প্রফেসর শঙ্কু ফ্যান-ফিকশন
অমিত ঘোষ, বিই কলেজ
শ্রী সত্যজিৎ রায়ের জন্মদিন উপলক্ষে আমার লেখা একটি শঙ্কু ফ্যান-ফিকশন পোস্ট করলাম। এটি সেই বিশেষ দিনে তাঁকে শ্রদ্ধা নিবেদন করার আমার ক্ষুদ্র প্রয়াস মাত্র।
**************
সূচনা
ঘরের মধ্যে বিছানায় বসে আছে লোকটি। কম পাওয়ারের মিটমিটে একটা বাল্ব ঘরের অন্ধকার যেন আরো বাড়িয়ে তুলেছে। কেমন যেন একটা ঘোরের মধ্যে রয়েছে সে। কিছুই বুঝতে পারছে না – সে কে? এটা কোন জায়গা? আর সে-ই বা এখানে কি করছে? মাথায় আবছাভাবে ভেসে বেড়াচ্ছে কিছু দৃশ্য – যেন সেগুলো কৃত্রিমভাবে তার মধ্যে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। নাঃ, স্পষ্টভাবে কিছু মনে পড়ে না। সে এবার ঘরটার দিকে নজর দিল। ছোট্ট একটা ঘর, আসবাবপত্র বলতে একটা টেবিল – তাতে একটা জলের গ্লাস। কিন্তু টেবিলের নিচে বাস্কেটে কি ওটা? একটা স্যালাইনের খালি বোতল! পরক্ষণেই তার চোখ পড়ল নিজের দিকে, আর বুকটা ছ্যাঁত করে উঠল। তার পরণে একটা আলখাল্লা, হাসপাতালে রোগীরা যেমনটি পরে। তবে কি তার সার্জারি করা হয়েছে – কেন? চোখেমুখে একটু জল দেওয়ার জন্য উঠে যেতেই বেসিনের উপর লাগানো আয়নায় চোখ পড়ল, সাথে সাথে তার শরীরটা বিদ্যুৎস্পৃষ্টের মত শিউরে উঠল। এই মুখ তার চেনা, ওরা চিনিয়ে দিয়েছে! আর সেই সঙ্গে মগজে ঢুকিয়ে দিয়েছে একটা নাম, তার বর্তমান পরিচয় : প্রফেসর ত্রিলোকেশ্বর শঙ্কু।
**********
১১ই জুন
আমাকে দেশে-বিদেশে বহু মানুষ জিজ্ঞাসা করেছেন যে আমি কেন কোন অ্যাসিস্ট্যান্ট না রেখে এই বয়স পর্যন্ত একা একা কাজ করে যাচ্ছি। আমি সবাইকে একই উত্তর দিয়েছি যে এমন কোন অ্যাসিস্ট্যান্ট আজ অবধি পাইনি যার ওপর পুরোপুরি নির্ভর করতে পারি। আসলে আমি বোধহয় নিজেও চাইনি অন্যের ওপর নির্ভরশীল হতে, তাই আমার সমস্ত গবেষণা একাই চালিয়ে গেছি। এই অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস-ই আমার কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।আজ আমার জীবনের বিজ্ঞানচর্চার সম্পূর্ণ তথ্য জানে শুধু একজন ব্যক্তি, আমি নিজে। অন্তত এটাই ছিল আমার ধারণা। কিন্তু কালকের ঘটনাটা আমার সেই ধারণাকে ভ্রান্ত প্রমাণ করেছে। ব্যাপারটা ভালভাবে বোঝার জন্য আমি সংবাদপত্রের লেখা তুলে দিচ্ছি :
গতকাল এক অভিনব ঘটনায় গিরিডি শহর উত্তাল হয়ে ওঠে। বিখ্যাত বিজ্ঞানী প্রফেসর শঙ্কুর বাড়িতে এক ব্যক্তি হাজির হন এবং নিজেকে শঙ্কু বলে দাবি করেন। প্রফেসর শঙ্কু তখন নিজের বাড়িতেই ছিলেন। স্বভাবতই তিনি উত্তেজিত হয়ে পড়েন। মজার ব্যাপার হল যে আগন্তুককে হুবহু শঙ্কুর মত দেখতে। এছাড়া তিনি অনেক কথা বলতে থাকেন যা শঙ্কুর সঙ্গে মিলে যায়। তাঁর মতে তিনিই আসল শঙ্কু, বাড়িতে বসবাস করা ব্যক্তি নকল। স্বভাবতই উপস্থিত জনতা এবং প্রফেসরের প্রতিবেশীরা উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। উপায়ন্তর না দেখে প্রফেসর শঙ্কু পুলিশে খবর দেন। পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং আগন্তুককে থানায় ধরে নিয়ে যায়। আপাতত তিনি লক-আপে। পুলিশ সূত্র অনুযায়ী তাঁর বিরুদ্ধে আপাতত প্রতারণার মামলা করা হয়েছে। তবে তদন্ত আরও চলবে কারণ শঙ্কু একজন বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী, তাঁর অনেক আবিষ্কার দেশের সুরক্ষার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রফেসরকে এব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি কোন উত্তর দেননি।
