আসমানি (ধারাবাহিক দ্বিতীয় পর্ব)
©গণেশ ঢোল, ১৯৮৭ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং
আগের পর্ব পড়তে হলে –
আসমানি (চতুর্থ অধ্যায়)
একদিন মা বলল, “জানিস, তোর বাবা একটু রাগী, কিন্তু মন খুব ভালো। কারুর দুঃখ দেখতে পারে না।”
– “তাহলে তোমার এত কষ্ট কেন?”
– “কে বলেছে আমার কষ্ট? আমার সব কষ্ট তো তোদের জন্যে। তোরা সবসময় জ্বালাস আমায়।”
– “আমি জ্বালাই? কালই বাবা বলেছে, আমার মতো ছেলে নাকি হয় না। স্কুলে রাম মাস্টারমশাই, বড়দিদিমণিও বলে যে আমি ক্লাস ফোরের বৃত্তি পরীক্ষায় বৃত্তি পাব। দ্যাখো আমি কোনো গালাগালি দিই না, শালা পর্যন্ত বলি না। গীতাদির ছেলে বাবু, তপন তো শালা, বাঞ্চত্ , শুয়োরের বাচ্চা আরো কত গালি দেয়। আমি রাগ হলেও গাল দিই না।” এতদূর বলেই জিভ কাটি আমি, মাকে জড়িয়ে ধরে বলি, ” মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে। সত্যি আমি কখনও বলি না, জানি, কিন্তু কখনও বলি না। সেদিন তপন ওই স্বপনকে ব-কার দেওয়া গালিটা দিয়েছে, তারপর আমাকেও বলছিল ওকে বাচ্চা গালিটা দিতে। কিন্তু আমি দিইনি। তবু স্বপন রেগে গিয়ে আমায় একটা মারল।”
– “তোমায় মারল কেন?”
-“তপন তো স্বপনের থেকে বড়, গায়েও খুব জোর। ওর সাথে জানে পারবে না, তাই আমায় মেরে দিল।”
– “তখন তুমি কী করলে?”
– “আমি কী করব আর, মাটি থেকে একটা পাথর কুড়িয়ে স্বপনকে টিপ করে মারলাম। ওটা ওর গায়ে না লেগে ওর ভাই দিলুর কপালে লাগল। লাগামাত্র চ্যাঁ ভ্যাঁ করে কান্না জুড়ে দিল। তখন ওর বাবা এসে জিজ্ঞেস করল, ‘কী হয়েছে?’ দিলু বলল, ‘দাদাকে তপন গালি দিয়েছে, কিন্তু দাদা টিটুকে মেরেছে। টিটু তখন দাদাকে মারতে গিয়ে আমায় মেরেছে। দাদা মাথা সরিয়ে নিয়েছে।'”
– “তারপর?”
– “তারপর দিলুর বাবা আমাকে ওদের বাড়িতে ডেকে অনেক বোঝাল। বলল, আর কোনোদিন যেন ঢিল ছুঁড়ে না মারি। যদি ওই ঢিল দিলুর চোখে লাগত, তো সারা জীবনের মতো অন্ধ হয়ে যেত। আমি ভালো ছেলে, তাই যেন ওই তপন, ভোটনদের সাথে না মিশি।”
– “এই তোমার খেলা! খেলতে গিয়ে মারপিট করো।”
– “বারে এতে আমার কী দোষ? সেদিনই তো যখন স্কুলে আমায় একটা হিন্দি ছেলে মারল, আমি ঘরে এসে বড়দাকে বললাম, তখন বড়দা বলল, ‘বাইরে থেকে মার খেয়ে ঘরে আসবে না। মার খেলে পাল্টা মার দিয়ে তবে আসবে।'”
মা বলল, “বুঝেছ তো আমার কেন এত কষ্ট, ঘরে থাকলে আমার মাথা বকাবে, বাইরে গেলে লোকের ছেলের মাথা ফাটাবে। এবার থেকে আর খেলতে যেও না, বিকেলবেলায় গল্প বই পোড়ো, যা খেলার স্কুলে খেলবে। ওখানে দিদিমণি, মাস্টারমশাইরা আছে। ওরা দেখবে।”
– “আমাকে গল্প বই কিনে দাও তোমরা? শুকতারা তো মানুদা যেদিন দেয় সেদিনই শেষ হয়ে যায়। ঘরে ছোটদের যা বই আছে দু’বার তিনবার করে পড়া। এবারের পুজোবার্ষিকীটা কতবার যে পড়েছি তার ইয়ত্তা নেই। ঠাকুরমার ঝুলি, গোপাল ভাঁড় আর পড়তে ভালো লাগে না আমার। তুমি আমায় রোজ একটা করে বই কিনে দাও, আমি বাইরে খেলতে যাব না।”
মার মুখ কাঁচুমাচু হয়ে যায়। বলে, “রোজ একটা করে বই কিনে দেওয়া কি সম্ভব! তার চেয়ে খেলতে যাও, কিন্তু মারপিট করবে না কারুর সাথে। তুই এত কথার পিঠে কথা কী করে শিখলি আমার ছেলে হয়ে? বড় হয়ে উকিল হবি তুই। কালো কোট পরে কোর্টে যাবি। তোর দাদা-দিদিরা কেউ আমার মুখে মুখে এত চোপা করেনি কোনোদিন।”
– “আমি বড় হয়ে গাভাসকার হব।”
– “সেটা কী?”
