সাহিত্যিকা

The Sound of Music

The Sound of Music
হিমাংশু নাথ, ১৯৭৭ ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং

ধরে নিচ্ছি এ সিনেমা গ্রুপের সবাই অন্ততঃ একবার দেখেছে। না দেখলে খালি এটাই বলার যে YouTube এ আছে। দেখে নেওয়া উচিৎ। (না হলে স্বর্গ/ নরকের দ্বারকর্মীরা ঢুকতে দেবে না, উপরে গেলে। ত্রিশঙ্কু হয়ে থাকতে হবে।) আমাদের স্কুল জীবনের বই, মেট্রোতে এসেছিলো। তখন কিছু সৌভাগ্যবান বন্ধুদের মুখে শুনে খুব ইচ্ছে হলেও, দেখার সুযোগ হয় নি। পরে চাকরিতে ঢুকে মেট্রোতেই দেখি। এ সিনেমা বোধহয় আমার মতো বহুজনের দেখা সেরা বিদেশী সিনেমা। সব ভারতীয় ভাষাতেও remake হয়েছে – অবশ্যই বাংলা ( জয়জয়ন্তী) এবং হিন্দি (পরিচয়) তেও সুপারহিট অন্য remake এর মতোই। এই ফিল্মের এমন একটি আবেদন আছে যার কোনো ভৌগোলিক, ভাষার, বয়সের সীমানা নেই। বয়স, দেশ, ভাষা সব অতিক্রম করে যায়।

মূল কাহিনী বলছি। অস্ট্রিয়ায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পটভূমিতে Von Trapp পরিবারের গপ্পো। পরিবারের প্রধান ক্যাপ্টেন Baron Von Trapp নৌবাহিনীর উচ্চপদস্থ অফিসার এবং Nazi দের ঘোর অপছন্দ। বিপত্নীক এবং সাত সন্তানের পিতা। বাড়িতেও যুদ্ধক্ষেত্রের মতো সামরিক নিয়মকানুন। বাবার কড়া নিয়মের আড়ালে সাত (আপাত নিরীহ, কিন্তু অতি বিচ্ছু) ছেলেমেয়েদের হুল্লোড়! ক্যাপ্টেন Baron এদের সামলাতে Governess নিয়োগ করেন। কিন্তু এদের দৌরাত্ম্যে Governess দের অচিরেই গৃহত্যাগ! এই অবস্থায় স্থানীয় চার্চের থেকে এক অমনোযোগী শিক্ষানবীশ (Trainee) Nun Maria কে পাঠানো হলো Governess এর দায়িত্ব দিয়ে। মারিয়া, সহজ বাংলায় আমরা বর্ননা দেবো Tom boyish চুলের ছাঁট, সাধারণ স্কার্ট, একহাতে একটা ঝোলা ব্যাগ অন্য হাতে একটা গিটার নিয়ে Trapp পরিবারের বাড়ির গেটের সামনে বাস থেকে নামে।

এরপর নানা মজাদার ঘটনাবলী এবং অচিরেই মারিয়া পরিবারের সবার, বিশেষ করে ছোটদের প্রিয়জন হয়ে ওঠেন। এদের সঙ্গে পিকনিকে গিয়ে জমজমাট গান করেন। একটি গান বিশেষ করে, সারা পৃথিবীতে কয়েক বছর Top Selling Disc এর মধ্যে ছিলো। এরই ফাঁকে মারিয়া বড়ো মেয়ের প্রেমের সমস্যায় বিচক্ষণতার পরিচয় দেন। এবং অবশেষে Baron Von এর সঙ্গে মারিয়ার প্রেম ও বিবাহ।

সিনেমার বাঁধুনি এমন তার সঙ্গে মনকাড়া গানের মিশেল – সারা পৃথিবীর অন্যতম শুধু নয়, বোধহয় সবথেকে জনপ্রিয় সিনেমা। অবশ্যই ফিল্মের চিত্রনাট্য লেখার সময় স্থানীয় লোকাচার, সংস্কৃতি প্রাধান্য পেয়েছে। ভারতীয় সিনেমাতে নায়কের সাতটা বাচ্চা থাকলে, সাড়ে চুয়াত্তরের তুলসী চক্রবর্তীর মত ভূমিকাই উপযুক্ত হবে। এছাড়াও ছেলেমেয়েরাই বাবার বিয়ে দিচ্ছে, আমাদের ভারতীইয়দের পক্ষে অতিরিক্ত বৈপ্লবিক পদক্ষেপ হয়ে যায়! তারজন্য ‘জয়জয়ন্তী’র উত্তমকুমার স্নেহশীল মামা। ‘পরিচয়’ তে গল্পটাই উল্টো। এখানে জীতেন্দ্র ধৈর্য্যশীল গৃহ শিক্ষক, যিনি ছাত্রীর (জয়া বচ্চন) প্রেমে পড়বেন। আর এখানে সাত ভাইবোনের জায়গায় পাঁচজন।