তো এই হল মোদ্দা কথা। এটা পরিষ্কার যে আমার বিরুদ্ধে কেউ চক্রান্ত করেছে। এর জালে ফেঁসে গিয়ে আমাকে আজ গ্ৰেপ্তার হয়ে থানায় দিন কাটাতে হচ্ছে। আমি হেরে যাচ্ছি কারণ কোন এক আশ্চর্য কারণে আমার গত দু’দিনের সব স্মৃতি হারিয়ে গেছে। কাল সকালে জ্ঞান হওয়ার পর আমি নিজেকে আবিষ্কার করি এক অদ্ভুত পরিবেশে, ঊশ্রীর তীরে বনজঙ্গলে ঢাকা একটা পোড়ো বাড়ির মধ্যে, কিছুতেই বুঝতে পারিনি ওখানে কিভাবে গেলাম। এমনকি আমার নামধাম অবধি শুরুতে মনে পরছিল না। খানিক পরে ধীরে ধীরে সবকিছু মনে পড়তে শুরু করে, তখন আমি ওখান থেকে বেরিয়ে নিজের বাড়ি যাই। তারপরের কথা তো আগেই বলেছি। কাউকে আমি বোঝাতে পারব না যে আমি-ই আদি ও অকৃত্রিম প্রফেসর শঙ্কু, বাড়িতে যে আছে সে প্রতারক। সে যে কে, কিভাবে এল কিছুই জানি না। আরও একটা কথা। এই প্রতারকটি সুশিক্ষিত। আমার প্রতিটি তথ্য, প্রতিটি অভ্যাস সে জানে, ইনক্লুডিং মাই রিসার্চ। এই লোকের হাতে আমার ল্যাবরেটরির কন্ট্রোল যাওয়ার অর্থ এক চরম অমঙ্গলের ইঙ্গিত দিচ্ছে। আর আমি, যে কিনা বারবার নানা বিপদের জাল কেটে বেরিয়ে এসেছে, অসহায় হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। কারণ এবার লড়াইটা কোন বিদেশী সায়েন্টিস্টের সাথে নয়, লড়াই এবার আমার ডুপ্লিকেট এক মহা শয়তান মানুষের সাথে। বলা যেতে পারে নিজের সাথেই। হ্যাঁ, এবার আমি নিজেই নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী।
*********
১২ই জুন
চিরকাল আমি হয় বাড়ি নাহলে বিদেশের কোন হোটেল বা রিসার্চ ফ্যাসিলিটিতে দিন কাটিয়েছি। থানার লক-আপে থাকার অভিজ্ঞতা এই প্রথম। সহ্য করে নিচ্ছি কারণ জানিনা কতদিন এই অবস্থায় কাটাতে হবে। দারোগা যতীশ সমাদ্দার আমার পূর্বপরিচিত, কিন্তু এখন তো আমি অপরাধী! তবে একটা ব্যাপারে উনি সাহায্য করেছেন। আমাকে আলাদা একটা সেলে রাখা হয়েছে, আর একটা খালি নোটবুক আমাকে দেওয়া হয়েছে যেটাতে আমি ডায়েরি লিখছি। কোন বন্ধুবান্ধব আমার সঙ্গে দেখা করতে আসেনি। আর কেনই বা আসবে? তবে আমি হাল ছাড়ব না, লড়াইটা একাই চালিয়ে যাব দরকার হলে। আর যতটা পারি রোজকার ঘটনা এভাবে লিখে রাখব।
**********
এক আশ্চর্য ঘটনা ঘটল একটু আগে। দুপুরে দেওয়া খাবারের থালায় লুকানো ছিল একটা কাগজ। তাতে বাংলায় লেখা মাত্র কয়েকটা শব্দ : “প্রফেসর শঙ্কু, আমি জানি আপনি প্রতারক নন। ভরসা রাখুন।” অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে। তাহলে এখনও কি কেউ আছে যে আমাকে বিশ্বাস করে! কে সে – জানি না, তবে ভরসা রাখলাম। দেখা যাক কি হয়।
**********
১৩ই জুন
চরম হতাশা! কাল আমাকে কোর্টে নিয়ে গিয়েছিল। যথারীতি আমার প্রতিদ্বন্দ্বী – জাল শঙ্কু, পুরোপুরি প্রমাণ করে দিলেন যে তিনিই আসল মানুষ। খুবই আশ্চর্য হয়ে দেখলাম যে আমার সম্পর্কে তিনি একজন অথরিটি। আমার চালচলন, কথা বলার স্টাইল, আমার খুঁটিনাটি অভ্যাস, আমার রিসার্চ ওয়ার্ক, আমার পাস্ট এক্সপিডিশন – সবকিছু তাঁর নখদর্পণে। আমিও নিজের সম্পর্কে বললাম, কিন্তু ঐ দু’দিনের স্মৃতিভ্রংশ সব গোলমাল করে দিল। আমাকে জেলে পাঠানো হচ্ছিল, কিন্তু দারোগা যতীশ সমাদ্দার পুলিশ কাস্টডির আপীল করলেন, তদন্ত নাকি বাকি আছে। অগত্যা আবার পুলিশ লক-আপ।
