এলোমেলো বেড়ানো: ধারাবাহিক সপ্তম পর্ব
©অমিতাভ রায়, ১৯৭৯ ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং
আগের পর্ব পড়তে হলে, লিংক
ডাং
রাজা-রাজরার রাজত্ব অনেককাল আগেই সমাপ্ত। এমনকি সাবেক রাজারা প্রতি মাসে যে মাসোহারা পেতেন তা-ও পঞ্চাশ বছরের আগে বন্ধ হয়েছে। তবে ভারতের পাঁচজন রাজা কিন্তু এখনও নিয়মিত রাজন্য ভাতা পেয়ে যাচ্ছেন। এঁরা কারা? কোথায় তাঁদের রাজত্ব?
ভারতের গুজরাট রাজ্যের ডাং জেলায় রীতিমতো সরকার স্বীকৃত এই পাঁচ রাজার বসবাস। এমনকি ১৯৭১-এ সংবিধানের ২৬তম সংশোধন করে ‘রাজন্য ভাতা আইন’ আইনত বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার পরেও ডাং জেলার পাঁচ রাজাকে সরকারি কোষাগার থেকে নিয়মিত রাজন্য ভাতা দেওয়া হয়।
ডাং মানচিত্র
ডাং জেলার বিভিন্ন প্রান্তে নির্দিষ্ট কিছু গ্রামে এই পাঁচ রাজার রাজত্ব। সবমিলিয়ে ৩১১টি গ্রামে ছড়িয়ে আছে এই পাঁচ রাজার রাজত্ব। রাজারা হলেন– করণ সিং যশবন্তরাও পুওয়ার (গাধবি), ভাওয়ার সিংহ সূর্যবংশী (আমলালিঙ্গা), তপাতরাও আনন্দরাও পুওয়ার (দাহের-আমলা), ধনরাজসিংহ চন্দ্রসিংহ সূর্যবংশী (ভাসর্না) এবং ত্রিকমরাও সাহেবরাও পুওয়ার (পিম্পরি)। নিজের নিজের নিয়ন্ত্রণে থাকা গ্রামের সংখ্যা এবং সেইসব গ্রামের জনসংখ্যার উপর নির্ভর করে ভাতার অঙ্ক।
ডাং, একটি জেলার নাম। ইদানীং অবশ্য সরকারি নথিতে ডাংস্ বলে লেখা হচ্ছে। গুজরাটের দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে মহারাষ্ট্রের সীমানা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দারা মূলতঃ ভিল জনজাতির মানুষ হলেও চলিত ভাষ্যে ডাঙ্গি বলেই পরিচিত।
স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে ‘ডাং’ শব্দের অর্থ পাহাড়ি গ্রাম। ‘ডাং’ শব্দের আরেকটি অর্থ আছে, যার মানে বাঁশ অথবা বাঁশের স্থান। নামটি আবার রামায়ণের দণ্ডকারণ্যের সঙ্গে জড়িত। কথিত আছে যে, বনবাসের সময় রামচন্দ্র নাসিক যাওয়ার পথে এই এলাকা দিয়ে গিয়েছিলেন।
পাহাড়-অরণ্য-উপত্যকা সমৃদ্ধ ১৭৬৪ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই জেলায় কমবেশি সওয়া দুই লক্ষ মানুষের বসবাস। পূর্ণা, অম্বিকা, গিরা, খাপড়ি ও ধোদাদ নদী এই জেলার মধ্যে দিয়ে বয়ে চলেছে। এছাড়া রয়েছে অসংখ্য ঝরনা, ঝোরা, জলপ্রপাত। পূর্ণা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে ডাং জেলায় একটি এলাকা রয়েছে। এই অভয়ারণ্যের বাদবাকি অংশ গুজরাটের তাপি জেলা এবং মহারাষ্ট্রের নন্দুরবার জেলার মধ্যে ছড়িয়ে রয়েছে।
