সাহিত্যিকা

ম্যানলী হ্যারীর সাথে ম্যানলী জার্নী

ম্যানলী হ্যারীর সাথে ম্যানলী জার্নী
শ্রীকুমার ভট্টাচার্য, ১৯৭৯, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং

একঘেয়ে ক্লাস আর ভালো লাগে না। একটু যেন বিরতি দরকার। একে রাত জেগে হুল্লোড় আড্ডা তারপরে আবার তড়িঘড়ি ঘুম থেকে উঠেই সকাল সকাল ক্লাস, বাস্তবিকই অসম্ভব। গত রাতের রেশটা এখনও কাটেনি। খুব ভাগ্য ভালো যে কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। তোতাটা মহা বিচ্ছু। কাল যখন কালো চাদর মুড়ি দিয়ে তিনতলার জানলা গলে কার্নিশে নামলো তখনই আমরা প্রমাদ গুনলাম যে আজ রাতে স্বপনের কপালে দুঃখ আছে। গ্রামের ছেলে প্রতি রাত্রেই সবার আগে ডিনার করে মশারী টাঙ্গিয়ে শুয়ে পড়ে। কার্নিশে নেমে তোতা আবার তন্ময়ের কাছ থেকে একটা দেশলাই নিল। একটু পরে ফিরে এসে দাঁড়াতেই আমাদেরই ভয় পাওয়ার জোগাড়। কালো চাদরে মোড়া ভূতের মুখের থেকে দেশলাইয়ের আলোয় সাদা দাঁত বীভৎস লাগছে। তোতা বলে স্বপন নাকি ওকে জানলা দিয়ে দেখে ভূ—অ—অ—ত বলে চিৎকার করেও আবার পাশ ফিরে শুয়ে নাক ডাকতে শুরু করে।

নিরুৎসাহ না হয়ে এবার তোতা দ্বিগুণ উদ্যোমে আবার ফিরে যায় একটা হেস্তনেস্ত করতে। কিছুক্ষণ পরেই হৈ চৈ চিৎকার। আমরা সব দৌড়ে গিয়ে দেখি তোতার কাঁধে মাথা রেখে স্বপন অজ্ঞান। আমরা চোখেমুখে জল ছিটিয়ে স্বাভাবিক করার পর আসল ঘটনা জানা গেল যে তোতা শেষ পর্যন্ত বেপোরোয়া হয়েই জানলা গলে ওর ঘরে ঢুকে খাটের নীচে শুয়ে কাঁধ দিয়ে খাট উপরে তুলতেই স্বপন হূড়মুড় করে খাট থেকে নেমে দরজা খোলার চেষ্টা করে, আর ঠিক তখনই তোতা খাট থেকে বেরিয়ে স্বপনকে পিছন থেকে জাপটে ধরে ভু—উ—উ—ত বলে অজ্ঞান। আর তোতার কাঁধেই মাথা রেখে।

আজও ফাস্ট ক্লাস মিস্। ক্লাস নোট খাতা নিয়ে নীচে নেমে কমন রুমে ঢুকে খবরের কাগজ দেখতে দেখতেই হ্যারী এসে ঢুকলো। ওর অবস্থা আমার থেকেও খারাপ, বেচারী খুব হোম সিক, ডোভার লেনের বাড়ি থেকে নিয়মিত যাতায়াত করে যদিও হোস্টেলে রুম আছে। হোম – সুইট হোম, ওর জীবনের মন্ত্র হলেও ওর অদ্ভুত বাউন্ডুলে স্বভাব, যে কারণে আমার খুব প্রিয়।

ওর নাম হ্যারী কে রেখেছিল মনে নেই কিন্তু কলেজের অন্যান্য নামকরণের মতোই হ্যারী নাম যথার্থ। আসল নাম অপূ্র্ব দে কিন্তু ওর ওয়েষ্টার্ন কাউ বয় মার্কা পোষাক ও চলাফেলার জন্যই অপূর্ব থেকে হ্যারী। হ্যারী নাম এতোটাই জনপ্রিয় হলো যে ওর আসল নাম ভুলে সবাই হ্যারী বলেই ডাকতে শুরু করলো। বিষয়টা আরো গোল বাঁধলো ওর বাড়ী গিয়ে অনেকে ওর বাবার কাছেই যখন জানতে চাইলো হ্যারী বাড়ী আছে কিনা? হ্যারী প্রচন্ড চারমিনার খোর ছিল। আমি যদিও সিগারেট খেতাম না কিন্তু ও যখন সিগারেট খেত পাশে বোসে কড়া চারমিনারের গন্ধ উপভোগ করতাম।

