সাহিত্যিকা

বিদেশীদের অচেনা ভারত

বিদেশীদের অচেনা ভারত
• বিদেশিনীর অকিঞ্চিৎকর উপহার, হিমাংশু নাথ, ১৯৭৭ ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং
• কলকাতায় জার্মান রিকশাওয়ালা, সমীর কুমার সরকার, ১৯৭৭ ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং
• সাহেবের কুতুব মিনার দর্শন, অসীম দেব, ১৯৭৭ ইলেকট্রনিক্স এন্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং

বিদেশিনীর অকিঞ্চিৎকর উপহার
হিমাংশু নাথ, ১৯৭৭ ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং

১৯৯৫ এর ঘটনা। ঘটনাস্থল – দমদম এয়ারপোর্ট। তখনও নেতাজী সুভাষ নামকরণ হয় নি। আমরা একটা বড়ো গ্রুপ দলবদ্ধভাবে নেপাল যাচ্ছি। সবাই কলেজতুতো বন্ধু, ধানবাদে কর্মরত। আমাদের দলের প্রায় বেশিরভাগের ছেলেরই প্রথম ‘ইন্টারন্যাশনাল’ লাউঞ্জ দেখা, এবং বিশেষত করে বিদেশিনী মহিলাবৃন্দের দেখার প্রবল উত্তেজনা। তখন ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের ফ্লাইট কলকাতা থেকে যেতো। দেখা গেলো একটি ২৫/২৬ বছরের ব্রিটিশ তরুনী, চশমাপরা, দেখে মনে হলো রিসার্চ স্কলার টাইপের, ফ্লাইটের জন্য অপেক্ষা করছে। পাশে একটা অদ্ভূত জিনিস, সেলোফেন কাগজে যত্ন করে মোড়া এবং একটা বাহারি রঙিন রিবন দিয়ে বাঁধা।

জিনিসটা সবার চেনা। ছোটো সাইজের তিনটে ফুলঝাড়ু, ঘর ঝাঁটানোর। আমাদের ৭৪ ব্যাচের সিনিয়ার দাদা খোঁজ নিয়ে জানালো যে মেয়েটি লন্ডনে থাকে। রিসার্চের কাজে কিছুদিনের জন্য কলকাতায় এসেছিলো, ফিরে যাচ্ছে। সঙ্গে তিনটি ‘প্যুলঝ্যাডু’ নিয়ে যাচ্ছে তার লন্ডনের ঘর সাজাবে বলে।

প্যুলজারুর আদর দেখে অবহেলিত অন্য ঝাড়ুর দল ক্ষেপে উঠেছে। ওরাও বিদেশে পাড়ি দিতে চায়। বলে, মর্জিনা বড় অত্যাচার করছে। আমাকে হাতে নিয়ে বারেবারে ছুটে গেছে মরদের দিকে। আমাকে হাতে নিয়ে আরশোলা মেরেছে, আর কাজ হয়ে গেলেই আমাকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে, হয় উঠোনের কোনে নয় খাটের তলায়। আমার মাসতুতো বোন, নারকেল ঝাঁটার, তো আরো অবস্থা খারাপ। চরম দুর্দশা! লোকেরা কাড়ি কাড়ি খাবে আর বাথরুম নোংরা করবে, আর তখনই রামু জমাদার হাতে বোনটাকে নিয়ে এ্যাসিড, ডিটার্জেন্ট দিয়ে স্নান করিয়ে, আষ্টেপৃষ্টে বেঁধে কমোডের মধ্যে গুঁজে দিচ্ছে, মেঝের টালিগুলোকে চকচকে করার জন্য বোনটাকে কী হেনস্থাই না করে চলেছে!

