আমার কয়েকটি কবিতা
সুশোভন দাসগুপ্ত, ১৯৭৭ সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং
নতুন বছর, নতুন খেলা
দেনান
ছেড়ে যাই।
হয়তো….
নতুন বছর, নতুন খেলা
অনেক অনেক দিন, একসাথে চলাফেরা কাছে আসা আসি,
নাচ গান খাওয়া দাওয়া আর কিছু খুনসুটি হাসি।
এইভাবে কেটে গেছে গ্রীষ্মের আলুথালু নিঝুম দুপুর,
বাদলা আড্ডার সাথে, দার্জিলিং টি আর মুড়িচানাচুর।
কখন ফুরিয়ে গেছে চুপি চুপি শীতের কড়াইশুঁটি,
আর বসন্তের মিঠে হাওয়া কানে কানে ডেকে গেল পিছু কতবার।
এই সব ভালোলাগা এসেছিল
চলে যাবে বলে জানি তাও,
সময়ের বেড়া ভাঙা খেলা শেষ হলে, ছেড়ে দিতে হয় এই নাও।
তা বলে কি শেষ হলো
সব খেলাধুলো
তা তো নয়,
হাত হাতে এগোবার নেমন্তন্ন পাঠিয়েছে অমোঘ সময়।
নতুন দিনের ভোরে নলেন গুড়ের গন্ধে মাখামাখি সকালের আলো,
ভিক্টোরিয়ার মাঠে সেই তার সাথে, আরো একবার দেখা হল।
দল বেঁধে যাওয়া হবে ঝাঁটিপাহাড়ির সেই ভুতুড়ে বাংলোয় পিকনিকে,
সারা পথে কমলা লেবুর সাথে, নাহুমের কেক খাবে কে কে?
কোলাঘাটে ফুলকপি রাস্তার দুপারে সাজানো রয়েছে সারিসারি,
বাতাসে খুশির ছোঁওয়া আঁকাবাঁকা পথ বেয়ে কতদুরে, ছবি ছবি বাড়ি।
পুরনো গল্পেরা খুব হৃদয়ের কাছাকাছি, ছেড়ে দিতে কষ্ট হয় তাই,
নতুন খাতায় তাই বারে বারে পুরোন সে জলছবি এঁকে দিতে চাই।
যা যায় তা যায় না তো, ফিরে ফিরে নতুন কবিতা হয়ে আসে,
নতুন বছরে তাই ভালোবাসা বেড়ে ওঠে বান্ধবেরা যদি থাকে পাশে।
বেশ তবে চলে আয় দলবল নিয়ে, বেঁধে বেঁধে থাকা হোক শুরু,
এ বছর এইভাবে খেলা খেলা ছলে বেঁচে থাকা শিখে নাও গুরু।
******
দেনান
জাতীয় সড়ক ধরে উলুবেড়িয়ার কোল ছেড়ে কোলাঘাট যাওয়ার রাস্তায়…
রুপনারায়নের বুকের ওপরে সেই সেতুটি পেরনোর ঠিক আগে…
বাঁদিকে, বুকের নয়, ক্ষীনাঙ্গী অপেক্ষারত প্রেমিকার মতই আকূল চোখে…
ডাক দিয়েছিল সেই আরণ্যক রাস্তাটি আমায় আর গাড়িটিও বাধ্য প্রেমিকের মত….
সাড়া দিয়ে ঘুরে গিয়েছিল সেই আকর্ষনে ভালবেসে….
হঠাৎই স্মৃতিতে জেগেছিল ঘোড়াঘাটা নামে এক শান্ত স্টেশনের কথা…..
নদীটির কূলঘেঁসে অযত্নে লালিত কিছু জঙলি গাছপালা….
যেখানে আশ্চর্য এক আরণ্যক প্রকৃতির বিস্ময় জাগিয়ে চেয়ে আছে…..
ঠিক সেইখানে একা এক দোতলা নিঃসঙ্গ বাড়ির কথা মনে পড়ে গেল…..
অপূর্ব সুন্দর সেই বাড়িটিও নিঃশব্দ প্রতীক্ষায় জেগে থাকে…..
আমাদের মত কোন ভবঘুরে বাউন্ডুলে পথ ভুলে আশ্রয়ের আশায় কোনদিন……
কড়া নেড়ে আদেখলা আহ্লাদে পৌঁছে যাবে নিশ্চিন্ত নিঃশ্বাসে তার কাছে সরল বিশ্বাসে…..
তারপর হাতমুখ ধুয়ে সদা হাসিমুখ সেই অচেনা বন্ধুটির পরম স্নেহের ছোঁয়ায় সেই গরম খিচুড়ি…..
