সাহিত্যিকা

আ মরি বাংলা ভাষা!

আ মরি বাংলা ভাষা!

বাংলা অভ্র কিবোর্ড আমরা কোথা থেকে পেলাম?
Dr. Mehdi Hasan Khan (Bengali: মেহেদী হাসান খান), is regarded as the developer / inventor of free and open source Bengali keyboard Avro, released in the year 2003.
Born in Dhaka in 1986, he then completed his secondary from Ideal School and College from Notre Dame College, and then completed his MBBS degree from Mymensingh Medical College in 2010.
Dr. Khan started developing Avro for Windows in 2003 when he was a first year student of Mymensingh Medical College. It was first published on web for free download on March 26, 2003, under Creative Commons Attribution-NoDerivs 3.0 Unported License. Initially, it was developed in Visual Basic, which was later rewritten in Delphi. After discussion, OmicronLab published the source code of windows version under MPL 1.1 license with the Avro Keyboard 5.0.5 public beta 1.

Avro was further developed by M. M. Rifat-Un-Nabi, Tanbin Islam Siyam, Ryan Kamal, Shabab Mustafa and Nipon Haque from OmicronLab.

* Source: Wikipedia

******

প্রণমি বাংলা মা
সুদীপ রায়, সুদীপ রায়, ১৯৭০ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং

বাংলা আমার রন্ধ্রে রুধিরে, বাংলা মুখের ভাষা,
বাংলা আমার সুখের স্বপন, বুক ভরা ভালোবাসা।
এই ভাষাতেই কথা বলি মোরা, এই ভাষাতেই পড়ি,
এই ভাষাতেই অক্ষর চিনে লিখে লিখে পাতা ভরি।
সুখে ভেসে গাই বাংলায় গান, দুখ পেলে তাতে কাঁদি,
নিরাশায় ম্লান হই তো আশায় বাংলায় বুক বাঁধি।
রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র, ঋষি বঙ্কিম তাঁরা,
রেখে যা গেছেন সৃষ্টি তা পড়ে হয়েছি আত্মহারা।
ফেব্রুয়ারির একুশ তারিখে, আজকে বাংলা মা,
প্রণাম তোমায় শতবার করি, তোমায় ভুলব না।

********

প্রমিত বাসু, ২০০১ সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং
এই মুহূর্তে সারা পৃথিবীতে প্রায় ৬৭০০ ভাষায় কথা বলা হয়, যেখানে তার প্রায় ৪০ শতাংশ ভাষা আজ বিপন্ন। এর মধ্যে কিছু অতি বিপন্ন ভাষাও আছে যেগুলোতে এখন শুধুমাত্র বয়স্ক বা প্রবীণরাই কথা বলেন। তার মানে সেই ভাষার এঁরা শেষ প্রজন্ম, তাদের মুত্যুর সাথে সাথে তাদের ভাষারও মৃত্যু ঘটবে।

ভাষা বিপন্ন হওয়ার অনেক জায়গায় অনেক ধরণের কারণ আছে, কিন্তু মোটামুটিভাবে বিশ্বজুড়ে সর্বজনীন একটা কারণ হল শিক্ষায় অসম অধিকার। প্রান্তিক হোক বা মূলধারার জনগোষ্ঠী, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় শিশুরা তাদের মাতৃভাষায় শিক্ষালাভের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

একটা সমীক্ষায় দেখা গেছে যে বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষের তাদের মাতৃভাষায় শিক্ষার কোনো অধিকার নেই। মাতৃভাষায় শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হওয়ার প্রধান কারণগুলো তলিয়ে দেখতে গেলে মোটামুটি যেগুলো দেখা যায়, সেগুলো হলো:
· মাতৃভাষায় শিক্ষার পরিকাঠামোর অভাব বা নিম্নমানের পরিকাঠামো
· মূলধারার বা সরকারি ভাষা ও সংস্কৃতি গ্রহণ করার চাপ
· প্রবাসী জনগোষ্ঠীর কাছে মাতৃভাষায় শিক্ষার সুযোগের অভাব
· নিজেদের মাতৃভাষার প্রতি এক রকম অনীহা