এদিক দিয়ে সাহেব মেমসাহেবরা কত্তো ভালো! ঝাড়ুর বদলে নিয়ে এসেছে ‘মপ আপ’, ‘ভ্যাকুয়াম ক্লীনার’, আর ঐ এয়ারপোর্টের বউগুলো কি সুন্দর “প্যুলজারু” সাথে নিয়ে বিমানে চড়বে। কি ভাগ্য এই প্যুলজারুর। আদর করে সেলোফেন কাগজে মুড়িয়ে নিয়ে একদম মেমসাহেবের কোলে। যত্ন করে নিয়ে যাচ্ছে হাওয়াই জাহাজে করে। প্যুলজারু আর এদেশে থাকতে চায় না। আমাকে দিয়ে পাখার ব্লেড, গাড়ির কাঁচ, এসব পরিস্কার করিয়েছো।! আর ফিরব না এ’দেশে! এই মেমের সাথেই থাকব ওদের দেশে! ভালো মেয়ে! খুব আদর করবে। ওর সাথেই থাকব। ওকেই ভালবাসব!

*******

কলকাতায় জার্মান রিকশাওয়ালা।
সমীর কুমার সরকার, ১৯৭৭ ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং

এক জার্মান সাহেব দিল্লী, আগ্রা, বেনারসের ভালো মন্দ অভিজ্ঞতা নিয়ে কলকাতায় এসে একেবারে তাজ্জব বনে গেছেন। মানুষ মানুষকে গরু বা ঘোড়ার মত টেনে জনবহুল রাস্তায় এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নিয়ে যেতে পারে, এই চরম সত্যটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না। নিজের চোখকেও বিশ্বাস করতে পারছেন না। হ্যাঁ, একদম ঠিক ধরেছেন, ‘টানা রিক্সা’র কথা বলছি। খালি পায়ে শক্ত, সমর্থ একটা লোক টেনে নিয়ে যাচ্ছে এক তন্বীকে। সাহেব তাজ্জব।

সাহেব দু’একদিন কলকাতার অন্যান্য সব দর্শনীয় স্থান ছেড়েছুড়ে শুধুই রিক্সা দেখছেন, রিক্সাআলাদের দেখছেন, রিক্সার যাত্রীদের দেখছেন। রিক্সার পেছনেই ছুটে বেড়াচ্ছেন। দু’একজন রিক্সাআলার সাথে কথাবার্তা বলছেন। ভাষার সমস্যা। কেউ কারোর কথা বোঝে না। তবু হয়ে গেল হৃদ্যতা, ভালবাসা। সাহেব সময় পেলেই চলে যায় রিক্সাআলাদের ডেরায়। সাহেব রিক্সাওয়ালাদের অভ্যাস রপ্ত করার চেষ্টা করছেন, শুধু খৈনিটা রপ্ত হচ্ছে না।

একদিন নিঝুম রাতে, নিস্তব্ধ গলিতে ‘টানা রিক্সা’ নিয়ে সাহেব দৌড়াচ্ছে। দুপাশে রিক্সাওয়ালারা সাহেবকে দেখিয়ে দিচ্ছে কী করে আঙুলের ফাঁকে ঘন্টা ধরতে হয়, কখন বাঁদিকে টাল নিতে হয় আর কীভাবে হঠাৎ করে পায়ের উপর চাপ দিয়ে রিক্সা দাঁড় করাতে হয়। এ গলি, সে গলি ঘুরে সাহেব এখন সওয়ারী নিয়ে চলবে। রাতের বেলায় সওয়ারী কোথায় পাবে? সাহেব জোরাজুরি করছে। এদিকে গাঁওয়ার, দেহাতি, বিহারী ও উত্তরপ্রদেশের সহজ সরল ভারতীয় রিক্সাওয়ালারা সাহেবকে ভগবান হিসেবে মানছেন। ‘অতিথি নারায়ণ’, এই মন্ত্রে দীক্ষিত মানুষগুলো সাহেবকে সওয়ারি করতে চায়, কিন্তু সাহেব রিক্সাচালকই হতে চায়।