– “গাভাসকার খুব ভালো ক্রিকেট খেলে। দেখতেও খুব সুন্দর।”
– “কোথায় দেখলি তাকে?”
– “পেপারে ছবি দেখেছি।”
– “আমার টিটু সোনা গাভাসকরের থেকেও সুন্দর,”বলে মা আমায় কোলে টেনে নেয়।
বড়দা রেডিওতে ক্রিকেটের কমেন্ট্রি শোনে, আমিও জুটে যাই। বড়দাকে নানারকম প্রশ্ন করি, গুগলি কী, গুডলেন্থ বল কাকে বলে, গাভাসকার বল কেন করে না, গাভাসকার আর বিশ্বনাথের মধ্যে কে বড় প্লেয়ার, গাভাসকার বাবার মতো ইংরিজি বলতে পারে কিনা, ইত্যাদি ইত্যাদি। ইংরিজিতে রীলে হয়, আমি খুব কম বুঝতে পারি। শুধু আউট, বাউন্ডারি, ফোর, সিক্স, ম্যাগনিফিশেন্ট ক্যাচ, হোয়াট আ শট এগুলো বুঝি, আর যখন স্কোর বলে সেগুলো। সেদিন মন দিয়ে খেলা শুনছি, ছোড়দি বলে, “বাবা আমাদের বিবিধ ভারতী শুনতে দেয় না, আর টিটু দেখো ইংরিজিতে খেলা শুনছে। কী বুঝছে কে জানে!”
অমনি ছোড়দা বলে, “বলতো কত স্কোর?”
আমি গড়গড় করে বলতে শুরু করি, “ইন্ডিয়া হান্ড্রেড ওয়ান ফর টু। ব্যাট করছে বিশ্বনাথ, গাভাসকার রানার্স এন্ডে। আউট হয়েছে সোলকার এগারো রানে, ওয়াদেকার তেত্রিশ রানে। গাভাসকার ঠিক সেঞ্চুরি করবে। সোলকার, ওয়াদেকার দুজনেই কট নট, বোল্ড ওল্ড।”
আমার কথা শুনে বড়দা আমায় কোলে তুলে নেয়, সবাইকে বলে, “দ্যাখ এইটুকু ছেলে কত ক্রিকেট বোঝে, ইংরিজিতে কমেন্ট্রি শোনে। আজকেই টিটুকে একটা ব্যাট কিনে দেব।”
এখন পাড়ায় আমার বিরাট ডিমান্ড। আমার ব্যাট, উইকেট, বল সব আছে। চারটে বাজতে না বাজতেই পাড়ার সব ছেলেরা চলে আসে আমায় ডাকতে, এমনকী আমার থেকে পাঁচ-ছয় বছরের বড়রাও। ওরা ডাকলেও আমি দরজা খুলি না, “বলি, এখনও চা হয়নি, গুরুমূর্তিরাও আসেনি, ওরা এলে মা গুড়ের চা তৈরি করবে, আমি চা খেয়ে খেলতে যাব।”
ওরা আমাদের সদর দরজার বাইরে হত্যে দিয়ে বসে থাকে, বলে, “জানলা দিয়ে ব্যাট উইকেটগুলো দিয়ে দে, আমরা উইকেট পুঁতে, ততক্ষণে লটারি করে নি।”
আমায় লটারিতে রাখা হত না। আমার ফার্স্ট ব্যাটিং। আমি জানলার শিকের ফাঁক দিয়ে ব্যাট, উইকেটগুলো গলিয়ে দিতাম, তবে বল দিতাম না।
– “মা, বাবা কেন বলে, ‘নবদ্বীপে একটা কাক মরলেও তোর মা কাঁদবে।'”
মার মুখ গম্ভীর হয়ে যায়, বলে, “আমায় রাগাবার জন্যে বলে।”
– “আমি বাবাকে মানা করে দেব তোমার পেছনে লাগতে। বড়দা, ছোড়দাও বাবার সাথে মিলে তোমার পেছনে লাগে। ওরা কেন করে? ওরা তোমায় ভালোবাসে না?”
