পুজোর ভোগ
বিজিত কুমার রায়, ১৯৭৪, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং
শব্দ দু’টো শুনলেই জিভে জল চলে আসে সবারই। মায়ের ভোগের গন্ধ, সেই স্বাদ…আহা! এ স্বাদের সত্যিই ভাগ হবে না। ষষ্ঠী থেকে দশমী…মায়ের ভোগে পড়ে নানান পদ। বিভিন্ন বনেদি বাড়িতে ভোগের ক্ষেত্রে নানা রকম নিয়মকানুন। কোথাও মা-কে পাঁচ দিনই আমিষ পদ দেওয়া হয়। কোথাও আবার পোলাও, লুচি সহযোগে নিরামিষ ভোগ কিংবা ফলের প্রসাদ।
অষ্টমীর অঞ্জলি ছাড়া যেমন পুজো সম্পূর্ণ হয় না, তেমনই সম্পূর্ণ হয় না পূজার ভোগপ্রসাদ ছাড়া। বাড়িতে যতই নানা ধরনের মন ভরানো খাবার বানান না কেন, পুজোর ভোগের খাবারের স্বাদ আনতে পারবেন না। অমৃতসম সেই সব ভোগ কেবল যেন পুজোর বিশেষ উপলক্ষকে কেন্দ্র করেই তৈরি। পুজো প্রায় দোড়গোড়ায়। এবার দেখে নেওয়া যাক পুজোর ভোগের ছোট্ট তালিকা, সাধারণত যা দেওয়া হয়ে থাকে। ব্যাতিক্রম অবশ্যই আছে।
১) খিচুড়ি: পুজো হবে আর খিচুড়ি হবে না এমনটা কি হতে পারে? কখনোই না। সপ্তমী থেকে নবমী, রোজই পুজোর জন্য ভোগ হিসেবে তৈরি হয় খিচুড়ি। মুগডালের খিচুড়ি দুর্গাপুজোর ভোগের একটি অপরিহার্য অংশ।
২) লাবড়া: – কুমড়ো, আলু, বেগুন, ঢেঁড়স সব ধরনের সবজি দিয়ে তৈরি বাংলা এই খাবারটি ভোগের অন্যতম অংশ।
৩) টমেটোর চাটনি: সর্ষে ফোঁড়ন দিয়ে আদা, কারি পাতা ও চিনি আর সামান্য মশলা দিয়ে তৈরি টমাটোর চাটনি ভোগের সঙ্গে না হলে খাবার আমেজই আসে না।
৪) পায়েস; চাল আর দুধ দিয়ে বানানো এই মিষ্টি স্বাদের পায়েসও ভোগের শেষ পাতে আপনার জন্য অপেক্ষা করে থাকবেই। উপরে কাজু কিসমিস বা পেস্তা ছড়িয়েও খেতে পারেন।
৫) বেগুন ভাজা বা বেগুনি: খিচুড়ির সঙ্গে বেগুন ভাজা বা গরম গরম বেগুনি না হলে জমেই না। লম্বা সরু ফালি করে কাটা বেগুন বেসনে ডুবিয়ে ছাঁকা তেলে ভাজলেই রেডি প্রিয় বেগুনি। বেগুন ভাজা খিচুড়ি ছাড়া লুচির সঙ্গেও একই রকম ভালো লাগে খেতে।
৬) আলু ফুলকপি: আলু আর কুচো করে কাটা ফুলকপি দিয়ে তৈরি সুস্বাদু এই তরকারিটিও খিচুড়ির সঙ্গেই পরিবেশিত হয়। তবে লুচির সঙ্গেও সমান জনপ্রিয়।
৭) রসগোল্লা: শেষ পাতে বড় বড় রসগোল্লা না পড়লে আর ভোগ কী হল! ছানার তৈরি নরম রসগোল্লা পুজোর ভোগের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
৮) ছোলার ডাল: সাধারণত লুচির সঙ্গেই খাওয়া হয় এই ডালটি।
