জানা / অজানা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
সংকলক: @দেবাশীষ বন্দ্যোপাধ্যায়, ১৯৮১ ইলেকট্রনিক্স ও টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং
একথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সারা জীবনে বহু অম্ল-মধুর অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে গেছেন। জীবনে বহু শোক-তাপও পেয়েছেন, কিন্তু কখনই আশাহত হন নি।। তাঁর সেই অভিজ্ঞতার প্রকাশ আমরা দেখতে পাই তাঁর সাহিত্যে, তাঁর চিঠিপত্রে এবং তাঁর বিশাল কর্মকান্ডে। তাঁর জীবনের কয়েকটি ঘটনার কথা ধারাবাহিক ভাবে তুলে ধরার ইচ্ছে আছে।
********
প্রশংসা ও প্রতিবাদ
সেদিন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা কিছু চিঠিপত্র দেখছিলাম। একটা চিঠি দেখলাম কবি লিখেছেন – To Mrs. (Frieda Hauswirth) Das. এঁনার নাম তো আগে কখনও শুনিনি। কে এই Frieda Hauswirth Das? যদিও আমার অজ্ঞতা অতলান্তিকের চেয়েও গভীর, তবু মনে হল অনেকেই হয়তো এঁনার সম্বন্ধে জানেন না। একটু খোঁজ নিয়ে দেখলাম এঁনার জন্ম সুইস্যারল্যান্ডে, উচ্চশিক্ষা নিয়েছেন ক্যালিফোর্নিয়ার Leland Stanford University ও California Institute of Art. সেখানেই বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হন সুগার টেকনোলজি পাঠরত এক ভারতীয়র (Sarangadhar Das) সঙ্গে ১৯১৭ সালে।
দাস দম্পতি ভারতে আসেন ১৯২০ সালে। Frieda Hauswirth ভারতে ছিলেন প্রায় আট বছর। তাঁদের বিচ্ছেদের কারণ হিসাবে বলা হয় স্বামীর কর্মক্ষেত্রে অর্থাৎ ওড়িশার গহন জঙ্গলে সুগার প্লান্টেশন ফার্মে যাওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব হয় নি। তবে তিনি এরপর বহুবার ভারতে আসেন। ভারতীয় নারীদের সাংসারিক জীবন যাত্রার সঙ্গে বিশেষ ভাবে পরিচিত হন। ভারতবর্ষের নারীসমাজ নিয়ে বেশ কয়েকটি বই লিখেছিলেন। তার মধ্যে দুটি বিখ্যাত বই হল : A Marriage to India, এবং Purdah: The Status of Indian Women. ইন্টারনেটে সার্চ করে বই দুটো পেয়ে গেলাম।
এই Purdah বা ভারতীয় নারী সমাজের পর্দা-প্রথা নিয়ে বইটি রবীন্দ্রনাথ পড়েন। বইটি সম্বন্ধে উচ্ছসিত প্রশংসাও করেন (কবির কথায়: I read your Purdah with keen pleasure and can unhesitatingly recommend it to all those who want a genuine and penetrating picture of Indian womanhood) । কিন্তু এক জায়গায় তিনি প্রতিবাদও করেন। আসলে বইটিতে লেখিকা ভারতীয় নারী সমাজের সমস্ত কুপ্রথার বিরুদ্ধে ব্রহ্মানদের বিশেষভাবে দায়ী করেন। যেমন তিনি লিখছেন: ..”There could be no uncontested or secure supremacy for Brahmins until woman lost her high estate, stood degraded and branded as an inferior being in the eyes of men, and was moulded into a mindless slave to religious dictation”
রবীন্দ্রনাথ এর প্রতিবাদ করে চিঠিতে লেখেন: ”I do not quite agree when you make the Brahmins responsible for all the evils existing in our society and run them down from Manu’s day to ours. I think there is some overemphasis in your account. The Brahmins in the middle ages reflected the times as much as others did, and often associated themselves with movements which we would not support now not because they diabolically wanted to injure society but simply because they had to represent their own age. As a matter of truth, they belonged to the aristocracy of intellect, and maintained a purity of ideals and an austerity of habits which have done great benefit to our people of generations.
Another point has to be considered. The social aberrations which appear can be on the surface of a nation’s life are not indicative of the essential nature of its peoples. No one would claim that witch-hunting, inquisition, and other such social crimes of the West indicate some radical and characteristic traits of the European mind. In India, too, we had and still have our social wrongs but they are on the surface and merely prove that our daily life has yet to be fully harmonized to our ideals. In medieval India great saints and seers took up this great work of social uplift, and had the courage to offer relentless fight to customs which wronged our humanity. They often belonged to the lowest strata of society and yet had the closer cooperation of the high-caste Hindus. In their campaign for social reform they were joined by their own daughter, wife and other women members of their family who were held in great veneration by the public…..”
রবীন্দ্রনাথ লিখছেন তো অনেক তবে পড়েছেন বোধহয় আরও অনেক। দেশ বিদেশ থেকে বহু চিঠিপত্র, পত্রিকা আর বই তাঁর কাছে আসত। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সেগুলো পড়ে তিনি যথা সম্ভব উত্তর দিতেন। বইগুলো শান্তিনিকেতনের লাইব্রেরিতে দিয়ে দিতেন। বাংলা ইংরেজি মিলিয়ে প্রায় ১২৫টি বইয়ের ভূমিকা লিখেছেন। তাঁর চিঠিপত্রের মধ্যে যে কত মণিমুক্তো লুকোনো আছে তা কে জানে। একটা চিঠি পড়তে গিয়ে একজন বিখ্যাত রবীন্দ্রানুরাগী লেখিকা (এঁনার লেখায় রবীন্দ্রনাথের “নটীর পূজা” নাটকের উল্ল্যেখ সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের অভিনয়ের প্রশংসা পাই) ও তাঁর লেখা বইয়ের সন্ধান পেয়ে গেলাম। রবীন্দ্রনাথকে জানার কোনো শেষ নেই। সশ্রদ্ধ চিত্তে তাঁকে প্রণাম জানাই।
তথ্য সংগ্রহ ও কৃতজ্ঞতা স্বীকার:
1. Selected Letters of Rabindranath Tagore – edited by Krishna Dutta and Andrew Robinson. Published by Cambridge University Press. Letter #265
2. A Marriage to India – by Frieda Hauswirth (Mrs. Sarangadhar Das), Published by: Hutchinson & Co. (Publisher) Ltd. London.
3. PURDAH : The Status of Indian Women by Frieda Hauswirth (Mrs. Sarangadhar Das), Published by: Kegan Paul, Trench, Trubner & Co. Ltd. London.
Add comment