সাহিত্যিকা

ভ্যালেন্টাইন ডে

ভ্যালেন্টাইন ডে
প্রদীপ কৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়, ১৯৭৭ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং
সোহম দাশগুপ্ত, ১৯৭৭ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং

ভ্যালেন্টাইন ডে, কিছু কথা
প্রদীপ কৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়, ১৯৭৭ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং

ভ্যালেন্টাইনস ডে উদযাপন এখন যেন জীবনের রোম্যান্সের সাথে যুক্ত হয়ে গেছে, তবে এই ছুটির দিনটির উৎসের সঙ্গে জড়িত কাহিনী একটুও রোমান্টিক নয়।

ভ্যালেন্টাইনস ডে’র ইতিহাস খুব পূরোনো এবং জটিল। আজকের দিনে ভ্যালেন্টাইনস ডে চুম্বন, উপহার এবং ক্যান্ড্ল লাইট ডিনারের জন্য পরিচিত, কিন্তু এই উৎসবের আমেজে ভরা দিনটির পিছনে শুধু দুঃখের ইতিহাসই লুকিয়ে আছে। আসুন দেখা যাক ভ্যালেন্টাইন ডে সম্পর্কিত কিছু তথ্য।

ভ্যালেন্টাইনস ডে কবে উদযাপন করা হয়?
পঞ্চম শতাব্দীর শেষের দিকে, পোপ গেলাসিয়াস ১৪ই ফেব্রুয়ারি সেন্ট ভ্যালেন্টাইনস ডে ঘোষণা করেছিলেন। সেই সময় এই দিনটির সঙ্গে শুধু ধর্মেরই সম্পর্ক ছিল। সময় এগুনোর সাথে সাথে এর সঙ্গে নানা উপকথা জুড়ে গেছে, যা এর পরের অংশে পর্যায়ক্রমে দেওয়া হয়েছে।

ভ্যালেন্টাইনস ডে কীভাবে শুরু হয়েছিল?
ভ্যালেন্টাইনস ডে ক্যালেন্ডারে একটি নির্দিষ্ট দিন যা লুপারক্যালিয়া নামক প্রাচীন রোমান ক্যালেন্ডারে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে ছুটির তালিকায় ঢুকে পড়ে। কিছু ঐতিহাসিক বিশ্বাস করেন যে ভ্যালেন্টাইনস ডে কে ভালোবাসার সঙ্গে যুক্ত করা যেতে পারে। লুপারক্যালিয়া উর্বরতা উদযাপন করতো। মনে করা হয়, এই সময়ে এক অদ্ভুত আচার পালন করার প্রচলন ছিল। এই আচার অনুযায়ী একটি বয়াম থেকে বিভিন্ন নারী ও পুরুষের নাম লেখা কাগজ তুলে নিয়ে জুটি বাঁধা হতো। প্রাচীন গ্রিসে, লোকেরা দেবতা জিউস এবং দেবী হেরার বিবাহ উদযাপনের জন্য একটি শীতকালীন উৎসব পালন করতো। তবে এই সব রীতি রেওয়াজের সঙ্গে ভ্যালেন্টাইন ডে র প্রত্যক্ষ সম্পর্ক নিশ্চিত ভাবে জানা যায় না।

সেন্ট ভ্যালেন্টাইন কে ছিলেন? (এবং চকোলেট হার্টের সাথে তার কী সম্পর্ক?)
বিশেষ কোনো সম্পর্ক ছিল না বলেই অনুমান করা হয়। সময়ের সাথে সাথে এই দুটি ব্যাপার, অর্থাৎ ভ্যালেন্টাইন ডে এবং প্রণয়, এক হয়ে গেছে। সেন্ট ভ্যালেন্টাইন্স ডে ছিল ক্যাথলিক ধর্মের একটি উৎসবের দিন, যা ৫০০ খ্রিস্টাব্দের লিটারজিকাল ক্যালেন্ডারে জায়গা করে নেয়। দিনটিতে শুধুই শহীদ সন্তদের স্মরণ করা হ’তো। শহীদ হওয়া সব সাধুদের একটাই নামে ডাকা হ’তো। নাম অনুমান করা খুব কঠিন কাজ নয় – হ্যাঁ ঠিকই ধরেছেন – ভ্যালেন্টাইন। প্রচলিত বিভিন্ন কিংবদন্তিতে ভ্যালেন্টাইন বা ভ্যালেন্টিনাস নামে তিনজন সন্তের উল্লেখ পাওয়া যায়, কিন্তু ইতিহাস ঘেঁটে তাঁদের সম্পর্কে খুব কমই তথ্য জানা যায়। তা ছাড়া সেন্ট ভ্যালেন্টাইন সম্পর্কে প্রচলিত তৎকালীন গল্পগুলো ছিলো পরস্পরবিরোধী। তাই ১৯৬৯ সালে খ্রিস্টান লিটারজিকাল ক্যালেন্ডার থেকে দিনটি সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