কোর্টে এক পরিচিত মুখ দেখে চমকে গেলাম। আমার বন্ধু সন্ডার্স, নিশ্চয়ই এই ঘটনা ইন্টারন্যাশনাল মিডিয়ায় দেখিয়েছে, তাই লন্ডন থেকে ছুটে এসেছে। কিন্তু সেও আমাকে চিনতে পারল না – হাত ধরল ঐ প্রতারকের! সন্ডার্সের পাশে এক ভদ্রমহিলা ছিল – আমাদেরই বয়সী, বিদেশিনী। তিনিও ওদের কথাবার্তায় যোগ দিলেন। কে ইনি? আমি জানতাম সন্ডার্সের সাথে ওর স্ত্রী ডরথির ডিভোর্স হয়ে গেছে, তাহলে কি ইনি…? না, নিজের সমস্যাতেই আমি জর্জরিত, অন্যের কথা ভেবে লাভ কি? আর পারছিনা, লেখা শেষ করি। একটু বিশ্রাম দরকার, বড় ক্লান্ত।
***********
১৪ই জুন
নিয়মিত ডায়েরি লেখার অভ্যাস নিয়ে আমি চিরকাল প্রচ্ছন্ন গর্ববোধ করে এসেছি। নিজের জীবনটাকে খোলা খাতায় মেলে ধরে আনন্দ পেয়েছি। শুধু একটা চিন্তা আমাকে হন্ট করেছে যে অপ্রাসঙ্গিক ভেবে কিছু কথা আমি বাদ দিয়েছি, সেটা ঠিক করেছি কিনা। আজ আমি সেই প্রশ্নের উত্তর পেলাম। বরং শুরু থেকে আজকের ঘটনাটা বলি।
সকাল দশটা নাগাদ খবর এল আমার উকিল দেখা করতে এসেছেন। সেল থেকে বেরিয়ে ভিসিটার্স রুমে গিয়ে দেখলাম আমার উকিল ছাড়াও রয়েছেন এক বিদেশী মহিলা। মুখটা চেনা লাগল। মনে পড়ল যে এনাকে কাল সন্ডার্সের সাথে দেখেছি। ইনি এখানে? উত্তরটা এল উকিল দত্তবাবুর কাছ থেকে -“প্রফেসর শঙ্কু, ইনি আপনার সঙ্গে কথা বলতে চান, প্রাইভেটলি।”
**********
ঘরের মধ্যে রয়েছি শুধু আমরা দুজন। আমি কিছু বলার আগেই মহিলা কথা শুরু করলেন, “হাই শঙ্কু। অর, স্যুড আই কল ইউ তিলু?” একটা প্রচন্ড ধাক্কা খেলাম। “তিলু” বলে আমার মা-বাবা ছাড়া কেউ কখনো ডাকেনি। ক্রোল বা সন্ডার্সের মত ঘনিষ্ঠ বন্ধুরাও না। সেক্ষেত্রে ইনি! তবে কি…! “কনফিউজড?” বলে উঠলেন মহিলা, “যদি বলি তুমিই আমাকে এই নাম ধরে ডাকার পারমিশন দিয়েছিলে – ক্যান ইউ বিলিভ ইট?” আমি তখন উত্তেজনায় কাঁপছি। তবু যথাসম্ভব শান্ত গলায় বললাম, “ইয়েস। আই ডু বিলিভ।”
“তার মানে তুমি আমাকে চিনতে পেরেছ?”
“আগে পারিনি, বাট নাউ ইউ আর স্পটেড। গ্ল্যাড টু মিট ইউ ইলেনা স্টাইনার, আকা, লেনি – সিস্টার অব নরবার্ট স্টাইনার, ডটার অব প্রফেসর হাইনরিখ স্টাইনার। অ্যাম আই কারেক্ট?” উত্তর না দিয়ে লেনি শুধু আমার হাতটা চেপে ধরল। তারপর কান্নাভেজা কণ্ঠে বলল, “কাল নকল শঙ্কুর সাথে মিট করেছিলাম, আজ রিয়েল শঙ্কুর দেখা পেলাম।”
**********
আমার চোখের সামনে ভেসে উঠল প্রায় পঞ্চাশ বছরের পুরনো দৃশ্য। আমার স্বর্ণপর্ণী আবিষ্কারের ঘটনা। বার্লিনের এক ইহুদী পরিবারকে বাঁচাতে আমি জার্মানির মাটিতে নাৎসি পার্টির এক সর্বেসর্বা এবং তার দুর্ধর্ষ গুপ্তপুলিশ গেস্টাপো-র মোকাবিলা করেছিলাম। তাদের রক্ষাকবচের ব্যবস্থা করে এয়ারপোর্টের দিকে রওয়ানা হওয়ার আগের মুহূর্তে এক ফাঁকা ঘরে লেনি আমার মুখোমুখি হয়েছিল। আমার হাত ধরে কাঁপা কাঁপা গলায় সে বলেছিল, “ইউ আর মাই হিরো, শঙ্কু।” আমার সেই তরুণ বয়সে এক কিশোরীর এই অকপট স্বীকারোক্তি আমার মনে দোলা দিয়েছিল, আমি বলেছিলাম, “ইট’স ওকে। ইউ ক্যান কল মি তিলু।”
**********
লেনি এখন প্যারিসে থাকে। ইন্টারন্যাশনাল মিডিয়ায় খবরটা শুনে ও সন্ডার্সের সাথে যোগাযোগ করে, কারণ ও জেনেছিল সন্ডার্স আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তারপর দুজনে মিলে ইন্ডিয়া আসার প্ল্যান করে।
**********
লেনি বলল, “তাহলে তোমার ডুপ্লিকেট এই কথাটা জানল না কেন – সে যখন তোমার ব্যাপারে সব কিছু জানে?” আমি বললাম, “সব কিছু নয়, ও সেগুলোই জানে যেগুলো আমি জানিয়েছি।”
“হোয়াট ডু ইউ মিন?”
