Batalla del Vino
অসীম দেব ও সুকান্ত রায়, ১৯৭৭ ইলেকট্রনিক্স এন্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং
মদ নিয়ে সারা পৃথিবী জুড়ে অনেকরকমের ঘটনা ও ইতিহাস আছে। নিজেদের জীবনেও কত আছে। কিন্তু বালতি বালতি মদ ছোড়াছুঁড়ি করে মারামারি? হ্যাঁ, তাও আছে।
উত্তর স্পেনের ছোট্ট একটি শহর হ্যারো, মাদ্রিদ শহর থেকে ২৫০ কিলোমিটার দূরে এখানে প্রায় ১০,০০০ লোকের বসবাস। এই ছোট্ট শহর Haro উন্নত মানের tapas (small Spanish savoury dishes, typically served with drinks) এর জন্য বিখ্যাত, আর স্পেনের অন্যতম Rioja (a wine produced in La Rioja, Spain) উৎপাদন অঞ্চল। এই Haro শহর ঐ অঞ্চলের ৪০% ওয়াইন উৎপাদন করে।
এই Haro শহরে প্রতি বছর ২৯শে জুন মদের যুদ্ধ হয় – Batalla del Vino (‘Wine Battle’)। এই দিনটিকে বলা হয় The Day of the Patron Saint San Pedro. অনেকে Saint Peter’s Day ও বলে থাকেন। আর যুদ্ধকে বলা হয় One of the World’s biggest food and drink battles. এই যুদ্ধটাই ওখানের বাৎসরিক (traditional) উৎসব। আনুমানিক প্রতিটি লোককে ঐদিন ঐখানে ৫০০ লিটার রেড ওয়াইনে স্নান করানো হয়।. এবং এটাই বিশ্বের সবথেকে বড় “মদের যুদ্ধ উৎসব”। মানে যুদ্ধটাই ওদের উৎসব। এবং অনেক ট্যুরিস্টও আসেন এই উৎসবে যোগ দিতে।
কিছু ঐতিহাসিকের মতে, দশম শতাব্দীতে দু’টি প্রতিবেশী গ্রাম Haro আর Miranda De Ebro র মধ্যে জমি নিয়ে রেষারেষি হয় এবং প্রায় দু’শো বছর ধরে এই রেষারেষি চলে। তারপর দ্বাদশ শতাব্দীর শুরুতে কিছুই না পেয়ে ওয়াইন ছোঁড়াছুড়ি করে এই যুদ্ধের শুরু। আর যেহেতু Haro শহরের অবস্থান La Rioja wine region এ, এখানের লোকজন এই যুদ্ধের জন্য প্রয়োজনীয় ওয়াইন বাড়িতেই বানিয়ে নেয়।
বিধিবদ্ধ সতর্কীকরন – সঙ্গে পরিস্কার জামা নিয়ে যাবেন। কারণ যুদ্ধশেষে আপনার জামা আর পরিধানযোগ্য থাকবে না। রেড ওয়াইনে আপনাকে স্নান করানোর পর ঐ পোষাক বেশীক্ষন গায়ে রাখা যায় না। যুদ্ধ অবসানে আপনাকে পোষাক পরিবর্তন করতেই হবে।
The Batalla del Vino ইংরেজিতে অনুবাদ করলে হবে ‘Battle of Wine’, আর এই যুদ্ধক্ষেত্রটিও নির্দিস্ট, Haro শহর থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার দূরে Riscos de Bilibio পাহাড়ের কাছে, foothills of the Obarenes Mountains. মানে নির্দিস্ট জায়গাতেই গিয়ে যুদ্ধ করতে হবে। যুদ্ধের নিয়ম অনুযায়ী নারী পুরুষ শিশু বৃদ্ধ সকলকেই সাদা পোষাকে আসতে হবে, সকলকে গলায় লাল রুমাল বাঁধতে হবে এবং যুদ্ধে রেড ওয়াইন ছাড়া আর অন্য কোন ক্ষেপনাস্ত্র ব্যাবহার করা যাবে না।
অনুষ্ঠানের শুরু হয় সকাল ন’টায়। ঐদিন সকালে স্থানীয় লোকজন এবং ট্যুরিস্ট, সকলে সাদা পোষাকে গলায় লাল রুমাল জড়িয়ে একত্র হয়ে মিছিল করে চলেন। মিছিলের প্রথমেই থাকেন শহরের মেয়র, ঘোড়ায় চড়ে। তাঁর পিছনে মিছিল চলে Riscos de Bilibio পাহাড়ের দিকে, মানে যুদ্ধক্ষেত্রের দিকে। সঙ্গে থাকে বালতি, জার, গামলা, আর অফুরন্ত রেড ওয়াইন। বলা থাকে remember to bring some type of container with you, so you can fill it up with wine – bottles, jugs, buckets – anything goes, as long as it’s soft like plastic and not glass. The best source of ammunition however, is a water pistol. মিছিলের লোকজন Hermitage of San Felices de Bilibio তে পৌঁছে প্রথমে ওদের ধর্মীয় mass অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
এরপর শুরু হয় যুদ্ধ। ভিরের মাঝে কে পরিচিত কে অপরিচিত তার খেয়াল থাকে না। যাকে সামনে পাবে তাকেই ধরে তাঁর গায়ে ওয়াইন ঢেলে দেওয়া হয়। যুদ্ধের পর্যবেক্ষকরা খেয়াল রাখেন যে যুদ্ধে অবতীর্ন প্রতিটি যোদ্ধার সাদা পোষাক যেন লাল হয়ে যায়। অর্থাৎ যতক্ষণ না পোষাক লাল হয়ে যায়, ততক্ষন তাঁর উদ্দেশ্যে বালতি আর গামলা ভর্তি ওয়াইন ক্ষেপনাস্ত্র নিক্ষিপ্ত হবে। বলা হয় the whole world seems to turn completely pink…. everyone is a target, so don’t wear your best clothes.