তবে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের প্রকৃত ইতিহাস সম্পর্কে খুব বেশি কিছু জানা না গেলেও, যার উপর ভিত্তি করে ছুটির দিন, সেই সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের উপর বেশ কিছু কিংবদন্তির প্রচলন আজও রয়েছে। একটি কিংবদন্তি বলে যে সেন্ট ভ্যালেন্টাইন পৌত্তলিক ধর্মে ধর্মান্তরিত হতে অস্বীকার করেছিলেন এবং সেই জন্য রোমান সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াস তাঁকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছিলেন। তবে মৃত্যুর আগে, তিনি তার জেলারের কন্যাকে অলৌকিকভাবে সুস্থ করেছিলেন। সেই জেলার পরে সপরিবারে খ্রিস্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়েছিলেন। আরেকটি কিংবদন্তি বলে যে বিশপ নামক আর এক সেন্ট ভ্যালেন্টাইন অফ টারনি ছিলেন আসল সেন্ট ভ্যালেন্টাইন। এনাকেও মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।

অন্য আর এক দলের মতে সেন্ট ভ্যালেন্টাইন ছিলেন একজন রোমান ধর্মযাজক যিনি বিয়ে করতে নিষেধ করা সৈন্যদের বিয়ে দিয়েছিলেন। এই প্রসঙ্গে জানা যায়, এক রোমান সম্রাটের আদেশের কারণে রোমান সৈন্যদের বিয়ে করার অধিকার ও অনুমতি ছিল না, কারণ সম্রাট ভাবতেন বিবাহিত সৈন্যরা ভাল যোদ্ধা হ’তে পারে না। এই সেন্ট ভ্যালেন্টাইন একটি কিউপিডের সাথে একটি আংটি পরতেন – এটি প্রেমের প্রতীক, যা সৈন্যদের তাঁকে চিনতে সাহায্য করেছিল। তিনি আপামর খ্রিস্টানদের, ঈশ্বরের প্রতি তাদের ভালবাসার কথা মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য হৃদয়ের প্রতীক হিসাবে ‘কাগজের হৃদয়’ বিতরণ করতেন – যা সম্ভবতঃ আজকের দিনে গ্রীটি্ংস কার্ডে রূপান্তরিত হয়েছে। এট আজকের দিনের অনুমান। এই কিংবদন্তির কারণে, সেন্ট ভ্যালেন্টাইন পরবর্তীকালে প্রেমের পৃষ্ঠপোষক হিসাবে পরিচিত হন। সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের প্রার্থনা সকল প্রেমীদের একে অপরের সাথে সংযুক্ত করতে বলে, যাতে দু’টি হৃদয় এক হয় এবং নবদম্পতি ঈশ্বরের প্রতি তাদের ভক্তি মনে রাখে।

যদিও সেন্ট ভ্যালেন্টাইন গল্পটি রোমান্টিক প্রেমের জন্য ছুটির দিন হিসাবে প্রতিষ্ঠার ভিত্তি স্থাপন করেছিল, যেটি সত্যই সেন্ট ভ্যালেন্টাইন এবং প্রেমের মধ্যে সংযোগকে দৃঢ় করেছিল তা ছিল ১৩৮১ সালে মধ্যযুগীয় লেখক জিওফ্রে চসারের একটি কবিতা। ঐতিহাসিকরা এটিকে “আধুনিক ভ্যালেন্টাইন্স ডের উৎস বলে মনে করেন। এই দিনটিতেই আমরা এখন মনের মানুষটির সঙ্গে স্থায়ী প্রেমের অঙ্গীকার গ্রহন করি।

আমরা কেন ভ্যালেন্টাইনস ডে উদযাপন করি?
চসার ছিলেন মধ্যযুগের প্রথিতযশা মহাকবি, যে যুগে সোচ্চার প্রেমের সাথে কবিতা, গান, শিল্পকলা সমার্থক ছিল। পঞ্চদশ শতকের শেষের দিকে, “ভ্যালেন্টাইন” শব্দটি দিনের কবিতা এবং গানে প্রেমিককে বর্ণনা করার জন্য ব্যবহার করা শুরু হয় এবং অষ্টাদশ শতকে, ইংল্যান্ডে দ্য ইয়াং ম্যানস ভ্যালেন্টাইন রাইটার নামে একটি বইও প্রকাশিত হয়। উনবিংশ শতকের মাঝামাঝি নাগাদ, কাগজের ভ্যালেন্টাইন কার্ডের গণ- উৎপাদন তৈরি করা শুরু হয় এবং আজকের ভ্যালেন্টাইন্স ডে তারই ফলশ্রুতি।