প্রায় এই সবকটি ক্ষেত্রেই দেখা যায় মূলত এই কারণগুলোর জন্য ঘরে এবং বাইরে শিশুরা মাতৃভাষায় পড়তে, লিখতে এমনকি কথা বলা থেকেও বঞ্চিত হয়। যার ফলে ভাষাগুলি আস্তে আস্তে তাদের দৈনন্দিন ব্যবহারের বাইরে চলে যায়। এই ভাবেই ভাষা দুর্বল হতে শুরু করে আর প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে ভাষার বিলুপ্তির আশঙ্কা বাড়তে থাকে।
ভারতবর্ষের ক্ষেত্রে বিপন্ন ভাষার সংখ্যাটা কিন্তু ভয়াবহ। দেশ ভিত্তিক সমীক্ষায় দেখা গেছে বিপন্ন ভাষার তালিকায় ভারতবর্ষ সবার উপরে। ২০২৪ সালের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, ইউনেস্কো ভারতের ১৯৭টি ভাষাকে বিপন্ন হিসাবে তালিকাভুক্ত করেছে, যার মধ্যে রয়েছে ৮১টি অরক্ষিত, ৬৩টি বিপন্ন, ৬টি মারাত্মকভাবে বিপন্ন, ৪২টি গুরুতরভাবে বিপন্ন এবং পাঁচটি ইতিমধ্যেই বিলুপ্ত।
তার মানে এই ভাবে চলতে আরো অনেক ভাষার অবলুপ্তি অবশ্যম্ভাবী। এখনই সচেতন না হলে প্রান্তিক ভাষার সঙ্গে ধীরে ধীরে অচিরঃই মূলধারার ভাষারও এই সঙ্কটের মুখে পড়বে।

তাহলে প্রশ্ন হল, এই সঙ্কট থেকে বেরোনোর উপায় কী? সমাধান ভাবতে গিয়ে সেই পুরোনো কথাই ঘুরে ফিরে আসছে যে ‘প্রশ্নগুলো সহজ, আর উত্তরও জানা’।
অনেক ক্ষেত্রেই সরকারি নীতি মাতৃভাষা শিক্ষায় একটা প্রতিবন্ধকতা তৈরী করে। যদিও আমাদের দেশের নতুন শিক্ষানীতিতে দাবি করা হচ্ছে আঞ্চলিক ভাষাগুলোকে এবার থেকে অনেক বেশি প্রাধান্য দেওয়া হবে, কিন্তু সেটা এমন একটা জিনিস যেখানে না আঁচালে বিশ্বাস নেই। সরকারি স্কুলগুলোতে আঞ্চলিক ভাষাকে প্রাধান্য দেওয়ার কোনো রকমের উদ্যোগ এখনো অবধি নিতে দেখা যায় নি। বরং সংস্কৃতকে হিন্দির সঙ্গে জুড়ে দিয়ে ভারতীয় ভাষা শেখানোর প্রয়াস বেশ রমরমিয়েই চলছে।
শুধু বাংলা ভাষা নিয়ে কথা বলতে হলে এটাও বলতে হয় যে অনেকগুলো কারণে বাংলা স্কুলগুলোর মান গত দুদশক ধরে বেশ নিম্নগামী। সেইখানে স্বাভাবিকভাবেই শুধুমাত্র বাংলা ভাষায় পড়াশুনো করতে পারবে বলে বাংলা স্কুলে যাওয়াটা হঠকারিতার নামান্তর। পেশাগত উন্নতির কথা ভেবেই উন্নত পরিকাঠামোযুক্ত ভালো স্কুলে যাওয়াটাই বাঞ্ছনীয়।
তাহলে যেখানে সরকারি বা পরিকাঠামোগত কোনো সাহায্য পাওয়া যাচ্ছে না (এটা প্রবাসীদের জন্যও প্রাসঙ্গিক), সেখানে একমাত্র উপায় হলো নিজের দায়িত্ব নিজের হাতে তুলে নেওয়া। সেখানে করণীয় কাজের মধ্যে যেগুলো আবশ্যিক সেগুলো হল:
১. বাড়িতে অন্তত মাতৃভাষায় কথা বলুন। সেই কথোপকথনে সব ধরণের বিষয়বস্তুকেই আলোচনার মধ্যে রাখুন।
২. নিজে সময় বার করুন। সময় পেলেই কনিষ্ঠ সদস্যদের মাতৃভাষায় একটু একটু করে পড়তে আর লিখতে শেখান।
৩. নির্বাচিত এবং সর্বোত্তম বাংলা বইগুলোর সঙ্গে পরিচয় করান এবং নিজেও পড়ুন।
৪. একটা ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে সম্মিলিতভাবে বাড়ির ছোটদের নিজের সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় করান। ভাষা মানে শুধুই অক্ষরজ্ঞান নয়, নিজের শিকড়কে জানাও বটে।
এই উদ্যোগগুলো কিন্তু বৃহত্তর ক্ষেত্রে দেখতে পাওয়া যায় না। এমনকি বাবা মা সমভাষী হওয়া সত্ত্বেও অনেকের বাড়িতে দেখা যায় শিশুর পাঠক্রমের প্রধান ভাষাতে বা সরকারি ভাষাতে কথোপকথন চলে। জিজ্ঞেস করলে দেখা যায় যে তাদের যুক্তিগুলো খুবই দুর্বল এবং হাস্যকরও বটে। একটা খুব সাধারণ যুক্তি হল যে মাতৃভাষা শিখতে সময় দিলে বাকি পাঠ্যক্রমের ভাষাগুলোকে উপেক্ষা করা হবে। সেটা আদতে কিন্তু খুব জোরালো যুক্তি নয়।