“ও আমার বিষয় সেগুলোই জানে যেগুলো আমি কখনো না কখনো লিখেছি। আইদার ইন আ সায়েন্স জার্নাল, রিসার্চ পেপার, অর, মাই ডায়েরি। কিন্তু ডায়েরিতে স্বর্ণপর্ণী অভিযানের গল্প লেখার সময় আমি আমাদের মধ্যে কথোপকথনের এই অংশটুকু বাদ দিয়েছিলাম, তাই ও এটা জানতে পারে নি।”
“বুঝেছি। এনিওয়ে, তুমি চিন্তা কর না। আমি সন্ডার্সকে সমস্ত কথা জানাব। ও নিশ্চয়ই কোন রাস্তা বের করবে।”
“লেনি, এই বিপদ থেকে রক্ষা পেতে হলে আমার দুটো কাজ করতে হবে। এক, ঐ দুদিনের হারানো স্মৃতি ফিরে পেতে হবে। আর দুই, ঐ প্রতারকের আসল পরিচয় খুঁজে বের করতে হবে। তবেই এই ষড়যন্ত্রের নক্সা আমরা পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারব।”
“হারানো স্মৃতি ফিরে পাওয়ার তুমি একটা যন্ত্র আবিষ্কার করেছিলে না?”
“হ্যাঁ, রিমেমব্রেন। কিন্তু সেটা তো বাড়িতে, ডুপ্লিকেট শঙ্কুর কব্জায়।”
“আর কোন উপায় নেই?”
“আছে। আমার সর্বরোগহর মেডিসিন মিরাকিউরল। সেটা খেলে দু’ঘন্টার মধ্যে মাথা পরিষ্কার হয়ে যাবে, আবার সবকিছু মনে পড়বে। কিন্তু সেটাই বা এঅবস্থায় পাই কোথায়?”
কথা না বলে লেনি তার ব্যাগের দিকে হাত বাড়াল। তারপর বলল, “কাল শরীর খারাপের দোহাই দিয়ে নকল শঙ্কুর থেকে একটা ট্যাবলেট চেয়ে নিয়েছি।” তার হাত থেকে ট্যাবলেটটা নিয়ে মুখে পুরতে যাব, এমন সময় দরজাটা খুলে গেল। ঘরে ঢুকে এলেন ওসি যতীশ সমাদ্দার। এক মুহুর্ত তিনি আমাদের দিকে তাকিয়ে রইলেন। তারপর শান্ত গলায় বললেন, “ওষুধটা নিয়ে নিন, প্রফেসর শঙ্কু!” আমি আশ্চর্য হয়ে বললাম, “মানে? আপনি জানেন?” মিঃ সমাদ্দার বললেন, “প্রফেসর, আপনাকে বহুদিন থেকেই চিনি। আপনার চোখ দেখেই আমি আসল শঙ্কুকে চিনে ফেলেছি। আর সেজন্যই আমি গোপনে আপনাকে সাহায্য করতে চেয়েছি। কখনো লুকিয়ে চিঠি দিয়ে, কখনো বা আপনাকে আমার থানার কাস্টডিতে রেখে। তাই ম্যাডাম যখন সব কথা বললেন তখন খুশী হয়ে ওনাকে দেখা করার ব্যবস্থা করে দিলাম। ট্যাবলেটটা গিলে নিন, এই রহস্য ভেদ করতে হলে আপনার ঐ দু’দিনের স্মৃতি ফিরে আসা খুব জরুরী।” কোন কথা বলতে পারলাম না আমি, চোখের কোণ দুটো শুধু ভিজে উঠল।
**********
ওষুধটা নেওয়া হয়ে গেছে। এখন অপেক্ষার পালা। একটা কথা মনে পড়ায় লেনিকে বললাম, “কাল যখন আমার ডুপ্লিকেটের সঙ্গে দেখা করলে, কিছু বুঝতে পারলে লোকটির সম্পর্কে? আমার নিজেকে আইনের চোখে আসল প্রমাণ করার জন্য ওর পরিচয় জানাটা দরকার।”
“সেরকম কিছু তো বুঝতে পারিনি। লোকটিকে দেখে মনে হল তোমার জেরক্স কপি। আশ্চর্য ব্যাপার। আর হ্যাঁ, ওর মোবাইলে হঠাৎ একটা কল এসেছিল। ও কথা বলতে শুরু করল সুইস ভাষায়। কলটা রিসিভ করার আগে কলারের ছবিটা মুহূর্তের জন্য চোখে পড়েছিল আমাদের। টাকমাথা, চোখের পাতা আর ভ্রু নেই। সন্ডার্স ওটা দেখেই চমকে উঠেছিল। পরে জিজ্ঞেস করাতে বলল ঐ বায়োকেমিস্ট নাকি এককালে তোমার শত্রু ছিল, তোমাকে শেষ করতে চেয়েছিল।” আমি বললাম, “বয়স কি আমাদের মত?”