আধুনিক কালের ভ্যালেন্টাইন্স ডে র সাথেও কিছু দূঃখজনক ঘটনাও জড়িয়ে পড়েছে। ১৯২৯ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারী শিকাগোতে আল ক্যাপোন গোষ্ঠী দ্বারা সংগঠিত একটি গ্যাং সাতজন মানুষকে ভ্যালেন্টাইন দিবস পালন করার অপরাধে হত্যা করেছিল। ভ্যালেন্টাইনস ডে’র এই গণহত্যা অনিয়ন্ত্রিত নিষেধাজ্ঞার ইতিহাসে একটি বহুচর্চিত ঘটনা হয়ে উঠেছে।

ভ্যালেন্টাইন্স ডে মানে কি?
বেশ কিছু শতাব্দী যাবৎ ভ্যালেন্টাইন্স ডে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান, একটি প্রাচীন আচার পালনের দিন এবং সর্বোপরি একটি ছুটির দিন। সে যাই হো’ক, আপনি আপনার নিজের দিনটি কিভাবে পালন করবেন সেটা আপনি নিজের মর্জি মতোই ঠিক করবেন। আপনি ফুল, চকোলেট বা অন্যান্য উপহার দিয়ে পরিবার, আত্মীয় স্বজন, বন্ধু, সহকর্মীদের আপ্যায়ন করতে পারেন বা দিনটি সম্বন্ধে উদাসীনও থাকতে পারেন। কিছু মানুষ যেমন এই দিনটি ভালোবাসেন, কিছু মানুষ দিনটিকে অপছন্দও করেন। ভালোবাসলে প্রিয় জনের বা প্রিয় জনেদের সঙ্গে সিনেমা দেখে, ডিনার করে, নয়তো পার্টির আয়োজন করে দিনটি স্মরনীয় করে তুলতে পারেন।

রোমের লুপারকেলিয়ার প্রাচীন আচার পালনের কথা আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে লটারির মাধ্যমে নারী ও পুরুষের জুড়ি তৈরি করা হতো প্রজননের কারনে। পরে অবশ্য প্রথাটি পঞ্চদশ শতাব্দীতে বিলুপ্ত হয়। কেউ কেউ মনে করেন বিলুপ্ত প্রথাটি আজকের দিনের ভ্যালেন্টাইন্স ডে হিসাবে বিবর্তিত হয়েছে। তবে এটাও সত্য যে চতুর্দশ শতাব্দীর আগে পর্যন্ত ফেব্রুয়ারি মাসের এই দিনটির সাথে রোমান্সের কোনো সম্পর্ক ছিল না।

মোদ্দা ব্যাপারটা যা দাঁড়াচ্ছে, তার হ’লো তিনজন সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের যে কোনো একজনের নামে দিনটি ভালোবাসার দিন হিসাবে পালিত হয়। প্রথম জন সম্রাট ক্লডিয়াসের দ্বারা মৃত্যুদণ্ডে দন্ডিত হয়েছিলেন। অন্য একজন সেন্ট ভ্যালেন্টাইন অফ টার্নি নামে পরিচিত এবং পরবর্তী কালে মৃত্যুদণ্ডে দন্ডিত বিশপ এই তালিকায় দ্বিতীয় সন্ত। তৃতীয় সেন্ট ভ্যালেন্টাইন রোমান সম্রাটের বিরুদ্ধে গিয়ে সৈন্যদের বিয়ে দিয়ে মৃত্যু দন্ডে দন্ডিত হন। হয়তো এই তিনজন একই সেন্ট ভ্যালেন্টাইন, কিন্তু সেটা নিছকই অনুমান।

আমেরিকায় ভ্যালেন্টাইন ডে মেসেজ প্রচলিত হয় উনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে। রোমান প্রেমের দেবতা কিউপিড, হৃদয়ের প্রতীক এবং পাখির ছবি সম্বলিত এই প্রেমের বার্তার সঙ্গে লাল ফুল, বিশেষ করে লাল গোলাপ ও চকোলেট ভ্যালেন্টাইন ডে উপহারের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

আজকে ভ্যালেন্টাইন ডে সারা দুনিয়ায় উদযাপিত হয়, সারা দুনিয়ার একটি জনপ্রিয় দিন। বন্ধুবান্ধব, আত্মীয় স্বজন, এমনকি স্কুলের ছাত্র ছাত্রীরাও এই দিনটির জন্য সারা বছর অপেক্ষা করে থাকে।

