সাহিত্যিকা

জানা / অজানা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (ধারাবাহিক)

জানা / অজানা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (ধারাবাহিক)
সংকলক: দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, ১৯৮১ ইলেকট্রনিকস ও টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং

একথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সারা জীবনে বহু অম্ল-মধুর অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে গেছেন। জীবনে বহু শোক-তাপও পেয়েছেন, কিন্তু কখনই আশাহত হন নি।। তাঁর সেই অভিজ্ঞতার প্রকাশ আমরা দেখতে পাই তাঁর সাহিত্যে, তাঁর চিঠিপত্রে এবং তাঁর বিশাল কর্মকান্ডে। তাঁর জীবনের কয়েকটি ঘটনার কথা ধারাবাহিক ভাবে তুলে ধরার ইচ্ছে আছে।

*********

ইতালিতে রবীন্দ্রনাথ

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর চিরকালই যেখানে যা ভালো দেখেছেন বা শুনেছেন, অকুন্ঠ চিত্তে তার প্রশংসা করেছেন। খুব একটা বাদ-বিচার না করেই বোধহয় প্রশংসা করেছেন। কিন্তু এই প্রশংসা করতে গিয়ে তিনি একবার ভীষণ বিপদে পড়েছিলেন।

১২ই মে, ১৯২৬ সাল। কবি আবার য়ুরোপে চলেছেন। এবারে যাচ্ছেন ইতালি। সঙ্গে রথীন্দ্রনাথ, প্রতিমা দেবী এবং আরও অনেকে। রোমে তাঁর সঙ্গে যোগ দেন সস্ত্রীক প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ। অধ্যাপক ফরমীকি [Carlo Formichi (১৮৭১ – ১৯৪৩)] যিনি মাস ছয়েক বিশ্বভারতীতে অধ্যাপনা করেন এবং দেশে ফিরে গিয়ে তিনি কবিকে ইতালি আসার নিমন্ত্রণ পাঠিয়েছেন। আপ্যায়নের ভার নিয়েছেন মুসোলিনী [Benito Mussolini (১৮৮৩-১৯৪৫)]। অর্থাৎ সরকারি নিমন্ত্রণ এল বেসরকারি লেফাফায়। কবি সাদা মনে নিমন্ত্রণ গ্রহণ করলেন। আসল প্যাঁচটা বুঝতে পারলেন না। ভাবলেন ফরমীকিই নিমন্ত্রণ পাঠিয়েছেন। কবিকে মুসোলিনীর নিমন্ত্রণ গ্রহণ করতে দেখে সেই সময় অনেকেই বিস্মিত ও বিরক্ত হয়েছিলেন।

রবীন্দ্ররজীবনীকার প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় বলেছেন : “মুসোলিনীর সঙ্গে দেখা ও কথাবার্তা থেকে এবং রোমের নানা স্থান [যা শুধু ওনাকে দেখানো হয়েছিল] দেখে ফ্যাসিস্ট মতবাদের যে-রূপটা কবির কাছে প্রকাশ পেল তার মধ্যে এমন-কিছু নিন্দনীয় দেখতে পেলেন না। ….সাংবাদিকদের কাছে দু-একটা কথা অস্পষ্টভাবে বললেন – সেটাই সরকারি আর আধা-সরকারি কাগজে ফলাও করে রঙ চড়িয়ে, ভারতীয় কবির মুসোলিনী-প্রশস্তি-রূপে প্রচারিত হল।” ইতালীয় সংবাদ পত্রের ভাষা কবি বা তাঁর সঙ্গীরা জানেন না। মুসোলিনীর উদ্দেশ্য সফল হল।

চৌদ্দ দিন রোমে ছিলেন। রোমের পর ফ্লোরেন্স্ ও ট্যুরিন হয়ে কবি সুইসদের দেশে এলেন। দেখা হল রমাঁ রলাঁর [(Romain Rolland (1866-1944)] সঙ্গে।

