সাহিত্যিকা

টেনিসের সেকাল ও একাল

টেনিসের সেকাল ও একাল
হিমাংশু নাথ, ১৯৭৭ ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং

টেনিস খেলাটা ফুটবল বা ক্রিকেট গোত্রীয় নয়, কোনোদিন ছিলোও না, কিন্তু বিশেষ কৌলীন্য ছিলো, আর সবসময়েই ক্রীড়া প্রেমিকদের কাছে উৎসাহ জাগিয়ে রেখেছে।

টেনিস ব্যাক্তিগত নৈপুণ্যের, ব্যাক্তিগত সক্ষমতা ও কৃতিত্বের খেলা, কিন্তু জনপ্রিয়তার নিরিখে বিশেষ উচ্চমানের। এটি কোন দল ভিত্তিক খেলা নয়, ক্লাব বা বিশেষ গোষ্ঠীর খেলাও নয়। সুতরাং সাধারণ লোকেদের যখন কোন একজন খেলোয়ারকে পছন্দ হয়, সেখানে “আমার দেশের প্লেয়ার” এই অনুভূতিটা আসে না। বিশ্বের সেরা প্লেয়াররা যখন কোর্টে নামেন, তখন “দেশের হয়ে খেলছি, দেশের সন্মান রাখতেই হবে”, এই মানসিকতা নিয়েও ওনারা কোর্টে নামেন না। নিজের ব্যাক্তিগত স্কোরিংটাই তখন ওঁদের কাছে মূখ্য। তবে ডেভিস কাপ (পুরুষ) বা ফেড কাপ (মহিলা) দলবদ্ধ খেলা, দেশের নাম নিয়ে খেলা হয়, তবুও এখানেও খুব বেশি দেশাত্মবোধক অনুভূতি নজরে আসে না।

ভারত ডেভিস কাপে অংশগ্রহণ করে, এবং ফলাফল যথেষ্ট কৃতিত্বপূর্ণ। তিনবার রানার্স আপ। ১৯৭৪ সালে কাপ জেতার সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া হয়। কারন ফাইনালে অপর দিকে দঃ আফ্রিকার সঙ্গে রাজনৈতিক কারণে ভারত খেলতে অস্বীকার করার ফলে খেলা বাতিল হয়। তখন অমৃতরাজ ভাইদের দীপ্তি ছড়াচ্ছে বিশ্বময়, সঙ্গে ছোটো (রমেশ) কৃষ্ণণ। কিন্তু ভারতের জেতা বা ভালো পারফরম্যান্সের জন্য কোথাও বিজয় মিছিল দূরে থাক, মামুলি পটকা ফাটানোও শোনা যায় না।

যশস্বী খেলোয়াড়দের কথা লিখতে গেলে একটুও না থেমে ডন বাজ্ (আমেরিকা) এবং ফ্রেড পেরি (বৃটেন) থেকে শুরু করতে হয়। কিন্তু সেটা অনেকটাই অরণ্যদেবের মজবুড়োর মতোই বাচ্চাদের পুরোনো দিনের গল্প শোনানোর মতো হয়ে যাবে। বরং একটু জাম্পকাট করে ১৯৬০ টপকে যাই।