তথ্যসূত্র ও কৃতজ্ঞতা স্বীকার – উইকিপিডিয়া

*******

ভ্যালেনটাইন’স ডে
সোহম দাশগুপ্ত, ১৯৭৭ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং

আমার চুরাশি হলে প্রিয়তমা আশিতে,
তখনও মাতাবেন ঢাক, ঢোল, কাঁসিতে।
কাঁপা হাতে বাজাবেন নিদারুণ ছন্দে,
চুরাশি ঘাপটি মেরে, ক’টা মাথা স্কন্ধে?
মাঝরাতে গুঁতো মেরে বলবেন থামারে,
এ বিকট নাক ডাকা ধ্রুপদে বা ধামারে।
গাঁটে গাঁটে বাঁশি বাজে বসন্তবাহারে,
হৃদয়ে যে প্রেমালাপ বোঝাই তা কাহারে?
বোবার শত্রু নেই আমি জানি খেলা সে
শিয়রেতে দাঁত হাসে- জল ভরা গেলাসে।
একদিন কোথা থেকে চাঁপাফুল কুড়িয়ে,
কানে গুঁজে এসে বলে- গেছি কি গো বুড়িয়ে?

হিসেবের গড়মিল শুরু থেকে আশিতে
এখনো জানিনা কি, কি, লাগে ভালবাসিতে?

*******

তুমি সন্ধ্যার মেঘমালা, তুমি আমার সাধের সাধনা
সোহম দাশগুপ্ত, ১৯৭৭ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং

সালটা ১৯৭০।
বাবার কাছে টালিগঞ্জের নেতাজীনগর কলেজে অধ্যক্ষ পদের প্রস্তাব এলো। নামেই কলেজ, স্কুল বাড়িতে সান্ধ্য কলেজ বসে। তবু মায়ের মুখে বহুবছর বাদে একটা স্বস্তির হাসি। ক’দিন আগেই বাবা কঠিন অসুখে কয়েকমাস হাসপাতালে কাটিয়ে ফিরেছেন। স্বাস্থ্য ভেঙে গেছে, তাই ট্রামেবাসে রোজ বাগবাজার, টালিগঞ্জে যাতায়াত করা অসম্ভব। আমরা বাগবাজার ছেড়ে টালিগঞ্জে চলে এলাম। আর আমি স্কটিশ ছেড়ে এলাম নৃপেন্দ্রনাথ হাইস্কুল, সেখানেই বিই কলেজের ব্যাচমেট সুহাসের (হাসু) সাথে আমার প্রথম আলাপ।

আমি তখন নতুন পাড়ায়, নতুন বন্ধু, তাদেরই একজনের বাড়িতে শ্রীমতির সাথে আমার প্রথম দেখা। সে তখন ক্লাস ফাইভের খিলখিলিয়ে হাসা, কলকলিয়ে কথা বলা মিষ্টি মেয়ে। নিজেই এসে আলাপ জমিয়ে ফেললো। খুব ভাল লাগলো, কিন্তু ব্যাস ঐ অব্দিই। বন্ধুদের দল হাজির হতেই হৈ হৈ করে খেলতে বেড়িয়ে পড়লাম।

সেটা সত্তরের দশক। চরম রাজনৈতিক অস্থিরতা। নতুন বাড়িতে কয়েকমাস কাটতেই টালিগঞ্জ, যাদবপুর অঞ্চলে দেখলাম শুরু হয়ে গেল রাজনৈতিক হিংসা। ডিসেম্বর মাসে যাদবপুরের উপাচার্য গোপাল সেন খুন হলেন। পরের দিনই স্কুলে যাবার পথে অচেনা নকশাল ছেলেরা বইখাতা কেড়ে নিয়ে, চড় থাপ্পড় মেরে বললো, “এপাড়ায় নতুন এসেছিস তাই আজ প্রাণে বেঁচে গেলি, আর যেন ত্রিসীমানায় না দেখি”। খবর এলো বাবার ওপরেও আক্রমণ হতে পারে।

রাতারাতি আবার বাড়ি বদল করে চলে গেলাম বাবার কলেজের পাড়া নেতাজীনগরে। ৭০-৭১এ টালিগঞ্জ তখন ভয়াবহ রণক্ষেত্র! এপাড়া, ওপাড়ার মাঝে অদৃশ্য রাজনৈতিক সীমানা। দুপাশেই সশস্ত্র বাহিনী। হায়ার সেকেন্ডারীটা দিতেই হবে তাই এবার নাকতলা হাইস্কুলে গিয়ে নাম লেখালাম। সেখান থেকেই ১৯৭২এ আমি আর (প্রয়াতঃ) মলয় গাঙ্গুলী (মলি) বি ই কলেজে গিয়ে পৌঁছোলাম।

