিক পত্রিকায় একটি খবর ছাপা হয়েছে, কবি বিনয় মজুমদারকে ভারত ভাষাভূষণ সম্মান।
এই হল সংবাদের শিরোনামা।
কলকাতা ২০০৩ সালের ‘ভারত ভাষাভূষণ’ সম্মান প্রদান করা হচ্ছে কবি বিনয় মজুমদারকে। অখিল ভারতীয় ভাষা সাহিত্য সম্মেলনের পশ্চিমবঙ্গ শাখার বার্ষিক অনুষ্ঠানে এই উপাধি সম্প্রতি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রদান করা হয়েছে।
আমি আসলে মোটে পাঁচটি ভাষা জানতাম।
কিন্তু মাতৃভাষা ছাড়া অন্য সব ভাষাই প্রায় ভুলে গেছি।
যাই হোক, এই ভারত ভাষাভূষণ সম্মান আমি গর্বের সঙ্গে গ্রহণ করলাম। এবং ভাবছি যে বর্তমানে ২০০৪ নয়, এখন ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দ – যার ফলে পুরস্কার প্রদান যথাযথ হয়েছে।
(গ্রন্থসূত্রঃ ”শিমূলপুরে লেখা কবিতা”/প্রকাশকঃ কবিতীর্থ/প্রকাশকালঃমাঘ১৪১১, জানুয়ারি ২০০৫)
সুধী পাঠকের স্মরণে থাকতে পারে যে এর ঠিক পরের বছরেই ২০০৫ সালে কবির প্রতি সাহিত্যরথীদের দৃষ্টিপাত ঘটে – যার ফলে সে বছরেই কবি পান রবীন্দ্র-পুরস্কার ও আকাদেমি পুরস্কার।
এবার “ফিরে এসো চাকা” কাব্যগ্রন্থের উদ্দিষ্ট “গায়ত্রীকে” প্রেসিডেন্সি কলেজে ছাত্রাবস্থায় কিশোর বিনয়ের সঙ্গে একই কলেজের ছাত্রী গায়ত্রীর পরিচয়। শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের মতই অতি সাধারণ,বর্মা থেকে আশ্রয়ের খোঁজে এখানে আসা এক পরিবারের সন্তান বিনয় মজুমদারের বিপরীতে গায়ত্রী চক্রবর্তী সেকালের তুলনায় যথেষ্ট আধুনিকা ছিলেন বলেই শোনা যায়- পরবর্তীতে উচ্চতর শিক্ষার্থে বিদেশগমন ও আন্তর্জাতিক খ্যাতি “এলিট” তথা বুদ্ধিজীবী মহলে। একটি আলোচনাচক্রে কলকাতায় ২০১০ সাল নাগাদ তাঁকে দর্শনের সৌভাগ্য হয়েছিল। সেদিনের আলোচ্য বিষয়ের অন্তিম লগ্নে অযাচিতভাবেই কবি বিনয় মজুমদারের প্রসঙ্গের অবতারণা- কবিতায় উল্লেখিত “গায়ত্রী” ই আমি একথা কি ঠিক? আবার নিজেই উত্তর দিলেন- একদিক থেকে ঠিক, আরেক দিক থেকে ভুল। এবার বি ই কলেজের এক প্রাক্তনী তরুণ বসুকে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাঠানো তাঁর ই-মেল এর অংশবিশেষ উদ্ধার করা যাক- I am certainly fortunate that a major poet like Binay Majumdar found Gayatri Chakraborty a subject of his poetry. I also remember him as a young man sitting at a distance at Calcutta Coffee House looking at me with a deep glance. But we did not know each other at all. (Source “Alumni Link”, Alumni Day 25 December 2016 Issue)
কবি কালীকৃষ্ণ গুহ একটি আত্মকথনমূলক গদ্যে একদা জানিয়েছেন যে তাঁদের নবীন বয়সে কফিহাউস ও বইপাড়ায় যাতায়াতের কালে তাঁরা বিনয় ও গায়ত্রীকে জানতেন এবং তাঁদের পরিশীলিত উচ্চ পর্যায়ের প্রেমপর্ব সম্মন্ধে অবহিত ছিলেন। ইডেন হিন্দু হস্টেলের আবাসিক থাকা কালেই কিশোর বিনয় কবিতা লিখতেন, পরবর্তীতে বি ই কলেজের ছাত্রজীবনে মাদাম গুসেভার কাছে তিন বছর রুশ ভাষা শিক্ষা করে সে ভাষায় ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন এবং বেশ কিছু রুশ কারিগরি ও রুশ সাহিত্যের বই অনুবাদ করেন- সেগুলি জনপ্রিয় হয়। তাঁর অনূদিত বইয়ের সংখ্যা ইংরাজি থেকে ১টি ও রুশ থেকে ৫টি। তাঁর মৌলিক গণিত বিষয়ে গবেষণামূলক গ্রন্থ ৩টি ও এই বিষয়ে অপ্রকাশিত পাণ্ডুলিপির বেশ কয়েকটি খাতা রাখা আছে।গদ্য বইয়ের সংখ্যা ৬টি এবং কাব্যসমগ্রসহ কাব্যগ্রন্থ প্রায় উনিশটি।
এই শহরের উপরিলিখিত দুটি সেরা মহাবিদ্যালয়ে বিনয় মজুমদার যথাক্রমে দু বছর বিজ্ঞান শাখায় ও চার বছর কারিগরি শাখায় (Mechanical Engineering) ১৯৫৭ সালে স্নাতক হন। এর ফলে এক স্বকীয় মনোভঙ্গি ও বিজ্ঞানমনস্কতা তাঁর কবিতায় লক্ষ্য করা যায়। একদা কবির কবিতাকে বিষ্ণু দের অনুসারী মনে হলেও, পরবর্তীতে কবিকে জীবনানন্দ দাশের উত্তরসূরি বলে ধরা হয়। অনেকে মনে করেন যে এক বিশেষ নারীর সঙ্গে কবির নিজের ব্যাক্তিগত সম্বন্ধ ও আকর্ষণের কাব্যিক অনুসন্ধান উত্তীর্ণ হয় সেই সম্বন্ধেরই এক মহাজাগতিক ব্যাপ্তিতে। মহাবিশ্ব ও জগৎসংসারের যাবতীয় ঘটনা-প্রবাহ যে কার্যকারণ সূত্রে অচ্ছেদ্য সম্পর্কে আবদ্ধ- এই প্রত্যয়ে তিনি স্থিতধী ছিলেন শেষ পর্যন্ত।
I, like many others, didn’t know that poet Binay Majumdar was an Engineer.. An excellent article on the poet whom we have only neglected. This one is a good tribute for the poet.
যুগপৎ বহু চর্চিত এবং অবহেলিত সে’ প্রাক্তনীর ওপর সুন্দর প্রতিবেদনটি যেমন সে’ প্রতিভার কয়েকটি অজানা দিক তুলে ধরে কিছু কৌতুহলের অবসান করিয়ে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্ভ্রম এক মাত্রা তুলে দিলো, তেমনই মনে রেখে গেল এক বিষাদ ভরা অনুভুতি…..
তিলক ঘোষাল
যুগপৎ বহু চর্চিত এবং অবহেলিত সে’ প্রাক্তনীর ওপর সুন্দর প্রতিবেদনটি যেমন সে’ প্রতিভার কয়েকটি অজানা দিক তুলে ধরে কিছু কৌতুহল নিবারণ করে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্ভ্রম এক মাত্রা তুলে দিলো, তেমনই মনে রেখে গেল এক বিষাদ ভরা অনুভুতি…..
তিলক ঘোষাল