সাহিত্যিকা

আমার কয়েকটি প্রবন্ধ

আমার কয়েকটি প্রবন্ধ
ডঃ আশীষ ভট্টাচার্য্য, ১৯৭৭ মেটালার্জিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং
• রাঢ় বাংলার নদনদী 
• Restoration of Bhatinda Fort
• বাঙালির ব্যবসা: ছাপাখানা
রাঢ় বাংলার নদ-নদী
রাঢ় হলো ভারতের পূর্বাঞ্চলের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ডের একটি ঐতিহাসিক ও ভৌগোলিক অঞ্চল। এটি পশ্চিমে ছোটোনাগপুর মালভূমি ও পূর্বে গাঙ্গেয় বদ্বীপ পর্যন্ত প্রসারিত। এই রাঢ় অঞ্চলের সীমানা সম্পর্কে প্রাচীন গ্রন্থগুলিতে নানা পরস্পরবিরোধী তথ্য পাওয়া গেলেও, বোঝা যায় যে মূলত বঙ্গভূমি অঞ্চলেই অবস্থিত ছিল।
ভাগীরথী নদীর পশ্চিম তীরে অবস্থিত অঞ্চলকে রাঢ় বলা হয়। পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলা, বর্ধমান জেলার মধ্যভাগ,  বাঁকুড়া জেলার পূর্ব ও দক্ষিণপূর্ব ভাগ ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার পশ্চিমভাগ রাঢ়ের অন্তর্গত। এছাড়া প্রেসিডেন্সি বিভাগের মুর্শিদাবাদ জেলার কান্দি মহকুমার অংশবিশেষ ও হুগলি জেলার সামান্য অংশ রাঢ়ের অন্তর্গত। এর সীমানা পশ্চিমে ছোটনাগপুর মালভূমির প্রান্তভাগ থেকে পূর্বে গাঙ্গেয় বদ্বীপ অঞ্চলের পশ্চিম সীমানা পর্যন্ত বিস্তৃত। এই অঞ্চল ঈষৎ ঢেউ খেলানো ও এর ঢাল পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে বিস্তৃত।
রাঢ় বাংলার নদ-নদীর বিষয়ে বলতে গেলে ভাগীরথীকে দিয়েই শুরু করা ভালো। ভাগীরথী ওর নিম্ন অববাহিকায় নদিয়া শহরের নিম্নে জলঙ্গী নদীর সঙ্গে মিলিত হওয়ার পর ভাগীরথীর নাম হয় হুগলি নদী। ভাগীরথীতে একসময় বড় বড় নৌকা সারা বছর চলাচল করতো। কিন্তু পলিমাটি পড়ে নদীর নাব্যতা কমে যাওয়ার কারণে শীতের পরে কাটোয়া শহরের পরেই নৌকা চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়। আবার দামোদর শুধু বর্ষাকালেই নৌকা চলাচলে উপযোগী হয়। ভাগীরথী বা হুগলি বর্ধমানের পূর্ব সীমানায় বিস্তৃত। শুধুমাত্র সামান্য অংশে নদী পার্শ্ববর্তী জেলা নদিয়ায় কিছু অংশে ঢুকেছে। এক সময় বর্ধমান থেকে কলকাতা পর্যন্ত হুগলি নদীতে ভেসে মালবাহী বড় নৌকা, স্টিমার এমন কি BERGE মহানগরীতে এসে ভিড়তো। ভাগীরথী বা হুগলি, পলাশির যুদ্ধ যেখানে হয়েছিল তার সামান্য দক্ষিণে বর্ধমানের মাটি স্পর্শ করে পুনরায় চলতে শুরু করেছে দক্ষিণ মুখে। ভাগীরথী বা হুগলির তীরে উল্লেখযোগ্য শহর হল কালনা, কাটোয়া এবং দাঁইহাট। একসময় এই তিন শহর থেকে নানা সম্ভার যেমন নুন, পাট, কাপড় বিভিন্ন যায়গায় পাঠানো হতো। পরে রেলপথ চালু হতেই জলপথে বাণিজ্যের স্থান দখল করে নেয়।
রাঢ় বাংলার প্রধান জলসম্পদ অজয় নদ। সাঁওতাল পরগনার পাহাড়ে এর সৃষ্টি। বর্ধমান জেলায় এর প্রথম পদক্ষেপ আসানসোল থেকে প্রায় দশ মাইল দূরের উত্তর পশ্চিমে অবস্থিত গৌরাঙ্গডি রেল ষ্টেশনের কাছে। এরপরে অজয় পূর্বদিকে প্রবাহিত হয়ে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দূরে বর্ধমান সীমানায় পৌঁছে কাটোয়া সাবডিভিশনে কুমারপুর গ্রামে এসে পৌঁছায়। এরপরে আরো ১৫ মাইল দূরে কাটোয়ায় গিয়ে ভাগীরথীর সাথে মিলিত হয়। এরপর পশ্চিম দিকে প্রায় সরল গতিতে বেশ কিছু পথ যাওয়ার পর নদ খানিকটা আঁকা বাঁকা গতিতে অগ্ৰসর হতে থাকে। রেলের লুপ লাইন এর পাশাপাশি চলতে থাকে।
পূর্ব ভারতে লুপ লাইন ব্যাবহার করে ভেদিয়া এবং বৈদ্যনাথপুরের কাছে অন্ডাল এবং সিউড়ির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। এখানে দুর্ভেদ্য জঙ্গলের মধ্য দিয়ে লুপ লাইন অগ্ৰসর হয়েছে। অতীতে বর্ধমানের রাজা চিত্রসেন এই ঘন জঙ্গলের ভিতর একটি দুর্গ রচনা করেন। অজয় নদের অর্থ অপরাজিত। ইংরেজ গবেষকদের মতে অজয় সংস্কৃত শব্দ আজাবতীর রূপান্তর। আবার বলা হয় দামোদর শব্দটি আসলে মুন্ডাদের ভাষা – দা-মুন্ডা – দা-মুদা থেকে দামোদর নাম হয়েছে। দা-মুন্ডা কথাটির অর্থ মুন্ডাদের জল।
দামোদর রাঢ় বাংলার ২য় বৃহত্তম নদ। হিন্দুদের কাছে গঙ্গা যেমন পবিত্র – সাঁওতালদের কাছে তেমন দামোদর। ওদের বিশ্বাস মৃত্যুর পর চিতাভস্ম দামোদর নদে বিসর্জন দিলে অক্ষয় স্বর্গপ্রাপ্তি হয়। গঙ্গা সম্পর্কে হিন্দুদের একই বিশ্বাস। হিন্দুদের চিতাভস্ম গঙ্গায় বিসর্জন প্রসঙ্গে নেহরুজীর একটি মন্তব্য প্রণিধানযোগ্য — “How many of our forebears has she thus carried on to the sea and how many of us will take our last Journey in the embrace of her water”. 