তখন টেনিস জগৎ দুভাগে বিভক্ত। এমেচার ও প্রফেশনাল। পুরো শাশুড়ি-বৌমা সম্পর্ক। এইসময় (মোটামুটি ১৯৬৫) আমেরিকান রঙ্গমঞ্চে জ্যাক ক্র্যামার নামে একজন আবির্ভুত হন। ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়ার ক্যারি প্যাকার যে কাজটি তার নিজস্ব টিভি চ্যানেলের (চ্যানেল নাইন) মাধ্যমে করেন, সেই রকম পরিবর্তন নিয়ে আসেন এই ক্র্যামার সাহেব। প্যাকার সাহেব ধনকুবের ছিলেন, গোটা অস্ট্রেলিয়ায় দাপটে মিডিয়া ব্যারন শাসন করতেন। ক্রিকেট না খেললেও অর্থ ও প্রতিপত্তি দিয়ে ক্রিকেটের খোলনলচে বদলে দেন। এই ক্র্যামার সাহেবের অর্থের দাপট ছিলো না, কিন্তু অতি উঁচুমানের টেনিস খেলোয়াড় ছিলেন এবং জনসংযোগ – বিশেষতঃ প্লেয়ারদের সঙ্গে। বাকি রইলো স্পন্সর যোগাড়। তখন টেনিসের তারকারা দুটি প্রধান দলে বিভক্ত, এমেচার ও প্রফেশনাল। যারা প্রফেশনাল, তাঁরা অলিম্পিকে খেলতে পারবেন না। তখন জ্যাক ক্র্যামার ATP (Association of Tennis Professionals) গঠন করলেন যা এখনও পর্যন্ত টেনিসের প্রধান শক্তিশালী সংঘটন। ১৯৬৮ সাল থেকে এমেচার-প্রফেশনাল সবাই ATP র ছাতার তলায় এসে যায় ও টেনিসের গতিপ্রকৃতিও আমূল পাল্টে যায়।

ATP গঠনের পরেই টেনিস জগতের পরিবর্তন শুরু হয়ে যায়। প্রথমেই নজরে আসে ইউরোপের উত্থান। ATP পূর্ববর্তী টেনিস প্রধানতঃ দুই ভরকেন্দ্র ছিলো আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যেই সীমিত, যদিও তারকাসমৃদ্ধ অস্ট্রেলিয়া দক্ষতা ও গ্ল্যামারে অনেকটাই এগিয়ে ছিলো। তখনের সারা জাগানো অধিকাংশই অস্ট্রেলিয়ার – নিইল ফ্রেজার, ফ্রেড স্টোল, জন নিউকোম্ব, কেন রোজওয়াল….

কিন্তু এদের মধ্যে সূর্যের দীপ্তি নিয়ে উজ্জ্বলতম ছিলেন রডনি জর্জ লেভার, আমরা সংক্ষেপে জানি রড লেভার। ১৯৫৯ সালে উনিশ বছর বয়সে প্রথম বড় জয়, সেইবছরের জুনিওর ইউএস আর অস্ট্রেলিয়ান টাইটেল। তারপর থেকে ১৯৬১ ৬২ দু’বছর এমেচার সার্কেলের বিশ্ব র‍্যাঙ্কিং এ এক নম্বরে। এরপরে ১৯৬৪/৬৫ থেকে ১৯৬৯/ ৭০ পর্যন্ত বিশ্ব র‍্যাঙ্কিং এ টানা এক নম্বরে। খেলোয়াড় জীবনে ১৯৮টি সিঙ্গলস টাইটেল জিতেছেন, ১১টি গ্র্যান্ড স্লাম, আর ৮টি প্র-মেজর টাইটেল। অস্ট্রেলিয়াকে পাঁচবার ডেভিস কাপ দিয়েছেন। একমাত্র তারকা যিনি দু’বার গোল্ডেন স্ল্যামের অধিকারী, একবার এমেচার ১৯৬২ সালে আর পরে প্রফেশনাল হিসেবে ১৯৬৯ সালে। তারই মাঝে ১৯৬৭ সালের প্র-স্লামের অধিকারী, মানে বিশ্বের তিনটি প্র-টুর্নামেন্টই জিতেছিলেন। আরও আছে, গ্রাস, হার্ড, ক্লে, উড – সবরকমের কোর্টেই ইনি টুর্নামেন্ট জিতেছেন। টেনিস সার্কেলে এনার নাম ‘লেজেন্ড’, টেনিসের সঙ্গে সম্পর্কিত সবাই শ্রদ্ধার সঙ্গে এই নামে ডাকেন। একবার টিভি ইন্টারভিউতে দেখেছিলাম ফেডেরার উইমবল্ডন সেন্টার কোর্টে যাবার সময় লেভারের মুখোমুখি হয়ে যান। লেভারকে শুধু ‘স্যার’ বলে সম্বোধনই করছিলেন না, শরীরের ভাষায় মনে হচ্ছিল ফেডেরার স্কুলের ছাত্র, সামনে হেডমাস্টার! ২০১৭ সাল থেকে চালু হয় লেভার কাপ ইনডোর হার্ড কোর্ট ট্রফি, ইউরোপ বনাম রেস্ট অফ দ্যা ওয়ার্ল্ড। এরকম সন্মান টেনিস জগতে আর কেউ পায়নি। সাধারণত ইউএস ওপেনের দু’সপ্তাহ পরে শুরু হয়, প্রতি বছর বিভিন্ন দেশ এর দায়িত্ব নেয়। এছাড়াও ২০০০ সালে বছরের প্রথম ATP টুর্নামেন্ট অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ভেন্যু মেলবোর্ন কোর্টের নাম সেন্টার কোর্টের পরিবর্তন করে নতুন নামকরণ হয়েছে, Rod Laver Arena এককথায় এত সন্মান টেনিস জগতে আর কেউ পায়নি।

