সাহিত্যিকা

চার বাঁদরের গল্প

চার বাঁদরের গল্প
বন্দনা মিত্র ১৯৮৬ মেটালার্জিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং

ভানু, সুর্মা, মিঠি, আর চুন্নি – চারটেতেই বদের রাজা। চারটে বাঁদরকে – একটা চেন্নাই, একটা হায়দরাবাদ, একটা কলকাতা আর একটা দিল্লি – মানে দেশের চার কোণ থেকে জড়ো করে খাঁচায় ঢোকানো হয়েছে এই লেডিস হোস্টেলে। প্রাইভেট হলেও নামী ইঞ্জিয়ারিং কলেজ। খুবই ডিসিপ্লিন। সব চলে ঘড়ি ধরে। সকাল আটটার পর মেসে গেলে সেদিনের মত ব্রেকফাস্ট নট। সকাল দশটায় ওয়ার্ডেন আসবে সবাই ক্লাসে গেছে কিনা চেক করতে। লাঞ্চে ঠিক একঘন্টার ছুটি। সন্ধে সাতটার মধ্যে হোস্টেলে না ফিরলেই গার্জেনকে ফোন। ছুটির দিনে হোস্টেল থেকে বেরোতে হলে গার্জেনের চিঠি মানে ই-মেল লাগবে। তাও সেটার মেয়াদ সকাল দশটা থেকে সন্ধে ছটা অবধি। রীতিমত রেজিস্টারে নাম লিখে ঢুকতে বেরোতে হয়।

আর এই নিয়মের বজ্র আঁটুনিতে হাঁফিয়ে ওঠে সেই চার বাঁদর। হাজার হোক, এই সেদিন অবধি ওরা বন্ধুদের সঙ্গে স্টাডি সার্কেল করেছে প্রায় সারা রাত ধরে। আড্ডা মেরেছে কাফেতে বসে সারা সন্ধে, ছেলে মেয়ে একসঙ্গে নাটকের রিহার্সাল থেকে শুরু করে রাত জেগে ক্রিকেট বিশ্বকাপ দেখা – কুড়ি বাইশজনের হৈচৈ করতে করতে পাহাড়ে ট্রেকে যাওয়া – মানে বাঁদরামির চুড়ান্ত। ওদের আরো রাগ হয়, কারণ ওদের ক্লাসের ছেলেগুলোর কিন্তু কোন বাধা নিষেধ নেই। ওঁরা যখন খুশি যেখানে খুশি যেতে পারে। একটা ভাসা ভাসা নিয়ম থাকলেও কেউ পাত্তা দেয় না। একসঙ্গে ল্যাবে কাজ করে ছেলেরা যখন দল বেঁধে সন্ধেটা শহরে গিয়ে ঘুরে বেড়ানোর প্ল্যান করে, ঠিক তখনই সুরসুর করে এঁদের হোস্টেলে ঢুকতে হয়। কে বলবে ওদের আঠারো বছর বয়েস, কে বলবে ওরা এ বছর প্রথম ভোটার কার্ড পেয়েছে, কে বলবে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় ওদের মতামতের একটা গুরুত্ব আছে। ক্লাসের ছেলেরা এই নিয়ে হাসি ঠাট্টাও করে। পাঁচটা বাজলেই শুরু করে “খুকুমণিরা এবার বাড়ি ফেরো, নয়ত আন্টি বকবে। যাও ঘরে গিয়ে দুধের বোতল নিয়ে বোসো।” গায়ে লাগে বই কি।