পালামৌ জেলার টোরির কাছে সমতল থেকে ৩,৫০০ ফুট উঁচুতে খামারপৎ পাহাড়ের শৃঙ্গে যে বৃষ্টি হয় সেই জলধারা থেকেই দামোদরের উৎপত্তি। ছোটনাগপুর পার্বত্য উপত্যকায় দামোদরের রূপ ঝর্নার মতো। যে মূল ঝরনাধারা থেকে দামোদরের উৎপত্তি তার নাম সোনাসাথী‌।
প্রথম নদের রূপ ধারণ করার পর দামোদরের নাম দেউনদ। এখানেই গিরিগাত্র বেয়ে কিছু উপনদী এসে তার সঙ্গে মিশেছে। মিশেছে জলপ্রপাতও – যেমন বরকাগাঁও-এর কাছে ১১০ ফুট উঁচু জলপ্রপাত। হাজারিবাগ উপত্যকা থেকে অনেক উপনদীর জল দামোদরে নেমে আসে। তারপর দিশেরগড়ের কাছে দামোদরের কাছে প্রধান উপনদী বরাকর এসে মিশেছে। এরপরই দামোদর পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করে পূর্বমুখী প্রবাহিত হয়ে বর্ধমান শহরের নিকট আসে। এখানেই বাঁকুড়া ও বর্ধমানের বিভাজন সম্পূর্ণ হয়। আবার দক্ষিণে মুন্ডেশ্বরীর পথে দামোদর রূপনারায়ণের সঙ্গে মিলিত হয়েছে।
গবেষক বিনয় ঘোষের অভিমত যে, নদীপথ ধরেই সভ্যতা ও সংস্কৃতির ধারা প্রবাহিত হয়। তাই এ কথা বলার প্রয়োজন নেই যে বাংলার সংস্কৃতির সংযোগ ছোটনাগপুরের নিষাদ  সংস্কৃতির সঙ্গে কতটা গভীর।
প্রকৃত পক্ষে পূর্ব পশ্চিমবঙ্গের প্রধান নদ-নদী ভাগীরথী, অজয়, ময়ূরাক্ষী, দামোদর এবং সুবর্ণরেখা। তবে সুবর্ণরেখাকে বিহার ও উড়িষ্যার নদী বলাই সঠিক। কারণ এর গতিপথের বেশিরভাগ অংশই বিহার অথবা উড়িষ্যায় প্রবাহিত। পালামৌ জেলার টোরির কাছে সুবর্ণরেখার উৎপত্তি। ঝাড়গ্ৰাম থেকে গোপীবল্লভপুর নয়াগ্ৰাম পৌঁছতে হলে সুবর্ণরেখা পার হয়ে যেতে  হয়। এই অঞ্চলে সুবর্ণরেখা বেশ প্রশস্ত। সুবর্ণরেখার একটি বৈশিষ্ট্য – এর কোন উপনদী নেই। পালামৌ জেলার টোরি থেকে উৎপন্ন হয়ে সুবর্ণরেখা বিহার ও উড়িষ্যা পেরিয়ে সমুদ্রে মিশেছে।
তথ্যসূত্র
১. বাঙালির ইতিহাস — ড: নীহার রঞ্জন রায় 
২. পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি ১ম খন্ড  
৩. সাঁওতাল গনসংগ্ৰামের ইতিহাস – ধীরেন্দ্রনাথ বাস্কে
সংযোজন – সোহম দাশগুপ্ত, ১৯৭৭ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং
সাঁওতালি ভাষার ‘রাঢ়ো’ (পাথুরে জমি) শব্দটি থেকে রাঢ় শব্দটি গৃহীত হয়েছে। অন্যমতে, গ্রীকদের দেওয়া গঙ্গারিডাই পরবর্তীকালে গঙ্গাহৃদি, গঙারাঢ় থেকেই রাঢ়রাজ্য নামটির উৎপত্তি। উত্তর ও দক্ষিণের বিচারে এই জনপদ উত্তর রাঢ় এবং দক্ষিণ রাঢ় নামে অভিহিত হয়ে থাকে। অজয় নদ এই রাঢ় অঞ্চলের সীমানা ছিল। বর্তমান পশ্চিম বঙ্গের হওড়া, হুগলি ও বর্ধমান জেলার কিছু অংশ নিয়ে দক্ষিণ-রাঢ়দেশ গঠিত ছিল। দক্ষিণ রাঢ়ের উত্তরদিকের পুরো অংশটুকু উত্তর রাঢ় বলা হয়।
পশ্চিমের মালভূমি থেকে কাঁকুড়ে পলিমাটি বয়ে এনে এই অঞ্চলের নদীগুলি এই সমভূমি সৃষ্টি করেছে। এই অঞ্চলে ল্যাটেরাইট লাল মাটির প্রাধান্যই বেশি। মাটির স্তর এখানে অগভীর। মাটির জলধারণ ক্ষমতা কম। নদী অববাহিকাগুলি বাদে অন্যত্র তাই মাটি খুব একটা উর্বর নয়।  এই অঞ্চলের প্রধান নদনদীগুলো হলো- ময়ূরাক্ষী, অজয়, দামোদর, দ্বারকেশ্বর, শিলাই ও কংসাবতী (কাঁসাই)। এই নদীগুলির উৎপত্তিস্থল ছোটনাগপুর মালভূমি ও এগুলির প্রতিটিই ভাগীরথী-হুগলি বা তার কোনও উপনদীতে মিলিত হয়েছে। সুবর্ণরেখা নদীর অংশবিশেষও এই অঞ্চলের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে মিশেছে। এই নদীগুলিতে বর্ষাকালে প্রায়ই দুকুল ছাপিয়ে বন্যা দেখা দেয়।