দুপুরে আনুষ্ঠানিক যুদ্ধবিরতি ঘোষনা হলে সকলে যুদ্ধক্ষেত্র ত্যাগ করে হ্যারো শহরের Plaza de la Paz তে ফিরে এসে খাওয়াদাওয়া করে নেন। সেখানে ছোট্ট একটা মেলা হয়, সাথে নিজের খুশীমতন নৃত্য ও সঙ্গীতের ব্যাবস্থাও থাকে। আর থাকে “bullfights” for youth কিন্তু এখানে “bulls” বলতে heifers এবং কোন প্রাণিহত্যা হয় না।
এই হলো La Batalla del Vino, এক অভিনব স্প্যানিশ উৎসব।
**********
সংযোজন মদ্যপুরাণ – বিই কলেজ ও তার পরে
হিমাংশু নাথ, ১৯৭৭ ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং
এবার একটু আমাদের মদের গপ্পো হয়ে যাক।
বিই কলেজে এসে অনেকেরই মদের হাতে খড়ি হয়। শুরুটা হয় কোন এক গ্র্যান্ড ফিস্টের রাতে, সাধারণত হুইস্কির সাথে জল দিয়েই। পয়সা কোথায়? সোডা তখন বিলাসিতার পর্যায়ে পড়ে। এই দলে এক আধজন অভিজ্ঞ থাকেন যারা বিদ্যালয়ে থাকাকালীনই এই অভ্যাসে রপ্ত। তিনিই শিক্ষকের বা ট্রেনারের বা গাইডের ভূমিকা পালন করেন। বাজেট অনুযায়ী কোন ব্র্যান্ড কিনতে হবে, কোথা থেকে কিনতে হবে এসব তিনি জানেন। সাথে বাদাম, ঝাল্মুড়ি, পেঁয়াজ, লঙ্কার পরিমান তিনিই বলে দেন। তারপর গোল হয়ে বসে পাত্রে কিভাবে কতটুকু ঢালতে হবে, সেটাও শিখিয়ে দেন। বিয়ার ঢালার যে এক বিশেষ কায়দা আছে, সেটাও শিক্ষানবীশরা শিখে নেয়। এরপর একটাই কথা, চিয়ার্স। এরপর কেউ এক পেগেই মাতাল, আর কেউ পিপের মতন একের পর এক হজম করে যায়। যে মাতাল হয়ে যায়, সেই হয় আসরের বড় আকর্ষণ। তাঁকে নিয়ে জনতার খোরাক, গুরু তোমার চুমকির গল্পটা শোনাও। গুরু তখন সাথীদের অনুরোধে উজ্জীবিত হয়ে জড়ানো গলায় চুমকির গল্প বলতে শুরু করে। আর সঙ্গতে থাকে বাকীদের উল্লাস। এই উল্লাস কিন্তু আসলে গুরুকে আরও উৎসাহিত করা। আর গুরুও চুমকির গপ্পো বলতে থাকেন। এইভাবেই সন্ধ্যাটা কেটে যায়।
এরপর ব্যাতাইতলা গার্ডেন বারে যাতায়াত শুরু হয়। লো বাজেট বার। আর যাদের হাতে পয়সা আছে, এবং শৌখিন, সেই লোকজন পার্ক স্ট্রিটের আসরে মাঝেমধ্যে যাতায়াত করেন। স্বল্প আলোয় স্বল্পবসনাদের দেখে শুধুই চোখের তৃপ্তি মেটে, কিন্তু তৃষ্ণা মেটেনা। কিছু করার অনেক ইছে হয়, সাহস হয় না। এইভাবেই পাঁচ পাঁচটা বছর কেটে যায়। (আমাদের ছিলো পাঁচ বছর, এখন চার বছর হয়ে গেছে)।
প্রাসঙ্গিক বলি।
