আমাদের ৭২-৭৭ রিইউনিয়ন
@অব্যায় মিত্র, ১৯৭৭ সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং
প্রতিবার হয়, এবারেও হলো। রবিবার ডিসেম্বরের ২২ তারিখ এম এন দস্তুর কোর্টইয়ার্ডে। মানে কলেজ ক্যাম্পাসে আমাদের ৭২-৭৭ ব্যাচের বাৎসরিক রিইউনিয়ন। আমাদের অর্গানাইজার কাম আহ্বায়ক শ্রী শ্রী অসীম দেব মহাশয় প্রতি বছর দিল্লি থেকেই সমস্ত কলকাঠি নাড়েন। কলেজের পারমিশন, লন বুকিং, হেডকাউন্ট, বাজেটিং, ক্যাটারিং, মেনু, হেল্পডেস্ক, গেস্ট হাউসের লাউঞ্জ, স্যারদের জন্য আলাদা জায়গা, …… তারপর কে নিরামিষ খাবে, কে মাংস খাবে, কে মাছ খাবে, অথবা কে শুধুই মিষ্টান্ন খাবে? কে সারপ্রাইজ দেবে? বৃষ্টি হলে কি হবে? গাড়ি কোথায় পার্কিং হবে? ডেরাইভারের কি খাবে? হাজারো ঝামেলা ……… তবে তিনি দক্ষ বাজিকর। আমরা কামদেবকে যেমন কাঠিবাজি করি, তেমনি আবার উৎসাহও দিয়ে যাই।
রবিবার সকাল দশটা নাগাদ কলেজের ফার্স্ট গেট দিয়ে ঢোকার সময় সিকিউরিটি প্রশ্ন করে বসলো, ৭৭ ব্যাচ? বললাম হ্যাঁ, ৭৭ ব্যাচ। গেট খুলে দিলো আর এম এন দস্তুর যাওয়ার রাস্তাও দেখিয়ে দিলো। পরে অন্যদের কাছেও শুনলাম যে সবাইকে গেটেই জানিয়ে দিয়েছে, ৭৭ ব্যাচ? তাহলে ঐদিকে এম এন দস্তুর হলে চলে যান। বুঝলাম কামদেব সিকিউরিটিকে বলে রেখেছে।
হলে ঢুকেই দেখি রেজিস্ট্রেশন কাউন্টারের সামনে একজন মহিলা রেজিস্ট্রেশন বা হেল্পডেস্ক কাউন্টার ম্যানেজ করছেন। গত কয়েক বছর ধরে উনিই এই দায়িত্বে আছেন। উনার কাছে প্রিন্টেড তালিকা ছিল। আমাদের (স্বস্ত্রীক) নাম ও দক্ষিণা এন্ট্রি করিয়ে দিলেন। ইভেন্ট গ্রুপে আগেই জানা গেছে যে ১১৭ জন কনফার্ম করেছে, যদিও গত কয়েকদিন যাবত শেয়ার বাজারের সূচকের মতন আমাদের হেডকাউন্ট সংখ্যা ওঠানামা করেছে। একসময় ১৩৭ জন হয়েছিল। অবশেষে দিনের শেষে রেজিস্ট্রার থেকে জানা গেলো এসেছে ১০৮ জন। এবারের সম্মেলনে তিনজনের কলেজ মাঠে প্রথম অংশগ্রহণ করার কথা, দুজন জানিয়েছে যে আসবে, আর তৃতীয় জন না জানিয়ে এসে চমক দেবে। ভুঁড়ি শুভাশীষ আর রমণী সমীর প্রথমবার এলো। আর বুদ্ধু উৎপল কনফার্ম করেও আসেনি, এবং সে যে আসবে না, সেটা জানানোর সৌজন্যবোধের প্রয়োজনও মনে করে নি।