“হ্যাঁ। তুমি চিনতে পারছ?”
এক মুহুর্তের জন্য আমার হৃৎস্পন্দন থেমে গেল। সুইস ভাষা, বায়োকেমিস্ট, মাকুন্দমার্কা চেহারা – সব মিলে যাচ্ছে, সব। চক্রান্তের জালটা এবার পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি। বুঝতে পারছি যে কি ভয়ঙ্কর বিপদ আমাকে গ্ৰাস করতে চলেছে। এখানে আমি কিছুই করতে পারব না! লেনির ব্যস্ত গলা শোনা গেল, “আর ইউ ওকে শঙ্কু? কিছু বুঝলে?” দমবন্ধ গলায় বললাম, “চিনতে পেরেছি, লেনি। তবে এই লড়াইতে জেতার আশা নেই। কারণ ঐ বায়োকেমিস্টের নাম প্রফেসর কর্নেলিয়াস হামবোল্ট, সুইজারল্যান্ডের সেন্ট গালেন শহরে তাঁর রিসার্চ ফ্যাসিলিটি আছে। আর আমার ডুপ্লিকেটের নাম…।” “কি?” অধৈর্য্য হয়ে প্রশ্ন করল লেনি। শরীরের শেষ শক্তিটুকু খরচ করে আমি উত্তরটা দিলাম, “ত্রিলোকেশ্বর শঙ্কু।”
“মানে?”
“মানে ওর আকৃতি- প্রকৃতি আমার সঙ্গে মিলে যাওয়াটা কোন সার্জারি বা ট্রেনিং-এর ফল নয়, ওটা ওর জন্মগত। অবশ্য ওর জন্ম কোন হসপিটালে হয়নি, হয়েছে আমার চরম শত্রু প্রফেসর হামবোল্টের ল্যাবরেটরিতে। ইয়েস লেনি, ইট’স্ আ ক্লোন অব প্রফেসর ত্রিলোকেশ্বর শঙ্কু।”
**********
***********
১৫ই জুন
আজ সকালে লেনির সাথে সন্ডার্স এসে হাজির। ভিসিটর্স রুমে সবাই বসার পর আমি পুরো ব্যাপারটা বলতে শুরু করলাম :
আজ থেকে প্রায় পনের বছর আগে প্রফেসর হামবোল্টের আমণ্ত্রণে আমি সুইজারল্যান্ড যাই – তাঁর আল্ট্রা মর্ডার্ণ ল্যাবরেটরিতে একটা প্রজেক্ট নিয়ে জয়েন্টলি কাজ করার জন্য। আমাদের রিসার্চের সাবজেক্ট ছিল : কৃত্রিমভাবে প্রাণ সৃষ্টি করা। এবং সেখানে আমরা সফল হই। আশ্চর্য প্রাণী-র বিষয়ে লেখার সময় আমি ডায়েরিতে সেই বিবরণ দিয়েছি। দুর্ভাগ্যবশত হামবোল্ট চেয়েছিল রিসার্চটি সম্পূর্ণভাবে নিজের কৃতিত্ব বলে চালাতে। কিন্তু প্রাণ সৃষ্টির পর ইভোল্যুশন ঘটে যখন মানুষ রূপে পৌঁছায় তখন দেখা গেল যে তার আকৃতি পুরো আমার মত, কারণ রিসার্চের শুরুতে DNA এবং জিন কালেক্ট করা হয়েছিল আমার দেহ থেকে। এরপর ঈর্ষার বশে হামবোল্ট চেয়েছিল আমাকে সরিয়ে দিতে, কিন্তু আমি বেঁচে যাই। হামবোল্টকে মেন্টাল অ্যাসাইলামে রাখা হয়েছে, এবং তার ল্যাব সিল করে দেওয়া হয়েছে – এটুকুই ছিল আমার কাছে শেষ খবর। কিন্তু…।”
আমার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে সন্ডার্স বলল, “আমি খবর পেয়েছি বছর পাঁচেক আগে হামবোল্ট আবার ফিরে এসেছে, আর নতুন করে কাজ শুরু করেছে। কিন্তু সেটা কি কাজ কেউ জানে না। তবে এখন বুঝতে পারছি।” আমি মাথা নেড়ে সায় দিলাম – “ওর ল্যাবে আমার DNA, জিন আর অন্যান্য বডি স্যাম্পল আগে থেকেই মজুত ছিল। আগের বার ও আমার কাছে হেরে গেছে, তার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য ও আমার ক্লোন মডেল বানিয়েছে। তাকে আমার সব পাবলিশড ডকুমেন্টস আর ডায়েরি পড়িয়ে রেডি করানো হয়। মর্ডার্ন ক্রিপ্টোগ্রাফিক সার্জারির মাধ্যমে আমার ফিঙ্গারপ্রিন্ট তার আঙ্গুলে সেট করা হয় যাতে সে আমার স্থান নিতে পারে।