– “আমায় কেউ ভালোবাসে না।”
– “মেজদা তোমায় খুব ভালোবাসে। মেজদা তোমার হাতেহাতে কাজ করে দেয়। তোমার হয়ে সবার সাথে ঝগড়া করে। সেদিন যখন ওরা সবাই তোমার পেছনে লাগছিল, তুমি রেগে না খেয়ে শুয়ে পড়েছিল। সবাই কত সাধল, আমিও কত করে বললাম, তবু তুমি খেলে না। তারপর রাত দশটারও পরে মেজদা ডিউটি থেকে এল, ওই শীতের রাতে চান করে তোমার জন্যে খিচুড়ি আর বেগুনভাজা বানাল। তবে তুমি দু’ চামচ মুখে তুললে। খেতে খেতে বলেছিলে, ‘আমি, টুকু আর টিটুকে নিয়ে তালবাগিচায় চলে যাব।'”
মায়ের ধারণা ছিল, তালবাগিচায় যে কেউ গিয়ে বাড়ি বানাতে পারে, আসলে পারতও। তখন অত কড়াকড়ি ছিল না। খালি জমি অনেক পড়ে ছিল। ওপার বাংলার উদ্বাস্তুরা এসে ওখানে কলোনি বানিয়েছিল। পরে আবার কোনোদিন ছোড়দা, বাবাকে খুশি করার জন্যে মাকে বলত, “যাওনা তালবাগিচায়, বাঙালরা তোমার টুকুকে মেরে তাড়াবে। বাড়ি বানাবে!”
বাবা মৃদু হেসে বলত, “আবার তোর মা’র পেছনে লাগছিস?”
এরকমই চলত, মাকে সবাই ভালোওবাসত আবার মজা করার ছলে অত্যাচারও করত। মায়ের ব্যক্তিত্ব অতটা ছিল না যে ছেলেমেয়েদের শাসনে রাখবে। মা একমাত্র আমায় শাসন করত, তবে সে শাসন করা, না করা সমান। ছোড়দা বলত, “আরেকটু জোরে হাত চালাও। মারছে না যেন দাদুর পিঠে হাত বোলাচ্ছে! বলো, তোমার হয়ে আমি মেরে দিচ্ছি।”
মা প্রায়ই আমায় ভয় দেখাত, “পাখার বাঁট দিয়ে মারব, পিঠে লাল দাগ হয়ে যাবে।” আমার এখনও পিঠ সুড়সুড় করে মায়ের ওই মার খাওয়ার জন্যে।
আসমানি (পঞ্চম অধ্যায়)
বাবা বলে, যাত্রা দেখে ফাতরা লোকে। ফাতরা মানে ফালতু। ভদ্রলোকের মেয়ে-বউরা কখনও যাত্রা দেখে না। তাই মায়ের ইচ্ছে থাকলেও কখনও যাত্রা দেখা হয় না। আমি একদিন স্কুল থেকে এসে বললাম, “আমার সব বন্ধুরা যাত্রা দেখে আমিও দেখব।”
দুর্গাপুজোর পর পরই মালঞ্চর লাল বাংলা যাত্রা ময়দানে ন’দিন ধরে যাত্রা হয়, আসে কলকাতা থেকে বিভিন্ন যাত্রার দল তরুণ অপেরা, লোকনাট্য অপেরা, নাট্য কোম্পানি, ভারতী অপেরা, সত্যম্বর অপেরা। আমাদের বাড়ি থেকে একমাত্র মেজদা যাত্রা দেখতে যায়। প্রত্যেকবার ন’দিনের সিজন টিকিট কেনে। মেজদা যাত্রা করেও, ওদের একটা দল আছে, বুদ্বুদ নাট্য সংস্থা। সেই দলের লীডার নিমাই সরকার। মেজদা বলে, “নিমাইদা খুব শিক্ষিত লোক।” আমিও ‘নিমাইদা’ বলি। বড়দা বলে, বাপের বয়সি একটা লোককে দাদা বলা। আমি বললাম, “আমি তো মানসের বাবাকেও চৌবেদা বলি।” বড়দা বলে, “চৌবেদার কথা আলাদা, বাবাও ‘চৌবেদা’ বলে, উনি তো সবার দাদা। তবে নারায়ণ চৌবের সঙ্গে ওই নিমাই সরকারের তুলনা! কোথায় হরিদ্বার, আর কোথায় গুহ্যদ্বার!”