রাতের টিমটিমে আলোর গলিতে, ‘টুংটাং’ শব্দে কাঁধে গামছা, হাতে ঘন্টা ও মাথায় ফেট্টি বেঁধে সাহেব চলেছে। তফাত দুটো। ধুতির বদলে সাহেব পরেছে হাফ প্যান্ট আর খালি পায়ের জায়গায় কেডস। সওয়ারি এর আগে কোনদিন রিক্সায় চড়ে নি, শুধুই রিক্সা টেনেছে। রিক্সার দোলানিতে সওয়ারি দন্ত বিকশিত করে সাহেবকে বলে দিচ্ছে বাঁদিকে টাল খেলে কী করতে হবে, এক গলি থেকে আরেক গলিতে ঢুকতে গেলে কী করে ঘন্টা বাজাতে হয় আর ঘন্টাটা আঙুলে কী করে ধরতে হয়। আশ্চর্য! গাঁওয়ার, অশিক্ষিতটার কথা হুবহু বুঝে সাহেব রিক্সা টেনে চলেছে। সাহেব কিছুতেই থামে না! টানছে তো টানছেই! রিক্সাআলার বড্ড অস্বস্তি হচ্ছে। দোলানিটা ভালো লাগছে না। এখন বুঝতে পারছে সেদিনকে কলুটোলার ঠাকুমা কেন বারেবারে ওকে আস্তে চালাতে বলছিলেন। অনেক ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সাহেব নামিয়ে দিল ওর যাত্রীকে।

সাহেব এবার দেশে ফিরে যাবে। যাওয়ার আগে এই গাঁওয়ারদের নিয়ে গিয়ে একটা টানা রিক্সা কিনলেন। দেশে নিয়েও গেলেন। দেশের লোক টানা রিক্সা দেখে তো অবাক। সাহেব রোজ সকালে বিকেলে জার্মান দেশের রাস্তায়, ছেলেমেয়েদের বিনা পয়সায় প্রমোদ ভ্রমণ করাচ্ছে। দানব গাড়িতে চড়া সাহেব, মেম ও তাদের বাচ্চাদের এই দুলকিচলা টানা রিক্সায় চড়ার আনন্দের জেরে অফিসগামী সাহেবরাও গাড়ি ছেড়ে রিক্সা করে যাতায়াত শুরু করে দিল। উৎসাহিত রিক্সাআলা নানান পেন্টিং দিয়ে রিক্সাকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলল। দিন দিন চাহিদা বেড়ে যাচ্ছে। এবার বিয়েবাড়ি থেকে ডাক এল। ‘বর বউ’ কে নিয়ে চার্চে যেতে হবে। খবরটা চাউর হওয়ার সাথে সাথেই রাস্তাঘাট, দোকান- বাজার, বাড়ির বারান্দায় লোকের জমায়েত। তার মধ্য দিয়ে জার্মান সাহেব মাথায় টুপি ,পায়ে জুতো, হাফ প্যান্ট টি শার্ট নিয়ে টুংটাং আওয়াজ করতে করতে রিক্সা নিয়ে ছুটে যাচ্ছে। সাদা গাউন পরা বউ হেসে কুটিকুটি। ‘উড়ন্ত চুমু’র ছড়াছড়ি।

********

সাহেবের কুতুব মিনার দর্শন
অসীম দেব, ১৯৭৭ ইলেকট্রনিক্স এন্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং

সাহেব বিলেত থেকে কয়েকদিনের জন্য ভারতে এসেছেন, মূলত দিল্লীর কুতুব মিনার দেখবেন বলে। এই কুতুব মিনারের সাথে যদি আরও কিছু দর্শনীয় স্থান দেখার সুযোগ হয়, সেটা হবে সাহেবের উপরি পাওনা। এদিকে দেশের লোকেরা সাহেবকে সাবধান করে দিয়েছে, সুযোগ পেলেই ভারতের লোকেরা বিশেষত রাস্তার ফুটপাথের দোকানী, অটো ট্যাক্সিওয়ালারা বিদেশীদের নানাভাবে ঠকিয়ে দেয়। আরও বলেছে, ভারতের লোকজন গায়ে পড়ে আলাপ করে, সেইরকম ফাঁদে সাহেব যেন পা না দেয়।