৯) নিরামিষ পোলাও: বাসমতী চাল, মটরশুঁটি, এবং লবঙ্গ দিয়ে তৈরি পোলাও অনেকেই খিচুড়ির বিকল্প হিসেবে ভোগ দিয়ে থাকেন। অষ্টমীতে বিশেষ এই পোলাওয়ের স্বাদ গন্ধ সবই উৎসবের আমেজ আরও বাড়িয়ে দেয়।
১০) আর সব শেষে মিষ্টি দই; বাংলার পুজো কি মিষ্টি দই ছাড়া সম্ভব? একেবারেই না। সবার শেষে ভোগে তাই থাকে মিষ্টি দই।
এবার ষষ্ঠী থেকে দশমী মায়ের ভোগের বিবরণ।
ষষ্ঠীর দিন দেবীকে কাত্যায়নী রূপে পুজো করা হয়। এই দিন ভোগ হিসেবে মাকে লাউ ও মধু নিবেদন করা হয়। এছাড়া, সঙ্গে বিভিন্নরকম নিরামিষ সবজি ও লুচি দেওয়া হয়। কোথাও আবার মায়ের ভোগে ভাতও থাকে। ভাতের প্রসাদের সঙ্গে থাকে পাঁচমিশালী তরকারি, পায়েস, শুক্ত।
সপ্তমী থেকে নবমী পুজোর এই তিনদিন মাকে কোথাও খিচুড়ি, কোথাও পোলাও অথবা লুচির ভোগ দেওয়া হয়। লুচির সঙ্গে দেওয়া হয় সুজি, আর পাঁচ রকম ভাজা। সঙ্গে থাকে সাধারণত আলু-পটলের ডালনা, আলুর দম, ছ্যাচড়া, ছানার ডালনা, পনির, ধোঁকা… পায়েস, বোঁদে ও রকমারি মিষ্টি। অনেক পূজায় ইলিশ ভোগও দেওয়া হয়। যেমন, কাশীপুর চিৎপুর রোডের ঐতিহ্যবাহী রায়চৌধুরী বাড়িতে সপ্তমী ও নবমীর দিনে মাকে পেঁয়াজ-রসুন ছাড়া রুইমাছের পদ ভোগ হিসাবে দেওয়া হয়। সাবর্ণ রায়চৌধুরীদের সন্ধিপুজোয় ল্যাটা মাছ পুড়িয়ে তা ভোগে দেওয়া হয়। দশমীর দিন দেওয়া হয় পান্তা ভাত, ইলিশ মাছ, কচু শাক। কোথাও থাকে শুধু খিচুড়ি ভোগ। তাই, মা দুর্গার ভোগ প্রতি বনেদি বাড়ি বিশেষে আলাদা হয়ে থাকে।
শুরু হচ্ছে শারদীয়া দুর্গোৎসব। ৯ দিন দুর্গার আরাধনায় মেতে থাকেবন দেশবাসী। পশ্চিমবঙ্গে সাড়ম্বরে পালিত হয় দুর্গাপুজো। ষষ্ঠী থেকে পুজোর শুরু, তাই পুজোর প্রস্তুতিও তুঙ্গে। অন্য দিকে উত্তর ভারতে নবরাত্রি পালিত হয়। এই ৯ দিনে দুর্গার ৯টি রূপের পূজা করা হয়। শাস্ত্রের পরামর্শ মেনে এ সময় যদি দুর্গাকে তাঁর স্বরূপ অনুযায়ী পছন্দের ভোগ নিবেদন করা হয় তা হলে জীবনের বহু সমস্যার সমাধান হবে। ৯ দিনে কী কী ভোগ নিবেদন করবেন জেনে নিন।
শৈলপুত্রী
দুর্গাপুজোর প্রতিপদ তিথিতে শৈলপুত্রী স্বরূপের পুজো করা হয়। পর্বতরাজ হিমালয়েপ কন্যা শৈলপুত্রীর পুজো করলে ব্যক্তির মূলাধার চক্র জাগৃত হয়। সাধক সমস্ত ধরনের সিদ্ধি লাভ করে। বৃষ শৈলপুত্রীর বাহন। গোরুর ঘি বা তা দিয়ে তৈরি পদার্থের ভোগ নিবেদন করা উচিত। এই ভোগ নিবেদন করলে ব্যক্তি আরোগ্য লাভ করতে পারে।
