সাহিত্যিকা

ফুটকি রাণী ও মুনু’বাবু

ফুটকি রাণী ও মুনু’বাবু
অসীম দেব, ১৯৭৭ ইলেকট্রনিকস ও টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং

রাজস্থানে ছেলের কাছে বেড়াতে এসেছেন মুনুবাবু। এখানে এই প্রথমবার।
ইঞ্জিনিয়ার মানুষ, কোল ইন্ডিয়ার উচ্চপদে থেকে রিটায়ার করে হাতে এখন অফুরন্ত সময়। বারান্দায় বাগান করেন, সাহিত্য, সোসাইটির রিপাবলিক ডে, টিভিতে স্পোর্টস দেখা, কিছু লেখালেখি, ঘুরে বেড়ানো, পাড়ার অন্য রিটায়ার্ড লোকেদের সাথে আড্ডা মারা, এসব নানান কাজেই উনার নিজের সময় কেটে যায়। এখন স্ত্রীকে নিয়ে ছেলে বৌমার কাছে বেড়াতে এসেছেন। ছেলেও মাইনিং ইঞ্জিনিয়ার, এখানের মাইনস এ কাজ করে, বছর খানেক হলো এখানে এসেছে। অন্যদিকে কোল ইন্ডিয়ায় কাজের সূত্রে এখানের বেশ কয়েকজনের সাথেও মুনুবাবুর পূর্ব পরিচয় আছে। সেই কারণেও মুনুবাবুর এখানে আসার একটা আকর্ষণ তো ছিলোই।

মাইনস এর লাগোয়া কলোনি। এখানে বেড়াতে এসে মুনুবাবু নিজের মতনই আছেন। মর্নিং ওয়াক করেন। টিভি দেখেন, ক্লাবে গিয়ে বই নিয়ে আসেন, পরিচিতদের সাথে আড্ডা মারেন। বারান্দায় বাগান শুরু করেছেন। আর বাজার সরকারের দায়িত্ব ছেলের থেকে কেড়ে নিয়ে এখানে নিজেই করেন। সে আলু বেগুন হোক, বা টুথপেস্ট সাবানই হোক, বা ধোপার বাড়ির কাপড় হোক।

আজ রবিবার। চা খেয়ে সকালে বাজারে এসেছেন। খুব একটা কিছু কিনতে হবে না, তবুও অভ্যাসমতন এসেছেন, এদিক ওদিকে ঘুরে দেখছেন। যদি কিছু ভালো লাগে তাহলে কিনেও নেবেন।

মুনুবাবু দোকানের সামনে গিয়ে জিনিষপত্র দেখছেন। ঠিক তখনই এক মহিলা দোকানের কেনাকাটা শেষ করে পয়সা মিটিয়ে ঘুরেই সামনে মুনুবাবুকে দেখে, “ও মা গো, আপনি এখানেও?” বলেই চোখ উল্টে মূর্ছা গেলেন।

ঘটনার আকস্মিকতায় সকলেই হতভম্ব। সবথেকে করুণ অবস্থা মুনুবাবুর। মুনুবাবুর বদ্ধমূল ধারণা যে উনি মুনুবাবুকেই নিজের সামনে দেখে আতঙ্কে চমকে উঠে বলেছেন “ও মা গো, আপনি এখানেও?” যাই হোক, ছোট জায়গা, মোটামুটি সকলেই একে অন্যের পরিচিত, এমনকি দোকানিরাও। তারাই ধরাধরি করে, ভদ্রমহিলাকে নিয়ে গেলো, বাড়ি পৌঁছে দেবে।
আর মুনুবাবু হঠাৎই নিস্প্রভ, যাকে বলে ফিউজড হয়ে গেলেন। “ও মা গো, আপনি এখানেও?” এই কথাটার সাথে মুনুবাবুর অনেক পুর্ব অভিজ্ঞতা আছে।
বাড়ি ফিরে মুনুবাবু ব্যাপারটা চেপে গেলেন, কাউকে কিছু বললেন না, তবে নিজের মনের ভেতর তোলপাড় শুরু হয়ে গেলো।