প্রদোষ’দা (ঘোষ, ১৯৬৭ সিভিল) আমাকে তাঁর অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন। পাশ করার প্রায় তিরিশ বছর পরে গার্ডেন বারে গিয়ে দেখেন বেশ কিছু পরিবর্তন হয়েছে। যে ব্র্যান্ড উনি খেতেন সেটা আর পাওয়া যায় না, এখন অন্য ব্র্যান্ড সার্ভ হয়। কিন্তু ওনার সেই আগের ব্র্যান্ডই চাই। যে মাঝবয়সী ছেলেটা সার্ভ করছিলো, তাঁকে বললেন “তুমি বুঝবে না, তোমার বাবাকে ডাকো।“ ছেলেটি বাবাকে ডেকে নিয়ে এলো। তারপর দুজনের কি উচ্ছাস! “স্যার, আপনাদের আশীর্বাদেই আমি এই নিয়ে বেঁচে আছি।“ প্রদোষ’দা পিঠ চাপড়ে উত্তর দিয়েছিলেন “দাদা, আপনার জল খেয়েই তো প্রতি বছর কত ইঞ্জিনিয়ার পাশ করছে, দেশে বিদেশে ছড়িয়ে আছে। আমরাই তো আপনার ব্র্যান্ড এম্বাস্যাডার।“
ফিরে আসি মদ্যপূরাণে।
পাশ করে বেরিয়ে সকলেরই পরিবর্তন আসে। তখন আর গার্ডেন বার নয়, নিজের বাড়িতেই এক কোনে বার সাজানো হয়ে গেছে। সেখানে অল্প দামী এবং বেশ দামী, বিভিন্ন রকমের সম্ভার। কিছু জানা মাল। এবং কিছু অন্যের থেকে এডভাইস নিয়ে কিনে সাজিয়ে রাখা।
পাশ করার বেশ কিছুদিন পর রুচি খানিকটা বদলেছে। তখন ‘মদ’ বলতে সাধারণ বাঙালী একটু ভালো ব্র্যান্ড বোঝে, সেটা আবার ইংরেজি wine থেকে আলাদা। এটা বরং আমাদের মুণি, ঋষিদের বা দেবলোকের সুরা / সোমরসের অনেক কাছাকাছি। অন্যদিকে যারা মদের মর্ম বোঝেন না, তাঁদের কাছে যতরকম চেনা চেহারার spirit/ liquor দেখা যায় (whiskey, rum, vodka, beer ইত্যাদি) সবই ‘ভাটিখানার মাল’ বাঙ্গালীর কাছে। ইংরাজী তে breweries for beer, distillery for rum, whiskey , vodka etc and winery for wine product কত কনফিউস করা শব্দ – যার বাংলা প্রতিশব্দ আমাদের জানা নেই। তাই এককথায় আমরা বলি মদের কারখানা। সেই কারখানারও স্ট্যাটাস আছে। নাসিকের সুলা, বা হরিয়ানার কিংফিশার কারখানার এক স্ট্যাটাস, আর কলকাতার সল্ট লেক বাইপাসের ধারের ঝুপড়ির কারখানার আরেক স্ট্যাটাস।
Wine বা champagne কখন পান করতে হবে তারও নিয়ম আছে। আর পান করে মাতলামো করা চলবে না, কারণ wine and champagne are the symbol of celebration and happy moment Motor race জিতে চ্যাম্পিয়নরা স্টেজের উপর থেকে বোতল খুলে যে তরল পদার্থ দিয়ে সামনের লোকজনের উপর ঢেলে দেন, সেটা champagne – ঠিক উচ্চারণ শঁপানিয়া, আমরা বলি শ্যাম্পেইন! বিদেশে বিয়ের আনুষ্ঠানিক ব্যাপারস্যাপারের সমাপ্তির পরে নতুন couple champagne toast করে। ব্যাপারটা আমাদের মধুরেণ সমাপয়েৎ বা মিস্টি মুখের মতোই। এদেশে বা বিদেশে wine বা champagne পান করে মাতলামো করেছে, এরকম কেস নেই। বরং ফুটবল খেলায় জিতে whiskey, rum, vodka পান করে রাস্তায় উলঙ্গ হয়ে বিজয় উৎসব করার নজির আছে।