হোস্টেলে নতুন জগত, নতুন বন্ধু, উপরন্তু নতুন রকমের স্বাধীন জীবন! দিনগুলো নিত্যনতুন ভালমন্দ অভিজ্ঞতা্র মধ্য দিয়ে ঝড়ের মত কাটতে লাগলো! সপ্তাহের শেষে বাড়ি ফিরতাম পাঁচ নম্বর রুট ধরে গড়িয়া হয়ে। কারণ রাজনৈতিক হিংসা এতোটাই মারাত্মক আকার নিয়েছিল, যে ছ’ নম্বর রুটের বাস থেকে নামিয়ে মারধোর এমনকি খুনও হয়েছে।

সময় এগিয়ে চলেছে। তখন ‘৭৪ সালের শেষ দিক। সেকেন্ড ইয়ার ফাইনালের পর বাড়ি ফিরেছি। পরিস্থিতি আগের চেয়ে অনেক ভাল, অন্ততঃ বাস থেকে নামিয়ে মারামারি বন্ধ হয়েছে। কয়েকজন বন্ধু মিলে গেলাম ম্যাটিনি শোতে “আবিষ্কার” দেখতে। ফেরার পথে “বাবুল মোরা…” গানটা গুনগুন করতে করতে বাসে উঠলাম, হঠাতই কেউ কাঁধে হাত রাখলো। ঘুরে দেখি, আমার সেই বন্ধু, শ্রীমতীর দাদা। নানা গল্প হতে হতে ওদের পাড়া চলে এলো। হাতটা চেপে ধরে বললো, “আজ এতো তাড়াতাড়ি ছাড়ছিনা। পাড়ায় চলো, অনেক কথা জমে আছে!”

প্রায় বছর চারেক বাদে ওপাড়ায় ঢুকলাম। কিছুই বিশেষ বদলায়নি। কয়েকটা পরিচিত মুখও চোখে পড়লো। বন্ধু আমার হাত ধরে টানতে টানতে ওদের বাড়ি নিয়ে চললো। দরজা থেকেই চেঁচিয়ে বললো, “দেখো কাকে নিয়ে এসেছি!” মাসীমা বাইরের ঘরেই ছিলেন। আমাকে চিনতে পেরে, উঠে এসে দু’টো হাত ধরে বললেন, “সোহম! বাবারে, কত্তো বড় হয়ে গেছিস!” ‘

৭০ সালে প্রথম আলাপেই ওনাকে আমার ভাল লেগেছিল। খুবই হাসিখুশী, স্নেহময়ী মানুষ। নীচু হয়ে প্রণাম করলাম। তারপর বাড়ির খবর, কলেজের কথা, নানা গল্প শুরু হয়ে গেল। হঠাতই নীলপাড়, সাদা শাড়ী পরা একটি মেয়ে বাড়িতে ঢুকলো। কাঁধে শান্তিনিকেতনী ঝোলায় স্কুলের খাতাপত্র উঁকি দিচ্ছে। মাসীমা আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, “দেখতো চিনতে পারিস কিনা?” চিনতে পারলাম, আবার পারলামও না! বুঝলাম, এই সেই শ্রীমতি, কিন্তু মাত্র চারবছরে একটি মেয়ে এতোটা বদল ঘটে যেতে পারে তা ভাবতেই পারিনি! বড় তো হয়েইছে কিন্তু তার সাথে ভাবে, ভঙ্গীতে, তাকানোয় কী অপরিসীম পরিবর্তন! কাজল কালো চোখদুটো একইরকম আছে কিন্তু চাহনীতে ঘনিয়েছে এক অতল গভীরতা! মিষ্টি হাসিটা রয়েছে কিন্তু শিশুসুলভ চপলতার বদলে মিশেছে সলজ্জ মাধুরী! সুরেলা গলায় ঘাড় দুলিয়ে বলে উঠলো, “চিনতে পারছো না তো? আমি কিন্তু তোমাকে একবারেই চিনেছি।” তারপর বেণী দুলিয়ে বাড়ির ভেতরে চলে গেল।

জীবনে বহুবার অবাক হয়েছি, কিন্তু অবাক হতে যে এতো ভাল লাগে তা আগে কখনো বুঝিনি! মাসীমা বললেন, “ওদের ক্লাস নাইন থেকে শাড়ী।” সেই মুহুর্তে আমার মনের গভীরে একটা অপূর্ব অনুভূতি সবে পাপড়ি মেলছিল তাই আর অন্য কোনো কথোপকথনে যেতে চাইছিলাম না। ওনাকে নমস্কার করে বললাম, “আজ আসি।”