অতএব ওয়ার্ডেনের সঙ্গে প্রায়ই লাগে। ওরা যত যুক্তি তক্কো করে ওয়ার্ডেন ততই রুলবুক দেখায়। ভদ্রমহিলা এমনিতে বেশ, মা মাসিমা গোছের চেহারা। ওদের বুঝিয়ে বলেন “তোমাদের মত অল্প বয়সী মেয়েদের যেন কোন বিপদ না হয়, সেইজন্যই তো এত কড়াকড়ি। তোমাদের গার্জেনরা ভরসা করে আমাদের এখানে রেখে গেছেন, কিছু হলে সম্পূর্ণ আমাদের দায়িত্ব, নয় কি?”
কখনও আবার রেগে যান, “নিয়ম হলো নিয়ম। সব জেনেশুনেই তো এসেছ এখানে।“ অতএব দু’পক্ষের চোর পুলিশ খেলা হয়। চার বাঁদরে সুযোগ পেলেই হোস্টেল পালায়, একটা নতুন শহরে এসেছে, বাড়ির কেউ নেই যে খবরদারী করবে, মানে স্বেচ্ছা স্বাধীন। বন্ধুদের সঙ্গে একটু শহরটা ঘুরে ফিরে দেখবে না? রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে স্ট্রিট ফুড খাবে না? ঘুরে ঘুরে উইনডো শপিং করবে না? রোজ সকালে উঠেই বই খাতা নিয়ে কলেজে যাবে আর সন্ধেবেলায় সাতটার মধ্যে গ্রীল আঁটা হোস্টেলে চলে আসবে! তাই কি হয় নাকি? বন্ধুদের সঙ্গে সেটিং থাকে, ওরা রেজিস্টারে সই সাবুদ করে রাখে সময়মত।

ওয়ার্ডেন আটটা সাড়ে আটটা নাগাদ নিজের কোয়ার্টারে চলে যান। তারপর চুপিচুপি কেউ একজন গেট খুলে দেয়, আর বাঁদরগুলো পা টিপে টিপে যে যার রুমে চলে যায়। তবে ন’টার বেশি রাত করা যায় না, কারণ ওয়ার্ডেন আবার রাত দশটার পর একপ্রস্থ টহল দেন, সবাই ফিরেছে কিনা নিজের চোখে দেখে নেন একবার।
কিন্তু বারে বারে তো ঘুঘু ধান খেয়ে যায় না। সেবারে অরিজিত সিং এর একটা অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ওদের শহরে। না দেখে তো ছাড়া যায় না। ওরা সবাই অরিজিতের অন্ধ ফ্যান। অনেক কষ্টে টিকিট কাটা হয়েছে। অনুষ্ঠান শুরু হবে সন্ধে সাতটায়, আর চলবে রাত দশটা অবধি। মানে যাওয়ার সময় স্রেফ কেটে পড়তে হবে। ফেরার পরে কি হবে সে দেখা যাবে। যে যার বাড়িতে বলে রাখবে, কমপ্লেন এলে যেন ঘাবড়ে না যায়। কি আর হবে, একটু বকা ঝকা করবে হয়তো। ফাইনও করতে পারে। এইসব তুচ্ছ কারণে তো অরিজিত সিং এর অনুষ্ঠান মিস করা যায় না! বিশেষ করে যখন ক্লাসের ছেলেগুলো সকলের চোখের ওপর দিয়ে হাসতে হাসতে, কলার তুলে অনুষ্ঠান দেখতে যাচ্ছে।

অনুষ্ঠান শেষ হতে হতে সাড়ে দশটা বেজে গেল। ওরা এতক্ষণ একটা ঘোরের মধ্যে ছিল যেন। কী ভাল গেয়েছেন শিল্পী, মুখোমুখি দেখতে পাওয়া, জন্ম সার্থক। কিন্তু এতক্ষণে খেয়াল হল যে এবার তো ফিরতে হবে, কে জানে কী হবে আজ! ওদের ক্লাসের ছেলেরা অবশ্য অপেক্ষা করছিল সবাই একসঙ্গে ফিরে যাবে বলে। যতই ঠাট্টা করুক, লেগপুলিং করুক, আসলে তো সব বন্ধুই। ওদের সঙ্গে গল্প করতে করতে, আড্ডা মারতে মারতে কলেজ ক্যাম্পাসে ফিরে এল ওরা।

রাত তখন প্রায় বারোটা। ওদের চারজনের বাড়ি থেকেই ফোন এসেছে এর মধ্যে, ওয়ার্ডেন কমপ্লেন করেছেন। তাঁকে জানানো হয়েছে যে “চিন্তা করবেন না, ওরা বারোটার মধ্যে ফিরে আসবে।” ওয়ার্ডেন বলে দিয়েছেন “সবাইকে হোস্টেল থেকে এক্সপেল করা হবে।” মানে এক কেলেঙ্কারিয়াস ব্যাপার। বাড়ির লোকজনও রেগে গেছেন, “এত সিরিয়াস মামলা যখন, তোরা গেলি কেন? অন্তত পারমিশন নিতে হত। আমাদের বললে আমরাই নাহয় কথা বলতাম।”