ATP পরবর্তীকালে ইউরোপের উত্থান সুরু হয়। সুইডেন, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, জার্মানী, চেকোস্লভাকিয়া, রাশিয়া সব দেশেই টেনিস ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হতে থাকে। তার অন্যতম কারণ বিশাল অর্থের হাতছানি, আর বিশ্বব্যাপী খ্যাতি। বিয়র্ন বর্গ, ইভান লেন্ডল, বুম বুম বেকার, স্টিফেন এডবার্গ, ইলি নাসতাসে, ইয়ানিক নোয়া, ম্যাটস উইল্যান্ডার, আন্দ্রেই জেরারড এবং আরও অনেকেই একে একে উঠে আসতে থাকেন। অন্যদিকে আমেরিকার সাপ্লাই লাইন চালু থাকলো আরথার এ্যাশ, জন ম্যাকেনরো, আন্দ্রেই আগাসি, পেট সাম্প্রাস আর মহিলাদের চোখের তারা, দিল-কি-ধরকন বিশেষ কায়দায় স্কুলবয়দের মতো ছাঁটা চুল – জিমি কোনারস। আর্জেন্টিনা থেকেও কয়েকজন এলেন গিলমোর ভিলাস, ভিটাস গেরুলাইটিস। আমাদের বিজয় অমৃতরাজ। এরপর যে সকল দেশ বিশ্বের টেনিস সার্কিটে কোনদিন ছিলোই না, সেখান থেকেও হঠাৎ হঠাৎ করে ঝলক দেখা দিলো। ক্রোয়েসিয়ার গোরান ইভানিসেভিক, মেক্সিকোর রাউল র‍্যামিরেজ, ইকুয়েডরের আন্দ্রেজ গোমাজ, স্পেনের কার্লোস ময়া, এমিলো স্যাঞ্চেজ, ম্যানুয়েল ওরান্টেস এবং আরও অনেকেই। এই দেশিগুলিতে আমাদের ভাষায় টেনিসের পর্যাপ্ত ইনফ্রাস্ট্রাকচার থাকলে আমরা হয়তো আরও অনেক তারকার দর্শন পেতাম। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার গৌরব এক আধটা ঝলকানি (প্যাট ক্যাশ) দিয়ে ঝিমিয়ে গেলো।