ব্রহ্মচারিণী
দ্বিতীয়ার দিনে ব্রহ্মচারিণী ও তপশ্চারিণী রূপের পুজো করা হয়। দেবীর এই রূপের পুজো করলে ব্যক্তি তপ, ত্যাগ, সংযম ও সদাচার লাভ করে পারে। কোনও লক্ষ্য নির্ধারণ করে নিলে ত পূর্ণ করে শান্ত হন। ব্রহ্মচারিণীকে চিনির ভোগ নিবেদন করবেন। চিনির ভোগ নিবেদন করলে চিরায়ুর বরদান পায় সাধক।
চন্দ্রঘণ্টা
তৃতীয়ার দিনে চন্দ্রঘণ্টার পুজো করে দুধের তৈরি ভোগ নিবেদন করা উচিত। তার পর সেই ভোগ অসহায় ব্যক্তিদের বিতরণ করে দিন। এর ফলে ধন-বৈভব ও ঐশ্বর্য লাভ করা যায়। এমনকি সংসারের সমস্ত কষ্ট থেকে মুক্তি পায় ব্যক্তি।
কুষ্মাণ্ডা
চতুর্থীর দিনে দুর্গার এই স্বরূপের পুজো করা হয়। নিজের উদর দিয়ে ব্রহ্মাণ্ড উৎপন্ন করেছেন কুষ্মাণ্ডা। তাঁর আরাধনা করলে সমস্ত রোগ ও কষ্ট দূর হয়। ব্যক্তি আয়ু, যশ ও শক্তি লাভ করে। মালপোয়া কুষ্মাণ্ডার অত্যন্ত প্রিয়। তাই চতুর্থীর দিনে দেবীকে মালপোয়ার ভোগ নিবেদন করুন।
স্কন্দমাতা
পঞ্চমীর দিনে স্কন্দমাতার পুজো করুন ও দেবীকে কলার ভোগ নিবেদন করুন। শাস্ত্র মতে এমন করলে বুদ্ধির বিকাশ হয় ও কেরিয়ারে উন্নতি লাভ করা যায়। কার্তিকেয়র মা হওয়ায় তাঁর নাম হয় স্কন্দমাতা। দুর্গার এই স্বরূপের পুজোর ফলে সাধক সংসারের সমস্ত সুখ ভোগ করে অবশেষে মোক্ষ লাভ করে। ব্যক্তির জীবনে কখনও কোনও অভাব থাকে না।
কাত্যায়নী
মহর্ষি কাত্যায়নের তপস্যায় প্রসন্ন হয়ে আদিশক্তি তাঁর বাড়িতে পুত্রী রূপে জন্মগ্রহণ করেন। তাই তাঁর নাম হয় কাত্যায়নী। ষষ্ঠীর দিনে দেবীর এই স্বরূপের পুজো হয়। মধু কাত্যায়নির অত্যন্ত প্রিয়। তাই তাঁকে মধুর ভোগ নিবেদন করবেন। এর প্রভাবে ব্যক্তি ধর্ম, মোহ, কাম, মোক্ষ ইত্যাদি চারটি ফল লাভ করে। এর পাশাপাশি ভয়, শোক এবং সন্তাপ থেকে মুক্তি লাভ করে আনন্দে জীবন কাটায়। পাশাপাশি ব্যক্তি সৌন্দর্য লাভ করে ও পরিবার থেকে নেতিবাচক শক্তির প্রভাব দূর হয়।
কালরাত্রি
সপ্তমীর দিনে কালরাত্রির পুজোর বিধান রয়েছে। এদিন গুড় দিয়ে তৈরি ভোগ নিবেদন করবেন। এর ফলে রোগ, শোক থকে মুক্তি পাওয়া যায় এবং পরিবারের সকলে সুস্থ থাকেন। শাস্ত্র মতে কালরাত্রির স্মরণ করলে ভূত, পিশাচ ও ভয় সমাপ্ত হয়। কালরাত্রির আশীর্বাদে ভানুচক্র জাগৃত হয়।
মহাগৌরী