এইসব উপদেশ আর সাবধানবাণী বুঝে নিয়ে সাহেব দিল্লীর টিকিটের লম্বা ওয়েট লিস্ট দেখে দিল্লীর বদলে মুম্বাইয়ের টিকিট কেটে মুম্বাইতেই এসে নেমেছেন। সাহেব প্রথম থেকেই সাবধান, বাজে লোকের ফাঁদে পা দেবেন না। এয়ারপোর্টের বাইরে আসতেই এক বিশাল অটো আর ট্যাক্সিওয়ালার দল সাহেবকে ঘিরে ধরলো। সবাই সাহেবকে হোটেলে নিয়ে যেতে চায়। সাহেব আবিভূত। এত অতিথিবৎসল এদেশের লোকজন? অথচ বিদেশে এই অটো আর ট্যাক্সিওয়ালাদের কি বদনাম! সবথেকে আগে যে লোকটা সাহেবকে ধরেছিলো, সাহেব তাঁর অটোতে চড়েই হোটেলে এলেন। সামান্য দূরত্ব, খুব বেশি হলে আধা কিলোমিটার। হেঁটে এলেও পাঁচ সাত মিনিটের বেশি লাগতো না। তবে হ্যাঁ, অচেনা জায়গায় হোটেল খুঁজতে হয়রানি হতো। যাই হোক, বিনা ঝঞ্ঝাটেই হোটেল পেয়েছেন, এটাই বড় কথা। অটোওয়ালা বললো Sir, only 50 Dollars. সাহেব আশ্চর্য, এইটুকু রাস্তার জন্য পঞ্চাশ ডলার?
– 50 Dollars? It is too much.
– No Sir, it our service charge.
– What service charge?
– Sir, I give you a good hotel.
– Oh! I see.
সাহেব অটোওয়ালাকে ৫০ ডলারই দিলেন, মিটার আর হোটেল খুঁজে দেওয়ার সার্ভিস চার্জ মিলিয়ে। সাহেবের মনে হলো লোকটা ভালো, ভারতের অটোওয়ালাদের ব্যাপারে বিলেতের লোকজন যত খারাপ বলেছিলো, এই লোকটা সেরকম নয়। সাহেব এবার দিল্লী যাবেন, কুতুব মিনার দেখতে। ভাবলেন এই লোকটা যদি কিছু উপকার করতে পারে। সাহেব ডাকলেন Hey Man, can you help me?
– Yes Sir, what help?
– I want to go to Delhi, but don’t have ticket.
– Delhi? Sure Sir, you want to go with ticket? Or without ticket?
– Without ticket? But how?
– Yes Sir, you can go by train, and without any ticket.
– Is It?
– Yes Sir, but there is service charge.
– How much?
– Sir Delhi without ticket is only 200 Dollars.

সাহেব ভেবে দেখলেন প্লেনে দিল্লী গেলে খরচ এর থেকে বেশি। আর যে দেশে আধা কিলোমিটারের অটো ভাড়া ৫০ ডলার, সেখানে মুম্বাই দিল্লী ট্রেনের খরচ মাত্র ২০০ ডলার? এত সস্তা? সাহেব ভেবেই কূলকিনারা পান না। সাহেব আর বেশি চিন্তা না করে ট্রেনেই যেতে রাজি হয়ে গেলেন, বিনা টিকিটে ২০০ ডলার সার্ভিস চার্জ দিয়ে।