দেখি মাঠ জুড়ে সামিয়ানা, আর বড়ো বড়ো ছাতার তলায় চেয়ার, টেবিল দিয়ে সাজানো। অনেকেই এসে গেছে। কেউ একা, কেউ সপরিবারে। আমেদাবাদের মিহির হালদার এসেছে সবার আগে, মানে আর্লি বার্ড। আরও অনেকেই ইতিমধ্যেই এসে গেছে। অসীমের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সকাল ৯টা থেকেই একদিকের টেবিলে দুধ-চিনি দেওয়া ভাঁড়ের গরম চা লাগাতার পরিবেশন হয়ে চলেছে। আর পাশেই বড় কড়াইয়ে জিলিপি ভাজা হচ্ছে। লেটোর স্ত্রী কলপী সবে এসেছে, বাদলের স্ত্রী স্বাতী টেনে নিয়ে গেলো, “খাও খাও গরম জিলিপি খাও” বলে নিজে কয়েকটা নিলো, কলপীর হাতেও দু’তিনটে ধরিয়ে দিলো। যারা চরম সংযমী তাঁরাও একের পর এক জিলিপি তুলে নিচ্ছে। আমিও গরম জিলিপি দিয়ে সকালের উপবাস ভাঙ্গলাম। অসীম জানালো যে জিলিপি এগারোটা পর্যন্ত আনলিমিটেড, আর চা দুপুরের খাওয়ার সময় বাদ দিয়ে বিকেল চারটে পর্যন্ত আনলিমিটেড। দেখলাম, জনতা চা আর জিলিপি ভালোই টানছে। দুনিয়া কাঁপানো ৭৭ ব্যাচের সব দিগ্বিজয়ী সহপাঠীরা একে একে মঞ্চে প্রবেশ করছেন। রেজিস্ট্রেশন ডেস্কে টাকা জমা দিয়ে প্রথমেই চায়ের কাউন্টারে। কেউ কেউ আবার সোজা চায়ের আসরে, দু’কাপ চা খেয়ে মনে পড়লো, আরে? টাকা তো জমা দেওয়া হয় নি!
সাড়ে দশটার খানিক পরেই জলখাবারে কড়াইশুঁটির কচুড়ি, আর আলু ফুলকপির তরকারি। এরপর চা জিলিপি কাউন্টারের পাশে আমরা ব্যাটাছেলেরা জমিয়ে আড্ডা মারছি এমন সময় দেখি সমীর সরকার ওরফে রমণী ওরফে সাহিত্য সম্রাট লম্বা কালো কোট, কাঁধে ঝোলানো ব্যাগ, প্রফেসরদের মতো ভঙ্গী, বুক পকেটে কয়েকটা কলম নিয়ে মঞ্চে প্রবেশ করছে। রমণী ঠিকই করেছিল যে এবার আসবে, তবে সেটা গোপন রেখেছিল, এসে “সারপ্রাইজ” দেবে। কিন্তু CIA KGB সোর্স থেকে অসীমের কাছে আগেই কনফার্মড খবর ছিল যে রমনী আসছে, আর রেজিস্ট্রেশন ডেস্কে প্রিন্টেড লিস্টে ওঁর নাম অসীম আগেই লিখে রেখেছিল। আম জনতা এতসব জানে না। রমণীকে দেখেই আমি উত্তেজিত হয়ে কি রে বলে চীৎকার করতেই ,পাশে দাঁড়ানো জয় খপ করে আমার হাতটা চেপে ধরে, চাপা গলায় বলে উঠলো “আরে চুপ কর, উনি কলেজের প্রফেসর!” আরেক পাশ থেকে মোটা অনুপম গম্ভীর হয়ে বললো, চেহারা দেখে বুঝতে পারছিস না? দ্যাখ, কোট পড়ে এসেছেন। সেনাও ঘাড় নেড়ে কথাটাকে সমর্থন করলো। আমি তাড়াতাড়ি এগিয়ে গিয়ে প্রফেসর রমণীকে নিয়ে এসে একে একে ছাত্রদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে লাগলাম, ইনি জয় মানে সোমনাথ, ইনি মোটা অনুপম ইত্যাদি। প্রফেসর দেখি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে শেষে করুণ স্বরে বলে উঠলো ” আরে, আমি ইলেক্ট্রিক্যালের সমীর সরকার তোদের সাথেই পাশ করেছি”।