আর রয়েছে গুজরাটের একমাত্র শৈল শহর সাপুতারা। সুরাট আর মুম্বাই থেকে অনেকেই সপ্তাহান্তে সময় কাটাতে আসেন। তবে সারা বছর নয়। বর্ষা মরশুমের পরের কয়েক মাস। একে প্রতিকূল আবহাওয়া, তার উপরে ডাং জেলায় আসা মোটেও সহজ নয়। ব্রডগেজ রেল লাইন অনুপস্থিত। কাছাকাছির মধ্যে রয়েছে নভসারি, ভালসাদ আর সুরাট রেল স্টেশন। সবগুলোই ডাং জেলার সদর থেকে একশো কিলোমিটারেরও বেশি দূরে অবস্থিত। গুজরাট রাজ্য পরিবহণের বাসে করে অবশ্য জেলা প্রশাসনের সদর আহ্ওয়া থেকে সুরাট, ভাদোদরা ও আহমেদাবাদে যাওয়া যায়। তবে সাপ্তাহিক ছুটি কাটাতে যারা আসেন তাঁরা সাধারণতঃ নিজেরাই গাড়ি চালাতেই স্বচ্ছন্দ।
সরকারি ভাষা গুজরাটি, হিন্দি ও ইংরেজি হলেও এখানকার মানুষ সাধারণতঃ ধানকি, গুজরাটি, গামিত, মারাঠি ও কাজ চালানোর মতো হিন্দিতে কথা বলতে অভ্যস্ত। কৃষিকাজই প্রধান জীবিকা। ভিল, কোঙ্কানি এবং ওয়ার্লি সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষ বনাঞ্চলে কৃষিকাজে নিযুক্ত। সবচেয়ে দুর্বল জনজাতি সম্প্রদায়ের কোতোয়ালিয়ারা বাঁশের ঝুড়ি, চাদর ইত্যাদি বুনে দিন গুজরান করে। এছাড়া ডাং-এর বাসিন্দারা কন্দ সহ জঙ্গল থেকে বেশ কিছু পণ্য সংগ্রহ করে। ২০০৬ সালের অরণ্যের অধিকার আইন প্রবর্তিত হওয়ার পরও তেন্ডু পাতা, বাঁশ, মহুয়া, মধু, কন্দ, ফল, ঔষধি গুল্ম এবং কাঠ সংগ্রহ করাই অনেকের প্রধান জীবিকা। গবাদি পশু পালনেও অনেকের অন্নসংস্থান হয়। যখন চাষের ফলন কম হয়, তখন বছরের বিভিন্ন সময়ে গোচারণ, শিকার এবং মাছ ধরার উপর অনেককে নির্ভর করতে হয়। তবে এখানকার বাসিন্দাদের অনেকেই এখন প্রতিবেশী রাজ্য মহারাষ্ট্রের আখের খেতে চাষের কাজে যুক্ত। অনেকে আবার চিনি কারখানার শ্রমিক।
ভারত সরকারের পঞ্চায়েতি রাজ মন্ত্রক ২০০৬-এ ডাং জেলাকে একটি অর্থনৈতিকভাবে দুর্দশাগ্রস্ত জেলা হিসাবে চিহ্নিত করে। ফলে ডাং গুজরাটের ছয়টি জেলার মধ্যে একটি, যা বর্তমানে ব্যাকওয়ার্ড রিজিয়ন গ্রান্ট ফান্ড (BRGF) থেকে আর্থিক সহায়তা পায়।
ডাং-এর পাঁচজন রাজা বর্তমানে ভারতের একমাত্র বংশানুক্রমিক শাসক। ব্রিটিশ আমলে ডাং-এর পাঁচ জনজাতি রাজা এবং ব্রিটিশ রাজের মধ্যে বেশ কয়েকটি যুদ্ধ হয়েছিল। ডাং-এর ইতিহাস অনুসারে, ‘লস্করিয়া আম্বা’-তে সবচেয়ে কঠিন যুদ্ধ হয়। পাঁচটি রাজ্যের রাজারা ব্রিটিশ শাসনের হাত থেকে ডাং-কে রক্ষা করার জন্য একত্রিত হয়ে ১৮৪১-এ লড়াই করেন। যুদ্ধে হেরে যাওয়ার পর ব্রিটিশ বাহিনী একটি আপস করতে রাজি হয়। ১৮৪২-এ স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুসারে ব্রিটিশদের অরণ্য এবং ডাং-এর প্রাকৃতিক পণ্য ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছে নিঃসন্দেহে এই চুক্তি ছিল অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কারণ ডাং জেলার অরণ্যের প্রধান সম্পদ সেগুন গাছ সংগ্রহের এমন সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করা মোটেও সমীচীন নয়। তার পরিবর্তে ব্রিটিশ শাসককে ডাং-এর পাঁচ রাজাকে প্রায় তিন হাজার রৌপ্যমুদ্রা দিতে হয়। বর্তমান রাজারা ভারত সরকারের কাছ থেকে সেই সুবাদেই ভাতা পেয়ে চলেছেন, যা তাঁদের আয়ের প্রধান উৎস। তাছাড়া রাজারা বছরে ১০টি সেগুন গাছ বিক্রি করতে পারেন। ব্রিটিশ সরকার নয়, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে ডাং-এর রাজাদের চুক্তি হয়েছিল বলে সারা দেশে রাজন্য ভাতা বিলুপ্ত হয়ে গেলেও ডাং-এর রাজারা সেই আইনের আওতায় পড়েননি।
সারা বছর রাজাদের খোঁজ পাওয়া কঠিন। না আছে তাঁদের রাজপ্রাসাদ, না আছে সৈন্যসামন্ত-দাসদাসী। ভাসর্না-র রাজা ধনরাজসিংহ চন্দ্রসিংহ সূর্যবংশী ভোর পাঁচটা নাগাদ এক কাপ চা খেয়েই ঝটপট টিউবওয়েলের জলে স্নান সেরে হাল-বলদ নিয়ে খেতের কাজ শুরু করে দেন। সঙ্গে থাকেন তাঁর প্রাপ্তবয়স্ক পুত্ৰরা। সত্তর ছুঁই ছুঁই রাজার সারা বছরই একই নিয়ম। সূর্য ডোবার পর তাঁদের গৃহে প্রত্যাবর্তন। রাজপ্রাসাদ নয়, গোবর লেপা দেওয়ালের উপর করোগেটেড টিনের চালার নীচে মাথা গোঁজার ঠাঁই। সারাদিনের পরিশ্রমে ক্লান্ত রাজা দু’ মুঠো অন্ন কোনওরকমে গলাধঃকরণ করে রাজকার্য শুরু করেন। না, কোনও দরবার নেই। বরং রাজাকেই তাঁর রাজত্বের বিভিন্ন প্রান্তের বাসিন্দাদের খোঁজখবর নেওয়ার জন্য নিত্যদিন দৌড়ঝাঁপ করতে হয়। এর জন্য মাস গেলে রাজা ভাতা পান ৪৭৭৫ টাকা। তিনি ৬৩টি গ্রামের রাজা।
আমলালিঙ্গা-র রাজা ভাওয়ার সিংহ সূর্যবংশী ১১৫টি গ্রামে রাজত্ব করছেন। গর্বের সঙ্গে উচ্চারণ করেন যে তিনি অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। তাও আবার ইংরেজি মাধ্যমের ইশকুলে। ১৯৮৪তে বাবার মৃত্যুর পর রাজা হয়ে যাওয়ার জন্য আর লেখাপড়ার সুযোগ হয়নি। তাঁর রাজন্য ভাতা মাসে ৬০০০ টাকা। যৌথ পরিবার। বাড়ছে পরিবারের সদস্য সংখ্যা। কৃষিকাজ করেই জীবনধারণ। কষ্টেসৃষ্টে দিনগত পাপক্ষয়। রাজত্ব থেকে কোনও কর আদায়ের সুযোগ নেই। তবে দিনের শেষে নিজের এলাকার গ্রামবাসীদের সামনে রাজা হিসেবেই তিনি উপস্থিত হন, এবং এই বিষয়টা তিনি রীতিমতো উপভোগ করেন।
পিম্পরি-র ত্রিকমরাও সাহেবরাও পুওয়ার ৬৩টি গ্রামের রাজা। ৬২ সদস্যের যৌথ পরিবার। রাজন্য ভাতা মাসে ৬৫০০ টাকা। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচ চালানো কঠিন। তবুও তিনি খুশি। কারণ, তাঁর এলাকার মানুষ তাঁকে রাজা বলে সম্বোধন করে এবং তিনি সরকারি নথিতে রাজা বলেই স্বীকৃত।