সমুদ্র থেকে দূরে অবস্থিত হওয়ায় রাঢ় অঞ্চলের জলবায়ু চরমভাবাপন্ন। গ্রীষ্ম ও শীতকালের গড় তাপমাত্রা এখানে যথাক্রমে ৩৫ ডিগ্রি থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও ১২ ডিগ্রি ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে এই অঞ্চলে বছরে গড়ে ১৪০-১৬০ সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। তবে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ উত্তর রাঢ়ের তুলনায় দক্ষিণ রাঢ়ে বেশি। এপ্রিল-মে মাস নাগাদ কালবৈশাখী ও অক্টোবরে আশ্বিনের ঝড়ও এই অঞ্চলের জলবায়ুর অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
এই অঞ্চলের প্রাকৃতিক উদ্ভিদের মধ্যে শাল, মহুয়া, শিমূল, কুল, বাবলা, বাঁশ ও বিভিন্ন প্রজাতির ঘাস উল্লেখযোগ্য। এক সময় এই অঞ্চলে গভীর বন ছিল। বর্তমানে চাষাবাদের কারণে গাছপালা বিহীন প্রান্তরে পরিণত হয়েছে।
তথ্যসূত্র :
ভারতের ইতিহাস । অতুলচন্দ্র রায়, প্রণবকুমার চট্টোপাধ্যায়।
http://onushilon.org/geography/bangladesh/region/rarho.htm
এই অঞ্চলের বিভিন্ন নামগুলি আসলে “রাঢ়” শব্দটির শব্দগত বিকৃতি। অনেক সময় “ঢ়” শব্দটি “ঢ” হয়েছে। খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে রচিত জৈণ ধর্মগ্রন্থ আচারাঙ্গ সূত্র-এ “রাঢা”, “রাঢ”, “রাঢ়া”, “রাঢ়”, “লাঢা”, “লাঢ়” প্রভৃতি শব্দগুলি পাওয়া যায়। কোনো কোনো বইতে “লালা”, “রার” বা “লাড়” নামেও এই অঞ্চলের উল্লেখ আছে। ভাষাতাত্ত্বিক প্রভাত রঞ্জন সরকারের মতে, চীনারা রাঢ়কে “লাটি”, গ্রিকরা “গঙ্গারিডি” ও আর্যরা “রাট্টা” বলত। তবে অনেক গ্রিক, রোমান ও মিশরীয় বইতেই “গঙ্গারিডাই”, “গঙ্গারিডি”, “গঙ্গারিটাই” ও “গঙ্গারিডাম” সভ্যতা, রাজ্য বা জাতির উল্লেখ রাঢ়ের পাশাপাশি একইভাবে করা হয়েছে। মেগাস্থিনিস, টলেমি, স্ট্রাবো, প্লিনি দ্যা এল্টার, অ্যারিয়ান, ডিওডোরাস, সিকুলাস, কুইন্টাস কার্টিয়াস রিউফুস, প্লুটার্কের রচনায় গঙ্গারিডাই রাজ্যের নাম পাওয়া যায়।
“রাঢ়” শব্দের ব্যুৎপত্তি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে অনেকে বলেছেন, এটি অস্ট্রোএশিয়াটিক পরিবার-ভুক্ত কোনো এক স্থানীয় ভাষা থেকে এসেছে। সাঁওতালি ভাষায় প্রচলিত নিম্নোক্ত ভাষাগুলি থেকে এর উদ্ভব হওয়া সম্ভব: “লার” (সুতো), “রাড়” (সুর) ও “লাড়” (সাপ)। প্রভাতরঞ্জন সরকারের মতে, শব্দটির উৎস প্রোটো-অস্ট্রোএশিয়াটিক “রাঢ়া” বা “রাঢ়ো” শব্দদুটি, যার অর্থ “লালমাটির দেশ” বা “ল্যাটেরাইট মৃত্তিকার দেশ”।
“গঙ্গারিডাই” শব্দের উৎসটিও স্পষ্ট নয়। ঐতিহাসিক ড. অতুল সুর, প্লিনি ও টলেমির মতে এর অর্থ “গঙ্গার তীরবর্তী রাঢ় অঞ্চল”। যদিও অন্যান্য গবেষকদের মতে, এর অর্থ, “গঙ্গাহৃদি” (যে অঞ্চলের হৃদয়ে গঙ্গা প্রবাহিত), “গঙ্গারাষ্ট্র” বা “গোন্ডা-রিডাই” (গোন্ডা জাতির দেশ)। মেগাস্থিনিস এই অঞ্চলের অধিবাসীদের বলেছেন, “Gangarides’। ডিওডোরাস সিকুলাসের বর্ণনা অনুসারে, গঙ্গারিডাই “রাষ্ট্রে সবচেয়ে বড়ো আকারের ও সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় হাতি ছিল।
তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া
*******
Restoration of Bhatinda Fort, the oldest surviving heritage fort of India
Archeological Survey of India (ASI) has finally initiated the project of repairing the damaged portions and strengthening fragile sections of Bathinda Fort, considered now to be India’s oldest surviving heritage fort. Several bastions of the fort have collapsed over the last few years. With no repairs for two years due to the Covid pandemic, its condition has deteriorated further. According to ASI officials, even one of the main bastions of the fort partially fell apart in 2022.