আমার পুরনো চাকর প্রহ্লাদ ছুটিতে গেছে। তার বদলি হিসাবে যে কাজ করছে সেই ছেদিলালকে হাত করে আমার কফিতে মিশিয়ে দেওয়া হয় এক ভয়ঙ্কর ড্রাগ X50। স্বভাবতই আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ি। তারপর স্থানীয় কিছু গুন্ডার সাহায্যে ওরা আমাকে এক পোড়ো বাড়িতে দু’দিন আটকে রাখে। ড্রাগের প্রভাবে নেশাগ্ৰস্ত আমার ওপর এক সাইক্রিয়াটিস্টকে দিয়ে কন্টিনিউয়াস হিপনোটাইজ করার চেষ্টা করা হয় যাতে আমার স্মৃতিশক্তি পুরোপুরি লোপ পায়। কিন্তু অসাধারণ মনের জোরে আমি রক্ষা পাই। শুধু ঐ দু’দিনের স্মৃতি হারিয়ে যায়। ইতিমধ্যে আমার ক্লোন মডেল শঙ্কু সেজে আমার ঘর, বিশেষত ল্যাবরেটরির দখল নেয়।”
*********
লেনি বলল, “এখন উপায়? ওকে ক্লোন প্রমাণ করার কোন উপায় নেই?”
“অবশ্যই আছে ” আমি বলে উঠলাম, “কোন পদার্থের সাথে তার ক্লোন মডেলের একটাই পার্থক্য: বয়স। আমার ষাট বছর বয়সের DNA দিয়ে বানানো ক্লোন মডেলের বয়স কিন্তু ষাট নয়, সে কিন্তু তখন নিউ-বর্ন।”
“তার মানে তোমার ক্লোনের বায়োলজিকাল এজ এখন মাত্র পাঁচ!!”
আমি আর সন্ডার্স মাথা নেড়ে সায় দিলাম।
“কিন্তু এটা প্রমাণ হবে কি করে?”
“মাইক্রো-কার্বন টেস্ট। এটা দিয়ে যেকোন পদার্থের ফিজিক্যাল এজ নির্ধারণ করা যায়।”
“ভেরি গুড। দেন লেটস্ মুভ।”
ঠিক সেই সময় দরজা খুলে ইন্সপেক্টর সমাদ্দার ঘরে ঢুকলেন। তারপর উত্তেজিত ভাবে বললেন, “আপনাদের একটা খবর দিতে এলাম। একটু আগে এক বিদেশী সাহেব নকল শঙ্কুর সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন। এয়ারপোর্টের সূত্র অনুযায়ী, তিনি এসেছেন সুইজারল্যান্ড থেকে, নাম…হ্যাঁ, মনে পড়েছে : কর্নেলিয়াস হামবোল্ট।”
সন্ডার্স চমকে উঠল, “ও মাই গড্!!!”
“খবর এখানেই শেষ নয় স্যার” সমাদ্দার বলে চললেন, “ইমিগ্ৰিশান ডিপার্টমেন্টের রিপোর্ট অনুযায়ী হামবোল্ট কালই আবার ইন্ডিয়া ছেড়ে চলে যাবেন, তবে একা নন। ওনার সাথে যাবে নকল শঙ্কু।”
“আর ওদের সাথে চিরদিনের মত যাবে আমার যাবতীয় ইনভেনশন, ইনক্লুডিং অল ম্যানুফ্যাকচারিং ডিটেইলস, অ্যান্ড অল আদার রিসার্চ পেপারস। ওদের আটকানোর কোন পথ নেই কারণ মাইক্রো-কার্বন টেস্ট ইজ আ টাইম টেকিং প্রসেস।”
আমার বলা কথাগুলো সকলের মাথায় এক ভয়ঙ্কর বিপদের ঘন্টা বাজিয়ে দিল। লেনি আমার হাতটা চেপে ধরল, ওর হাতটা মড়ার মত ঠাণ্ডা। এক মৃত্যুশীতল নীরবতার মধ্যে ডুবে গিয়ে আমরা একে অন্যের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
*********
১৬ই জুন
আজ আমার জন্মদিন। কিন্তু আনন্দ করার অধিকার কি আমার আছে? আমি কি আদৌ বেঁচে আছি?