এই ভ্রমণ সম্পর্কে বিশদ বিবরণ বিশ্বভারতীর বুলেটিনের জন্য নিয়মিত শান্তিনিকেতনে পাঠাতেন প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ। এই ভ্রমণের প্রসঙ্গে লিখতে গিয়ে অন্যত্র তিনি জানাচ্ছেন:

“সেখানে (ইতালিতে) ফ্যাসিস্ততন্ত্রের ভালো দিকটাই শুধু তাঁকে দেখানো হল। দিনরাত ঘিরে রইল শুধু ফ্যাসিস্তপন্থীরা। নিজের লেখায় কবি মুসোলিনীর প্রশংসা করলেন। ইতালি থেকে বাইরে যাওয়ার পরে অন্যদিকের কথা শুনতে পেলেন। প্রথমে ভিলনিউভ-এ [Villeneuve – জেনেভা লেকের ধারে সুইজারল্যান্ডের একটি শহর যেখানে রমাঁ রলাঁ স্বেচ্ছানির্বাসিত হয়ে থাকতেন।] দেখা হল রমাঁ রলাঁ আর দুহামেলের সঙ্গে। পরে দেখা হল মাদাম সলবাডোরি (Madame Salvadori), মাদাম সালভামিনি (Madame Salvamini) আঞ্জেলিকা ব্যালব্যানফ্ (Angelica Balbanoff), এই রকম সব লোকের সঙ্গে যাঁরা ইতালি থেকে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছিলেন। নিজের ভুল বুঝতে পেরে কবি তখন অস্থির হয়ে উঠলেন যে, এখন কী করা যায়। ইতালি সম্বন্ধে আবার লিখতে আরম্ভ করলেন। আমরা সারাদিন টাইপ করেও আর পেরে উঠি না। বারবার করে লিখছেন আর বদলাচ্ছেন, ঠিক মনের মতো হচ্ছে না। আহারনিদ্রা বন্ধ হয়ে যাওয়ার জোগাড়। শরীর খারাপ হয়ে গেল। আমরা ওঁকে ভিলনিউভ থেকে জ্যুরিক, সেখান থেকে প্যারিসে নিয়ে গেলাম। য়ুরোপের সবচেয়ে বড়ো বড়ো ডাক্তাররা দেখলেন। কিছুতেই কিছু হয় না। কোনো জায়গায় স্থির হয়ে বসতে পারেন না। তার পরে লেখাটা যখন শেষ করে ম্যাঞ্চেষ্টার গার্ডিয়ানে পাঠিয়ে দিলেন, তখন শান্ত হলেন। শরীর মন দুই ভালো হয়ে গেল। (‘কবিকথা’, প্রসঙ্গ রবীন্দ্রনাথ। কলকাতা, ১৯৮৫) “

ম্যাঞ্চেষ্টার গার্ডিয়ানে ২৯শে জুলাই (১৯২৬) প্রকাশিত হয়েছে রবীন্দ্রনাথের এই বিবৃতি। সেখানে তিনি বললেন –
“While I wanted to remain neutral, I could see that it was difficult. Freedom of expression is repressed in Italy, I never met a single individual in Italy who dared to speak a word against Fascism. My tour was officially arranged, and I was only taken to places where it was thought it would be safe. Even if I had freedom I do not think I would have met many individuals who would have been courageous enough to speak against Fascism…I realized then that Italy should be prosperous. You can make a country prosperous but if your methods are wrong that is the concern of humanity….I wish I could have remained neutral with regard to Italian politics and if I had not been misrepresented in the papers I should have been able to do so.”