পাঁচ রাজার খোঁজে মাঠে-ময়দানে দৌড়ঝাঁপ করে লাভ নেই। রাজপ্রাসাদ তো দূরের কথা কারও পরনে রাজবেশটুকুও নেই। মাথায় নেই পাগড়ি বা মুকুট। দিনমানে আর পাঁচজন কৃষকের মতো তাঁরাও চাষের কাজ করেন। সন্ধ্যায় কোনও গ্রামের বাদী-বিবাদীদের নিয়ে আলোচনায় বসেন। যেন এক ভ্ৰাম্যমান রাজদরবার। পাঁচ রাজার এটাই রোজনামচা।
বছরের একটা নির্দিষ্ট সময়ে কিন্তু একসঙ্গে পাঁচ রাজার দর্শন পাওয়া যায়। হোলির সময়, প্রতি অর্থবছরের শেষে রাজারা ১৮৪২-এর চুক্তি অনুযায়ী রাজন্য ভাতা নেওয়ার জন্য রীতিমতো ধুমধাম করে ঢাকঢোল বাজিয়ে দলবল নিয়ে জেলার প্রশাসনিক সদর আহ্ওয়াতে উপস্থিত হন। এই উপলক্ষ্যে আহ্ওয়া রীতিমতো উৎসবের সাজে সেজে ওঠে। সরকারি ভাতা ১৮৪২ থেকে পাওয়া গেলেও দরবার সাজিয়ে হৈ-হুল্লোড় করে রাজন্য ভাতা নেওয়ার প্রথা ১৮৯৪ নাগাদ শুরু হয়। তখন নাকি একটানা ১৫ দিন ধরে মেলা-উৎসব চলত। সে বড় সুখের সময়। এখন মেরেকেটে ৩ দিন। আহ্ওয়ার জন্য তা-ই যথেষ্ট বলে সকলে মেনে নিয়েছে। যে শহরে অন্য কোনও বিনোদনের বন্দোবস্ত নেই সেখানে একটানা ৩ দিন!
ঘোড়ার গাড়ি চড়ে রাজারা নির্দিষ্ট দিনে আহ্ওয়াতে চলে আসেন। এ তো আর যেমন তেমন আসা নয়, রীতিমতো রাজকীয় আগমন। সেদিন রাজাদের পরনে রাজকীয় বেশভূষা ও পাগড়ি। গলায় ঝোলানো থাকে ব্রিটিশ আমলের রাজা পঞ্চম জর্জের প্রতিকৃতি খচিত আসল রৌপ্যমুদ্রা। সঙ্গে থাকে রাজত্বের বহু বাসিন্দা। ঝলমলে পোশাকে নাচ-গান পরিবেশন করতে করতে গ্রামবাসীরা জেলার প্রশাসনিক সদর শহরে প্রবেশ করেন। ঢাক-ঢোল বাজে। শঙ্খের আওয়াজ শোনা যায়। আর বাজে পাওরি। বাঁশির মতো বাদ্যযন্ত্র, তবে বাঁশের তৈরি নয়। একেবারেই স্থানীয় ও প্রচলিত।
অনুষ্ঠানের শুরুতে রাজ্যের রাজ্যপাল শাল ও রাজকীয় স্বীকৃতিপত্র দিয়ে রাজাদের বরণ করেন। পাঁচ রাজাই তো উৎসব অনুষ্ঠানের বিশিষ্ট অতিথি। রাজারা মঞ্চে উপবেশন করার পর রাজ্যের কোনও এক মন্ত্রী রাজাদের সাদর সম্ভাষণ জানিয়ে ভাষণ শুরু করেন। জনজাতিদের জন্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প ও পরিকল্পনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা সমৃদ্ধ ভাষণে অনেক কথা বলা হলেও রাজাদের ভাতা-বৃদ্ধির বিষয়টি অনুচ্চারিত থেকে যায়।