কাল রাতে ঠিক এগারোটার সময় আমি আমার বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালাম। আমার পিছনে সন্ডার্স। পুলিশের জিপ একটু দূরে নামিয়ে দিয়ে চলে গেছে। আমরা বাড়ির পিছনের দিকে এগোলাম। গোলঞ্চ গাছের পাশে পাঁচিলটা কয়েকদিন আগে ভেঙে পড়েছিল, আজ সেটা কাজে এল। ভাঙা পাঁচিলের মধ্যে দিয়ে আমরা দুজন ঘরের পাশে চলে এলাম। এবার? ঘরের মধ্যে দু’জনের কথপোকথন শোনা যাচ্ছে। একজনের গলা আমার সঙ্গে প্রায় মিলে যায় – ডুপ্লিকেট শঙ্কু। আরেকজনের গলা প্রায় পনের বছর পরে শুনলাম, তবু চিনতে অসুবিধা হল না। ইনি হলেন এই চক্রান্তের মাস্টারমাইন্ড, প্রফেসর কর্নেলিয়াস হামবোল্ট।
**********
সন্ডার্সকে ওখানেই থাকতে বলে আমি এবার এগিয়ে গেলাম বাড়ির পশ্চিম কোণের একচালা ঘরটার দিকে। ওখানে এমন কিছু আছে যার কথা আজ বিকেল অবধি মনে পড়ে নি। দরজাটা তালা দেওয়া, চাবি কোথায়? মনে পড়ল যে এই দরজার গোবরাটে চাবি রাখতাম। বহু বছর হয়ে গেল এদিকে আসি নি, এখন কি চাবি পাব? পেলাম। খুলেও ফেললাম দরজাটা। কিন্তু ঘর তো অন্ধকার, কিছুই দেখতে পাচ্ছি না। অগত্যা অন্ধকারেই ভেতরে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালাম, কিন্তু থেমে গেলাম পিছন থেকে ভেসে আসা গলার আওয়াজ শুনে। “কোথায় যাচ্ছ, প্রফেসর? এত রাতে বাড়ির মালিকের অনুমতি না নিয়ে বাড়ির ভিতরে ঢোকা কি ঠিক?” কথাটা বাংলায় বলা, বলছে আমার প্রতিদ্বন্দ্বী – শঙ্কু নং ২।
**********
বাড়ির পিছনের আলোটা জ্বলে উঠল, একটা অস্ত্র হাতে সেখানে এসে দাঁড়িয়েছে নকল শঙ্কু: আমার ক্লোন মডেল। তার পাশে দেখা গেল হামবোল্টকে, মুখে এক পৈশাচিক হাসি – “ওয়েলকাম শঙ্কু, ওয়েলকাম টু মাই ট্র্যাপ। আসলে আমি বুঝেছিলাম যে এই ক্লোনড শঙ্কুকে তুমি চিনে ফেলবে। তারপর ওর মাইক্রো-কার্বন টেস্ট করে ওকে এক্সপোজ করবে। কিন্তু তাহলে তো আমার প্রবলেম হয়ে যাবে, কারণ আমি চাই এখন থেকে ও শঙ্কু হিসাবে আমার নির্দেশে কাজ করবে। তোমার আবিষ্কার করা ভাল ভাল গ্যাজেটগুলো একে একে টেররিস্ট গ্ৰুপগুলোর কাজ বিক্রি করে দেব। তাই ইন্ডিয়া ছেড়ে যাবার আগে তোমাকে চিরদিনের মত সরানোটা খুব জরুরী ছিল। সেজন্যই আমি ইন্সপেক্টর সমাদ্দারকে আমার দলে নিয়ে এসেছি, আর ওর সাহায্যে তোমাকে এখানে আসতে বাধ্য করেছি। নাউ ইউ আর ফিনিসড।” আমি বললাম, “আমাকে মেরে কি তুমি বাঁচবে? ইন্ডিয়া গভর্নমেন্ট ঠিকই তদন্ত করবে, আর আমার বন্ধুরা সব বলে দেবে।”
“মাই ডিয়ার শঙ্কু, তদন্ত হবে যদি তোমার ডেডবডি পাওয়া যায়। কিন্তু তা তো হবে না। ওর হাতে কি দেখেছ?” এতক্ষণে আমার চোখ গেল নকল শঙ্কুর দিকে। তার হাতে একটা অদ্ভুত গড়নের অস্ত্র – আমার খুব চেনা, আমারই তৈরি : অ্যানাইহিলিন গান, যা নিহত না করে নিশ্চিহ্ন করে। আমার মুখ শুকিয়ে গেল, রক্তচলাচল দ্রুত হল, এই কি তবে শেষ! অনেকগুলো মুখ চোখের সামনে ভেসে উঠল : প্রহ্ণাদ, অবিনাশবাবু, নিউটন, সন্ডার্স, ক্রোল, আর, লেনি, আর….। ধড়াম শব্দে পেছনের একচালা ঘরের দরজাটা খুলে গেল। তীব্রবেগে বাইরে এসে আমার দাঁড়াল একটা মানুষ। না, একটা যণ্ত্র। হলনা, যাণ্ত্রিক মানুষ, আমার