এ বিষয়ে হ্যারীর নিজের মুখে বলা ঘটনা মনে পড়ছে। একদিন বাড়ীতে কেউ ঘি বিক্রী করতে এসেছে। হ্যারীর বাবা ঘি’র গন্ধ যাচাই করতে হ্যারীকে বলে হাত মুঠো করে হাতে ঘি লাগিয়ে আনতে। হ্যারী সেইমতো ঘি লাগিয়ে বাবার নাকের কাছে ধরতে বাবা বলে ওঠেন, যাঃ, কোথায় ঘিয়ের গন্ধ? খালি তো চারমিনারের গন্ধ পাচ্ছি।
এই হলো হ্যারী। এমত হ্যারীর সাথে সকালে দেখা হতেই ক্লাস না করতে পারার কষ্টটা ভুলে গেলাম। হ্যরীই বলে উঠলো এই রোজ রোজ ক্লাস আর ভালো লাগছে না এবার একটু ব্রেক দরকার বুঝলি! কিন্তু হোস্টেলে থেকে কিভাবে ব্রেক হবে সেটা মাথায় ঢুকলো না। হ্যারী বললো, চল, বেড়াতে যাবি। আমিও সোৎসাহে বলে উঠলাম, হ্যাঁ যাব, কিন্তু কোথায় আর কিভাবে?
হ্যারী একটু চিন্তা করে বললো একটা জায়গা আছে খুব কাছেই কিন্তু একটু ম্যানলী জার্নি করতে হবে। পারবি কি? আমি অতকিছু না বুঝেই রাজী হয়ে গেলাম। কিন্তু টাকা পয়সা কত কি লাগবে? আমার আর হ্যারীর পকেট হাতড়ে ২১ টাকা সর্বসাকুল্যে জোগাড় হলো। অবশ্য সেই ৭০এর দশকে ২১ টাকা কিছু কম নয়। হ্যারী বললো, হয়ে যাবে, কিন্তু ম্যানলী জার্নি করতে হবে। এবার আমি সাহস করে জিজ্ঞাসা করলাম, ম্যানলী জার্নিটা কি বস্তু? হ্যারীর জবাব বাসের টিকিটের টাকা বাঁচাতে ছাদে চড়ে যেতে হবে, সারাদিনের খাওয়া পাউরুটি আর ঘুগনি, আর কোথাও থাকার জায়গা না হলে বাইরে খোলা আকাশের নীচে কাটাতে হবে।

এবার সত্যিই একটু ভয় পেলাম। জায়গাটা কোথায় জানতে চাওয়ায় হ্যারী জানালো বকখালি। ও একবার নাকি বাড়ি থেকে পালিয়ে বকখালি গিয়েছিল। সেই বকখালিতে আমরা কোথায় থাকবো জানতে চাওয়ায় হ্যারী বিরক্ত হয়েই বললো, ঐ যে বললাম ম্যানলী জার্নি। এক গেঞ্জি জামা কাপড়ে যাব আর থাকবো খোলা আকাশের নীচে সী বিচে। এবার বিষয়টা আমার কাছে বেশ রোমাঞ্চকর হয়ে উঠলো। হ্যারী ঘড়ি দেখে বললো, যাবি তো এখনই বেরোতে হবে। আমি রাজী হতেই দুজনে রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়লাম অনির্দিষ্টের পথে আ্যডভেঞ্চার যাত্রায়।

কলেজের ফার্স্ট গেট থেকে ৫৫ নম্বর বাস ধরে সোজা এসপ্ল্যানেড। এবং প্রায় সাথে সাথেই ৭৬ নম্বর বাস পেয়ে গেলাম, সোজা ডায়মন্ডহারবার যাবার। এ পর্যন্ত মোটামুটি ঠিকই ছিল। কিন্তু ডায়মন্ডহারবার যখন পৌছালাম তখন শেষ দুপুর আর পেটে ছুঁচোয় ডন দিচ্ছে। কিছুতো খেতেই হবে। শেষে হুড়োহুড়ি করে হ্যারীর শর্ত অনুযায়ী পেটে সাটালাম পাঁউরুটি আর ঘুগনি। এবার ডায়মন্ড হারবার থেকে আবার বাস ধরে কাকদ্বীপ, কিন্তু শর্ত অনুযায়ী এবার বাসের ছাদে উঠতে হলো, বাসের ভাড়া বাঁচানোর জন্য। এবার বেশ আ্যাডভেঞ্চার। মাঝে মাঝেই রাস্তার গাছের ডাল নয়তো ইলেকট্রিক তার বাঁচিয়ে কোনমতে ছাদ যাত্রা।