ওদিকে মাঠ জুড়ে ছোট-বড় গ্রুপে দলে দলে আড্ডা জমে উঠেছে, অনেকে আবার নিজেদের পুরনো হোস্টেলগুলোয় ঢুঁ মারতে ছোটো ছোটো গ্রুপে বেড়িয়ে গেছে। কয়েকজন মহিলার ইচ্ছে হয়েছে ক্যাম্পাস ঘুড়বেন, স্বেচ্ছায় দায়িত্ব গ্রহণ করলো আমাদের হিমাই। টোটো রিক্সায় কয়েকজন ভ্রমণে গেলেন।
আমাদের সময়ের কয়েকজন প্রফেসর ইতিমধ্যেই এসে গেছেন। প্রতিবারই আসেন। অন্যবারের মতো এবারেও লাউঞ্জের ভিতরে বড় টেবিলটা ঘিরে নিজেদের আড্ডায় জমে গেছেন। আমাদের ব্যাচের প্রফেসর আলফা (গৌতম) দেখভাল করছে। এবার সবাইকে চমক দিয়ে অসীমের সাথে এলেন এখনের ডিরেক্টর প্রফেসর মূর্তি। চমকের উপর চমক, তিনি এসেছেন আমাদের ৭২-৭৭ সালের হলদে টি-শার্ট গায়ে। আমি নিঃসন্দেহ যে হলুদ টি-শার্ট গায়ে ডিরেক্টরকে আমাদের ৯৫% জনতাই চেনে না। অনেকেই ভাবছে, উনিও আমাদেরই ব্যাচমেট। আর আমাদের কে কখন যে কি বিশেষ বিশেষ বাক্য বলে বসে, তাই অসীম চেঁচিয়ে সবাইকে জানালো, মানে সাংকেতিক সাবধানবাণী শুনিয়ে দিলো যে ডিরেক্টর প্রফেসর মূর্তি এসেছেন। সঙ্গে সঙ্গে এক মিনিটের নীরবতা। তারপরই কয়েকজনের হুড়োহুড়ি লেগে গেলো, করমর্দন করবে, ফটো তুলবে। একজন আবার সেলফি তোলার অনুরোধ করলো। সমস্যা বুঝে অসীম ব্ল্যাক ক্যাট কমান্ডো কায়দায় ওনাকে নিয়ে এম এন দস্তুর লাউঞ্জে চলে গেলো, যেখানে আমাদের সময়ের প্রফেসররা আছেন। আর অঞ্জনাকে দায়িত্ব দেওয়া হলো দেখভাল করার। আমাদের চিত্র সাংবাদিক ফটোজ্যোতি (প্রসূনজ্যোতি) আর কেষ্ট সোহম ক্যামেরা নিয়ে চলে গেলো। প্রফেসর মূর্তি আমাদের মতনই ভাঁড়ের দুধ-চিনির চা খেলেন। খানিক বাদে আরও এক কাপ চা আর সাথে জিলিপি গেলো। উনি দ্বিতীয়বার জিলিপি খাবেন না। অসীম গিয়ে জানালো যে এটা বাঙালী জিলিপি। এই শুনে উনি জানতে চাইলেন বাঙালী জিলিপি আর তেলেগু জিলিপির ফারাক কোথায়? ব্যাস এবার বোঝাও!! যাই হোক, জিলিপি ওনার ভালোই লেগেছিল, নইলে দ্বিতীয়বার কেন খাবেন? উনি ছিলেন ঘন্টা দেড়েক, পুরো সময়টাই ছিলেন আমাদের সময়ের প্রফেসরদের সাথে। যাওয়ার আগে আমাদের অসংখ্য ধন্যবাদ জানালেন। বললেন, আমরাই প্রথম ব্যাচ যারা ওনাকে এরকম অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ করেছি। আমাদের তরফ থেকে উনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে আর ফুলের তোড়া আর সাম্মানিক ফ্লাওয়ার ভাস উপহার দিয়েছি।
ইতিমধ্যে উত্তম, কাজা, গুড্ডি (শান্তনু), জয়, মোটা অনুপম ও আমি একসাথে আড্ডা দেওয়ার মাঝে কাজা বা গুড্ডি জানালো এক নতুন খবর দিলো। ক্লক টাওয়ারের ধারে ঝিল দেখে আমাদের ভিয়েতনামি কবিবর হোচি’র (অপূর্ব) মনে প্রশ্ন জেগেছে যে এই ঝিলটা কবে কাটা হলো? এখানে তো এত বড়ো ওয়াটার বডি আগে ছিলো না। কাজা বা গুড্ডি তখন ওনাকে জানিয়েছে যে বছর তিনেক আগে করোনার সময় এই পুকুর কাটা হয়েছে এবং হোচি “ওহ, তাই?” বলে মেনেও নিয়েছে।