রবীন্দ্রনাথের এই বিবৃতি প্যারিসের Le Matin সংবাদপত্রেও প্রকাশিত হয়েছে – ‘Rabindranath Tagore en ennemi du fascism’, ‘ফ্যাসিজিমের শত্রু রবীন্দ্রনাথ’, শিরোনামে।

প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় বলেছেন : “ম্যাঞ্চেষ্টার গার্ডিয়ানে ছাপা কবির পত্র পাঠ করে মুসোলিনী ও তাঁর উপগ্রহের দল রবীন্দ্রনাথের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলেন – চলল গালিবর্ষণ। অধ্যাপক তুচ্চিকে [Giuseppe Tucci (১৮৯৪ – ১৯৮৪) – ইনি রবীন্দ্রনাথের ‘লিপিকা’ গল্প সংকলন ইতালীয় ভাষায় অনুবাদ করেন।] বিশ্বভারতী থেকে সরিয়ে নেওয়ার হুকুম এল।

ভাগ্যে ভিলনিউভতে কবির সঙ্গে রলাঁর সাক্ষাৎ হয়েছিল এবং সময়মতো তিনি তাঁর আসল মতটা ব্যক্ত করবার অবকাশ পেয়েছিলেন, নয়তো য়ুরোপীয় মনীষীসমাজে কবি কী বদনামেরই ভাগী হতেন !”

তথ্য সংগ্রহ ও কৃতজ্ঞতা স্বীকার :
১. রবীন্দ্রনাথ ও ফ্রান্স – সৈয়দ কাওসর জামাল। প্রকাশক : আজকাল পাবলিশার্স।
২.. রবীন্দ্রজীবনকথা – প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়, প্রকাশক : আনন্দ পাবলিশার্স।

*********

রবীন্দ্রনাথের নাটক ‘ডাকঘর’ প্রসঙ্গে

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকটি আমরা সবাই পড়েছি। ১৯১১ সালে নাটকটি লেখা হয়। এই নাটকের ইংরাজি অনুবাদ করলেন W. B. Yeats (১৮৬৫ – ১৯৩৯), সঙ্গে একটি অনবদ্য ভূমিকা। নাটকটি অভিনত হল ডাবলিন ও লন্ডনের বিভিন্ন নাট্যশালায়। জার্মানিতে শুনেছি এই নাটকের শতাধিক অভিনয় অনুষ্ঠিত হয়েছে। নোবেল জয়ী ফরাসি সাহিত্যিক আঁদ্রে জিদ (১৮৬৯ – ১৯৫১) এই নাটকটির ফরাসি অনুবাদ করলেন ১৯১৬ সালে, নাম রাখলেন: Amal et la Lettre du Roi ( অমল এ লা লেটর দিউ রোয়া অর্থাৎ অমল ও রাজার চিঠি) । নাত্সি বাহিনীর হাতে প্যারিসের পতনের আগের দিন নাটকটি (ফরাসি অনুবাদ) প্যারিসের রেডিও থেকে প্রচারিত হয়। আবার নোবেল জয়ী স্প্যানিশ কবি Juan Ramón Jiménez (১৮৮১-১৯৫৮) নাটকটি স্প্যানিশ ভাষায় অনুবাদ করলেন।

শিশু চিকিৎসক এবং শিশু সাহিত্যিক Janusz Korczak (১৮৭৮- ১৯৪২) – এর পরিচয়ের দরকার নেই। সবাই জানেন পোল্যান্ডের এই শিশু দরদী ডাক্তার বাবু Pan Doktor (“Mr. Doctor”) কি ভাবে অনাথ ইহুদি শিশুদের বুকে আগলে রেখেছিলেন তাঁর বানানো অনাথ আশ্রমে (orphanage in Warsaw) | সুযোগ থাকা সত্ত্বেও (আর্য্য রক্তের প্রভাবে !) নাৎসি বাহিনীর হাতে শিশুদের ছেড়ে তিনি কোনদিনই চলে যান নি। তিনিও তাঁর অনাথ শিশুদের নিয়ে পোলিশ ভাষায় অনূদিত রবীন্দ্রনাথের ডাকঘরের অভিনয় মঞ্চস্থ করেন ১৯৪০ সালে। কিন্তু প্রশ্ন হল এই নাটকের মধ্যে কি এমন ছিল যা তিনি শিশুদের কাছে তুলে ধরেছিলেন?