পরের দিন সকালেই অটোওয়ালা হাজির। সাহেবকে স্টেশনে নিয়ে যাবে। সাহেব সব লক্ষ্য রাখছেন। দেখলেন মুম্বাই স্টেশনে গিয়ে এই অটোওয়ালা একটা ধুতি, লালউর্দি, হাতে পিতলের প্লেটে একটা নম্বর লেখা, আর মাথায় পাগড়ি পড়া লোকের সাথে নিজেদের ভাষায় কিছু আলোচনা করে সাহেবকে ওর সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো। তারপর বললো, Sir, you please go with him. He will give you a seat in the Delhi train. আর সাহেব দেখলেন, ঐ লালউর্দি পড়া লোকটা নিমেষে এক ঝটকায় সাহেবের সমস্ত মাল অবলীলায় নিজের মাথায় চাপিয়ে প্ল্যাটফর্মের দিকে রওয়ানা দিলো।

লালউর্দি আগে আগে চলেছে, সাহেবের মাল মাথায় নিয়ে, আর সাহেব চলেছেন পিছনে পিছনে। লালউর্দি স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম ছাড়িয়ে সাহেবকে এক জায়গায় নিয়ে এলো যেখানে সারি সারি ট্রেন দাঁড়িয়ে আছে। সেখানেই লালউর্দি সেই সাহেবকে একটা অন্ধকার কোচে চড়িয়ে দিলো। সাহেব দেখলেন সেই অন্ধকার কোচে আরও কয়েকজন মালপত্র নিয়ে বসে আছেন। এবং দেখলেন বেশ কয়েকজন লালউর্দি এভাবেই লোকজনদের ট্রেনে চড়িয়ে দিচ্ছে।

সাহেব আবিভূত। এই দেশের লোকজনদের নামে কতই বদনাম শুনেছেন। এই যে লাল উর্দি পড়া একটা লোক, নিশ্চয়ই রেল কোম্পানিরই হবে, যেভাবে শুধুমাত্রই সামান্য সার্ভিস চার্জ নিয়ে একজন বিদেশীকে এভাবে ট্রেনের সীটে বসিয়ে দিয়ে গেলো, বিলেতে এরকম সার্ভিস কোনদিন সম্ভব? সাহেব ভারতীয় সার্ভিসে মুগ্ধ।

ট্রেন এবার কার শেড থেকে প্ল্যাটফর্মে এসে অবশেষে ছেড়েও দিলো। সাহেব দেখলেন এদেশের লোকেরা গায়ে পড়ে আলাপ করে। পাত্তা দিলেন না। একজন নিজেদের মধ্যে বলাবলি করলো এই ট্রেন কাল সকালে কলকাতায় পৌঁছাবে। সাহেব বুঝলেন এরা সব চিটিংবাজ, সাহেবকে ধোঁকা দিতে চায়, তাই বলছে এই ট্রেন কলকাতায় যাবে। সাহেব পাত্তাই দিলেন না।

সারাটা রাস্তা মৌনব্রত অবলম্বন করে পরের দিন সকালে সাহেব দেখলেন, ট্রেন হাওড়া বলে একটা স্টেশনে এসে একেবারেই থেমে গেলো। সাহেব বুঝলেন, ট্রেন দিল্লী এসে গেছে। মালপত্র নিয়ে প্ল্যাটফর্মের বাইরে আসার সময় এবার একজন কালো উর্দি পড়া লোক সাহেবকে ধরলো। সাহেবের টিকিট দেখতে চায়। সাহেব আশ্চর্য। বললেন Why ticket? I have paid service charges at Mumbai. কালো উর্দি ঠান্ডা মাথায় জবাব দিলো, Sir, that’s only for travelling. Now you have to pay service charges to cross this gate.
– Is it? Ok-key. How much?
– Only 50 Dollars.