আমাদের ব্যাচের প্রথম বিবাহিত শ্রী শ্রী শৈবাল সরকার অনবদ্য কৌশলে নিজের বৌএর সাথে উত্তমের বৌ ও আমার বৌকে নিয়ে চুপচাপ কলেজ দেখাতে বেড়িয়ে গেছেন। আর ব্যাচের অফিসিয়াল ফটোগ্রাফার শ্রী শ্রী ফটোজ্যোতি (প্রসুনজ্যোতি) ও শ্রী শ্রী কমরেড কেষ্ট সোহম ঘুড়ে ঘুড়ে সবাইর ছবি তুলছে। শেখ শৈবাল ও আরও অনেকেই অনর্গল ছবি তুলে চলেছে। চাটু সুব্রত একটা দারুণ রঙচঙে জামা গায়ে এসেছে। ৫০% শতাংশ ফটোতে সে আছে।
ইতিমধ্যে অসীম এক চমক দিয়ে ময়দান জমিয়ে দিলো। আগে থেকেই সে বিয়ের বর-বৌয়ের জোড়মালা নিয়ে এসেছে। শৈবাল সরকার আর ওঁর বৌ’ ঋতুকে পাকড়াও করে রীতিমত অনুষ্ঠান করে মালাবদল করিয়ে দিলো। চতুর্দিকের জনতার প্রশ্ন আজ কিসের এনিভার্সারি? অসীম বাজারে ছেড়ে দিল, আজ থেকে পঞ্চাশ বছর আগে এই দিনে শৈবাল নাকি ঋতুকে প্রথম প্রপোজ করেছিল। বোঝো ব্যাপার!!! শৈবাল ঋতু দুজনেই অবাক। পরে অসীম জানালো যে এটা সে ময়দানে হঠাতই এমনভাবে ছেড়েছে যে শৈবাল-ঋতুকে কিছু ভাবার বা বলার সুযোগই দেয়নি। যাই হোক, তুমুল উলুধ্বনি এবং অন্যান্য নানান রকমের ধ্বনির মাঝে ওঁদের মালাবদল হয়ে গেলো।
ওদিকে দীনু ঢাক-ঢোল নিয়ে মাঠের এক কোনে বক্স লাগিয়ে গান শুরু করেছে। সাথে চাটু ও রামুর কোরাস। কোথা থেকে খানচাচা নারদও এসে জুড়ে গেলো। নাচতে নাচতে অসীম দত্তের জুতোর সোল খুলে গেলো, আর সেই সোলটা নিয়ে আমিও দু এক পাক নেচে নিলাম। এরই এক ফাঁকে ভিয়েতনামি কবি হচি নিজের কবিতা পাঠ করে শোনালেন।
দুপুরের খাবারের ডাক এসে যেতেই সবাই লাইন লাগিয়ে দিলাম। মেনু বাসন্তী পোলাও, আলুভাজা, ডাল, জাম্বো সাইজের ফিশ ফ্রাই, মাটন, চাটনি, পাঁপড়, সন্দেশ, আইসক্রীম ও মিষ্টি পান। যারা মাটন খাবে না তাঁদের জন্য মাছ। নিরামিষেরও ব্যাবস্থা ছিল। সেদিন ফিশ ফ্রাই সত্যি অসাধারণ হয়েছিল। আর জাম্বো সাইজ। আমাদের আন্তর্জাতিক ফিস ফ্রাই বিশেষজ্ঞ শ্রী শ্রী সন্দীপ রুদ্র জানিয়ে গেলো, দারুণ হয়েছে, কিন্তু সাইজ বড় বলে ২০ নম্বর কাটা গেলো, নইলে ১০০ র কাছকাছি নম্বর দেওয়া যেত।
খাওয়ার পরে প্রতিবারের মতন এবারেও স্যারদেরকে ফুলের তোড়া, আর সৌজন্য উপহার দেওয়া হলো। স্যারদের সাম্মানিক অনুষ্ঠানের দায়িত্বে ছিল আমাদের তিনকন্যা অঞ্জনা, সংঘশ্রী, আর রত্না। প্রফেসর জয়দেব সরকার কলেজের ঠিক বাইরেই থাকেন, আর্কিটেকচারের ছেলেমেয়েরা ওনার বাড়ি গিয়ে ফুলের তোড়া, আর সৌজন্য উপহার দিয়ে এলো।