কাকদ্বীপে নেমে আবার একই রকম ভাবে নামখানার বাস ধরলাম। সালটা ১৯৭৭-৭৮ হবে তখন বকখালি বলতে কিছুই ছিলনা, এখনকার মতো হোটেল রেস্টুরেন্টে জমজমাট ছিল না। যাই হোক নামখানা পৌছাতেই সন্ধ্যে হয়ে গেল। সেইসময় হাতানিয়া দোয়ানিয়া নদী পার হতে পরপর কয়েকটা নৌকা রাখা থাকত, আর ৫ পয়সা ভাড়া দিয়ে নৌকাগুলোর উপর দিয়ে হেঁটে ওপারে পৌঁছাতে হতো। ওপারে পৌঁছে আবার বাস ধরলাম। এবার অন্ধকারের বুক চিরে বাস এগোচ্ছে আর কিছুক্ষণ পরপর তিন মাইল, সাত মাইল নামে একেকটা বাস স্টপ আসছে আর কিছু লোক ছাগল নিয়ে উঠছে আবার হটাৎ করেই নেমে অন্ধকারে মিলিয়ে যাচ্ছে। এভাবেই এগোতে এগোতে একসময় দেখলাম আমি ও হ্যারী ছাড়া গোটা বাসে আর কেউ নেই। কিছুক্ষণের মধ্যেই অন্ধকার এক জায়গায় আমাদের নামিয়ে বাস কন্ডাকটার বললো এটাই লাস্ট স্টপেজ, তোমরা কোথায় যাবে?

আমিও অন্ধকারে নেমে হ্যারীকে উদ্দেশ্য করে ভয়ে ভয়ে প্রতিধ্বনি করলাম, এখন আমরা কোথায় যাবো? হ্যারী কোনও উত্তর না দিয়ে অন্ধকারে এক গুমটি দোকানে ঢুকে ১০ পয়সার ছোলা সেদ্ধ নিয়ে আমার হাতে ধরালো। আমরা অন্ধকারে পাশাপশি হাঁটছি কিন্তু কোথায় যাবো জানিনা। অন্ধকার এতোটাই গাঢ় যে হাত দেড়েক দূরে হ্যারীকেও দেখতে পাচ্ছি না। ক্রমশঃ সমুদ্রের গর্জন কানে আসতে লাগলো। এতক্ষণে হ্যারীর ম্যানলী জার্নির মানে বুঝলাম। হটাৎ হ্যারীর তারস্বর সামন্তদা…. সামন্ত…. দা চিৎকারে সম্বিত ফিরল। সামন্ত’দা যে কে তা জানার অবকাশ নেই। কয়েকবারের চিৎকারের পর মনে হলো কেউ একজন হ্যারীকেন হাতে আসছে। কাছে আসতে বুঝলাম একটি বছর আটেকের বাচ্চা ছেলে, জবাব দিল কে?
– আরে আমরা সামন্ত’দা।
এবার মনে হলো হ্যারীর গলা নীচের থেকে আসছে, আমি দেখতে না পেয়ে ভয় পেয়েই বললাম, হ্যারী তুই কোথায়? হ্যারী উত্তর দিলো, আরে আমি নীচে পড়ে গেছি। ছেলেটি কাছে আসায় হ্যারিকেনের আলোয় পরিস্কার হলো যে আমরা মাঠের মাঝে একটি আলের পথ ধরে যাচ্ছিলাম, আর হ্যারী আলের পথ পিছলে নীচে কাদায় পড়েছে। অগত্যা আমি ও ছেলেটি দুজনে মিলে হ্যারিকেনের আলোয় হ্যারীকে টেনে তুললাম।