অন্যদিকে পুরুষ খেলোয়াড়দের দাপটের মধ্যেও মহিলা খেলোয়াড়দের দ্যুতি উজ্জল হয়ে উঠলো। বিলি জিন কিং, মার্গারেট কোর্ট, ইভন গুলাগাং, ট্রেসি অস্টিন….. । এখানেও সাপ্লাই লাইন আমেরিকা- অস্ট্রেলিয়া। পুরুষদের মধ্যে যেমন রড লেভার, মেয়েদের মধ্যে ছিলেন মার্গারেট কোর্ট এবং ইনিও অস্ট্রেলিয়ার। মার্গারেট কোর্ট এবং গোল্ডেন স্ল্যাম। মার্গারেট কোর্টে নামা মানেই সাসপেন্স যে কত স্কোরে জিতবেন! মার্গারেট কোর্টের পরে চারজন সুন্দরী কোর্টের ভিতরে-বাইরে সবার উৎসাহের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে গেলেন। আমেরিকার ক্রিস এভার্ট, জার্মানির স্টেফি গ্রাফ, রাশিয়ার মারিয়া সারাপোভা আর ল্যাটিন আমেরিকার ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর দেশের গ্যাব্রিয়েলা সাবাতিনি, সৌন্দর্যের ডালি নিয়ে সামান্য মাজা রঙের (সাহেবরা বলেন কপার কালার স্কিন)। যারা টেনিসে উৎসাহী ছিলেন, বা খবর রাখতেন, এই চার সুন্দরীদের অন্ততঃ একজনও যদি তাঁদের হৃদয়ে দোলা না দিয়ে থাকেন, তবে ওনাদের হৃদয়ে নির্ঘাত পেসমেকার বসানো।
এখানে উল্লেখযোগ্য যে ৭০-এর দশকে কোনারস-এভার্টের রোমান্স, বিশেষতঃ পাশাপাশি উইমবল্ডন ট্রফি নিয়ে সেই ছবি আর পোস্টার দেশবিদেশের রাস্তার ফুটপাথে হট কচুরিজের মতো বিক্রি হয়েছে।

পরবর্তী সময়ে যারা এসেছেন, সবার আগে নাম করতে হয় সেরেনা উইলিয়ামসের। পুরুষ বা মহিলা, একমাত্র তিনিই ৬ বার চার গ্র্যান্ড স্লামের মধ্যে তিনটে জিতেছেন। এই রেকর্ড কবে কে ভাঙ্গবে বলা মুস্কিল। ২৩ টি গ্রান্ড স্লাম, Open Era যুগের বিশ্বরেকর্ড, হার্ড কোর্টে ১৩ টি সিঙ্গলস টাইটেল যা Open Era যুগের বিশ্বরেকর্ড, ৭৩ টি সিঙ্গলস টাইটেল, টানা ৩১৯ সপ্তাহ Women’s Tennis Association (WTA) এর র‍্যাঙ্কিং এ ১ নম্বরে, আর পুরুষ বা মহিলা, একমাত্র যিনি সিঙ্গলস ও ডাবলসে Career Golden Slam জিতেছেন।

এই দুই উইলিয়ামস বোনের টেনিস দাপটেই অনেকেই ম্লান হয়ে গিয়েছিলেন। এই দুই মেয়ের খুবই সংগ্রামী জীবন, শুধুমাত্র ট্রফি আর বিরাট প্রাইজ মানিই জেতেন নি, আমেরিকার কমবয়সীদের মধ্যে ভোটে সবচেয়ে জনপ্রিয় হয়ে জিতেছেন।

তবে অন্যরাও মাঝে মাঝেই শিরোনামে এসেছেন। ভার্জিনিয়া ওয়েড, হানা মান্ডালিকোভা, নাভ্রাতিলোভা, আরান্তা স্যাঞ্চেজ ভিসারিও, হেলেনা সুকোভা, জনা নোভতনা, মার্টিনা হিঞ্জেস, মনিকা সেলেস। এমনকি দক্ষিণ আফ্রিকার ইলানা ক্লোস কিছুদিন দাপটের সঙ্গে খেলেছেন।

উইলিয়ামস দুই বোন আমেরিকার ৫০ তারা খচিত পতাকার মান রাখলেও পুরুষ টেনিসে একচ্ছত্র আধিপত্য কিন্তু তিন ইউরোপীয় দৈত্যের কব্জায়, প্রায় একই সময়ে। এই তিন গালিভারের পাশে বাকি সবাই লিলিপুট। এরা তিনজনে সব ভাগাভাগি করেই থেমে থাকেন নি, মানে ২০ বছরে ৮০টি গ্র্যান্ড স্লাম (২০*৪) ফাইনালে মাত্র দুবার ঘটেছে যখন এই তিন মূর্তির অন্ততঃ একজন ফাইনালে ছিলেন না! অবিশ্বাস্য !