অষ্টমীর দিনে আদিশক্তি দুর্গার মহাগৌরী স্বরূপের পুজো করা হয়। কালীর রূপ ধারণ করার পর কঠিন তপস্যা করেন দুর্গা, তার পর তিনি গৌরবর্ণ ধারণ করেন। তাই তিনি মহাগৌরী নামে পরিচিত। ভোগ হিসেবে হালুয়া নিবেদন করবেন। এর ফলে ব্যক্তির সমস্ত কষ্ট দূর হয় ও আর্থিক লাভ অর্জন করতে পারে।
সিদ্ধিদাত্রী
নবমীর দিনে দুর্গার সিদ্ধিদাত্রী স্বরূপের পুজো করা উচিত। বাড়িতে তৈরি হালুয়া ও লুচির ভোগ নিবেদন করবেন। পায়েসের ভোগও নিবেদন করতে পারেন। কুমারী পুজো করালে ব্যক্তির জীবনে সুখ-শান্তি বজায় থাকে। সিদ্ধিদাত্রীর পুজো করলে সিদ্ধি লাভ করা যায়।
বেলুড় মঠে দুর্গাপুজোতে মায়ের ভোগের বিভিন্ন পদ
বেলুড় মঠের দুৰ্গা পুজোতে মোট দশটি থালায় মাকে ভোগ দেওয়া হয়, যার মধ্যে আটটি আমিষের থালা, ও বাকি দুটি অর্থাৎ নারায়ণ ও শিবের জন্য হয় নিরামিষ ভোগ। আমিষ ভোগের প্রধান বড় থালাটি থাকে মায়ের জন্য আর বাকি গুলি থাকে লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, গনেশ, নবপত্রিকা, মহাসিংহ ও মহিষাসুরের জন্য। বেলুড় মঠের স্বতন্ত্র লক্ষ্মী ও সরস্বতী পুজোর ভোগে কিন্তু আমিষ দেওয়া হয় না তবে এই সময় যেহেতু তাঁরা মায়ের সহচরীরূপে উপস্থিত থাকেন তাই আমিষ ভোগ অবশ্যই।
সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমীর সকালে মায়ের প্রধান পুজো অর্থাৎ ষোড়োশপচারে পুজোর পর দেওয়া হয় বাল্যভোগ। এই বাল্যভোগে থাকে পিতলের এক বড় হাঁড়ি খিচুড়ি ও গোটা ইলিশ মাছ ভাজা মশলা দিয়ে। এই ভোগ কেবল মায়ের জন্যই নিবেদিত হয়; অন্য কোনো দেবী দেবতার জন্য এই বাল্যভোগ উৎসর্গ করা হয় না।
এবার আসা যাক মায়ের দ্বিপ্রহরিক ভোগ এর পদের কথায়।
মায়ের জন্য সাদা ভাত হয় গোবিন্দভোগ চালের, ও পোলাও হয় বাসমতি চালে। মহালয়ার দিন থেকে মঠের নবীন ব্রহ্মাচারীদের দায়িত্বে এই চালগুলি বাছাই ও ঝাড়াই হয় যাতে মায়ের ভোগে কোনো কাঁকর না পাওয়া যায়। অন্নভোগের থালায় স্তূপাকারে দেওয়া হয় সাদা ভাত তার পাশে বাটিতে দেওয়া হয় খিচুড়ি ও পোলাও; সঙ্গে থাকে পরমান্ন অর্থাৎ পায়েস। মায়ের পাতে থাকে পাঁচ রকমের সিদ্ধ যেমন কাঁচকলা, আলু, পটল, কুমড়ো ও উচ্ছে সিদ্ধ। ভাজার মধ্যে ভোগে দেওয়া হয় আলু, পটল, বেগুন, উচ্ছে ও বড়ি। মায়ের জন্য মেদিনীপুর থেকে আনানো হয় গয়না বড়ি। বাজারে যত রকমের সময় অসময়ের সবজি পাওয়া যায় তার সব দিয়েই তরকারি ও ডালনা প্রস্তুত করা