The team working with the Akal Society of America, after conducting an extensive two year’s survey of the site had submitted a proposal of repairs to ASI. A major proposed repair work was funded by the former Punjab Government of Rs.12,500,000 (US$275,000) on 21 June 2005 at a ceremony held to mark the tercentenary celebrations of Guru Gobind Sing’s visit to the fort.
The pristine fort, also called Quila Mubarak, has withstood the vagaries of conquerors for at least 1,600 years. The sprawling 15 acres it occupies is a sharp contrast to the serpentine lanes of the crowded Bathinda bazaar that lead to it. More than 100 feet high, it stands tall and proud in the heart of Punjab. It is now listed as a Monument of National Importance by the ASI. “According to the ASI records, the fort may have been built around the 6th century AD as a defence against the invading Hunas,” says Sri Om who oversees the maintenance of the fort as the ASI’s conservator in Bathinda.
The bastion that broke down last year housed the Rani Mahal—a single room where Razia Sultana was held captive. It’s currently closed to the public, and repairs have started. The ASI team is using thin tile bricks and joining them with a mixture of lime and mortar as cement is not used in the conservation of such structures. The fragility of the structure on which repairs are currently underway is posing a huge challenge to the conservators. The walls are patched with at least seven different kinds of bricks, bearing testimony to the different periods of India’s history. Each conqueror subsequently left a mark on the structure. Since mud bricks don’t last long, they were replaced by the smaller nanak shahi bricks at some places and also burnt bricks at other places.
Some facts about the fort
• It was constructed during 90-110 AD by Raja Dab who was the ancestor of Vena Pal. It was constructed by the king to stop the invasion of Emperor of Kanishka by Huns. Qila Mubarak in latter part of the 10th Century was under the rule of Jayapala, of the Hindu Shahi dynasty.
• The first empress of Delhi, Razia Sultana, was taken into captive at this fort as a prisoner after she was dethroned.  It is also said that Prithviraj Chauhan wresting control of the fort from Muhammad Ghori add to its allure.
• It houses the Gurdwara Qila Mubarak, which was built in the early 19th century to mark the visit of Guru Gobind Singh, the last Sikh Guru, a century earlier. On Gurupurab and other sacred days, footfall even goes up to one lakh a day.
• When Babur came in India for the first time, he came here with cannons. Four of them are here in this fort that are made up of an alloy of silver, gold, copper and iron
• Fort gets about 4,000 to 5,000 visitors every day, and the number often touches 10,000 on weekends. And no tickets to be bought to see the fort, and unlike most other historical sites, it’s open to visitors till 9 pm.
The fort was built with clay bricks, that were used to make this fort date back to Kushana period when Kanishka ruled over northern India.
The fort stands on elevated ground, with 32 small and four large bastions at its four corners. There is only one entrance to the fort on the eastern face. It is a three-storey structure showing Mughal features. The massive doors are spiked. They are flanked on either side by two of the major bastions. At the top of one of these bastions is the Rani Mahal.
There’s more medieval history on the Bathinda Fort. “Bathinda was the Shahi king Jayapala’s capital. Mahmud of Ghazni captured this fort in the 11th century AD after King Jayapala was defeated and burnt himself on a pyre,” says the ASI’s Conservator.
Bhatinda fort played a crucial role during the tumultuous period. Muhammad Ghori stormed its bastions in 1191 AD. “Bathinda was then ‘Tabarhinda’. Although some historians debate that Tabarhinda being either Bathinda or Sirhind, most agree that the Tabarhinda referred to in medieval texts is Bathinda,” says Sri Om. Ghori’s move forced Prithviraj Chauhan to rush to Tabarhinda and wrest the fort back in the famous First Battle of Tarain.
More than a century later, in 1240 AD, Malik Ikhtiyar-ud-din Altunia, the Governor of Bathinda under the Delhi Sultanate, imprisoned Razia Sultan in Qila Mubarak. Her lover Yakut died. But in this fortress prison, the childhood friendship of Razia Sultana and Altunia blossomed again. The two reconciled, raised an army, and raised a rebellion against the nobility but failed.
The Bathinda Fort has a main hall, attached side rooms, and balconies. There are very few rooms, says Gurdeep Singh. “It can be said with certainty that this fort was not designed to hold a large population unlike other forts. It could have been used to temporarily give reprieve to travelling or warring armies,” he adds. Situated on top of another raised structure to the right of the gateway is the Gurdwara Qila Mubarak, built by Maharaja Karam Singh of Patiala. “Some of that portion needed repairs, so the Guru Granth Sahib was shifted to a raised platform in front of the gateway inside the fort. This raised platform was probably originally a muster and parade area,” Singh adds.
Since the raised platform space is more open, the Shiromani Gurdwara Parbandhak Committee (SGPC), which manages the gurdwara continued to have the Guru Granth Sahib on the raised platform instead of shifting it back to the original spot. “Visitors pay obeisance both at the original spot and the place where the Guru Granth Sahib has been housed,” says Singh.