মেজদা খুব রেগে যায়, বলে, “দিনরাত তেলেঙ্গী, পাঞ্জাবী রানিং স্টাফদের সঙ্গে মিশলে ওই ভাষাই বেরোবে মুখ দিয়ে।”
বড়দা খুব আত্মতৃপ্তির হাসি হেসে বলে, “মেজবাবুর হিং লেগেছে।”
ছোড়দা ফুট কাটে, “কোথায়?” বড়দা বলে, “যার লেগেছে তাকেই জিজ্ঞেস কর।” মেজদা রাগে গরগর করে। বলে, “আজ বাবা আসুক, খুব বাড় বেড়েছে তোদের!” মা ওদের মাঝখানে পড়ে ঝগড়া থামায়, বড়দাকে বলে, “দশটা টাকা দাও তো, মাংস আনাব।” বড়দা বলল, “টিটু যাও, গিয়ে টাকার গাছটা নাড়াও।” আমিও অমনি গিয়ে ঠাকুরঘরের সামনে উঠোনের টগর ফুলগাছটায় নাড়া দিলাম, তারপর কোণের ঘরে গিয়ে ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ারে রাখা বড়দার মানিব্যাগ খুলে দশ টাকা বার করি, দেখি বেশ কয়েকটা দশ টাকা আছে। আমি দু’টো দশ টাকা নিয়ে মায়ের হাতে দিয়ে দিই। মা মেজদাকে দশ টাকা দিয়ে বলে, “মতি মহাজনের দোকান থেকে এক কেজি খাসির মাংস নিয়ে এসো। আজ পয়লা পৌষ, হাবুর জন্মদিন। পায়েস করেছি। আর এই টাকাটা দিয়ে আজাদের দোকান থেকে কুড়িটা রসগোল্লা, এক কেজি মিষ্টি দই আনবে। আসার সময় বিজয় আর বৌমাকেও বলে দিও যেন ওরা আজ দুপুরবেলা খেতে আসে এখানে।”
বড়দা বলে, “বেশ গঙ্গাজলে গঙ্গাপুজো! আমার কাছ থেকে টাকা নিয়ে আমারই জন্মদিন, ভালো ব্যবস্থা! টাকাটা দাও আমিই আনি, মতিয়া মেজবাবুকে পাঁঠির মাংস গচিয়ে দেবে। কিছুই তো চেনে না। ও বরং বিজয়দাদের নেমন্তন্ন করে আসুক।” দুটো থলি নিয়ে চলে যায় বড়দা।
নিমাইদা এলআইসি-তে চাকরি করত, রোজ মালঞ্চ থেকে ইন্দা রিক্সা করে অফিস যেত। ফেরার পথে নিজের মায়ের জন্যে স্যুইট ইন্ডিয়া থেকে ছোট্ট কাগজের বাক্স করে একটা ক্ষীরকদম নিয়ে যেত। নিমাইদার মায়ের হাই ব্লাড সুগার, কিন্তু মিষ্টির প্রতি লোভ খুব। ডাক্তার বলেছিল, দিনে একটার বেশি মিষ্টি দেওয়া যাবে না। একেকদিন ফেরার পথে নিমাইদা আমাদের বাড়িতেও চলে আসত, তখন আমার, আর ছোড়দির জন্যে দানাদার নিয়ে আসত। একদিন এরকম এসেছে, মা সেই স্পেশাল চা বানিয়ে থিন অ্যারারুট বিস্কুট প্লেটে সাজিয়ে দিয়েছে নিমাইদাকে। নিমাইদা আমার হাতে একটা ছোট বাক্স ধরিয়ে দিয়ে কানেকানে বলল, “দুটো দানাদার আছে, একটা তুই খাবি, আর একটা ছোড়দিকে দিবি।” বড়দা তখন ইয়ার্কি করে বলে, ” নিমাইদা, আমরা কি বানের জলে ভেসে এসেছি?”
তখন নিমাইদা যা বলল না, তা শুনে সবার চক্ষু চড়কগাছ। নিমাইদা বলল, “হ্যাঁ তুমি আমাকে গুহ্যদ্বারের সঙ্গে তুলনা করবে, আর আমি তোমায় মিষ্টি খাওয়াব!”