একটু পিছিয়ে আসা যাক। রবীন্দ্রনাথ নাটকটি লিখছেন ১৯১১ সালে। সময়কালটি লক্ষ্য করুন। অদ্ভুত এক বেদনাদায়ক সময়ের মধ্যে দিয়ে তিনি তখন চলেছেন। স্ত্রী মৃণালিনীদেবীর মৃত্য হয়েছে (১৯০২), হারিয়েছেন প্রাণাধিক কন্যা রেনুকাকে (মৃত্যু – ১৯০৩) ও পুত্র শমীন্দ্রনাথকে (মৃত্যু – ১৯০৭)। এর মধ্যে মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথের মৃত্যু হয়েছে (১৯০৫)। মানসিক এই যন্ত্রণার সঙ্গে ছিল দীর্ঘ শারীরিক অসুস্থতা। এই সময় উৎকট এক মৃত্যু বাসনা কবিকে পেয়ে বসেছিল। যা তাঁর একেবারেই স্বভাববিরুদ্ধ। এছাড়া ছিল অনিৰ্দিষ্ট সুদূরের জন্য আগ্রহ। কিন্তু এর প্রমাণ কোথায়? প্রমাণ তাঁর চিঠিপত্রের মধ্যে আমরা কিছুটা খুঁজে পাই। ইংল্যান্ডে অস্ত্রোপচারের পর অবশ্য তাঁর এই শারীরিক ব্যাধির উপশম হয়। বলে রাখা ভালো কবি কিন্তু তাঁর সাধনার মাধ্যমেই এই মানসিক যন্ত্রণার থেকেও মুক্তি লাভ করেন। বার বার তিনি বলেছেন: ” তোদের ভয় নেই এ আমি ছিন্ন করব – এর ওষুধ আমার অন্তরেই আছে। ….. মৃত্যুর যে গুহার দিকে নেবে যাচ্ছিলুম তার থেকে আবার আলোকে উঠে আসব। ”

রবীন্দ্রনাথ আশ্রমবাসীদের কাছে ‘ডাকঘর’ নাটকের যে মর্মব্যাখ্যা করেছিলেন, কালীমোহন ঘোষ তার অনুলিখন রাখেন। শান্তিদেব ঘোষ তাঁর পিতার দিনলিপি থেকে উদ্ধৃতি দিয়েছেন : ” ‘ডাকঘর’ যখন লিখি তখন হঠাৎ আমার অন্তরের মধ্যে আবেগের তরঙ্গ জেগে উঠেছিল। তোমাদের ঋতু -উৎসবের জন্য লিখিনি। শান্তিনিকেতনের ছাদের উপর মাদুর পেতে পড়ে থাকতুম। প্রবল একটা আবেগ এসেছিল ভিতরে। চল চল বাইরে, যাবার আগে তোমাকে পৃথিবী প্রদক্ষিণ করতে হবে – সেখানকার মানুষের সুখদুঃখের উচ্ছাসের পরিচয় পেতে হবে। সে সময় বিদ্যালয়ের কাজে বেশ ছিলাম। কিন্তু হঠাৎ কি হল। রাত দুটো-তিনটের সময় অন্ধকার ছাদে এসে মনটা পাখা বিস্তার করল। যাই যাই এমন একটা বেদনা জেগে উঠল। পূর্বে আমার দু একটি বেদনা এসেছিল । আমার মনে হচ্ছিল একটা কিছু ঘটবে, হয়ত মৃত্যু। স্টেশনে যেন তাড়াতাড়ি লাফিয়ে উঠতে হবে সেই রকম একটা আনন্দ আমার মনে জাগছিল। যেন এখান হতে যাচ্ছি । বেঁচে গেলুম ।…..কোথাও যাবার ডাক ও মৃত্যুর কথা উভয় মিলে, খুব একটা আবেগে সেই চঞ্চলতাকে ভাষাতে ‘ডাকঘর’ কলম চালিয়ে প্রকাশ করলুম। …….যাওয়ার মধ্যে একটা আনন্দ আছে, কিন্তু আমার মনের মধ্যে বিচ্ছেদের বেদনা ততটা ছিল না। চলে যাওয়ার মধ্যে যে বিচিত্র আনন্দ তা আমায় ডাক দিয়েছিল। ….।“