There’s an interesting story behind Guru Gobind’s visit to the fort. It is said that the people of Bathinda asked the Guru to visit it. They believed that a monstrous creature destroyed the houses in the surrounding village and lived inside the fort. Guru Gobind Singh communicated with the creature, asking him what he wanted. The latter told the Guru that he had been starving for long and that if somebody fed him, he would leave the fort forever. The Guru then asked for a bull to be brought from the nearby village Nat Banger. After eating what the Guru offered, the creature left the fort and the village in peace.
“For the history buff and tourists, Bathinda Fort links ancient India to medieval India, and for the hundreds of residents of Bathinda, it’s that quiet, serene place everyone flocks to at the end of their day,” says Gurdeep Singh of ASI, caretaker of the fort.
*********
বাঙালির ব্যবসা: ছাপাখানা
বটতলার স্বর্ণযুগ থেকে কলেজ স্ট্রীটের স্বর্ণযুগ প্রায় একশো বছরের ইতিহাস। এই একশো বছরের মধ্যে কলকাতা শহর ধীরে ধীরে কাগজের শহরে পরিণত হয়। বিখ্যাত সমাজবিজ্ঞানী লুইস্ মামফোর্ড যে-কথা বলেছিলেন, প্রায় ৪০-৫০ বছর আগে কলকাতা শহরকেও তাই বলা যেতো। ইঁট-পাথর কংক্রিটের কলকাতা শহরকে কাগজের শহরই বলা উচিত ছিল। কারণ, ইঁট-পাথর কংক্রিটের দেওয়াল তখন ছাপা পোস্টার প্ল্যাকার্ড, হ্যান্ডবিল বিজ্ঞাপন ইশতেহারে আচ্ছাদিত। ছাপাখানার এও এক আশ্চর্য কীর্তি। ছাপাখানার দৌলতে মানুষের চিন্তাধারা যেমন মুক্ত হয়েছিল, তেমনি বিচিত্র কাগজের সংস্কৃতিও সৃষ্টি হয়েছিল। ঐ সময়ে আধুনিক কলকাতা কালচারকে বলা হতো কাগজের কালচার।
শহর কলকাতার দিকে চেয়ে মামফোর্ড সাহেবের মত বলতে ইচ্ছা হতো “The ledger and the prospectus, the advertisement and the yellow journal, the world of paper, paper profits, paper achievements, paper hopes and equally grimy paper tragedies…. Behold this paper city….
পান্ডুলিপির জগত থেকে ছাপাখানার জগতে প্রবেশ
পান্ডুলিপির অনুকরণ করেই ছাপাখানার সুত্রপাত। প্রথমে পান্ডুলিপির হস্তাক্ষরের মতন করে ছাপার হরফ তৈরি করা হয়। ঠিক পান্ডুলিপির আকারে ও ধরনে বইও ছাপা শুরু হয়। কে পুঁথির আকারে খোলা পাতায় ‘বাংলা বই’ ছাপা শুরু করেছিলেন সেটা জানা যায় না, তবে পুঁথির ধরনে ‘সংস্কৃত’ বই বোধহয় হয় ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ই প্রথম ছাপাতে আরাম্ভ করেন – সম্ভবতঃ অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগের পর থেকে।
বাংলাদেশে ছাপাখানা ও বই ছাপা হয় তার অনেক পরে। ১৭৭৮ সাল বাংলা ভাষা ও বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে স্মরণীয় বৎসর, কারণ ঐ সালে বাংলা ছাপার হরফের জন্ম হয় এবং হুগলি শহরের ছেনিকাটা বাংলা হরফে ছাপা আরম্ভ হয়। অবশ্য প্রথমে ছাপা হয় একটি ইংরেজি বই — হলহেডের A Grammar of the Bengali Language, এবং এই ব্যাকরণে দৃষ্টান্তস্বরূপ কৃত্তিবাসী রামায়ণ, কাশীদাসী মহাভারত ও ভারতচন্দ্রের বিদ্যাসুন্দর থেকে অংশবিশেষ উদ্ধৃত করা হয়। চার্লস উইলকিন্স এই বাংলা ছাপার হরফ তৈরি করেন এবং তার সহযোগী রূপে কাজ করেন বাঙালি পঞ্চানন কর্মকার । পঞ্চানন  নিজে যে বাংলা ছাপার হরফ তৈরি করেন তা উইলকিন্সের অক্ষরের থেকে অনেক বেশি সুন্দর হয়। ওনার হাতে তৈরি অক্ষরের গড়ন আজও প্রাসঙ্গিক। ছাপাখানায় যাঁরা কাজ করেন বা ছাপাখানা চালান, তাঁরা অনেকেই বোধহয় এই বাঙালি কর্মকারের কথা জানেন না। যাকে আমরা টাইপ ফাউন্ড্রি বলি, পঞ্চাননই প্রথম সেই ফাউন্ড্রি তৈরি করেন বাংলাদেশে।