এরপর পাঁচ রাজা একে একে নিজের নিজের রাজত্বের সুখদুঃখের সালতামামি শোনানো শুরু করেন। অবৈধ গাছ কাটার কারণে তাদের ক্ষয়প্রাপ্ত বনভূমি রক্ষা করার জন্য রাজারা সরকারের কাছে আবেদন জানান। ব্রিটিশ রাজত্বে ১৮৮০-র দশকে ডাং জেলার অরণ্যকে ‘সংরক্ষিত’ ঘোষণা করে অরণ্য এলাকা সীমাবদ্ধ করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। ফলে ১৮৮৭ নাগাদ, ডাং-এর বাসিন্দাদের জন্য ৫৪ হাজার হেক্টর চাষযোগ্য জমি ছিল। আজও তার কোনও পরিবর্তন হয়নি। সরকারের কাছে রাজাদের আবেদন চাষযোগ্য জমি যেন বাড়ানো হয়। অরণ্য অধিকার আইন (FRA 2006) নিজেদের এলাকায় প্রয়োগের জন্য সরকারের কাছে রাজারা আবেদন করেন। প্রতি বছরই একই আবেদন। নিয়মতান্ত্রিক ভাষণ। কাজের কাজ কিছু হচ্ছে কি না বলা মুশকিল। তবে প্রত্যেক রাজাই কিন্তু নিয়ম করে ভাষণ শেষে সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করতে ভুল করেন না।
সব শেষে জেলাশাসক রাজাদের হাতে তুলে দেন এক বছরের রাজন্য ভাতা। সুদৃশ্য থলিতে নগদ টাকা প্রদান করার মুহূর্তে বাজি পোড়ে, গান-বাজনা উচ্চগ্রামে শুরু হয়। আহ্ওয়ার সাদামাটা জীবনে সে এক বিরল মুহূর্ত। রাজাদের সম্মান প্রদর্শন উপলক্ষ্যে আয়োজিত উৎসব যা বাৎসরিক ডাং দরবার নামে পরিচিত, তার খরচ জেলা প্রশাসনের তরফে করা হয়।
এই সমগ্র অনুষ্ঠানের দর্শক পাঁচ রাজার নিয়ন্ত্রণাধীন ৩১১টি গ্রাম থেকে আসা জনজাতির মানুষ। শুধুমাত্র পুরুষ নয়, মহিলাদের উপস্থিতিও উল্লেখযোগ্য। অবশ্যি সেটাই স্বাভাবিক। ডাং জেলায় পুরুষ ও মহিলার অনুপাত একটু ভিন্ন; প্রতি ১০০০ পুরুষের বিপরীতে রয়েছেন ১০০৭ জন মহিলা। এবং ডাং জেলার সাক্ষরতার হার ৭৬.৮ শতাংশ।
ডাং দরবার কিন্তু বছরের কোনও নির্দিষ্ট দিনে আয়োজিত হয় না। সাধারণতঃ হোলির আগের সপ্তাহে আহ্ওয়াতে প্রতি বছর ডাং দরবার অনুষ্ঠিত হয়। দিনক্ষণ মাস দুয়েক আগে সরকারের তরফে ঘোষণা করা হয়। ডাং দরবারের দিনক্ষণ ইদানীং ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হচ্ছে। ইচ্ছে থাকলে এবং সময় সুযোগ হলে একবিংশ শতাব্দীতেও রাজদর্শন করা যায়। তা-ও আবার একসঙ্গে পাঁচ-পাঁচজন রাজা।
** ছবি সৌজন্য: Flickr, Wikimedia, Gujarattourism
** লেখক পরিচিতি – অমিতাভ রায়
প্রশিক্ষিত প্রযুক্তিবিদ ও পরিচিত পরিকল্পনাবিশারদ। পড়াশোনা ও পেশাগত কারণে দেশে-বিদেশে বিস্তর ভ্রমণের অভিজ্ঞতা। তার ফসল বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় বই। জোয়াই, আহোম রাজের খোঁজে, প্রতিবেশীর প্রাঙ্গণে, কাবুলনামা, বিলিতি বৃত্তান্ত ইত্যাদি।
পরিষ্কার লেখা, আমাদের দেশের কোণায় কোণায় কত যে অজানা আছে।
অনেক কিছুই জানা গেলো।
ভারী ভাল লাগল এই অন্যরকম রাজকথা পড়ে। ঝরঝরে লেখার গুণে মনটা হারিয়ে গেল যেন এক বিভূতিভূষণের জঙ্গলরাজ্যে।