মুনুবাবু ব্যাপারটা চেপে গেলেও কেসটা চাপা থাকলো না। সোমবার সকালে মুনুবাবুর ছেলে নন্দন অফিসে এসেই তাঁদের জিএম মিসেস ফুটকি রাণীর থেকে জরুরী তলব পেলো, এখনই এসে দেখা করে যাও।
– এসো, কাম ইন। আচ্ছা নন্দন, তোমার বাবা মিস্টার গুহ যে এসেছেন, তুমি তো আমাকে জানাও নি।
নন্দনের মনে পড়ে গেলো, মিসেস ফুটকি রাণী বলেছিলেন, যে বাবা এলে আগে থেকেই যেন জানিয়ে রাখি। সেকথা মনে ছিলো না, কিন্তু ভাবলো এত সিরিয়াস কি এমন ব্যাপার আছে যে বাবা এলে আগে থেকেই জানিয়ে রাখতে হবে? আর উনি জানলেনই বা কিভাবে যে বাবা এখানে এসেছেন?
– কি? ভুলে গেছো তো?
– হ্যাঁ, ম্যাডাম, সরি, ভুলে গিয়েছিলাম, আমি আজকেই বাবাকে গিয়ে বলবো। আপনি কবে আমাদের কোয়ার্টারে আসবেন বলুন?
– আরে না না না না, এখন এসব একদম নয়। পরে হবে, পরে হবে।
এতগুলো “না” “না” একসঙ্গে শুনে নন্দন ঘাবড়ে গেলো।
– আগে বলো, তোমার বাবা এখানে কতদিন থাকবেন?
– বাবা তো বলছে, একমাস থাকবে। আমরা বলছি এতদিন বাদে এসেছো, অন্তত দু’মাস তো থাকা উচিৎ।
– না না না, একদম আটকাবে না, জোর করবে না। জোর করে কাউকে আটকে রাখতে নেই।
ম্যাডামের কথাগুলো নন্দনের অদ্ভুত লাগলো। বাবা কতদিন ছেলের কাছে থাকবে, সে ব্যাপারে উনি কেন বলবেন? যাই হোক, কথা বাড়ালো না।
– ঠিক আছে ম্যাডাম, তাহলে আপনি কবে আমাদের বাড়ি আসবেন বলুন?
– না না না। সে পরে হবে, আগে তুমি আমাকে জানাও মিস্টার গুহ এখানে কতদিন আছেন, সেই বুঝে আমি প্ল্যান করবো। ঠিক আছে? বুঝেছো?
– হ্যাঁ ম্যাডাম, আমি আপনাকে বাবার প্ল্যান জানিয়ে দেবো।
– কালকে সকালের মধ্যেই আমাকে জানাবে। এবার আর যেন ভুলে যেও না।

ম্যাডামের কথায় যেন একটা আদেশ ছিলো। নন্দন কেবিনের বাইরে এসে ভাবতে শুরু করলো, কিছু একটা রহস্য নিশ্চয়ই আছে। বাড়ি ফিরে বাবাকে মিসেস ফুটকি রাণীর কথা বলতেই বাবাও কেমন যেন গম্ভীর হয়ে গেলো। এবার বলা নেই কওয়া নেই, “শোন নন্দু, বাগানের গাছের ঠিকমতন যত্ন হচ্ছে না, আমাদের তাড়াতাড়ি ফিরে যেতে হবে।“
– মানে? তুমি তো রোজই বাগানের কাজ করছো। কিসের অযত্ন?
– আরে তোর এই রাজস্থানের বাগানের নয়, আমি কলকাতায় নিজের বারান্দার বাগানের কথা বলছি। ভাবছি আগেই ফিরে যাবো।
– মানে?
– একমাসের রিটার্ন টিকিট আছে, সেটাকে পনেরো দিনের করে নেবো।
নন্দন এবার নিঃসন্দেহ যে কিছু একটা গোলমাল আছে।
– মিসেস রাণীকে বাড়িতে কবে ডাকবো?
– এখন নয়, কিছুদিন পরে।
– কেন? এখন ডাকলে কি হবে?
– না, বলছি তো, এখন নয়। কয়েকদিন পরে ডাকিস।
বাবাকে কেমন যেন অসহিষ্ণু মনে হলো।