ইংরেজরা আসার আগেই পর্তুগীজরা আমাদের দেশে এসেছিলেন। গোয়া অঞ্চলে তারা উপনিবেশ স্থাপন করেন এবং সেখানেই পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষে বা ষোড়শ শতাব্দীর গোড়ার দিকে তাঁরা ইয়োরোপ থেকে দুটি মুদ্রাযন্ত্র নিয়ে এসে স্থাপন করেন। ১৫৫৪-৫৭ সালের মধ্যে দু’ একখানি খ্রীষ্টধর্মগ্ৰন্থ তাঁরা পর্তুগীজ ভাষায় রোমান হরফে সেই ছাপাখানা থেকেই ছেপে প্রকাশ করেন। সুতরাং এই বইকেই ভারতবর্ষে ছাপা প্রথম বই বলতে হয়। ভারতবর্ষে ছাপা, কিন্তু বিদেশী ভাষায় ছাপা। ভারতীয় ভাষায় প্রথম ছাপা হয় কোচিনে, ১৫৭৭ সালে। একজন, স্পেনীয় পাদ্রি সাহেব মালয়ালম-তামিল অক্ষর তৈরি করে সেন্ট ফ্রান্সিস জেভিয়ারের ক্রিশ্চান্ ডকট্রিন বইয়ের অনুবাদ প্রকাশ করেন—নাম ‘ ক্রীস্ট্য বন্নকনম্ ‘। ‘বুদ্ধং শরণং গচ্ছামি’, বা ‘হরে কেষ্ট হরে কেষ্ট-কেষ্ট কেষ্ট হরে হরে’, করে নয় ‘ক্রীস্ট্য ক্রীস্ট্য’ নাম করে আমরা এদেশে প্রথম ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেছি এবং তাতে বই ছেপেছি।
ইংল্যান্ডেই যখন এই অবস্থা তখন আমাদের দেশে কলকাতা শহরে বাড়ি বাড়ি ঘুরে দু’চারজন বৈষ্ণবী অনুলেখিকা পান্ডুলিপি কপি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। রামমোহন থেকে বিদ্যাসাগরের যুগ পর্যন্ত এই পান্ডুলিপি অনুলিখনের সংবাদ পাই। তবে রামমোহনের যুগ থেকে ছাপা সবে শুরু হয়েছে। রামমোহন রায় যা প্রত্যক্ষ সামাজিক আন্দোলন করেছিলেন, তা হয়তো সম্ভব হতো না যদি না ছাপাখানা থাকত ও বই ছাপা হতো।
যে বিদেশী সাহেবরা আমাদের দেশে ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, তাদের দেশের শহরও অষ্টাদশ শতাব্দীতে কাগজের শহর হয়ে ওঠেনি, বলা চলে “হতে শুরু হয়েছিল”। যদিও উইলিয়াম ক্যাক্সটন ১৪৭৭ সালে ইংল্যান্ডে প্রথম বই ছেপেছিলেন তাহলেও ইংরেজি ছাপাখানা ও ছাপা টাইপ ঠিক হতে আরও প্রায় তিনশ বছর লেগেছিল। অষ্টাদশ শতাব্দীতেই আধুনিক ছাপাখানা ও ছাপার হরফের জন্ম বললে ভুল হয় না। Some of the pioneers — ক্যাসলন, বাস্কারভিল, জন বেল প্রভৃতি। ১৭৩৪ সালে ক্যাসলন, ১৭৫০ সালে বাস্কারভিল নতুন টাইপ ডিজাইন তৈরি করেন। ১৭৮৫ সালে জন বেল তাঁর নতুন অক্ষর দিয়ে শেক্সপিয়ারের গ্ৰন্থাবলীর একটি সংস্করণ ছাপেন। অষ্টাদশ শতাব্দীর পর থেকেই ইংল্যান্ডে ছাপাখানার স্বর্ণযুগ আসে এবং বড় বড় শহর ক্রমে কাগজের শহরে পরিণত হতে থাকে উনবিংশ শতাব্দী থেকে।
১৮১৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর তখনকার সমাচার দর্পণ পত্রিকার এক বিজ্ঞপ্তিতে জানা যায়:
“কলিকাতার শ্রীযুক্ত রামমোহন রায় সহমরণের বিষয়ে এক কেতাব করিয়া সর্বত্র প্রকাশ করিয়াছেন। তাহাতে অনেক লিখিয়াছেন, কিন্তু স্থূল এই লিখিয়াছেন যে, সহমরণের বিষয় যথার্থ বিচার করিলে শাস্ত্রে কিছু পাওয়া যায়না”। 
১৮১৯ সালের ৪ ডিসেম্বর আর একটি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়:
“সম্প্রতি মোং কলিকাতাতে শ্রীযুক্ত রামমোহন রায় পুনর্বার সহমরণ বিষয়ক বাঙ্গালা ভাষার এক পুস্তক রচনা করিয়াছেন, এখন তাহার ইংরেজি হইতেছে, সেও শীঘ্র সমাপ্ত হইবেক”। 
বিদ্বজ্জনদের কথায় কথায় – সহমরণ বিষয়ে বইগুলি যদি এইভাবে ছাপিয়ে প্রকাশ ও প্রচার করা সম্ভব না হত, তাহলে তিনি তার বিরুদ্ধে কোনো সামাজিক আন্দোলন করতে পারতেন না এবং সহমরণ প্রথা বন্ধ করাও ঐ সময় সম্ভব হত না। পান্ডুলিপির যুগের সামাজিক আন্দোলন তাই অন্য উপায়ে ধর্মান্দোলনের ভিতর দিয়ে করতে হয়েছে, তাও কালেভদ্রে – খুব বেশি করা সম্ভব হয়নি।