ইন্দিরাদেবীকে (?) লেখা আর একটি চিঠিতে (১৯১২) পাই : “এখানে [শিলাইদহে] আসবামাত্রই আমার সেই অসহ্য ক্লান্তি ও দুর্বলতা দূর হয়ে গেছে। এমন সুগভীর আরাম আমি অনেক দিন পাই নি। এই জিনিসটা খুঁজতেই আমি দেশদেশান্তরে ঘুরতে চাচ্ছিলুম কিন্তু এ যে এমন পরিপূর্ণভাবে আমার হাতের কাছেই আছে সে জীবনের ঝঞ্ঝাটে ভুলেই গিয়েছিলুম । কিছুকাল থেকেই মনে হচ্ছিল মৃত্যু আমাকে তার শেষ বাণ মেরেছে এবং সংসার থেকে আমার বিদায়ের সময় এসেছে – কিন্তু যস্য ছায়ামৃতং তস্য মৃত্যঃ , – মৃত্যুও যাঁর অমৃতও তাঁরি ছায়া – এতদিনে আবার সেই অমৃতের পরিচয় পাচ্ছি। ……”

১৯২১ সালে কবি এন্ড্রুজকে (C. F. Andrews) লিখছেন: ‘Amal represents the man whose soul has received the call of the open road – he seeks freedom from the comfortable enclosure of habits sanctioned by the prudent and from walls of rigid opinion built for him by the respectable.”

ডাকঘর নাটকের মধ্যেই বোধহয় তিনি দেখিয়েছেন মুক্তির আনন্দ, বেঁচে থাকার প্রেরণা। মৃত্যুই শেষ কথা নয়। ‘ডাকঘরের’ রাজকবিরাজ বলেছেন ‘অমল ঘুমিয়ে পড়েছে, রাজা এসে ওকে ডাকবেন।’ রবীন্দ্রনাথ ‘অমলের’ মৃত্যু হয়েছে বলেন নি কোথাও। অমল আবার জেগে উঠবে। রাজকবিরাজ ঘরের সমস্ত জানলা খুলে দিয়েছেন। এবার রাজা এসে অমলকে নিয়ে যাবেন। অমলের মৃত্যু প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথের একটি পত্রখন্ড উল্লেখযোগ্য: “ডাকঘরের অমল মরেছে বলে সন্দেহ যারা করে তারা অবিশ্বাসী – রাজবৈদ্যের হাতে কেউ মরে না, কবিরাজটা ওকে মারতে বসেছিল বটে।….. ১৭/২/৩৯ । “

ইয়েট্সও যা বুঝেছিলেন তা মৃত্যু নয়, অমলের জীবন্মুক্তি। Janusz Korczak বোধহয় দেখেছিলেন অনাথ এই শিশুগুলো আবার মুক্তির স্বাদ পাবে। আঁদ্রে জিদও বোধহয় দেখেছিলেন প্যারিস আবার মুক্ত হবে। ১৯৪৯ সালে প্যারিসে যখন তাঁর অশীতিতম জন্মোৎসব পালিত হয়, তখন জিদই অনুরোধ করেছিলেন নিজের মৌলিক নাটকের পাশাপাশি ডাকঘরের বিশেষ অভিনয়ের ব্যবস্থা করতে।

মাত্র তিন দিনে লেখা ছোট্ট এই নাটকটি সারা বিশ্বে কি বিশালই না প্রভাব ফেলেছিল!