পরদিন সকালে নন্দন আর ভুল করলো না। ফুটকি রাণীর তলব আসার আগেই সে গিয়ে দেখা করলো। “ম্যাডাম, বাবা বলছেন দিন পনেরো পরেই ফিরে যেতে চান।“
ম্যাডামকে যেন খুশী মনে হলো। “পনেরো দিন? আর ইউ সিওর?”
– হ্যাঁ, তাই তো বলছেন।
– টিকিট হয়ে গেছে?
– না, সেটা একমাস পরের।
এবার মনে হলো মিসেস রাণী উত্তেজিত। “তুমি কি আমার কথা বোঝো না? ফাজলামি করছো? বলছো পনেরো দিন, কিন্তু টিকিট কাটা একমাস পরের। আবার কাল বলেছো দু’মাস ধরে রাখতে চাও? কোনটা ঠিক?”
নন্দন জানে না কি জবাব দেবে। আরও একটু হোম ওয়ার্ক করে আসা উচিৎ ছিলো। মিসেস রাণীও কি যেন ভাবছেন।
– ওয়েল, সো ইট ক্যান বি এনিথিং বিটুইন ফিফটিন ডেজ, মে বি স্ট্রেচড টু ট্যু মান্থস। রাইট?
– ইয়েস ম্যাডাম।
– দু’মাসের বেশি হবে না তো?
– না না, তার বেশি বাবা থাকবেই না।
– সো, ম্যাক্সিমাম ট্যু মান্থস ইজ সেফ, ট্যু কনসিডার হিজ স্টে?
– হ্যাঁ ম্যাডাম, তার বেশি হবে বলে মনে হয় না।
– ঠিক আছে, তুমি যাও।
– আর ম্যাডাম, আপনি কবে আমাদের বাড়ি আসছেন?
– নট নাও, নট নাও, তবে জানিয়ে দেবো।

নন্দন চলে এলো। এবার ব্যোমকেশ বা ফেলুদাকে ডাকতেই হবে। তবে সবার আগে বাবার পেট থেকে কায়দা করে আসল কথাটাও বার করতে হবে। নন্দন দুপুরে লাঞ্চে কোনদিন বাড়ি আসে না, সেদিন বাড়িতে এলো। “বাবা, তুমি কি ঠিক করলে?”
– নারে, গাছের প্রচন্ড অযত্ন হচ্ছে। অনলাইনে টিকিট কিনে ফেললাম। এইবার পনেরো দিনের বেশি থাকা হবে না। পরের বার গাছের ভালো ব্যাবস্থা করে এসে অনেকদিন থাকবো।
– টিকিট করে ফেলেছো? আমাদের সাথে একবার কথাও বললে না?
নন্দন কি আর করে। মা’র অভিযোগ, “হঠাৎ কি যে মাথায় চাপলো? কাল সকাল থেকেই বলছে গাছের অযত্ন আর গাছের অযত্ন।“

নন্দন লাঞ্চের পরে মিসেস রাণীকে খবরটা দিতে গেলো, নইলে উনি নিজেই হয়তো তলব করে বসবেন। কিন্তু সেখানে গিয়ে বোঝা গেলো রহস্য আরও গভীরে। মিসেস ফুটকি রাণী পার্সোনাল এমার্জেন্সি কারণে আড়াই মাসের ছুটিতে চলে গিয়েছেন। প্রয়োজনে এক্সটেন্ডও হতে পারে।

বাড়ি ফিরে বাবাকে খবরটা দিতেই মুনুবাবু এবার যেন জেগে উঠলেন। “শোন নন্দু, আমারও খারাপ লাগছে, যে এতদূর থেকে এসে এইভাবে তাড়াতাড়ি ফিরে যাবো? ভাবছি টিকিট রিশিডিউল করে আরও কিছুদিন থেকেই যাই।“
ব্যাস, আর বলতে হবে না, এবার তাহলে ব্যোমকেশ বা ফেলুদা’কে ডাকতেই হবে।

*******

ফ্ল্যাশব্যাকে চলে গেলেন মুনুবাবু।
মুনু তখন বছর পাঁচেক হলো ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে ধানবাদের কাছে এক জায়গায় এনসিডিসি (ন্যাশনাল কোল ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন) মাইনস এ চাকরি করছে। কখনও মাইনসে, কখনও ডিজাইন অফিসে। সেই সময় ফুটকি রাণী নামের একটি মেয়ে এসে মুনু’র ডিপার্ট্মেন্টেই জয়েন করে, এবং প্রথম দিনেই ফুটকিকে দেখে মুনু’র ভালো লেগে যায়। ফুটকি স্মার্ট সপ্রতিভ মেয়ে, খুব ভালো বাংলা বলে, কিন্তু মুনু তাঁর সাথে আলাপচারিতার সুযোগ পায় না।