ছেলেটিকে দেখেই হ্যারী বললো, তুই রাম না? ছেলেটি হ্যারীকেনের আলো দেখিয়ে আমাদের নিয়ে চললো। কোথায় যে যাচ্ছি জানি না কিন্তু বেশ রোমাঞ্চ অনুভব করছি। কিছুক্ষণ যেতেই একটি বাঁশের বেড়ার ঘরে এসে হাজির হলাম। সামনেই এক মধ্য বয়সী মহিলা কোলে বাচ্চা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন আর আমাদের ভূত দেখার মতো দেখে আঁতকে উঠলেন। ভদ্রমহিলাকে দেখেই হ্যারি বলে উঠলো, আরে, বৌদি চিনতে পারছেন না? সেই যে বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছিলাম কয়েক বছর আগে। বৌদির চোখ মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছিল যে উনি চিনতে পারেন নি। এবার হ্যারী বলে উঠলো, সামন্ত’দা কৈ? উনি ঠিকই চিনতে পারবেন।
ভদ্রমহিলার বোধহয় আমাদের অসহায় অবস্থা বুঝে কিঞ্চিত করুণা হলো, উনি তো কয়েকদিন বাড়ি নাই, সমুদ্রে মাছ ধরতে গেছেন। আমার কাছে এবার পরিস্কার হলো সামন্ত’দা তাহলে জেলে। সামন্ত’দাকে হাতের কাছে না পাওয়ায় হ্যারী মরিয়া হয়ে আবার বলে উঠলো, বৌদি সেই যে আমি বাড়িতে রাগ করে পালিয়ে এসেছিলাম….। বৌদি মনে হলো এবারও ঠিক চিনতে পারেন নি, কিন্তু আমাদের অসহায় অবস্থা বুঝে দয়া পরবশ হয়েই বললেন, ঠিক আছে এসেই পড়েছেন যখন তখন থাকেন। আমার তো দুটোই ঘর উনিও যখন নাই এই সামনের ঘরটায় আপনারা থাকেন আর আমি বাচ্চাদের নিয়ে ঐ ঘরে।
আমরা দুজনেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে একই সঙ্গে কৃতজ্ঞতা জানালাম, ধন্যবাদ বৌদি।

মনে আছে সেই রাতেই রাম হ্যারিকেনের আলোয় ঘরের লাগোয়া পুকুরে জাল ফেলে পাঁচমিশালি মাছ ধরলো। আর সারাদিনের ক্লান্তি আর ক্ষুধার্ত থাকার পর বৌদির হাতের রান্না করা গরম ভাতের সাথে পাঁচমিশালি মাছের ঝোল মনে হলো যেন অমৃত। সত্যি বলতে কি, ঐ অজ গ্রামের অচেনা অজানা এক মহিলার যত্ন সহকারে রান্না ও হাসিমুখে আমাদের খাওয়ানো আজও আমার কাছে সেরা আথিতেয়তা ও নিঃসন্দেহে সেরা খাবারের স্মৃতি।

খেতে খেতেই রামের সাথে কথা হচ্ছিল এখানে কি কি দেখার আছে? বিশেষ করে সানরাইজ কখন হয়। রামকে পইপই করে বলা হলো যে সানরাইজ আমরা দেখবো, আর অবশ্যই সে যেন আমাদের ভোরে ডেকে দেয়।

খাওয়া দাওয়ার পাট চুকিয়ে দুজনে ঘরে ঢুকে শোবার ব্যবস্থা করছি কিন্তু এক জামা কাপড়ে আসায় রাতে পরে শোবার জন্য কিছুই তো আনা হয়নি। অগত্যা জামা প্যান্ট ছেড়ে বিছানার চাদর মুড়ি দিয়ে আমরা শুয়ে পড়লাম। তখন কত রাত জানিনা হটাৎ ভদ্রমহিলার কান্নায় ঘুম ভাঙলো উনি ক্রমাগত দরজা ধাক্কা দিয়ে আমাদের ডাকছেন। অগত্যা আবার জামা প্যান্ট পরে বেরতে হলো। কি হয়েছে জিজ্ঞাসা করায় ভদ্রমহিলা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে জানালো, তাঁরা নাকি এসেছে বাড়ির চারিদিকে ঘুরছে আর নাকি সুরে সামন্ত’দাকে ডাকছে। এই মাঝরাতে এহেন রসিকতা বুঝেও আশ্রয়দাত্রীকে সাহস যোগানো ও সাহার্য্য করা ভিন্ন অন্য কোনও উপায় নেই। বুঝতেই পারলাম মহিলা খুব ভয় পেয়েছেন তাই কাতর অনুরোধে বললেন, আপনারা যদি বাইরে বসেন ভালো হয়। তাঁরা যে কারা এবং কি উদ্দেশ্য নিয়ে মাঝরাতে আসেন, সেই রহস্য পরে পরিস্কার হলো। এই অঞ্চলে মাছের লোভে নাকি সব ভূত পেত্নী ঘুরে বেড়ায়।

