মা হওয়া নয় মুখের কথা!
আবীর বন্দ্যোপাধ্যায়। (প্রবীর বন্দ্যোপাধ্যায়, ৭৭ মেটালার্জির স্ত্রী)
এমনই একটা কথা শুনে বড় হয়েছি আমরা। কথাটায় যে খুব একটা গুরুত্ব দিয়েছি তা নয় কারণ আমার মনে হয়েছে সততার সাথে যে কোন কাজই করে ফেলা যায়। আর তাছাড়া আমাদের সময় পর্যন্ত ঠাকুমা নামক অভিভাবক তো ছিলেন-ই, টুকটাক অসুখবিসুখে ঠাকুমাদের টোটকা যথেষ্ট ছিল।
ছিল অবসরের সময়। ঘরের কাজ, বাচ্চার কাজ করে ক্লান্ত হয়ে এক ঘন্টা ঘুমের সময় পাওয়া যেত, তারপর আবার নতুন উদ্যমে কাজে লাগা। নিত্যদিনের একই কাজ। টানাপোড়েন ছিলনা বললে মিথ্যে বলা হবে, সব মেয়েই নিজের বাড়ি বা শ্বশুরবাড়িতে প্রথম পাঁচ বছর বিন্দাস থাকে! এরপর ধীরে ধীরে গিন্নি হয়ে উঠে তবেই না শান্তি !
সে যাই হোক, আমার অভিজ্ঞতায় নিজের দুটো সন্তান মানুষ করতে তেমন কোন বেগ পেতে হয়নি। আমার এটাও কখনও মনে হয়নি যে মা হতে হলে সর্বদা জ্ঞানের ভাণ্ডার পূর্ণ রাখতে হবে। বাচ্চারা গল্পই শুনতে ভালবাসে, জ্ঞানের কথা নয়, আর এটা বোঝার জন্য নিজের বড় হয়ে ওঠাই যথেষ্ট। ঈশ্বর বা আমাদের দুজনের জিনের ইচ্ছায় দুজনেই মোটামুটি সুস্থভাবে বড় হয়েছে। ছেলেটার পাঁচ বছর বয়সে cox infection হলেও সারতে সময় লাগেনি। মেয়ে তো শুরু থেকেই সুস্থ স্বাভাবিক। সর্দি কাশি জ্বর তিনটের সাথে যুঝতে যুঝতেই সকলের শরীর সুঠাম হয়, ওদের ক্ষেত্রে তাই-ই হয়েছে।
আর আমি নিজে এতটাই অনুন্নত প্রজাতি ছিলাম যে তেমন critical চিন্তাভাবনা মাথাতেই আসেনি। নিয়ম করে খাওয়াতে হবে, তাই নিজের হাতের বানানো সুস্বাদু খাবার দিয়ে খাইয়েছি। ঘুম পাড়াতে হবে, পাড়িয়েছি নিজের গলার সুরেলা গান দিয়ে। খেলতে পাঠিয়েছি বিকেল হলেই আর সাথে সাথে নজর রেখেছি সময়ে ফিরলো কিনা। ব্যস ! এই তো ! পরবর্তি সময়ে পড়াশুনো ইত্যাদি সব নিজেরাই করেছে, আমার অবদান বড় একটা নেই। ওদের বাবার অবদান সবটাই কথাবার্তায় আর ব্যবহারে যার ধারে কাছে আমি কোনদিন যেতে পারিনি।
মোটের ওপর সন্তান সু হলে যে আনন্দ, আমি তার স্বাদ পেয়েছি। মাঝেমাঝেই ওদের ছোটবেলা ভাবতে বসি, কখনই মনে হয়না অথৈ সমুদ্র পেরিয়ে এলাম। বরং ওদের জন্যই আমার জীবনে নিত্য নতুন নতুন রং ধরেছে। পূর্ন বয়সে ওদের সাথে মতানৈক্য চলছে পুরোদমে, তা চলুক। শেষ পর্যন্ত আমিই ওদের মা !
পাল্টানো সময়ে সন্তানের সাথে দূরত্ব তৈরি হয়। ওদের জন্ম আমাদের ইচ্ছায় কিন্তু ওদের বাঁচাকে নিজের মত করে গড়তে হলে স্বার্থপরতার সাথে সাথে অশান্তি আসন পেতে বসে। তাই দূর থেকে উচ্চারণ করি আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে।
শেষ পর্যন্ত আমিই যে ওদের মা
Add comment