সিনেমা দেখে বেরিয়ে ইস্তক জগজিৎ সিং এর “বাবুল মোরা নাইহার ছুটো হি যায়…” গানটা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিলো। কিন্তু শ্রীমতীদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে খেয়াল করলাম অন্য একটা গানের কলি মাথায় ঘুরছে, “তুমি সন্ধ্যার মেঘমালা, তুমি আমার সাধের সাধনা,…”। জীবনে প্রথমবার বুঝলাম, প্রেমে পড়ে গেছি।
******

চার বছর বাদে শ্রীমতীর সাথে হঠাত দেখার অনুভূতিটা যেন রবিঠাকুরের সেই “বাজিল বুকে সুখের মত ব্যথা”! সোনার তরীর সেই কথাগুলোর অর্থ সেদিনই প্রথম আন্দাজ করতে পারলাম। হোস্টেলে ফিরে রুমমেটদের ঘটনাটা বলতেই, সবাই হৈ হৈ করে ঝাঁপিয়ে পড়লো। তাদের সেকি উচ্ছাস, যেন জীবনের সবচেয়ে বড় পরীক্ষায় ডিস্টিংকশন নিয়ে পাশ করে এসেছি!

বন্ধুদের কয়েকজন ফার্স্ট ইয়ার বা তার আগে থেকেই প্রেমে পড়েছে, এখন তারাই হলো আমার গাইড। এ ব্যাপারে মুখ্য উপদেষ্টার ভূমিকা নিলো পরম রোমান্টিক মানুষ সাগর (দাশগুপ্ত)। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সব খবর নিলো। ওরই পরামর্শ মতোই পরের সপ্তাহে ওপাড়ায় গিয়ে শ্রীমতির এক বান্ধবীর সাথে আলাপ জুড়লাম। নাম নন্দিনী, ওপাড়ায় থাকতেই মুখচেনা হয়েছিল। আমাদেরই সমবয়েসী ঝকঝকে, বলিয়ে কইয়ে মেয়ে, তাই ভাব জমাতে দেরী হলোনা। কিছুক্ষণ বাড়ির কথা, কলেজের কথা, তারপর একথা, ওকথা, সেকথা বলে চলেছি কিন্তু কিছুতেই আর সাহস করে আসল কথাটা বলা হচ্ছেনা!

এমন সময় নন্দিনীই হঠাত আমার সেই বকবকানি থামিয়ে চোখের দিকে সোজা তাকিয়ে বললো, “শোন, প্রেম করবি?” আমার মাথায় যেন বাজ পড়লো, ভাবলাম এ কার পাল্লায় পড়লাম! ওদিকে আমার সেই ভ্যাবাচ্যাকা অবস্থা দেখে নন্দিনী তো হেসেই কুটিপাটি। শেষে হাসি থামিয়ে, গলাটা নামিয়ে বললো, “বুদ্ধু কোথাকার, আমার সাথে না, শ্রীমতীর সাথে।” শুনে বোকা বোকা হেসে বললাম, “সেটাইতো বলতে এসেছিলাম।” নন্দিনী বিজ্ঞের হাসি হেসে বললো, “তুই কি ভাবছিস, এতোক্ষণে তোর মনের কথাটা ধরতে পারিনি? তোরা, ছেলেগুলো না বড্ড বোকা!”

তারপর অনেক কথাই হলো। নন্দিনী বহুদিন ধরেই প্রেম করে। প্রায় প্রতি রবিবারেই ধর্মতলায় মিট ক’রে ঘুরে বেড়ায়, সিনেমা দেখে। বললো, “আগামী রবিবার বিকেল পাঁচটায় আকাশবাণীর সামনে চলে আয়, আমি শ্রীমতিকে সঙ্গে নিয়ে যাব। তারপর নিজেরাই মুখোমুখি কথা বলে নিস।” আমি অবাক হয়ে বললাম, “আকাশবাণীতে কেন, মেট্রোর সামনে মিট করলেই তো হয়।” নন্দিনীর এবার সিরিয়াস, “আবার বোকা বোকা কথা! আমি ভেবেচিন্তেই বলেছি। মেট্রোর সামনে অনেক চেনা লোকের ভিড়, প্রথম দিন তোদের ওখানে মিট না করাই ভাল।” বাধ্য বালকের মত ঘাড় নেড়ে চলে আসছিলাম, নন্দিনী বলে উঠলো, “আরেকটা কথা, শ্রীমতিকে কিন্তু আগে থেকে কিছু বলা যাবেনা। আমরা হাঁটতে হাঁটতে গঙ্গার দিকে যাবো, পথে তোর সাথে হঠাতই দেখা হয়ে যাবে, বাকিটা তোর দায়িত্ব।”