*********

তথ্য সংগ্রহ ও কৃতজ্ঞতা স্বীকার:
১. চিঠিপত্র (প্রথম খন্ড) – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক : বিশ্বভারতী গ্রন্থনবিভাগ, কলিকাতা
২. রবিজীবনী (ষষ্ঠ খন্ড) – প্রশান্তকুমার পাল, প্রকাশক : আনন্দ পাবলিশার্স।
৩. রবীন্দ্ৰনাট্যপ্রবাহ (দ্বিতীয় খন্ড) – শ্রী প্রমথনাথ বিশী, প্রকাশক : মিত্রালয়, কলিকাতা
৪. রবীন্দ্রনাথ ও ফ্রান্স – সৈয়দ কাওসর জামাল। প্রকাশক : আজকাল পাবলিশার্স।

সংযোজন :
‘ডাকঘর’ প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আর একটি চিঠির উল্লেখ এখানে করা উচিত বলে মনে হয়। ‘ডাকঘর’ রচনার কিছুদিন পরে তিনি নির্ঝরিণী সরকারকে (শ্রীযুত প্রফুল্ল কুমার সরকারের স্ত্রী এবং রবীন্দ্রানুরাগী বিশিষ্ট একজন সমাজসেবিকা) যে পত্রটি লেখেন তার মধ্যেও ‘ডাকঘর’-এর মর্মটি ব্যক্ত হয়েছে:
“আমি দূরদেশে যাবার জন্যে প্রস্তুত হচ্চি। আমার সেখানে কোনো প্রয়োজন নেই – কেবল কিছু দিন থেকে আমার মন এই কথা বলচে যে, যে পৃথিবীতে জন্মেছি সেই পৃথিবীকে একবার প্রদক্ষিণ করে নিয়ে তবে তার কাছ থেকে বিদায় নেব। …আমার চারিদিকের ক্ষুদ্র পরিবেষ্টনের ভিতর থেকে বেরিয়ে পড়বার জন্যে মন উৎসুক হয়ে পড়েছে। আমরা যেখানে দীর্ঘকাল থেকে কাজ করি সেখানে আমাদের কর্ম্ম ও সংস্কারের আবর্জ্জনা দিনে দিনে জমে উঠে চারদিকে একটা বেড়া তৈরি করে তোলে। আমরা চির জীবন আমাদের নিজের সেই বেড়ার মধ্যেই থাকি, জগতের মধ্যে থাকিনে। অন্ততঃ মাঝে মাঝে সেই বেড়া ভেঙে বৃহৎ জগৎটাকে দেখে এলে বুঝতে পারি আমাদের জন্মভূমিটি কত বড় – বুঝতে পারি জেলখানাতেই আমাদের জন্ম নয়। ” ৯ অক্টোবর, ১৯১১.

*********

তথ্য সংগ্রহ ও কৃতজ্ঞতা স্বীকার:
চিঠিপত্র (সপ্তম খন্ড) – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক : বিশ্বভারতী গ্রন্থনবিভাগ, কলিকাতা
**এই প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ Andrews কে লিখেছিলেন: “….the only thing that accompanies him in his awakenment is the flower of love given to him by Sudha. “
In the same letter to Andrews (Berlin, June 14th, 1921) Tagore wrote : “…Do you think that Post Office has some meaning at this time for my country in this respect, that her freedom must come direct from the King’s Messenger, and not from the British Parliament; and that when her soul awakes nothing will be able to keep her within walls ? Has she received her letter yet from the King? ….”
Source: Rabindranath Tagore – Letters to a Friend (Letter to Andrews from Tagore) – Page (182 PDF) – Book Page – 173

*********

 

Sahityika Admin

3 comments

  • সূচীপত্র মে ২০২৪ (সাহিত্যিকা ৩৫তম সংখ্যা) – সাহিত্যিকা says:

    […] ও টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং জানা / অজানা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (ধারাবা… সংকলক: দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, ১৯৮১ […]

  • দেবাশীষের রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে প্রতিটি লেখাই অত্যন্ত গবেষণামূলক। দেবাশীষের লেখায় অনেক অজানা কিছু জানা যায়।

  • সাহিত্যিকায় দেবাশীষবাবুর প্রতিটি লেখাই অনেক পরিশ্রম করে লেখা, সুন্দর উপস্থাপনা। আরও অনেক লিখুন।