উপরের ফটো – শ্রীমতী কাকলি ঘোষ ও অন্যরা, best smile প্রতিযোগিতায়
তারপর আমাদের জন্য গিফটের পালা। আমাদের মধ্যে যারা পুরস্কৃত হলো
• শ্রীমতী রুমা রুদ্র, প্রথম আর্লি বার্ড মহিলা
• শ্রী শ্রী মিহির হালদার, প্রথম আর্লি বার্ড ব্যাটাছেলে
• শ্রীমতী সুপর্ণা নাথ, মোস্ট gorgeous মহিলা
• শ্রীমতী কাকলি ঘোষ, for best smile
• শ্রী শ্রী রামু অরূপ, ফর বেস্ট টাক, এই প্রতিযোগীতায় অনেকেই ছিলেন।
• শ্রীমতী স্বাতী মোদক, সবার শেষে গেলেন (মহিলা)
• শ্রী শ্রী টাকলু চন্দন, সবার শেষে গেলেন (ব্যাটাছেলে)
সেদিনের সময়টায় কিছুক্ষনের জন্য যেন ৭২-৭৭ এর দিনগুলিতে ফিরে গিয়েছিলাম। ক্যাম্পাস জীবনের সেই উত্তাপ, আমাদের বয়েসগুলো কোথায় যেনো হারিয়ে গেলো। অনেকেই সেদিন সুযোগ বুঝে কৈশোর যৌবনে ব্যাবহার করা বিশেষ বিশেষ বাক্যগুলো ব্যাবহার করেছে।
খাওয়া দাওয়ার শেষে হালকা রোদে গা এলিয়ে চেয়ারে বসে গ্যাজানো। আর তখনই বোঝা যায় যে বয়স হয়েছে, মনে তেজ থাকলেও শরীরে ক্লান্তি এসে গেছে। বিকেলে জনগণ ধীরে ধীরে চলে যেতে শুরু করেছে। আমরা কজন চায়ের কথা তুলতেই রামু এগিয়ে গিয়ে ক্যাটারারের লোককে ডেকে চা বানাতে লাগিয়ে দিলো। শুধু তাই নয়, রামু হাতে হাতে চায়ের ভাঁড়ও ধরিয়ে দিলো। সেদিন আমরা নিজেদের অজান্তেই কত ভাঁড় যে চা মেরে দিলাম নিজেদেরই খেয়াল নেই। চা পান শেষ করে সবাই আসছে বছর আবার হবে বলে অসীমকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানিয়ে যে যার বাড়ির পথে রওনা দিলাম।
তবে যেটা সবথেকে দুঃখ দিলো, অনেক প্ল্যান করে, টেক্সাস মার্কা হ্যাট আর কালো চশমা চোখে ভেবেছিলাম সবাই তারিফ করবে, উল্টে জনতা আমাকে ক্লিন্ট মেহমুদ নামে ডেকে বসলো। বেক ৭৭ এর জনতা টেক্সাস মার্কা ফিল্মের হিরোদের কদর দেয় না। সামনের বছর চাটুর মতন জামা গায়ে যাবো।
অতি উত্তম লেখার জন্য অব্যয়কে বাহবা জানাই। সব রকম ক্রিয়া কলাপের বর্ণনা দিয়েছিস।বিভিন্ন শ্রেণীর গিফট প্রাপ্ত জনগণের তালিকায় অন্তিম নাম লেখা দেখলাম-শ্রী শ্রী টাকলু চন্দন (ব্যাটাছেলে),এটাতো প্রশংসার কথা নয়,পরশুরামের কচি সংসদ গল্পের চরিত্র, পেলব রায়(পুং) এর মতো হয়ে গেল।এর প্রতিশোধ নেবো আগামী বছরে।
বি ই কলেজের অনেক ছাত্রদের সাথে ভালো পরিচয় আছে। একদিনের জন্য হলেও সকলে যে একত্রিত হয় আর হুল্লোড়ে সারাদিন কাটিয়ে দেয়, এর জন্য বাহবা দিতেই হয়।