সব শুনে, হোস্টেলে বন্ধুদের মধ্যে সেকি উত্তেজনা! রোজ সন্ধ্যে হলেই একই আলোচনা। ভাগ্যিস থার্ড ইয়ারের সবে শুরু, সামনে কোনো পরীক্ষা নেই। থাকলে সবার পড়াশোনা নির্ঘাত লাটে উঠতো। নানা আকাশ কুসুম স্বপ্ন দেখতে দেখতে আরেকটা শনিবার চলে এলো। গত ক’দিন ধরে বন্ধুরা অফুরন্ত সাহস জোগালেও আমি দুরুদুরু বক্ষে বাড়ি চললাম। রবিবার সকালটা নিয়মিত নেতাজীনগরের বন্ধুদের সাথে আড্ডা মেরে কাটাতাম। সেদিন আড্ডায় বেরনোর আগে জুতো জোড়া পালিশ করে রাখলাম। আড্ডাতে গেলাম বটে কিন্তু মাথায় সেই একটাই চিন্তা, “শ্রীমতী আসবে তো?” আর কয়েকটা ঘন্টা যেন কোনো মতেই কাটছিলো না। বিকেল চারটে বাজতে না বাজতেই সাজগোজ করে ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে মাকে বললাম, “আমি আসি।” মা আমার আপাদমস্তক চোখ বুলিয়ে নিয়ে জিগেস করলো, “আসি তো বুঝলাম, আজ সাজের যা বহর দেখছি, সোজা হোস্টেলে যাচ্ছোতো, না অন্য কোথাও?” মাকে সচরাচর মিথ্যে কথা বলতাম না, বুঝলাম কথা আরেকটু গড়ালেই ধরা পড়ে যাবো। বললাম, “কি যে বলো, হোস্টেল ছাড়া যাবোই বা কোথায়?” মা কি বুঝলো জানিনা, হেসে বললো, “এসো।”

বিকেল পাঁচটার অনেক আগেই আকাশবাণীর গেটের সামনে পৌঁছে গেলাম। দূরে ময়দানে ছেলেরা খেলছে, অনেকে পা ছড়িয়ে বসে আড্ডা মারছে কিন্তু রাস্তাঘাট, ফুটপাত প্রায় ফাঁকা। ঘড়ির কাঁটা যতো পাঁচটার দিকে এগোচ্ছে আমার বুকের দুরুদুরু টা দ্বিগুণ লয়ে বাড়ছে, ঠিক তখনই দেখি রাজভবনের গায়ের ফুটপাত দিয়ে একটি ছেলের সাথে হেঁটে আসছে নন্দিনী আর ওদের পেছনে শ্রীমতী। এবার বুকের ভেতর দামামা বাজছে। ভাবছি, এখন ঠিক কি করা উচিত। হঠাত মনে পড়লো নন্দিনী বলেছিল, “পথে তোর সাথে দেখা হয়ে যাবে।” আর সময় নষ্ট না করে আমি আকাশবাণী থেকে রাস্তা পার হয়ে রাজভবনের ফুটপাতে চলে এলাম।

এবার যথাসাধ্য নির্লিপ্ত মুখ করে ওদিক পানেই হাঁটতে শুরু করলাম। কয়েক পা এগোতেই আমরা মুখোমুখি। নন্দিনীর কথা মতো ওদের দেখেই যেন আকাশ থেকে পড়লাম, “আরে, কি ব্যাপার, তোরা…!” নন্দিনীও আমায় দেখে অবাক হবার ভান করলো। নাটকীয় ভাবেই বললো, “দেখে বুঝতে পারছিস না? এ হচ্ছে আমার বয়ফ্রেন্ড, অনুপ। আমরা গঙ্গার ঘাটে যাচ্ছি, তুই কোথায় চলেছিস?” উত্তর তৈরীই ছিল, বললাম, “হোস্টেলে ফিরছি, লঞ্চ ধরবো।” এবার অনুপ আমার কাঁধে হাত রেখে বললো, “গত কয়েকদিনে তোমার কথা অনেক শুনেছি, আজ প্রথম দেখা, একটু আড্ডা মেরে তারপর নাহয় হস্টেলে যেও। শ্রীমতীও গল্প করার একজনকে পেয়ে যাবে। কি বলো, শ্রীমতি?” বুঝলাম পুরোটাই নন্দিনীর প্ল্যান। ওরা দুজন আগে আগে চললো, পেছনে আমি আর শ্রীমতী। ওরা নানা গল্প করতে করতে চলেছে, আমাদের মুখে কোনো কথা নেই। যেন একটা ঘোরের মধ্যে হেঁটে চলেছি!