মুনু খবর পেয়েছে ক্লাবের রবীন্দ্র জয়ন্তী ফাংশানে ফুটকি রক্তকরবী নাটকের একটা ছোট্ট রোলে অভিনয় করতে নাকি রাজি হয়েছে। খবর পেয়েই মুনু নাটকের নির্দেশক কেষ্ট দাশগুপ্তকে গিয়ে ধরেছে, কেষ্টাদা, প্লিজ একটা রোল দাও। মিনিট খানেক হলেই চলবে, শুধু এই ফুটকির সাথে একান্তে কয়েক মিনিট চাই। কেষ্টাদা বোঝালেন, এইভাবে হয় না, রবিঠাকুরের নাটক, যখন তখন ডায়লগ বা দৃশ্য ঢুকিয়ে দেওয়া যায় না। আর তাছাড়া ফুটকিও শুধু একটা সীনে ঘুরে বেড়াবে, কোন ডায়লগ নেই। চলবে, চলবে। মুনু ডায়লগ চায় না, শুধু স্টেজে একান্তে ফুটকিকে চায়।

মুনু অফিসের পরে রোজ কেষ্টাদাকে চা, শিঙ্গারা, ডিমের চপ খাওয়ায়। কেষ্টাদা অবশেষে রাজি হয়েছেন। যদি ডায়লগই না থাকে, ক্ষতি কি? মুনুকে শুধু একজন শ্রমিকের রোলে পার্ট দেওয়াই যায়। “তাহলে তোকে শুধু মিনিট দু’য়েক দনাদ্দন গাঁইতি চালাতে হবে, আর একটাও ডায়লগ নেই, মনে রাখবি। পারবি তো?’
– পারবো, পারবো। তখন ফুটকি কোথায় থাকবে?
– আমি ম্যানেজ করে ওঁকে স্টেজে ঢুকিয়ে দেবো। তবে হ্যাঁ, তুই খনির শ্রমিক, মুখে গায়ে কিন্তু কালিঝুলি মাখতে হবে। পারবি?
– পারবো, পারবো। আর রিহার্সাল?
– শুধু মিনিট দুয়েক দুমদাম গাঁইতি চালাবি, রিহার্সালের কি আছে?
নাটকের দিনে মুখে গায়ে নিকষ কালো রঙ লাগিয়ে মুনু তৈরি, কেষ্টাদাকে ধরে তিন চারটে সীনে সে শুধুই গাঁইতি চালাবে। সবকটায় এক মিনিটের মতন। আর একটাই মাত্র অন্ধকারের সীনে ফুটকি স্টেজে থাকবে।

নাটক হয়ে গেলো। মুনু প্রতিটা সীনে মনপ্রাণ ঢেলে দনাদ্দন গাঁইতি চালিয়েছে। আর অন্ধকারের সীনে ফুটকি একদিক দিয়ে ঢুকে অন্যদিক দিয়ে বেরিয়ে গেলো।

নাটকের শেষে মুনু ফুটকিকে খুঁজছে। কেষ্টাদা বললো, ও তো হস্টেলে চলে গেছে। তাড়াতাড়ি যা, রাস্তায় হয়তো পেয়ে যাবি। “এখনই? এই মুখে কালি ঝুলি মেখে?”
– তাহলে এক কাজ কর, এই চাদরে মুখ ঢেকে দৌড় লাগা। রাস্তায় পেয়ে যাবি।

বাইরে এসে মুনু মেয়েদের হস্টেলের দিকে দৌড় লাগালো। রাত তখন প্রায় সাড়ে দশটা। কলোনির রাস্তায় লোকজন কম। কেউ মুনুকে দেখছে না। দূর থেকেই মুনু ফুটকিকে দেখতে পেয়েছে। আজকে মুনুর অনেক সাহস, মনে বল পেয়েছে। কোন জড়তা নেই। ডাকলো, ফুটকি, ফুটকিইইইইইইই

ফুটকি ডাক শুনতে পেয়ে পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখে দূর থেকে অন্ধকারে চাদর মুড়ি দিয়ে একটা লোক আসছে। ভয়ে সে হাঁটার স্পীড বাড়িয়ে দিলো। ওদিকে মুনুর মনে আজ আর কোন ভয়ডর নেই। সে দৌড়ে গিয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে গিয়ে ফুটকিকে ধরলো। আর ফুটকি সেই অন্ধকারে সাদা চাদরের ভেতর নিকষ কালো একটা মুখ দেখে ভয়ে, বাবাগো, মাগো বলে সেখানেই অজ্ঞান।

আর মুনু? প্রেমের অভিযানে এরকম যে হবে সে ভাবেনি। যদিও কলোনির ভেতরেই, চোর ডাকাতের ভয় নেই, তবু এই নির্জন অন্ধকারে ফুটকিকে তো এভাবে একা ফেলে পালিয়ে আসা যায় না। হয় তাঁকে হস্টেলে বা নইলে হাসপাতালে পৌঁছে দিতে হবে। ফুটকিকে সে পাঁজাকোলা করে তুলে নিয়ে হাসপাতালেই গেলো। খানিক জলের ঝাপটা দিতেই ফুটকি জ্ঞান ফিরে চোখ খুলে মুনুকে দেখেই “ওরে বাবাগো, এখানেও?” বলে আবার অজ্ঞান।