যাক গে, সে মা বাবারা তো বকেই থাকে, তারা আর কি বুঝবে যে ঐ শ্রীমতী ভয়ংকরী কিছুতেই ওদের ছাড়তেন না, ওঁর ধারণা মেয়েরা সন্ধে সাতটা পনের র এক সেকেন্ড বেশি বাইরে থাকলেই তাদের “ইজ্জত খতরে মে হ্যায়”। অতএব … ওরা পায়ে পায়ে হোস্টেলের দিকে চলল। গেটের বাইরেই ওয়ার্ডেন ম্যাম রণংদেহী মূর্তিতে দণ্ডায়মান। সাসপেনশন লেটার ইতিমধ্যেই টাইপ করা হয়ে গেছে, শুধু সই করা বাকি, ওটা সুপারিটেন্ডেন্ট ম্যাম করবেন, কাল সকালে। চার বাঁদর ততক্ষণে একটু নার্ভাস হয়ে পড়েছে, জলটা এতদূর গড়াবে বুঝতে পারে নি। ভেবেছিল বকা ঝকা করে, গার্জেনকে একটা চিঠি লিখে, অল্প স্বল্প ফাইন করে মিটে যাবে। এতো দেখছি কেস হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে?

পরেরদিন সকালে সুপারিটেন্ডেন্ট ম্যাম এর অফিসে হাজিরা দিল চার বাঁদর। তিনি খুব ভারিক্কী জাঁদরেল মহিলা, চশমার ফাঁক দিয়ে খানিকক্ষণ ওদের দিকে যেভাবে বিস্ময়াহত তাকিয়ে রইলেন তাকে ভাল বাংলায় বলে নিরীক্ষণ। তারপর ওয়ার্ডেন ম্যামকে বললেন, সব গার্জেনদের গুগল মিটে ডেকে নিতে, এক্সপেল করার আগে তাঁদের ব্যাপারটা ভাল ভাবে বুঝিয়ে দেওয়া দরকার। তথাস্তু।

সব মায়েরা তাঁদের মেয়েদের গুণের ফিরিস্তি শুনলেন। অবশ্যই বাবারা এক্ষেত্রে সাধারণত এড়িয়ে যান “তোমার মেয়ে, কি করেছে তুমিই দেখ।” মেয়ে ভাল রেজাল্ট করলে বা কোন পুরস্কার টুরস্কার পেলে অবশ্য আলাদা কথা। যাই হোক, মায়েরা নিজের নিজের ছানাপোনাদের ভালই চেনেন, তাই খুব একটা আশ্চর্য হলেন না। অনুরোধ করলেন, এবারের মত মাপ করে দিতে। কতৃপক্ষ রাজি নয়। অনেক অনুনয় বিনয় করেও যখন ভবি ভুলল না তখন কাতর আবেদন জানালেন ” অন্তত মাসখানেক সময় দিন। আমাদের বাইরে পিজি খুঁজতেও তো সময় লাগবে।”
তাতেও ম্যাম রাজি ন’ন। তখন আর উপায় না দেখে মায়েরা মাতৃরূপেন সংস্থিতা রূপ ছেড়ে শক্তি রূপে সংস্থিতা হলেন। মিঠির মা প্রশ্ন করলেন
– ওদের সঙ্গে তো ওদের ক্লাসের ছেলেরাও ছিল, যারা দেরিতে ফিরেছে। ছেলেদের হোস্টেলেও তো রাত দশটার মধ্যে ফিরতে হয়। ওদের কী হল?
“তা বলতে পারব না”, সুপারিন্টেন্ডেন্ট ম্যাম জানালেন।
– কিন্তু আমাদের তো জানা দরকার। একই ইন্সটিটিউশনে তো আলাদা আলাদা রকম নিয়ম হবে না।
“না, ছেলেদের হোস্টেলে অত কড়াকড়ি নেই”, খুব বিরক্ত হয়েই জানালেন ম্যাম।
– কেন নেই? একই ইন্সটিটিউশনে তো এক এক রকম নিয়ম হবে না।
– ছেলে আর মেয়েদের তফাৎ আছে, মেয়েদের একটা সেফটির ব্যাপার আছে তো! কিছু হয়ে গেলে আপনারাই তো আমাদের দোষ দেবেন।