এখনো জেগেই আছে সদ্য ফোটা ফুলের গন্ধের মত আরণ্যক স্মৃতির সাথেই….
পূর্ণিমার উচাটন বাতাসের ঢেউ কেটে গম্ভীর রাত্রির ঘুম খানখান করে….
ছুটে চলে গেছে জান্তব আশ্লেষে এক লৌহদানবীর মত রেলগাড়ি…
সঙ্গে নিয়ে সঙ্গীকরে কত আশা কত অজানা স্বপ্নের বীজ….
আমি নই আমরাও জেগেছি ওই বর্ণহীন রাতে ওই বাড়িটির সাথে….
জোছনা ছড়িয়ে গেছে ভারী কুয়াশার মত পরম আহ্লাদে….
প্রকৃতির নিষ্পাপ মায়ায় মুগ্ধ রাত জেগেছিল আমাদের হাত ধরে অন্তহীন….
প্রতিশ্রুতি নিয়ে আরো কেউ কেউ জেগে ছিল সেই প্রাকৃত শূণ্যতার সঙ্গে….
হঠাৎ তীক্ষ্ণ এক শব্দের তলোয়ার নিষ্ঠুর শব্দের সাথে ছিন্নভিন্ন করে ঝড় তুলে….
চিলের নখের মত নিস্তব্ধ রাতের বুক চিরে ঝম ঝম শব্দ তুলে….
ছুটে গেছে সর্পিনীর মত অনায়াস বিভঙ্গের মাধুর্য ছড়িয়ে রেলগাড়ি….
আর সমস্ত আবেশ ছিঁড়ে আরো একবার সঙ্গে নিয়ে চলে গেছে না ফোঁটা ফুলের ঘ্রাণ….
অতি যত্নে আত্মস্থ আমার প্রিয় ছবিটির মত ভীরু অবহেলা ভরে।।
*******
ছেড়ে যাই।
শব্দের শহরে আমি জেগে থাকি
নিশিভর নিঃশব্দ অনন্ত আগ্রহে,
চারিদিকে অন্ধকার শব্দস্রোত
ডুব দিই, ভেসে উঠি জীবন প্রবাহে।
এ সবের মাঝখানে স্মৃতির সরণী
বেয়ে, ভেসে আসে চিরন্তন সুর,
অমৃত অরুপ বানী মূর্তি পায়
ফুটে ওঠে চিরচেনা বেদনা বিধূর।
আমার এই অহর্নিশ খুঁজে ফেরা
একমাত্র নিরালম্ব ধ্বনি,
জীবনের কোলাহলে ডুবে থেকে
আশিরনখর রই ঋণী।
শব্দব্রহ্মে উতসারিত অনাদি অনন্ত
কালধারা, বয়ে চলে নিরন্তর
সঙ্গে যেতে হবে তাই ছেড়ে যাই
স্বজন বান্ধব আর প্রিয়তম স্বর।
০৬/০৩/২০১৯
******
হয়তো….
হয়ত এখন নদীর পাড়ে মাঝ দুপুরে
চুল না বেঁধেই আঁচল ওড়াও পাখির মত,
হয়ত এখন পুরনো এক গানের কথায়
যাচ্ছে ভেসে কোন অচিনে সুখের খেয়া।
রাত গড়ালেই বাড়তে থাকে হৃদয় খুঁড়ে
সোজা পথের গোলক ধাঁধায় হারিয়ে ফেলা,
ট্যাটুর মত কুলুঙ্গি সই যন্ত্রণা জল
চুঁইয়ে ভেজায় আলতো ছোঁয়ায় হয়ত এখন।
হয়ত এখন ঘুম জেগেছে সাত সকালে
জড়িয়ে যাচ্ছে রোদের মধু খুব গোপনে,
পাশ ফিরে ফের গড়িয়ে নিচ্ছ স্মৃতির ভাঁড়ে
বিহান বেলায় যোগ বিয়োগের আজব ঠেলায়।
হয়ত তখন জল ছুঁয়েছে খাদ কিনারা
হয়ত তখন চায়ের কাপে মিশছে নোনা,
চোখের জলের সঙ্গী হয়ে ভালোবাসা ই
ডাকছে আকুল ঘর পালানো লক্ষ্মীছাড়ায়।
হয়ত তখন মোহর দিদির প্রাণ জুড়োন
গানের ভুবন হাতছানি দেয় ভুবন ডাঙায়,
হয়ত কোন রাশিদ ভাইয়ের মোহন স্বরে
ফুল ফুটেছে তোমার আমার ঝর্ণা তলায়।
২৭/০১/২০২২
All excellent poems, really good
সহজ সাবলীল বাংলায় বিষয়গুলি ফুটিয়ে তুলেছেন।
অনেক শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ, আরও লিখুন