The Sound of Music এর সাত ভাইবোন গানের সরগমের সঙ্গে মেশানো। do-re-mi-fa-so-la-ti এই notation নিয়ে বিখ্যাত গান মারিয়া যখন গিটার নিয়ে গান করছেন, মেট্রো হলের দর্শকেরা সেই তালে সুর মিলিয়ে গাইছিলেন। সিনেমায় কোনো বিদেশী গানের এরকম গণ আকর্ষণ শুনিনি।

অনেক বিদেশী ফিল্মের কৌলিন্য, উৎকর্ষতা মাপা হয় একাডেমি বা আন্তর্জাতিক পুরস্কারের তালিকা দিয়ে। যেমন একাডেমী, গোল্ডেন বিয়ার ইত্যাদি। বিখ্যাত সিনেমার কিছু বিশেষ স্মারক স্টুডিওতেও দেখা যায়। Universal Studio তে বেশকিছু চমক দেখা যায়, সারা পৃথিবীর বহু দর্শক টিকিট কেটে দেখতে যায়। Jaws এর fibre glass এর হিংস্র shark, Ten commandments এর সমুদ্র ভাগ হয়ে যাওয়া, Jurassic Park এর Jurassic সময়ের প্রাণী, ET র অদ্ভুত প্রাণী ইত্যাদি অনেক চমক আছে। Universal Studio বিরাট জায়গা, অনেক কিছুর মধ্যে এগুলোও আছে – Sound of Music নেই। (হয়তো সেরকমই চুক্তি আছে। )

Sound of Music এদের থেকে আলাদা। সিনেমার ব্যাকড্রপ পিকচার পোস্টকার্ডের থেকেও, সুন্দর আল্পসের গা ঘেঁষে Sulzburg. সেই শহরের অন্যতম প্রধান আকর্ষন “Sound of Music” tour. যেখানে শ্যুটিং হয়েছিলো, সেখানে ট্যুরিস্টদের জন্য guided tour সবার অবশ্যদ্রস্টব্যের তালিকায় থাকবেই। এরকম সারা পৃথিবীতে আর দ্বিতীয় আছে কিনা জানা নেই (Sulzburg Mozart এরও জন্মস্থান)।

যেহেতু একটু পাকা বয়সে Sound of Music দেখেছিলাম, কয়েকটা খটকা লেগেছিল। যেমন অস্ট্রিয়া দেশকে আমরা জানি landlock country সেখানে Baron কি করে নৌবাহিনীর উচ্চপদাধিকারী? এগুলো সেই ‘শোলে’র ঠাকুরের ঘরে বিদ্যুৎ নেই, লন্ঠন জ্বালাতে হয়, কিন্তু গ্রামে জলের ট্যাঙ্কে জল ওঠে সেই রকম – জামাই ঠকানো ব্যাপার। এগুলোর উত্তর খুব জরুরী নয়, বরং ফিল্মের মজাটাই আসল।

মারিয়ার ভুমিকায় ছিলেন Julie Andrews. জুলিদি মোটেই ডানাকাটা সুন্দরী নন, বা ওনাকে অতো সুন্দরী করে দেখানোও হয় নি। কিন্তু কিছু লোককে দেখলেই ভালো লাগে, পছন্দ হয় – সেই শ্রেনীভুক্ত! বরং মনে দোলা দিয়েছিলো বড় মেয়ে যে লুকিয়ে পোস্টম্যান এর সঙ্গে প্রেম করে, কাঁচে ঘেরা ঘরের চারিদিকে ঘুরে ঘুরে … I am sixteen, going on seventeen গান করে।
উফফ্…

২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১

Sahityika Admin

Add comment