চারজনে হাঁটতে হাঁটতে গঙ্গার ঘাটে পৌঁছিয়ে কফির অর্ডার দেওয়া হলো। বেঞ্চে বসে সবে কফি তে চুমুক দিয়েছি, তার মধ্যেই গোটাপাঁচেক নৌকোর মাঝি এসে হাজির। অনুপ তাদের দুজনের সাথে দরদস্তুরও শুরু করে দিলো। ইতিমধ্যে আমার ঘোরটা কিছুটা কেটেছে, বললাম, “তোমরা যাও আমি এখানেই বসি।” শ্রীমতীও প্রায় একসাথে বলে উঠলো, “আমিও নৌকোয় যাবনা।” কফি শেষ করে ওরা দুজন হাত ধরাধরি করে ঘাটের দিকে চলে গেল। বেঞ্চে তখন পাশাপাশি আমরা দুজন। এবারতো আসল কথাটা বলতেই হবে। বড্ড নার্ভাস লাগছে, একটা সিগারেট ধরালাম।

শ্রীমতীর পরনে হলুদ পাড়, কচি কলাপাতা রঙের তাঁতের শাড়ী, গলায় শান্তিনিকেতনী পুঁতির মালা, কানে ম্যাচিং দুল। হাতটা ভাঁজ করে মুঠোর ওপর চিবুকটা রেখে অপলক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ভুরু দুটোর মাঝখানে একটা হলুদ টিপ। বয়েসে অনেকটাই ছোটো তবু ওর সেই ধীর স্থির শান্ত ব্যাক্তিত্বর সামনে নিজেকে নেহাতই নাবালক মনে হচ্ছিলো। বহু চেষ্টায় নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে কথাটা বলার জন্য রেডি হলাম। হঠাতই বললো, “জানো, আজ আমার মন বলছিল, তোমার সাথে দেখা হবে।” নিজের ডায়ালগটা বারবার মুখস্ত করে এসেছিলাম, কিন্তু ওর কথা শুনে আবার সব তালগোল পাকিয়ে গেল! তাও স্মার্ট ভাব করে শুধোলাম, “টেলিপ্যাথি?” শ্রীমতির চোখে এক রহস্যময় হাসি, বললো, “ঠিক তাই। আমার টেলিপ্যাথির কি টান দে’খ, তুমি লঞ্চ ধরতে গঙ্গার দিকে না গিয়ে সটান ধর্মতলার দিকে চলে এলে!” বুঝলাম সব চালাকি ধরা পড়ে গেছে, এবার আত্মসমর্পন করা ছাড়া উপায় নেই। হঠাতই শ্রীমতী আমার হাতটা ধরে বললো, “একটা কথা দিতে হবে।” জিগেস করলাম “কি?” বললো, “কখনো আমাকে এরকম নৌকোয় চড়তে বলবেনা। আমার ভাল লাগেনা।” আমিও ওর হাতটা কাছে টেনে নিয়ে বললাম, “কথা দিলাম।”

শীতের বেলা। নদীর ওপারে আকাশ রাঙা করে সূর্য ঢলে পড়েছে। গঙ্গার বুকে ছড়িয়ে পড়ছে সেই মায়াবী আলোর আল্পনা! শ্রীমতি একদৃষ্টিতে সেদিকেই চেয়ে আছে। ওর সারা মুখমন্ডলে এক অদ্ভুত প্রশান্তির দ্যুতি! চারপাশে দোকানপাটের কোলাহল, গাছে গাছে ঘরে ফেরা পাখিদের ডাকাডাকি। তারই মাঝখানে এক অপার্থীব নিরবতা আমাদের দুজনকে ছেয়ে আছে!

সন্ধ্যা নেমে এলো। সেই আলো আঁধারীতে নৌকোর লন্ঠনগুলো নদীর বুকে জোনাকির ঝিকিমিকির মত ভেসে চলেছে। হঠাতই সেই নৈশব্দ ভেঙে শ্রীমতি একটা গান ধরলো, “তুমি সন্ধ্যার মেঘমালা, তুমি আমার সাধের সাধনা,…”। মোহাচ্ছন্নের মত শুনছি আর ভাবছি, সেদিন ওদের বাড়ি থেকে বেড়িয়ে ঠিক এই গানটাই তো মনে পড়েছিল! এটাও কি টেলিপ্যাথি? হবে হয়তো!

Sahityika Admin

3 comments

  • সূচীপত্র April 2024 (সাহিত্যিকা ৩৪ সংখ্যা) – সাহিত্যিকা says:

    […] ১৯৭৭ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ভ্যালেন্টাইন ডে প্রদীপ কৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়, ১৯৭৭ […]