সার্বিয়ার নোভাক জিকোভিচ জিতেছেন ২৪ টি গ্রান্ড স্লাম, তার মধ্যে রেকর্ড ১০টি অস্ট্রেলিয়ান ওপেন। ১৩ বছরে বিভিন্ন সময়ে ৪১৫ সপ্তাহ ATP র‍্যঙ্কিং এ ১ নম্বরের বিশ্বরেকর্ড করেছেন। টেনিস সার্কিটে জিতেছেন ৯৮টি ATP সিঙ্গলস, তার মধ্যে ২৪টি মেজর, আর ৪০টি মাস্টার্স।

স্পেনের রাফেল নাদাল জিতেছেন ২২টি গ্রান্ড স্লাম, তার মধ্যে একটি গোল্ডেন স্লাম আর রেকর্ড ১৪টি ফ্রেঞ্চ ওপেন। বিভিন্ন সময়ে ২০৯ সপ্তাহ ATP র‍্যঙ্কিং এ ১ নম্বরে থেকেছেন। টেনিস সার্কিটে জিতেছেন ৯২টি ATP সিঙ্গলস, তার মধ্যে ৩৬টি মাস্টার্স। তাঁকে বলা হয় ক্লে কোর্টের মাস্টার, জিতেছেন ৬৩টি টাইটেল।

সুইস রজার ফেডেরার জিতেছেন ২০টি গ্রান্ড স্লাম, তার মধ্যে রেকর্ড ৮টি উইমবলডন ওপেন। টানা ৩১০ সপ্তাহ ATP র‍্যঙ্কিং এ ১ নম্বরে থেকেছেন। টেনিস সার্কিটে জিতেছেন ১০৩টি ATP সিঙ্গলস।

উপরের তিনজনের তিনরকম ঘরাণা। কেউ স্পেন থেকে প্যারিসের রোলা গ্যাঁরোতেই ক্লে কোর্টেই ঘরবাড়ি, কারো সার্বিয়ার মফস্বল থেকে মেলবোর্ন পার্কেই হার্ড কোর্টে এপার্টমেন্ট কিনে পাকাপাকি জমিদারি। আর তৃতীয় জন? তার সম্বন্ধে আর এক আইকন জিমি কোনর্স তার রিটায়রমেন্টের টুইটারে কি লিখেছিলেন – সেটাই যথেষ্ট পরিচয়…
In the modern game of tennis, you are either a Clay Court specialist, or a Grass Court specialist, or a Hard-Court Specialist or you are Roger Federer.

এছাড়া সমসাময়িক খেলোয়াড়দের কি মনোভাব সেটা কথায় প্রকাশ নেই। শুধু একটা ছবিতেই সব প্রকাশ.. শেষ খেলায় ফেডেরার ও নাডাল – চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী, দুজনেই চোখের জলে পাশাপাশি …. এরকম না আগে হয়েছে না হবে? লোক দেখানো টুইটার ফেবুতে শ্রদ্ধা নয়, দুজন অতি সমর্থ জগতখ্যাত স্পোর্টসম্যানের কান্না!

“You are never really playing an opponent. You are playing yourself, your own highest standards, and when you reach your limits, that is real joy.” —Arthur Ashe

টেনিস যে শুধুই খেলার নিয়মে বাঁধা ছিলো তা নয়। বিশেষ কয়েকজন এটিকে বিচিত্র রকমের বানিজ্যিক বিনোদনেও ব্যাবহার করেছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য Battle of the Sexes, ১৯৭৩ সালে ৫৫ বছরের ববি রিগস ২৯ বছরের বিলি জিন কিং কে সিঙ্গলস ম্যাচের জন্য চ্যালেঞ্জ করে বসলেন। আহ্বান বা অনুরোধ নয়, চ্যালেঞ্জ করে সরাসরি কোর্টে নামতে বললেন। বিলি জিন কিং রাজি হলেন না, মার্গারেট কোর্ট অবশেষে রাজি হলেন। তখন উনার বয়স ২৯, এক বছরের সন্তানের মা। তখনও তিনি ATP শীর্ষতালিকায় এক নম্বরে। এবং শীগ্রই কোর্টে ফিরে আসতে চাইছেন। নতুন কিছু উত্তেজনার আশায় CBS Sports টিভি কোম্পানি এগিয়ে এলো, স্পনসরেরাও হাত বাড়িয়ে দিলো। খেলার দিনও ধার্য্য করা হয়েছিলো এক বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য দিনে, ১৩ই মে, আমেরিকায় মাদার্স ডে। সেদিন কোর্টে পাঁচ হাজার আর টিভিতে আনুমানিক ৫০ লক্ষ আমেরিকান আর অন্যসব দেশ মিলিয়ে ৯০ লক্ষ লোক এই ম্যাচ দেখেছিলেন। তবে কয়েকজন স্পোর্টস বিশেষজ্ঞ বলেছিলেন, মেয়েরা যে টেনিসে অনেকটাই এগিয়ে গেছে, সেটা “প্রমোট” করাও ছিলো এই ম্যাচের আরেকটি উদ্দ্যেশ্য।