শঁপা হচ্ছে wine এর উৎকৃষ্টতম variety. এর আগে ছোটো ভাইদের গপ্পো বলে নি। প্রধান দুটো variety – red & white wine. যদিও মূল এবং সবথেকে পপুলার উপাদান – আঙ্গুর, তবে এছাড়াও আরো অনেক কিছু দিয়েই wine প্রস্তুত করা প্রচলিত। strawberries, peach এরকম অনেককিছু দিয়েই wine হয়। যেখানে ভালো জাতের ফলের availability সেখানে এরকম দেখা যায়। যেমন Florida (orange county) কমলালেবুর জন্য orange wine নাম করা। Europe, Africa তে অনেক জায়গাতেই champagne কে sparkling wine বলে স্বচ্ছতার জন্য। এদের মধ্যে সবথেকে বেশি চালু – red wine. যেটা লাল আঙ্গুর এর skin, seed সব একসাথে ferment করে হয়। white wine একটু উঁচুতে। এতে skin, seed বাদ দিয়ে process করা হয়। আর রাজার রাজা হলেন champagne. এটা কিন্তু ফ্রান্সের একটা অঞ্চলের নামে নামকরণ। কিন্তু সবথেকে নামকরা (এবং সংখ্যায় বেশি) winery and vineyards হচ্ছে ফ্রান্সের দক্ষিনে Bordeaux অঞ্চলে। (উচ্চারণ বরদোঁ/ বরদ্যোঁ)। প্যারিস থেকে কিছু দূরে , সমুদ্রের দিকে।
আমাদের চা যেমন সবচেয়ে খানদানী হয় দার্জিলিংএ কারণ – প্রচুর বৃষ্টি চাই, অথচ পাহাড়ের ঢাল বেয়ে জল নেমে যাবে, মেঘলা ভেজা আবহাওয়া দরকার। সেরকম আঙ্গুর সবচাইতে ভালো হয় যেখানে অপর্যাপ্ত সূর্যালোক, অথচ তাপমাত্রা নীচে কিন্তু বরফ পড়ে না। Bordeaux তে ভূমধ্যসাগরীয় আবহাওয়া তাই আঙ্গুরের পক্ষে আদর্শ। এই আবহাওয়ার জন্য আরেক জায়গা খুব বিখ্যাত – Napa valley at CA, USA তে। Bordeaux ছাড়াও খানদানী wine ইটালি , চিলি, স্পেন, অস্ট্রেলিয়া তে হয়। দক্ষিন আফ্রিকায় cider wine বিখ্যাত। তবে ফ্রান্সের wine অনেকটাই ‘আদি ঢাকেশ্বরী’ থেকে বেনারসি কেনার মতোই। লোকে শাড়ির বাক্সের মতো (এক্ষেত্রে ফাঁকা বোতল!) রেখে দেয়।
এবারে আসি wine এর পাণপাত্র নিয়ে। পাণপাত্রর খেয়াল রাখা জরুরী। পাথরের বাটিতে খিচুড়ি, সিন্নি, পায়েস চলবে কিন্তু মাছের ঝোল দেওয়া যায় না। সেরকমই সাধারণ ভাবে wine goblet বলা হয়, কিন্তু ফারাক আছে। red wine এর জন্য (ছবি দিচ্ছি) পেটমোটা (tulip shape – পোষাকি নাম), white wine এর জন্য লম্বা সরু। আর শঁপা – ওপারটা খেলিয়ে বাইরে।
খেয়াল করতে হয় Bond ফিল্মের সুন্দরীরা সাধারণতঃ champagne পান করেন। আর Bond সাহেব red wine – ওটা নাকি পুরুষালি!! (অবশ্য ওনার পছন্দ vodka martini / vesper martini…shaken not stirred …কি বস্তু আমি জানিনা! From Russia With Love!)।
যারা অনভিজ্ঞ, তাঁদের জন্য একটা জ্ঞাতব্য …wine কখনোই ফ্রিজে নয়, সাধারণ ঘরের তাপমাত্রায় রাখতে হয় এবং সূর্যের আলো বাঁচিয়ে। আর কখনই জল/ বরফ মেশানো চলবে না। খেতে হয়, সরি পান করতে হয় হাল্কা চুমুক দিয়ে, কোঁৎ করে নয়। আর চুমুকের সময় আওয়াজ করা যাবে না।
Add comment