বড়দার মুখ লজ্জায় লাল হয়ে যায়, বুঝতে পারে যে আমি বৌদি মানে নিমাইদার স্ত্রী-কে সব ঢেলেছি। নিমাইদাদের কোনো ছেলেমেয়ে ছিল না। বৌদি আমাকে খুব ভালোবাসত। মেজদাকে খালি বলত আমাকে ওদের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্যে। মেজদা বেড়াতে নিয়ে গেলে, কিছুতেই ছাড়ত না আমায় সেদিন। বলত, “আজকের দিনটা থেকে যাক, রাত্রে আমাদের সঙ্গে যাত্রা দেখে কাল ফিরবে।” আমিও যাত্রা দেখার লোভে রাজি হয়ে যেতাম, তবে মেজদা দোনোমোনো করত, বলত, “না, বাবা রাগ করবে, মা’ও ওকে ছাড়া থাকতে পারে না।” নিমাইদা ধমকে উঠত, “একদিনের জন্যে কেউ কিছু বলবে না। আমি শৈলীদাকে বলে দেব।” বৌদি আমাকে নিয়ে পুতুলখেলার মতো করত, আমায় কাজলের টিপ পরিয়ে, জামা পরিয়ে মেয়েদের মতো সাজাত। একবার হাতে সোনার নোয়া পরিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছিল। বাবা এইসব দেখে খুব রেগে গিয়েছিল, মেজদাকে স্ট্রিক্ট ইন্সট্রাকশন দিয়েছিল, “ওই নিমাইয়ের বৌকে বলে দিও, যেন আমার ছেলেকে কখনও মেয়ে না সাজায়, আর ওই সোনার নোয়া যেন ইমিডিয়েট ফেরত নিয়ে নেয়। আমরা কি ভিখারি নাকি!” আমার ওদের বাড়িতে রাতে থাকতে একদম ভালো লাগত না, তবু যাত্রা দেখার লোভে দু’ একবার থেকেছি।
একবার রাতে আমায় শুতে দিয়েছিল নিমাইদার মায়ের পাশের চৌকিতে, সেখানে সেই বুড়ি সারারাত বকবক করছে, বৌদিকে, নিমাইদাকে শাপ-শাপান্ত করছে, বিছানা থেকে বিচ্ছিরি গন্ধ ছাড়ছে। আমায় বলল, “তুই এখানে আসিস কেন? তোকে নিমাই দত্তক নেবে নাকি? এর পরের বারে এলে তোর মা’কে বলবি মিষ্টি আচার পাঠাতে আমার জন্যে। এরা আমায় কিচ্ছু খেতে দেয় না, জল পর্যন্ত মেপে দেয়।”
একবার মেজদা আমায় নিয়ে গেছে যাত্রা দেখাতে। নিমাইদা আমায় বসিয়ে দিয়েছে একেবারে সামনের সারিতে। উত্পল দত্তের লেখা রাজনৈতিক যাত্রাপালা। আমি কিচ্ছু বুঝতে পারছি না। আর ওই ছোট্ট কাঠের চেয়ারে বসে পিঠে, পাছায় লাগছে। ঘুমে চোখ ঢুলে আসছে। মনে হচ্ছে পড়ে যাব। আমি বৌদিকে খালি বলছি, “নীচে গিয়ে ওই তিপ্পলের ওপর বসি?” বৌদি বলছে, “না, আমাদের চেয়ারের টিকিট কাটা, মাটিতে গরিব লোকেরা বসে।” সেই যাত্রায় পুলিশের ড্রেস পরে একটা লোক বারবার বলছে, “মারতে আমার খুব ভালো লাগে,” তারপর আবার ওই সেন্টেন্সটাকেই উল্টে কেটে কেটে বলছে, “ভালো লাগে — মারতে– আমার– খুব।” কেন এরকম বারবার বলছিল কে জানে। আর তাতেই দর্শকেরা খুব হাসছিল। যে লোকটা পার্ট করেছিল তার নাম মনে আছে, গৌতম সাধুখাঁ। আর এক জন অভিনেতা তাঁর নাম মনে নেই, তাঁরও একটা সংলাপ মনে আছে, তিনি বলেছিলেন, “এখানে গরুর জন্যে বিনোবা ভাবে, মানুষের জন্য কে ভাবে?” এই সংলাপের পরেও খুব হাততালি পড়েছিল।
যাত্রা দেখে বেরোচ্ছি গেটের কাছে কাউবয় হ্যাট পরা বেঁটে মতো একটা লোক তার চেলা চাপোটাদের নিয়ে খুব মাতব্বরি করছিল। সে নিমাইদাকে দেখে বলল, “আরে নিমাইদা যে! আপনার তো কোনো ছেলেমেয়ে ছিল না, এত বড় ছেলে কবে থেকে হল?” নিমাইদা ধমকে বলল, “আতাই, একদম মাতলামি করবি না।” ব্যস লোকটা কান্নার ভঙ্গিতে বলল, “আমায় মাতাল বললেন! উত্পল দত্ত মদ খেলে ড্রিঙ্ক করেছে, আর আতাই খেলে মাতাল। শালা! ‘গরুর জন্যে বিনোবা ভাবে, আমার জন্যে কেউ ভাবে না’; উত্পল pun করলে দোষ নেই, আতাই পান করলে মাতাল।”
নিমাইদা যাত্রা কমিটির ভলান্টিয়ারদের বলল, “অ্যাই তোরা এটাকে সরা তো। খুব বাড়াবাড়ি করছে। তবে চড় চাপড় মারিস না। হাজার হোক স্কুলের টীচার।”
আমার কিচ্ছু ভালো লাগে না, খুব ঘুম পায়। রিক্সায় বসে বৌদিকে বলি, “আজ আমি ওই বুড়ির পাশে শোব না। ” বৌদি বলে, “ছিঃ ওরকম বলে না। মাসীমা, ঠাকুমা, দিদিমা যা খুশি বলো, তবে বুড়ি কখনও নয়।”
আসমানি (ষষ্ঠ অধ্যায়)
“মা, তুমি কবিতা লিখতে পারো?”