১৮২৪-২৫ সালে কলকাতা শহরে বিভিন্ন ছাপাখানায় ছাপা তে বইয়ের তালিকা সমসাময়িক পত্রিকায় দেখা যায়, তার মধ্যে অভিধান, ব্যাকরণ ও ধর্মগ্ৰন্থই প্রধান, তাও সংখ্যায় কুড়ি বাইশখানা মাত্র। ছাপাখানার মধ্যে এই নামগুলি পাওয়া যায়: “কলুটোলায় চন্দ্রিকা যন্ত্রালয়, বহুবাজারে শ্রীলেবেগুর সাহেবের ছাপাখানা, মির্জাপুরে সন্বাদ তিমির নাশক ছাপাখানা, শাঁখারীটোলা মহেন্দ্রলাল ছাপাখানা, মির্জাপুরে মুন্সী হেদাতুল্লার ছাপাখানা, আর্ পুলির ছাপাখানা”।
এরপর আরও পঁচিশ-তিরিশ মধ্যে, অর্থাৎ উনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝির মধ্যে আরও অনেক ছাপাখানা (উল্লেখযোগ্য বটতলা প্রেস) স্থাপিত হয়। বটতলা প্রেস ও বটতলা বইয়ের স্বর্ণযুগও হলো ১৮৪০–৭০ সাল। বটতলা যুগের আগে কলকাতা শহরের বইয়ের দোকানও যে বিশেষ ছিল তা মনে হয় না। তার আগের প্রায় সমস্ত ছাপা  বইয়ের বিজ্ঞপ্তিতে দেখা যায়, প্রকাশক বা গ্ৰন্থকার ক্রেতাদের কোন বাড়ি থেকে বই কিনে আনতে অনুরোধ করছেন। বোঝা যায়, বইয়ের দোকান তখনও চালু হয়নি কলকাতায়। প্রধান কারণ, পাঠক সংখ্যা এবং ছাপা বইয়ের সংখ্যাও এমন হয়নি বা বাড়েনি যে তাই দিয়ে ব্যবসায়ের জন্য দোকান খোলা যেতে পারে। মনে হয়, বটতলার যুগ থেকেই কলকাতা শহরে বইয়ের দোকান প্রথম চালু হতে থাকে — তাও চিৎপুর অঞ্চলে ও চীনাবাজারে, কলেজ স্কোয়ারে নয়।
কলকাতার কলেজ স্ট্রীট গোলদীঘি তখনও গ্ৰন্থতীর্থ হয়নি।
সংযোজন 
সোহম দাশগুপ্ত, ১৯৭৭ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং
পঞ্চানন কর্মকারের পরিবার বেশ কয়েকপুরুষ ধরে একটা অদ্ভুত পেশায় হাত পাকিয়েছিলেন। সেটা হলো, তামা, পেতল, কাঁসার বাসনের গায়ে আর ছুড়ি, তলোয়ারের মতো অস্ত্রর গায়ে মালিকের নাম খোদাই করে দেওয়া। ফলে বাংলা হরফ সম্পর্কে শুধু ধারণাই নয়, ধাতুর ওপরে ফুটিয়ে তোলার ব্যাপারেও ঐ পরিবারের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা ছিলো। ছাপাখানার শুরুতে কাঠের ওপর খোদাই করে হরফ বা ডিজাইন ফোটানো হতো। তারপরে এলো তথাকথিত ছেনিকাটা পদ্ধতি। ধাতব পাতকে সূক্ষ্ম ছেনি জাতীয় টুল দিয়ে কেটে হরফ তৈরী করা হতো। চার্লস উইলকিন্স সাহেব প্রথম সেই ছেনিকাটা হরফ থেকে ছাঁচ তুলে, সেই ছাঁচে গলানো সীসে ঢেলে টাইপ তৈরী করেন। ওনাকে এই কাজে সাহায্য করতে গিয়ে পঞ্চানন কর্মকার অসাধারণ পারদর্শীতার প্রমাণ দেন।। এই ঢালাই পদ্ধতিতে টাইপ সেট তৈরী করার কারখানাকেই টাইপ ফাউন্ড্রি বলা হয়। পরে উইলিয়াম কেরির সাথে যোগাযোগ হলে পঞ্চানন কর্মকার শ্রীরামপুর মিশন প্রেসে যোগ দেন। ওনারই অক্লান্ত পরিশ্রমে কিছুদিনের মধ্যেই শ্রীরামপুর মিশন প্রেসে এশিয়ার বৃহত্তম টাইপ ফাউন্ড্রি গড়ে ওঠে। পরবর্তী কালে ওনার জামাই মনোহর কর্মকার এই শিল্পের হাল ধরেন। দেবনাগরী আর বাংলার পাশাপাশি উনি আরবি, ফারসি, গুরুমুখি, মারাঠি, তেলুগু, বর্মি, চীনার মত অন্তত চোদ্দোটি বিভিন্ন ভাষার টাইপ সেট তৈরী করেছিলেন।
শোনা যায়, বৌবাজার এক অশ্বত্থগাছের তলা ছিল চার্নক সাহেব ও অন্যান্য বণিকদের বিশ্রাম নেওয়ার বৈঠকখানা। বৌবাজারের সেই অশ্বত্থগাছের মতন সেকালের কলকাতার আর একটি বিখ্যাত বটগাছ ছিল শোভাবাজারে। সেই বটগাছের একটা বাঁধানো চাতাল ছিল। চাতালে প্রায়শই কবি-গানের আসর জমত, নিধুবাবুর টপ্পাসুরে বটতলার পরিপার্শ্ব সরগরম হয়ে উঠতো। শুধু তাই নয়, ছাপার অক্ষরে নবযুগের বাঙালির সাহিত্য-সাধনার উদ্বোধনও হয় এই বটতলার আশেপাশের ছাপাখানায়। বাঙালি হিন্দু-মুসলমান প্রকাশক যারা এই উদযোগপর্বে প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন তাদের বংশধররা এখনো হয়তো জীবিত আছেন এবং পুরুষানুক্রমে সেই প্রকাশকের ব্যবসাই করছেন। কিন্তু কলকাতার সম্ভ্রান্ত পাঠকরা আজ তাদের কোনো খোঁজই রাখেন না। তাদের বিজ্ঞাপনও কোনো সম্ভ্রান্ত পত্রিকায় ছাপা হয় না এবং প্রকাশিত কোনো বইয়ের সমালোচনাও  কোথাও করা হয় না।