সাহেব কালোউর্দিকে ৫০ ডলার দিয়ে গেট পেরিয়ে আসতেই একদল অতিথিবৎসল ট্যক্সিওয়ালা সাহেবকে হোটেলে নিয়ে যাওয়ার জন্য ঘিরে দাঁড়িয়ে গেলো। সকলেই সাহেবের সেবা করতে চায়। সাহেব বুঝলেন, এরাও মুম্বাইয়ের অটো আর ট্যক্সিওয়ালাদের মতনই অতিথিবৎসল। সাহেব সবথেকে সামনের লোকটার সাথে কথা বলে তাঁর ট্যাক্সিতে উঠেই বললেন, ক্যাটূব মিন্যার। ট্যাক্সিওয়ালা অবাক। But Sir, this is Calcutta, not Delhi. সাহেব বুঝলেন লোকটা অতিথিবৎসল হলেও চিটিংবাজ। দেশের লোকেরা এদের ব্যাপারেই সাবধান করে দিয়েছিলো।
– You see man, don’t try to cheat me. Take me to Kyutoub Meenyar.
– But Sir.
– Don’t talk. Start for Kyutoub Meenyar

ট্যাক্সিওয়ালা গাড়ি স্টার্ট দিয়ে কিছুক্ষন পরে একটা জায়গায় নিয়ে এলো। Here is your Kutub Minar Sir. সাহেব ট্যাক্সি থেকেই হলুদ রঙের ক্যাটুব মিন্যার দেখলেন। কেমন যেন লাগলো, এই ক্যাটুব মিন্যারটা যেন একটু অন্যরকম। লম্বায় মিল আছে, চেহারাও গোলাকার, কিন্তু অন্যরকম। আবার ভাবলেন হয়তো নিজেরই ভুল। বেশি কথা না বলাই ভালো। ট্যাক্সিওয়ালাকে ১০০ ডলার সার্ভিস চার্জ দিয়ে দিলেন। দেখলেন সামনেই একটা অদ্ভুত আকারের গাড়ি, মনে হয় বাস। নম্বর লেখা 55, B Garden Esplanade. একজনকে জিজ্ঞাসা করলেন, Gentleman, may I know what is this place?
– It’s Esplanade
– Is any hotel around?
– Yes, sure. You see, that building? That area is Chowrangee. There are two hotels, Peerless and Grand Hotels. Just you can walk down.
– What did you say? Chowrangee?
– Yes, Chowrangee.

সাহেব গ্র্যান্ড হোটেলের সামনে এসে বারবার দূরের ক্যাটুব মিন্যারকে দেখছেন, আর সন্দেহ হচ্ছে এটা যেন তাঁর স্বপ্নের ক্যাটুব মিন্যার নয়। আশেপাশের কাউকে জিজ্ঞাসা করবেন, সেই ভরসাও পাচ্ছেন না। এঁদের মধ্যে কে চিটিংবাজ আর কে নয় সেই ব্যাপারেও সাহেব নিঃসন্দেহ হতে পারছেন না।

অবশেষে একজনকে মনে হলো যে তিনি বিদেশী, অন্তত গায়ের রঙে তাই মনে হয়। হয়তো ঠিক বলবে। অনেক ভরসা করে সাহেব গিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, Pardon me Sir, do you understand English? প্রশ্ন শুনে অন্যজন একটু থতমত খেয়ে জবাব দিলো, of course I understand English.
– Oh. That’s great. Can you tell me Sir, where is the Kyutoub Meenyar?
– Kyutoub Meenyar? Hey, it’s simple. Look there, that tall monument. Can you see that monument?
– Yes, yes. I can.
– That’s your Kyutoub Meenyar.
– But Sir, excuse me. are you sure? That’s Kyutoub Meenyar?
– Of course, I am. I have visited yesterday. I have taken my selfie with Kyutoub Meenyar.
– Oh! I see. Thank you Sir. By the way, do you belong to this city?
– No, no. Not at all. I am from Liverpool. I came to this Delhi city just to see Kyutoub Meenyar. Now I am happy, and tomorrow I’m going back to Liverpool.

সাহেব, মেমসাহেব, আপনারা আবার আসবেন এই কলকাতা শহরে। অনেক অনেক আমন্ত্রণ রইলো।

 

Sahityika Admin

Add comment