– “না বাবা। কবিতা লিখতে গেলে অনেক পড়াশোনা জানতে হয়, ছন্দ, মাত্রা জানতে হয়, মিল দিতে হয়। আমি কি আর অত জানি?”
– “বড়দিদিমণিকে বলেছিলাম যে আমি কবিতা লিখতে পারি। তাতে দিদিমণির কী হাসি, আস্তে করে আমার কানটা মুলে দিয়ে বলেছিল, ‘কবিতার ভূত মাথা থেকে তাড়াও, ভালো করে পড়াশোনা করো। কবি না কপি হবে তুমি।’ আমি জানি কপি মানে বাঁদর, রামায়ণে আছে। খুব রাগ হয়েছিল। দিদিমণি বলে কিছু বলিনি, অন্য কেউ হলে ঢিল মেরে মাথা ফাটিয়ে দিতাম। আমায় বাঁদর বলা!”
– “এত রাগ থাকলে কোনোদিন কবিতা লিখতে পারবে না। আর দিদিমণি তোমায় অত ভালোবাসে তাঁর সম্বন্ধে এরকম ভাবনা! মনে মনে ক্ষমা চেয়ে নাও ওঁর কাছে।”
আমি দেওয়ালের দিকে মুখ করে দু’হাত জোড় করে মনে মনে বলি, “পাপ দিও না ঠাকুর, আর কোনোদিন দিদিমণিকে মারার কথা ভাবব না।ভাবলেও মাকে বলব না।”
মা বলে, “এবার দেখি কী কবিতা লিখেছিলি।”
আমি আমার বাঁধানো খাতা বার করি, এই খাতায় আমি অনেক কিছু লিখে রাখি। শুকতারার ধাঁধা, যুগান্তরের ছড়া, গল্পদাদুর ক্যুইজ, মায়ের বাবা, মা, ঠাকুর্দা, ঠাকুমার নাম।
মা উল্টে পাল্টে দেখে ওই খাতা। খুব খুশি হয় নিজের বাবা-মার নাম দেখে।
আমার কবিতা পড়তে থাকে –
(১)
খরিদার হরিদার সারা গায়ে শ্বেতি
শনিবার স্কুল খোলা, রবিবার ছুটি।
(২)
কৃষ্ণা দিদিমণির রং খুব বেশি কালো
বিকেলে বৃষ্টি হলে লাগে নাতো ভালো।
(৩)
গণেশের হাতি মুখ চারখানা হাত
অসুরের লাথি খেয়ে সিংহটা কাত।
(৪)
বিশ হাত দশ মাথা লঙ্কার রাবণ
বিশল্যকরণী আনে পবননন্দন।
পড়তে পড়তে মায়ের ভুরু কুঁচকে যায়। আমি জিজ্ঞেস করি, “কেমন হয়েছে, ভালো হয়নি?”
মা বলে, “কবিতার ভালো-মন্দ আমি তো অত বুঝি না। তবে মনে কোনো দোলা দিচ্ছে না। কেমন খাপছাড়া কিছু লাইন। প্রথম লাইন পুবে যায় তো দ্বিতীয় লাইন উত্তরে। হরিদার শ্বেতির সঙ্গে রবিবার স্কুল ছুটির কী সম্পর্ক? কিংবা কৃষ্ণা দিদিমণির গায়ের রঙের সঙ্গে বিকেলের বৃষ্টির? তুমি কোথায় দেখেছো অসুরের লাথি খেয়ে দুর্গার সিংহ কাত হয়ে গেছে? সাধারণের যে ধারণা তাকে পাল্টে দিলে চলবে না। তোমায় অনেক পড়তে হবে, তারপর তো লেখা। তুমি তোমার কবিতা আমায় ছাড়া আর কাউকে দেখাবে না। ওই লেখা পড়ে সবাই তোমার পেছনে লাগবে। যেহেতু নিজেরা পারে না তাই অন্য কেউ পারলে সেটা সহ্য হয় না। কবিতা লেখার আগে তোমায় ছন্দ, মাত্রা শিখতে হবে। যেমন, গান শেখার আগে সারেগামা।”
মা একটু দম নেয়, তারপর আবার বলে, “তোমার চার নম্বর কবিতাটা একমাত্র আমার কবিতা মনে হয়েছে। ওইখানে প্রথম লাইনের সঙ্গে দ্বিতীয় লাইন একসাথে হাত ধরাধরি করে যাচ্ছে।”
এতকথা বলে মা কেমন এলিয়ে পড়ে। আমি ভয় পেয়ে যাই। বলি, “মা, কী হয়েছে তোমার? কোথায় কষ্ট হচ্ছে?”