তৈরি, আমার রোবু। যার শরীরে অন্যান্য কলকব্জার সাথে লাগানো আছে হাইডেলবার্গের বিজ্ঞানী প্রফেসর পামারের তৈরি মাইক্রোচিপ – যার ফলে আমার সঙ্গে রোবুর টেলিপ্যাথিক কানেকশন আছে। আমার বিপদে ও ছুটে আসে। হাইডেলবার্গে এসেছিল, আজও এসেছে। ডুপ্লিকেট শঙ্কু চেঁচিয়ে উঠল, “রোবু, গো ব্যাক।” রোবু কিন্তু পিছাল না। এবার আমার পালা। আমি বলে উঠলাম, “রোবু তোমার কথা শুনবে না নং টু। ও মানুষ নয় যে ক্লোনড মডেলকে আসলের সাথে গুলিয়ে ফেলবে। ও ভয়েস অ্যাকটিভেটেড রোবু, আমার গলা চেনে। প্লাস আমার ব্রেনের সাথে ওর টেলিপ্যাথিতে কানেকশন হয়েছে। ইউ বোথ আর ডুমড।” নকল শঙ্কু পিছিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করল, কিন্তু রোবু তার হাতের আঙ্গুলগুলো এগিয়ে ধরল। ৪৪০ ভোল্টের ইলেকট্রিক শক নিমেষের মধ্যে আঘাত হানল, ছিটকে পড়ল ডুপ্লিকেট শঙ্কু। তার হাত থেকে পড়ে যাওয়া অ্যানাইহিলিনটা তুলে নিয়ে আমি ট্রিগার টিপলাম, পলকে পৃথিবীর বুক থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল আমার প্রতিদ্বন্দ্বী। হামবোল্ট ততক্ষণে দৌড় দিয়েছে রাস্তার দিকে, কিন্তু পালাতে পারলে না! গোলঞ্চ গাছের তলায় অন্ধকার থেকে আলোতে তীরের মত বেরিয়ে এল এক মূর্তি, হাতে কোল্ট রিভলবার – লেনি! এখানে লুকিয়ে ছিল!! পরক্ষণেই তার কোল্টের দুটো গুলি হামবোল্টের হার্ট ফুটো করে দিল। আমার কাছে এগিয়ে এসে লেনি বলল, “আর ইউ ওকে, শঙ্কু?”
“তুমি ওকে মেরে দিলে?”
“হামবোল্টের ওপর বহুদিন থেকেই ইন্টারপোলের রেড অ্যালার্ট জারি ছিল। ও টেররিস্ট গ্ৰুপগুলোকে হেল্প করত। সো, ডোন্ট ওয়ারি!”
“কিন্তু তুমি এসব কি করে জানলে? কে তুমি?”
পিছনে এসে দাঁড়ানো পুলিশ বাহিনীর সামনে থেকে এস পি বললেন, “প্রফেসর শঙ্কু, উনি ইলেনা স্টাইনার – ইন্টারপোলের বায়োটেররিজম ইউনিটের হেড। উনিই আজ আমাদের সব কথা বলে এখানে ডেকে এনেছেন। থ্যাকংকস ম্যা’ম।”
**********
সকাল হয়ে গেছে। নিজের পরিচিত জীবনে ফিরে এসেছি। বারান্দায় বসে আমরা প্রহ্ণাদের এনে দেওয়া কফিতে চুমুক দিলাম। লেনি বলল, “শঙ্কু, চিয়ার-আপ। এভরিথিং ইজ ওকে। বাই দ্য ওয়ে, হ্যাপি বার্থডে তিলু।” আমার মুখে হালকা হাসি খেলে গেল। সত্যিই তাহলে বেঁচে আছি, রয়েছি এই সুন্দর পৃথিবীতে যেখানে প্রিয় মানুষের মিষ্টি সম্বোধন এই সুন্দর সকালে মনপ্রাণ ভরিয়ে দিচ্ছে।
****সমাপ্ত*****
২ মে, ২০২৩
সাহিত্যিকার এক পাঠক এই লেখাটির সূত্র আমাদেরকে দেয়। সাহিত্যিকা পত্রিকার তরফ থেকে লেখকের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়, কিন্তু সম্ভব হয় নি। বিই কলেজের চিরন্তন বন্ধুত্বপূর্ণ বোঝাপড়ার ধারনায় এই লেখাটি লেখকের বিনা অনুমতিতেই প্রকাশিত হলো। যদি কোনদিন লেখক আপত্তি করেন, এই লেখাটি তৎক্ষণাৎ মুছে দেওয়া হবে।
[…] ও টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং প্রফেসর শঙ্কু ফ্যান-ফিকশন অমিত ঘোষ রবীন্দ্রসঙ্গীতে […]
যদি কেউ আমাকে বলে না দেয়, হয়তো ভাববো সত্যজিৎ রায় লিখছেন। লেখক অনেকটাই অনুকরণ করেছেন। সাথে ছবিগুলোও খুব ভালো লাগলো
অসংখ্য ধন্যবাদ।
অসংখ্য ধন্যবাদ।