ভানুর মা এবার আসরে নামলেন।
– আচ্ছা, আমাদের মেয়েরা তো ক্লাসের ছেলেদের সঙ্গেই ছিল সারাক্ষণ, ওরাই পৌঁছে দিয়ে গেছে। একা তো কেউ অচেনা কোন জায়গায় ঘুরে বেড়াচ্ছিল না। সেই কথা ভেবে না হয় এবারের মত মাপ করে দিন।
“আমরা নিয়ম ভাঙতে পারব না” ম্যাম খুব গম্ভীর গলায় জানান।
“আরে লন্ডা লোগোকে লিয়ে তো তোড় হি রহে হো” – চুন্নির মা মনে করিয়ে দিলেন।
– ছেলে আর মেয়ের তফাৎ আছে। ওদের হোস্টেলে ঢোকার সময়ও তাই আলাদা। মেয়েদের একটা সেফটির ব্যাপার আছে তো! আপনারা বুঝতে চাইছেন না কেন? কিছু হলে আমার চাকরি চলে যেত।
“কার থেকে কিছু হত? ক্যাম্পাসে আপনাদের নিরাপত্তা রক্ষী নেই? বাইরের লোক অফিস আওয়ার্সের পর ঢুকতে পারে?” জানতে চান সুর্মার মা।
– না অবশ্যই না।
– তবে? আর কে আছে?
”আরে, ঐ সব ছেলেদের থেকেই, আবার কার থেকে? কেয়া, ইতনা ভি সমঝতে নেহি হ্যায় কেয়া?” একটু রুক্ষ ভাবেই ঝাঁঝিয়ে ওঠেন ম্যাম।
এবং সেখানেই খুব ভুল করলেন। সুর্মার মা জননী দেখতে বেবাক “ভোলি সি নরম সি” হলে কি হবে, উনি ডাকসাইটে সুপ্রীম কোর্টের আইনবিদ – তাবড় তাবড় উকিলকে ঘোল খাইয়ে দেন। উনি শান্ত গলায় প্রশ্ন করেন, “মানে আপনি বলতে চাইছেন যে ওদের ক্লাসের ছেলেরা, যারা সন্ধে ছটা অবধি ল্যাবে ওদের পাশাপাশি দাঁড়িয়ে একসঙ্গে টাইট্রেশন করেছে, স্লাইড ক্যালিপার্সে মাপঝোক করেছে বা মাইক্রোস্কোপের তলায় স্লাইড দেখেছে বা একই মনিটরে কোডিং করেছে, তারাই সন্ধে সাতটার পর একা পেলে ওদের সঙ্গে বদতমিজি করবে? ওদের নিজেদের ক্লাসের ছেলেদের সঙ্গেই ওরা সেফ নয়?”
ম্যামএর এবার ধৈর্যচ্যুতি হয়। “দেখুন আপনি ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে পারছেন না, ক্যাম্পাসেও আমরা মেয়েদের সন্ধের পর একা ঘুরতে দি’ না, এখানে সেফটি রুল খুব কড়া।”
“এতে না বোঝার কী আছে? কিন্তু যদি কলেজের ছেলেরাই মেয়েদের জন্য বিপদজনক হয় তবে মেয়েদের সুরক্ষিত রাখতে তো আপনাদের উচিত ছেলেদের সন্ধে সাতটার মধ্যে হোস্টেলে পুরে ফেলা। বাঘ সিংহ বিপদজনক বলে আমরা তাদের খাঁচায় পুরে রাখি, নিজেরা থোরিই না ঘরে খিল ছিটকিনি এঁটে বন্দী থাকি! একটা আঠারো বছরের মেয়েকে আপনি রোজ সন্ধে সাতটার পর ঘরে বন্ধ করে রাখলে সে তো নিয়ম ভাঙবেই। ওদেরও তো ভেলপুরি, বড়া পাও খেতে ইচ্ছে হয়! “
– এটাই নিয়ম। আপনাদের মেয়েদের সেফটির জন্যই …
– আমার একটি ছেলেও আছে, ক্লাস টেনে পড়ে। ওর ক্লাসের কোন মেয়ের মা যদি আমাকে বলেন যে আমার ছেলে ওঁর মেয়েকে সন্ধেবেলা একা পেলে ইজ্জত লুটে নেবে তবে আমি তাঁর নামে মানহানির মামলা করব! কিছু বোঝাতে পারলাম আপনাকে?