মা কিছু বলে না, মুখে আঙুল দিয়ে আমায় কথা বলতে মানা করে। ঘরে কেউ নেই দিদিরা স্কুলে, ছোড়দা কলকাতা গেছে , বাবা অফিসে, বড়দা, মেজদা দুজনেই ডিউটিতে। আমি দৌড়ে গিয়ে রীনার মাসীকে ডেকে আনি। মাসীমা মায়ের চোখে মুখে জল দেয়, তবু জ্ঞান ফেরে না। ওদিকে উনুনে ভাতের ফ্যান উপচে পড়ে পোড়া গন্ধ বেরোচ্ছে। মাসীমা বলে, “তুই ছুট্টে গিয়ে তোর বাবার বন্ধু বাগচী ডাক্তারকে খবর দে, আমি ততক্ষণে ফ্যান গেলে রাখছি।”
আমি দৌড়তে দৌড়তে বাগচী জেঠুর বাড়ি যাই। একতলায় ওনার বসার ঘর, ডিসপেনসারি। তবে উনি মিলিটারি থেকে রিটায়ার করার পর আর প্র্যাকটিস করেন না। (ডক্টর) মেজর কে এস বাগচী। অনেক ডিগ্রী তাঁর নামের পাশে। উনিও স্টেথোস্কোপ নিয়ে হন্তদন্ত হয়ে আসেন। মায়ের পালস্ দেখেন, প্রেসার চেক করেন বলেন, “প্রেসার ফল করেছে। আমি একটা ইনজেকশন দিচ্ছি। মনে হচ্ছে রক্তে হিমোগ্লোবিন কম আছে।”
সেবার মাকে রেলের মেন হসপিটালে ভর্তি হতে হল। মা’কে রক্ত দিতে হবে। হাসপাতালে যাওয়ার সময় বলে গেল, “ছোড়দির সাথে, পাড়ায়, স্কুলে কারুর সাথে মারপিট করবে না। সবার কথা শুনবে। আর এই একটাকা রাখো,” এই কথা বলে অ্যাম্বুলেন্সে উঠে চলে গেল মা। আর আমি মনে মনে বলি, “হ্যাঁ, আমি সবার কথা শুনব, আর আমার কথা কেউ শুনবে না, এমনকী ভগবানও না!”
পরিষ্কার বুঝতে পারছি যে আমি স্বপ্ন দেখছি। সেই স্বপ্নে আমি আর মা হেঁটে যাচ্ছি, চারিদিকে আশেপাশে কেউ কোথাও নেই। আমার জুতো মোজা ধুলোয় ভরা, মায়ের চটিতে বলি ঢুকে কড়কড় করছে। লাল হয়ে ফুলে গেছে মায়ের পা। একসময় চটিজোড়া খুলে দিল মা। আমি বললাম, “পায়ে লাগবে তো, কাঁটা ফুটবে।”
মা বলল, “এখন আর লাগছে না। সব যন্ত্রণাবোধ উবে গেছে। আর বেশি দূর নেইও, ওই যে রাস্তাটা মিশে গেছে দিগন্তে তারপরে আর যেতে পারবে না তুমি। আমি একাই যাব। তুমি ফিরে যেও খরিদার বাড়িতে।”
– বারে, তুমি পারলে আমি পারব না কেন?
– ঐ দিগন্ত পেরিয়ে গেলেই আমি চিরকালের মত মিশে যাব তোমার স্বপ্নে।
– তাহলে আমি যাই দিগন্ত পেরিয়ে, তুমি থাকো এপারে। আমিই নাহয় মিশে গেলাম তোমার স্বপ্নে।
– তা হয় না বাবা।
এই বলে মিলিয়ে গেল মা। শুধু লাল টিপটা ভেসে থাকল অনেকক্ষণ, তারপর ওটাও।
এসব বহু দিন আগের কথা। তখন আমি অনেক ছোট। অবশ্য ‘ছোট’ কথাটা খুব অস্পষ্ট, পরিষ্কার করে কিছু বোঝা যায় না। আজ থেকে কুড়ি বছর আগেও তো তখনকার আমি এখনকার আমির থেকে অনেক ছোট। ছোট মানে সেই হাফ প্যান্ট পরে পিঠে ব্যাগ নিয়ে স্কুলে যাওয়ার বয়স; যখন কোন্ দেশেতে তরুলতা সকল দেশের চাইতে শ্যামল; ছোট মানে যখন আমাদের বাড়ির সামনে অনেকটা খোলা জায়গা ছিল; কুয়োর পাশেই অনেক বড় খেলার মাঠ ছিল, যেখানে আমরা ঘুড়ি ওড়াতাম, ফুটবল, ক্রিকেট, গিল্লিডান্ডা খেলতাম; যখন দুর্গামন্দিরে শিব, কালী কিছুরই প্রতিষ্ঠা হয়নি; যখন দুর্গাপুজো, কালীপুজো, সরস্বতী পুজোর সময়টা ছাড়া মন্দির পুরো খালি