ববি রিগসের টেনিস ক্যরিয়ার কিন্তু বেশ ভালো। ৪০ এর দশকে তিন তিনটে উইমবলডন খেতাব ছাড়া আরও তিনটে মেজর খেতাব জিতেছিলেন। ১৯৩৯ এ এমেচার আর ১৯৪৬ ও ১৯৪৭ এ প্রফেশনাল র‍্যাঙ্কিং এ শীর্ষস্থানে ছিলেন। কিন্তু এখন লাইমলাইটে আসতে চাইছেন। আর এই Battle of the Sexes এর পরেই তিনি Sports Illustrated আর Time এই দুটি ম্যাগাজিনেরই কভার পেজে স্থান পেয়ে গেলেন। শুধু তাই নয়, ২০১৭ সালে এনার কাহিনী নিয়ে এই নামে হলিউড সিনেমাও হয়ে গেলো।

এর মাত্র চার মাস পরেই ১৯৭৩ সালেই ২০শে সেপ্টেম্বর বিলি জিন কিং ববি রিগসের বিরুদ্ধে খেলতে রাজি হয়ে গেলেন, এবার বিজয়ীর প্রাইজমানি এক লাখ ডলার। জিন কিং তখন ATP র‍্যাঙ্কিং এ এক নম্বরে। আমাদের আইপিএলের মতন সেদিনেও ছিলো চূড়ান্ত “গ্যালারী শো”। জিন কিং কোর্টে এলেন ক্লিয়োপেট্রার বেশে, চারজন মাসলম্যান লোকের কাঁধে পাল্কিতে চড়ে, পিছনে সুদৃশ্য রিক্সায় ববি রিগস। রিগসের গায়ে পঞ্চাশ হাজার ডলারের সুগার ড্যাডি জ্যাকেট। সুতরাং টেনিসেও নন-টেনিস বিনোদন ঢুকে গেলো। এরপর আরও ডজনখানেক Battle of the Sexes হয়েছিলো, কিন্তু দর্শকের আগ্রহটাই কমে গেলো।

১৯৯২ সালে আবার সাড়া জাগানো একটি Battle of the Sexes, এবার জিমি কোনার্স, তখন বয়স ৪০, বনাম মার্টিনা নাভ্রাতিলোভা, বয়স তখন ৩৮। খেলার ফলাফল নিয়ে বিশেষ কিছুই বলার নেই, কারণ এগুলো টেনিস সার্কিট ধর্তব্যের মধ্যাই আনে না। শুধুই কয়েক ঘন্টার বিনোদন। এখানে মহিলা প্রতিযোগীদের টাইটেল দেওয়া হয় “The Battle of Champions” পুরোটাই প্রাইজমানি আর উদ্যোক্তাদের বানিজ্য। নইলে রিটায়ারমেন্টের দশ বছর পরে জিমি কোনার্স আর মার্টিনা নাভ্রাতিলোভা এইরকম খেলায় রাজি হবেন?

 

Sahityika Admin

1 comment

  • সূচীপত্র April 2024 (সাহিত্যিকা ৩৪ সংখ্যা) – সাহিত্যিকা says:

    […] ১৯৭৭ ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং টেনিসের সেকাল ও একাল হিমাংশু নাথ, ১৯৭৭ ইলেকট্রিক্যাল […]