হয়। বাঁধাকপি, ফুলকপি থেকে এঁচোড়, মোচা সবই থাকে মায়ের সবজি তরকারিতে। সবরকম তরকারি সুন্দরভাবে আলাদা আলাদা বাটিতে মায়ের জন্য সাজিয়ে দেওয়া হয়। সঙ্গে ভাজা ও সিদ্ধ সুন্দর করে থালার পাশে সাজিয়ে দেওয়া হয়। আগে মাটির বাসনেই মায়ের ভোগ নিবেদন করা হতো, কিন্তু প্রবীণ সন্ন্যাসীদের কথায় এই মাটির পাত্রগুলি ভোগ নিবেদনের পর স্তূপাকৃতি হয়ে যেত; তাই এরপর মায়ের জন্য বড় কাঁসার থালা বাটির ব্যবস্থা করা হয়। এই বাসন মাজার জন্যই কয়েকজন সবসময় প্রস্তুত থাকেন। মায়ের ভোগের থালায় সব কিছুর সঙ্গেই দেওয়া হয় নুন, লেবু ও আলাদা আলাদা জলের গ্লাস।
যেহেতু মায়ের ভোগ আমিষ দিয়েই নিবেদিত হয় তাই মাছের পদে থাকে বিশেষ আয়োজন। অন্তত পাঁচ রকমের মাছ প্রতিদিন দেওয়া হয় যদি তার থেকেও বেশি মাছ পাওয়া সম্ভব হয় তাহলে তাও দেওয়া হয়। পাঁচ রকমের বিশেষ মাছের মধ্যে রোজ থাকে ইলিশ, চিংড়ি, রুই, ভেটকি ও সরপুঁটি।
সন্ধিপুজোতে মাকে দেওয়া হয় বড় ভোগ। এর মধ্যে সব রকমের অন্ন ভোগ তরকারি ফল মিষ্টি ও মাছের নানা পদ থাকে সঙ্গে থাকে কালীঘাটের বলির মাংস। শ্রী শ্রী মায়ের নির্দেশে বেলুড় মঠে পশুবলি দেওয়া হয় না, বলির পাঁঠা দুর্গাপুজোর সন্ধিপুজো, শ্যামাপুজো ও ফলহারিণী পুজোর দিন কালীঘাটে মাকে উৎসর্গ করে মঠে সেই প্রসাদী মাংস নিয়ে এসে রান্না করে ভোগ দেওয়া হয়। এক দেবীর কাছে উৎসর্গ করা প্রসাদ যখন আবার অন্য দেবীর পুজোতে ভোগ হিসাবে দেওয়া হয় তখনি তা হয়ে যায় মহাপ্রসাদ। যেমন পুরীতে জগন্নাথ দেবের প্রসাদ মা বিমলাকে নিবেদন করার পর তা মহাপ্রসাদ হয়ে যায়।
মায়ের জন্য রচনাভোগ মঠেই প্রস্তুত করা হয়, মহালয়ার দিন থেকেই এর তোড়জোড় হয়ে থাকে। প্রায় দুই হাজার নারকেল নাড়ু তৈরী করা হয়, সাথে মুড়কি ও অন্যান্য আয়োজনও থাকেই। নৈবেদ্যের জন্য সব রকমের ঋতু ফল দেওয়া হয়, সঙ্গে থাকে কাজু কিশমিশ খেজুর আমসত্ত্ব। মায়ের সামনে আখ, চালকুমড়ো ও কলা বলি দেওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে সকল দেবী দেবতা বাহন ও অঙ্গ দেবতার পুজোতে নৈবেদ্যের আলাদা আলাদা আয়োজন থাকে, প্রত্যেকের নৈবেদ্য নিবেদনের পর জায়গাটি মুছে অন্য নৈবেদ্য আনা হয়।