এক সময় যে-কোনো কুৎসিত সাহিত্য ও কদর্য ছাপা গ্ৰন্থকে কলেজ স্ট্রীটের *কালচারবাগীশরা ‘ বটতলার সাহিত্য ‘ বলে *বিদ্রুপ করতেন। কিন্তু কলেজ স্ট্রীট যে বটতলারই *বংশধর, আজও তার প্রমাণ পাওয়া যায়। বটতলা শুধু বিদ্রুপের পাত্র নয়, তার একটা ইতিহাস আছে এবং একটি বিশেষ কালের সাহিত্যের ইতিহাসে তার একটা ভূমিকাও আছে। প্রথমে ছাপাখানা প্রসঙ্গ – তদানীন্তন বাংলাদেশের ইতিহাসে বটতলার ছাপাখানার একটি রোমান্টিক অধ্যায় জুড়ে আছে। উনবিংশ শতাব্দীর গোড়া থেকেই – ১৮১৮–১৮২০ সালে বটতলার প্রথম ছাপাখানা করেন বিশ্বনাথ দেব। তার আগে সম্ভবতঃ কলকাতা শহরে আরও চার-পাঁচটি ছাপাখানা হয়েছিল, যেমন ‘হিন্দুস্থানী প্রেস’, ‘বাঙালি প্রেস’, ‘সংস্কৃত প্রেস’, ‘বিশ্বনাথ প্রেস’ ইত্যাদি। প্রেস গুলোর অবস্থা ছিল খুব শোচনীয়। কারণ বাংলা হরফ-নির্মাতা পঞ্চানন কর্মকারের ছেনিকাটা তখনও খুব উন্নত হয়নি। ১৭৯৮ সালের গোড়ার দিকে পঞ্চানন যে টাইপ-ফাউন্ড্রি কলকাতায় স্থাপন করেন – বটতলার ছাপাখানায় বই এই অক্ষরেই ছাপা হতো। মুদ্রণযন্ত্র ছিল তখন কঠোর, তাও নড়বড়ে, খুব মজবুত নয়। ৬০-এর দশকে চিৎপুর আহিরিটোলার অলিগলিতে প্রায় ঐ ধরনের ছাপাখানা দু’চারটে খুঁজলে পাওয়া যেতো। ছেনিকাটা ছাঁচেঢালা অক্ষর সাধারণত খুব সূক্ষ্ম, সুতরাং অল্পদিনের ব্যবহারে তা ভেঙে যেতো। তাছাড়া কাগজের কলও তখন এদেশে হয়নি। ছাপার কাগজও ছিল জীর্ণ শীর্ণ, মধ্যে মধ্যে ভাতের মাড় দিয়ে জোড়া। এ-হেন গলিতনখদন্ত কাষ্ঠযন্ত্রে, ছেনিকাটা ছাঁচেঢালা হরফে, হাতে তৈরি জীর্ণ কাগজে বটতলার বই যে এখনকার মতন ঝকঝকে ছাপা হতে পারে না, তা সহজেই অনুমেয়।
একসময় আমাদের দেশের সাধারণ লোক সাহিত্য-সম্পদের আস্বাদ কি তার বুঝতে পেরেছেন এবং ছেনিকাটা হরফে ভুল ছাপা কৃত্তিবাস-কাশীরাম-মুকুন্দরাম-ভরতচন্দ্রের কাব্য, চৈতন্যচরিতামৃত, চৈতন্যভাগবত,প্রহ্লাদচরিত, কৃষ্ণমঙ্গল, রাধিকা-মঙ্গল ইত্যাদি পাঠ করে তাঁদের মনটা সরস ও সংস্কৃত হয়েছে। ১৮২০ সালে ছাপা বাংলা বইয়ের তালিকা থেকে জানা যায় যে উনিশখানা কাব্যের মধ্যে আটখানা বৈষ্ণবগ্ৰন্থ, তিনখানা শাক্ত শৈব ও ভক্তিগ্ৰন্থ এবং চারখানা আদি রসাত্মক নিবন্ধ, যেমন আদিরস, রতিমন্জরী, রতিবিলাস রসমন্জরী। সুতরাং শুধু আদিরসাত্মক বই বটতলার প্রকাশকরা ছাপতেন ভাবলে ভুল হবে এবং প্রকাশকদের অবিচার করা হবে। বটতলার প্রকাশকরা যদি ক্রমে আদিরসের দিকে বেশি নজর দিয়ে থাকেন তার জন্য কলকাতার সেই সময়ের নব্যবাবুদের ‘বিদ্যাসুন্দর’  ও ‘খেউড়’ কালচারকেই দায়ী করতে হয় বেশি, প্রকাশকদের নয়। হটাৎ-গজিয়ে ওঠা সেই সময়ের কলকাতার নব্যবাবুদের বিকৃত রুচির খোরাক যোগাতে বাধ্য হয়েছেন প্রকাশকরা। তাঁদের আসল লক্ষ্য ছিল ছাপার অক্ষরে গ্ৰন্থাকারে বাংলা সাহিত্যকে জনসমাজে পৌঁছে দেওয়া এবং রাজদরবার ও পন্ডিতসভায় সীমাবদ্ধ কারাজীবন থেকে তাকে মুক্ত করা।

Sahityika Admin

1 comment

  • সূচীপত্র April 2024 (সাহিত্যিকা ৩৪ সংখ্যা) – সাহিত্যিকা says:

    […] ইঞ্জিনিয়ারিং Berhampore Sankar Dhar, 1977 Mechanical Engineering আমার কয়েকটি প্রবন্ধ ডঃ আশীষ ভট্টাচার্য্য, ১৯৭৭ […]