বৌদি ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করতেই আমরা বাইরের বেঞ্চে সটান হলাম। সবে চোখ লাগতেই হ্যারীর চিৎকার, এই যা! আবার কি হলো জানতে চাওয়ায় হ্যারী বললো, আর বলিস না এই জায়গাটা বোধহয় ঐ কুকুরটার, শালা আমার গাল চাটছিল।

এবার আর বাইরে থাকা সমীচিন মনে হলো না তাই চুপিচুপি ঘরে ঢুকে আবার শুয়ে পড়লাম। কতক্ষণ ঘুমিয়েছিলাম জানিনা রামের দরজা ধাক্কায় আবার ঘুম ভাঙলো, বাবু ওঠেন সানরাইজ হবে এখন। আমরা দুজনেই এতোটাই ক্লান্ত ও ঘুমে অবসন্ন যে হ্যারী বলেই দিল, ঠিক আছে পরে দেখবো। যখন ঘুম ভাঙলো তখন সকাল ৮টা বেজে গেছে। চারিদিকে ঝলমলে রোদ। হ্যারীও ছাড়ার পাত্র নয়। সে রামকে জিজ্ঞাসা করলো, কিরে সানরাইজ কি হয়ে গেছে? রাম আফসোশ করলো, কখন হয়ে গেছে, কতো ডাকলাম আপনারা তো উঠলেনই না।

বৌদির দেওয়া চা বিস্কুট খেয়ে রামকে জিজ্ঞাসা করলাম বাথরুম কোথায়? সেকি? বাথরুমের কোনও ব্যবস্থাই নেই? বুঝলাম বাস্তব বড় কঠিন এবার। যা কিছু করার সব বাইরে, সী’বিচে গিয়ে। অগত্যা আমি ও হ্যারী সী’বিচে পৌঁছে একটু ফাঁকা জায়গা দেখে বসবার আয়োজন করতেই দেখি কেউ না কেউ চলে আসছে। আসলে সকাল হয়ে যাওয়ায় এই অঞ্চলের সকলের যাতায়াত শুরু হয়েছে সীবিচের পথ দিয়েই। শেষ পর্যন্ত হ্যারীর কথামতো লজ্জার মাথা খেয়ে বসলাম দুজনে দুজনের দিকে পিছন ফিরে। হটাৎ হ্যারীর চিৎকারে ঘাবড়ে গেলাম। হ্যারী বললো, পালা পালা। আসলে ঐ সময়েই বেশ কিছু লাল কাঁকড়া উঠে এসেছে আর তাতেই বিপত্তি আর আমাদের ভয় পেয়ে দৌড়।

যাই হোক এবার রামকে সঙ্গে নিয়ে চারপাশে কিছুক্ষণ ঘুরে বেড়িয়ে আবার দুপুরে ভাত মাছের ঝোল খেয়ে বৌদিকে অনেক কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আমরা একইভাবে ফেরার বাস ধরলাম। হোস্টেলে এসে যখন পৌঁছালাম তখন অনেক রাত। আর একটু হলেই আমার আর হ্যারীর বেডিং বলহরি হরিবোল করে নীচে ফেলে দেবার আয়োজন হচ্ছিলো আর ঘরের দরজায় পোস্টার সাঁটা “নিরুদ্দেশ”।

আজ এই বয়সেও সেদিনের সেই হ্যারীর সাথে ম্যানলী জার্নির কথা ভুলতে পারিনি।
বড় দুঃখ নিয়েই জানাই আজ হ্যারী নেই ও থাকলে আমার এই লেখার উপরে মন্তব্য করে আমায় নিশ্চয়ই কিছু বলতো।
হ্যারী তুই যেখানেই থাকিস ভালো থাকিস, বন্ধু।

Sahityika Admin

1 comment