রাতে মায়ের ভোগে দেওয়া হয় লুচি, ছোলার ডাল ও মুগের ডাল, তিন রকমের তরকারি ও পাঁচ রকমের ভাজা এবং মিষ্টি, ক্ষীর, রাবড়ি। রাতের ভোগে আমিষ পদ থাকে না; সকলের ভোগই হয় নিরামিষ। দুপুর ও রাতে ভোগ নিবেদনের সময় থালার সামনে আসন পেতে দেওয়া হয় এবং নারায়ণের ভোগের উপর তুলসী ও মা দুৰ্গা সহ সকলের ভোগে দেওয়া হয় বেলপাতা। দুপুরে ঠিক ১২ টার সময় ভোগ দিয়ে ভোগারতি হয় এবং রাতে ভোগ দেওয়া হয় আটটার পর। সকালের বাল্য ভোগ দেওয়া হয় পূর্বাহ্নের পুজোর সময়ের মধ্যেই। অষ্টমীর দিন তিথি বারোটার আগেই ছেড়ে গেলে অষ্টমীর মধ্যেই একবার ভোগ দেওয়া হয় তারপর আবার যথারীতি দুপুরের ভোগ দেওয়া হয় সঙ্গে আরতি।
দশমীর দিন মায়ের সামনে বিসর্জন কৃত্য ভোগ হিসাবে দেওয়া হয় দধিকর্মা ভোগ যার মধ্যে মূলত থাকে চিঁড়ে ও দই, কিশমিশ, কাজু, নানান রকমের ফল, কলা, নাড়ু, সন্দেশ।
বেলুড় মঠে প্রতিদিন মায়ের নামে খিচুড়ি ভোগ বিতরণ করা হয়। ভোগ রান্নার ঘরেই মায়ের ছবির সামনে এই ভোগ নিবেদন করে আরতি করা হয়; তার পর দর্শনার্থী ভক্তদের পাতে তুলে দেওয়া হয় মায়ের মহাপ্রসাদ রূপে। চাল,ডাল ও সমস্ত রকম তরকারি দিয়েই এই খিচুড়ি প্রস্তুত হয়, আলাদা করে কোনো লাবড়া বা এই জাতীয় কিছু থাকে না। সঙ্গে থাকে চাটনি ও মা অন্নপূর্ণার অপার আশীর্বাদ। মঠের খিচুড়ি ভোগ বিষয়ে বেলুড় মঠের এক সময়ের অধক্ষ্য স্বামী বিরাজানন্দের একটি চিঠিতে পাই “শুধু খিচুড়ি পর্যাপ্ত পরিমাণে ব্যবস্থা হবে। তাতেই শাক-সবজি যা কিছু দেবে। অন্য তরকারি মিষ্টান্ন কিছু দরকার নেই। এ খিচুড়ি মায়ের সামনে হান্ডা হান্ডা করে বিরাট ভোগ দিয়ে তারপর সর্বহারা নারায়ণদের পরিবেশন করতে হবে। এইবার মা এইভাবে পূজাভোগ গ্রহণ করবেন ও আমাদের পূজা সার্থক হবে। আলাদা ব্যবস্থা কারো জন্য নয়।”
ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের কথায় যেমন “মা শতমুখে খান”। এই ভাবনাকে কাজে করে দেখানোর জন্যই রামকৃষ্ণ মঠের ভারত জুড়ে প্রতিটি শাখাই যেমন মায়ের ভোগের স্বতন্ত্র আয়োজন করেন তেমন তাঁর ছেলেমেয়েরাও যাতে পুজোর দিনে মায়ের করুণা ভরা প্রসাদ পান সে বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব সহকারে বাস্তবায়িত করেন। আর মায়ের কৃপায় কেউ অভুক্ত ফেরে না মঠ মিশনের কোনো শাখা থেকেই।
জয় মা দুর্গা।
জয় শ্রী রামকৃষ্ণ।
জয় মা সারদা।
জয় স্বামীজি মহারাজ
আমি সাহিত্যিকা নিয়মিত পাই।
লেখক অনেক পরিশ্রম করে পড়াশোনা করে এটি লিখেছেন।
অনেক ধন্যবাদ জানাই।