ম্যামের গলা ততক্ষণে খাদে নেমে এসেছে। উনি আরো একবার বলেন – “এটা আপনাদের মেয়েদের ভালোর জন্যই … “
– মেয়েদের ভালটা ওদের হাতে ছেড়ে দিয়ে আপনারা বরং নিজেদের ছেলেদের একটু শেখান না। অরক্ষিত মেয়ে দেখলেই ঝাঁপিয়ে পড়তে নেই, ছেলেরা কিছু বুনো জংলি জানোয়ার নয়। মেয়েদের জামাকাপড়, চালচলন যেমনই হোক, যতই পৌরুষ মাথাচাড়া দিক, মানুষের অভিধানে সংযম বলেও একটা শব্দ আছে। সবসময় যা ইচ্ছে তাই করা যায় না, পাওয়া যায় না। ছেলেদের হোস্টেলে ঢোকার সময় পেরিয়ে গেলেও তারা অনায়াসে ঢুকতে পারে, আপনারা কিছু বলেন না, ভাবেন – আরে উঠতি বয়সী ছেলেরা তো একটু আধটু এমন করবেই। আর তারাও ভাবে যে শুধুমাত্র পুরুষ বলেই তাদের নিয়ম ভাঙার অধিকার আছে। আপনি যদি এদের এক্সপেল করেন আমি কিন্তু কলেজের বিরুদ্ধে জেন্ডার ডিস্ক্রিমিনেশনের কেস করব। এটা কিন্তু এখন শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

সুর্মার মা জননী একটু চুপ করেন একটা শ্বাস নেওয়ার জন্য। তারপর একটা মিচকি হেসে বলেন, “অবশ্য এটা মানতেই হবে যে আমাদের মেয়েগুলো আস্ত বাঁদর, আমি বরং বলব, এদের সবাইকে কান মুলে গোটা দুয়েক থাবড়া লাগান, না বলে রাত দুপুরে হোস্টেলে ফিরে আপনার টেনশন বাড়ানোর জন্য। আমি আপনার জায়গায় থাকলে সেটাই করতাম।“

না না, ব্যাপারটা এখানেই মিটে যায় নি। ওদের ক্ষমা প্রার্থনা করে চিঠি দিতে হয়েছিল। “এমন হবে না আর” বলে মুচলেখা দিতে হয়েছিল। ফাইন দিতে হয়েছিল, যেটা আবার মাতৃদেবীরা আদেশ করেছিলেন যার যার পকেটমানি থেকে দিতে হবে। মেয়েরা নিয়ম ভাঙবে আর মা বাবা ফাইন দেবে, এ চলবে না।

চার বন্ধুকে মাসকয়েক অন লাইন টিউশনও দিতে হয়েছিল টাকা জোগাড় করতে তবে শেষমেশ এক্সপেলটা হতে হয় নি।
এবং এরপর থেকে লেডিস হোস্টেলে রাতে ফেরার সময়টা বাড়িয়ে করা হয়েছিল রাত ন’টা।

বন্দনা মিত্র

সম্পাদকীয় সংযোজন
২০১৬ সালের পান্ডিয়া হস্টেলের কয়েকজন।

 

Sahityika Admin

2 comments

  • খুবই প্রাসঙ্গিক এবং সময়োপযোগী লেখা।

  • আমিও হোস্টেলে থাকতাম, এবং এই discrimination face করেছি।
    লেখিকাকে অনেক ধন্যবাদ, সত্য কথা এভাবে তুলে ধরার জন্য।