পরদিন মুনুর ডাক পড়লো, এইচ আর ডিপার্ট্মেন্টে। রুমে পাঁচজন আছেন, দু’জন এইচ আর, একজন মুনুর ডিপার্ট্মেন্টের আর অন্য দুজন অচেনা। মুনু ওঁদের চেনে না, উনারাও মুনুকে চেনেন না, মানে নিউট্রাল লোক।
– মিস্টার গুহা, ইজ ইট ট্র্যু দ্যাট লাস্ট নাইট ইউ চেজড মিস ফুটকি ইন দ্যা ডার্ক?
– ইয়েস, দ্যাটস ফ্যাক্ট, বাট
প্যানেল থামিয়ে দিলো
– হোয়াই?
– স্যার, আই জাস্ট ওয়ান্টেড ট্যু টক।
– বাট হোয়াই এট দ্যাট লেট নাইট? হোয়াট ওয়াজ সো আর্জেন্ট? আন্ড দ্যাট অলসো উইথ সাচ এ ডেঞ্জারাস মেকআপ? ইউ ওয়ান্টেড টু ফ্রাইটেন হার?
মুনু বুঝলো যে কেসটা অন্যদিকে চলে গেছে। অনেক অনুনয় বিনয় করে গোটা ব্যাপারটা বললো, এমনকি ফুটকির প্রতি নিজের দুর্বলতাও। প্যানেল মৃদু হেসে, ছেড়ে দিলো, কিন্তু ওয়ার্নিং দিলো যে মুনু আর কোনোদিন এভাবে অফিস কলিগ বা কলোনির ভেতরে কোন মেয়েকে তাড়া করবে না।

কিন্তু বিধির ইচ্ছা অন্যরকম। যদিও ফুটকি জেনে গেছে যে সেই রাতের কালি মাখা লোকটা ওরই ডিপার্ট্মেন্টের মুনুবাবু, তবু পরদিন আবার অফিসে সামনা সামনি দেখা হতেই ফুটকির কি যে হলো। “ও মা গো, আবার আপনি ……” এই বলে ফুটকি অজ্ঞান।
ম্যানেজমেন্টকে বলে ফুটকি রাতারাতি আসানসোলে ট্রান্সফার নিয়ে চলে এলো।

বছর চারেক বাদে, মুনুর বিয়ে হয়ে গেছে, সকালের ব্ল্যাক ডায়মন্ড এক্সপ্রেসে সপরিবারে ফিরছে। ফুটকিরও বিয়ে হয়ে গেছে, নিজের অফিসেরই কলিগের সাথে। ট্রেনে এক্কেবারে মুনুর সামনের সীটে, মুখোমুখি। “বাবাগো, কোথায় যাবো? এখানেও ……“ ফুটকি অজ্ঞান।
বছর দশেক বাদে, কলকাতায় এক সেমিনারে একই দৃশ্য, “এখানেও আপনি……” অজ্ঞান।
ফুটকি কোল ইন্ডিয়া ছেড়ে দিয়েছে, আবার যদি দেখা হয় সেই ভয়ে। সে এখন রাজস্থানে চলে এসেছে।
কিন্তু এখানে এসেও…………

*******

মুনুবাবুর স্ত্রী, ছেলে, ছেলের বৌ সব শুনলো। স্ত্রী বললেন, “তাহলে ইনিই তোমার সেই ফুটকি?”
আর বৌমাও মুখ খুললো, “বাবা, আপনি তো রাস্তায় যাওয়ার সময় সাদা চাদরে মুখের কালিঝুলি মুছে নিতে পারতেন।“
হ্যাঁ, পারতাম, কিন্তু তবে পরে অনেক ভেবেছি। মুখের কালি পরিস্কার করে গেলে তোমার শাশুড়ি, মানে আমার এখনের এই বৌকে আর কি পেতাম?

Sahityika Admin

3 comments

  • এটা কি সত্য ঘটনা?

    • আমার এক বন্ধু (NCDC – National Coal Development Corp) বলেছিল যে অনেক আগে ১৯৮৫-৯০ নাগাদ ওদের কলোনিতে এরকম একটা ঘটনা ঘটেছিল। তবে পরবর্তী ঘটনাগুলো সাজানো।