পড়ে থাকত, সেখানে পাড়ার দাদারা ক্যারম খেলত, সিগারেট খেত, রাত-রাতভর আড্ডা মারত; যখন অনেক রাতে পুলিশ রেড করতে এসে অমলদা, কমলদা কাউকে না পেয়ে নকশাল সন্দেহে ফাল্গুনিদাকে ধরে নিয়ে গেল; যখন পটিদার ভাই কার্তিক চুরি করবে বলে শীতের রাতে আমাদের খাটের তলায় লুকিয়ে ছিল; যখন বাতাসে শিউলির গন্ধ ভাসলে মন ভালো হয়ে যেত, যখন সৌরেনদা দুর্গাঠাকুরের চোখ আঁকলে গা শিরশির করে উঠত; যখন লালবাংলা যাত্রা ময়দানে যাত্রা হত —আমি সুভাষ বলছি, লেনিন, মা-মাটি-মানুষ; যখন তোমার নাম আমার নাম সবার নাম ভিয়েতনাম, যখন ভোট দেবেন কীসে কাস্তে ধানের শিষে; যখন দেওয়ালে দেওয়ালে “জোড়া বলদের দুধ নাই, কংগ্রেসের ভোট নাই; যখন ভূতের গল্প পড়ে ভয় পেয়ে বালিশে ‘মা’ লিখে ঘুমোতে যেতাম; যখন বারান্দায় মাদুর পেতে হ্যারিকেনের আলোয় পড়তে বসতাম; যখন রাত দশটায় সংবাদ পরিক্রমা শুনে গায়ে কাঁটা দিত; যখন রেডিওতে ‘খবর পড়ছি দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়’ ; যখন জেনারেল অরোরা খান সেনাদের হারিয়ে দিচ্ছে; যখন ইন্দিরা গান্ধিকে দেখার জন্যে দু’মাইল হেঁটে বম্বে রোডের ধারে দাঁড়িয়ে থাকছি; যখন পুজোর ছুটির পরেই অ্যানুয়াল পরীক্ষা; যখন মা বলেছে পা ফুলেছে; যখন কালীপুজোয় ছোড়দা সোরা, গন্ধক, অ্যালুমিনিয়াম চুর, রেড়ির তেল আর অল্প নীল মিশিয়ে তুবড়ি বানাত; যখন গভীর রাতে কলবয় এসে বড়দাকে ডিউটি যাওয়ার সময় জানিয়ে যেত, বড়দা ট্রেন নিয়ে চলে যেত ভদ্রক, টাটা, ঝাড়সুগদা, হাওড়া; যখন আমাদের প্রত্যেকটা ঘরের আলাদা আলাদা নাম ছিল – বড় ঘর, কামার ঘর, ছোট ঘর, কাঠের ঘর, ঠাকুর ঘর, রান্না ঘর; ঠাকুমাকে কামা বলতাম আমরা; যখন আমাদের টিনের চাল দেওয়া টানা বারান্দা ছিল; বাড়ির মধ্যেই বড় উঠোন ছিল; বেলগাছ , কলাগাছ , টগর গাছ , শিউলি গাছ , কাঁঠাল গাছ ছিল; যখন পাশের বাড়ির বাঙাল বুড়ি পেয়ারা চুরি করলে সাত চোদ্দং তিপ্পান্ন পুরুষ উদ্ধার করে দিত; যখন গীতাদির বর সাইকেলের হ্যান্ডেলে দু’ থলি বাজার ঝুলিয়ে চেঁচাতে চেঁচাতে পাড়ায় ঢুকত ‘গীতা ডোন্ট ডু ডাল, মাংস আনসি।’ ; যখন চৌবেদা আমাদের দেখলেই গালে দাড়ি ঘষে দিত; যখন মাইনে পেয়ে মেজদা মিষ্টি নিয়ে ঘরে ঢুকত; যখন মেজদি টানতে টানতে চান করাতে নিয়ে যেত আর আমার মুখ দিয়ে গালাগালির বন্যা ছুটত – ‘মুখপুড়ি , রাক্ষুসি, কুত্তি’ ; যখন উড়িয়া ঠাকুরমশাই দু’ বেলা নারায়ণ পুজো করে যেত; যখন প্রসাদের আমের আঁটি খাওয়া নিয়ে ছোড়দির সাথে রোজ ঝগড়া হত তখন হঠাত্ একদিন সাতদিনের অসুখে মা মারা গেল।
আমার মায়ের নাম আশারানি, আসমানি নাম দাদুর দেওয়া।
শেষ
© গণেশ ঢোল
১২০১২০২৪
মাতৃভাবনার উপর এক অনবদ্য লেখা।
ছবির সংযোজন খুব ভালো লাগলো
খুব সুন্দর লেখা,
A beautiful narration of the mother son relationship.
Enjoyed reading.
শিশু ও মায়ের সম্পর্ক লেখক খুব সুন্দরভাবে বিবরণ দিয়েছেন