প্রসঙ্গত বলে রাখা ভালো যে এই জ্ঞানগুলো আমার দেওয়া নয়, ইউনেস্কো তাদের মাতৃভাষা প্রসারের সূচিতে এই কথাগুলোই সমাধান হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ইউনেস্কোর কিছু সমীক্ষাতে এটাও বলা হয়েছে যে দ্বিভাষী বা ত্রিভাষী মাধ্যমে পড়াশুনো করা শিশু মাতৃভাষায় সাবলীল হলে সেটা ভাষাশিক্ষায় বোঝার ওপর শাকের আঁটি হয়ে দাঁড়ায় না, বরং অতিরিক্ত ভাষা শেখার জন্য সেটা একটা ভাষাগত ভিত্তিই স্থাপন করে।
বাংলা ভাষা কোনো প্রান্তিক ভাষা নয়। শুধু ভারতবর্ষেই সাড়ে আট কোটি মানুষ কথা বলে আর সারা পৃথিবীতে প্রায় ২১ কোটি। কিন্তু উপেক্ষা বা উদাসীনতা খুব তাড়াতাড়িই এই ভাষাকে দুর্বল করে দিতে বাধ্য। স্কুলের পরিকাঠামো যদি নাই বা থাকে, আজকের দিনে প্রযুক্তির দৌলতে সব শিক্ষাসামগ্রীই পাওয়া যাবে হাতের মুঠোয়। তাই সবার আগে যেটা প্রয়োজন সেটা হলো একটা সদিচ্ছের এবং বছরভর লেগে থাকার মতো একটা ধৈর্যশীলতা। মন্ত্রের মতো করে প্রতিদিন সব কাজের সঙ্গে এটাও মনে করতে হবে ‘আমি বাংলায় কথা কই, আমি বাংলার কথা কই’। তবেই থাকবে একুশের সার্থকতা।
সবাইকে জানাই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের শুভেচ্ছা।

ছবি ও তথ্য – ইউনেস্কো

******

আমার বাঙলা ভাষা
শ্যামল দাস ১৯৭১ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং

আমি বলি কথা, ভাবি বাঙলায়
ভালবাসি সবে, করেছি প্রণয়
কেঁদেছি ফুঁপিয়ে, বলে বাঙলায়
স্বপ্ন দেখি যে, সেও বাঙলায় ৷
ভগবানে ডাকি, একই বাঙলায়
বর মাগি মনে, সেও বাঙলায়
আবেগ উচ্ছ্বাস বেগে ধেয়ে আসে
বাঙলা ভাষাতে বহে ৷
শোকের মাঝারে সান্ত্বনা দিই
মায়ের ভাষাটি নিয়ে
আদরে ভরাই শিশুটির মুখ
বাঙলা ভাষাটি দিয়ে ৷
দেশমাতৃকা করি বন্দন
বাঙলায় করজোড়ে
মাতৃভাষার হয়না দোসর
বাঙলা যে চিরতরে ৷
কোথা পাব নাম এত সুমধুর
কুসুম বাগিচা মাঝে
যেথা আছে দেখি রজনীগন্ধা
আর হাস্নুহানারা ফুটে ৷
জন্ন্ম থেকে আজ
যত দিন শ্বাস ….
কেউ যদি থাকে, সদা করে বাস
আমার দেহে ও প্রাণে ৷
সে যে প্রিয় মোর
বাঙলা ভাষাটি
বাহুডোরে মোরে জড়ায়ে রেখেছে
নিবিড় আলিঙ্গনে ৷৷

Sahityika Admin

5 comments

  • খুব ভালো প্রচেষ্টা! কাজের ফাকে আপনারা কিছুটা সাহিত্য চর্চা করতে পারছেন এটা প্রশংসনীয়! টপিক গুলো ও ভালো ছিল।
    Carry on the good work.

  • জানি না, মনে নেই কবে সাহিত্যিকার জন্ম। তবে দেখতে দেখতে ৩৩ তম সংখ্যা!! Hats off to সবাই, যারা এটিকে সযত্নে বড় করে তুলছেন।
    সাহিত্যিকা আরও এগিয়ে চলুক।

  • এবারের সাহিত্যিকাও খুব সুন্দর হয়েছে। কয়েকটি লেখা পড়লাম- সত্যিই আকর্ষণ করে। ব্যাকরণগিত কিছু বিভ্রাট এখনও আছে, তবে আগের থেকে অনেক উন্নত। ধীরে ধীরে সব ঠিক হয়ে যাবে।
    আগামী সংখ্যাগুলোর জন্য শুভেচ্ছা রইল।

  • সাহিত্যিকার web version হয়ে আরও সুন্দর হয়েছে। Asim Deb and team কে অনেক সাধুবাদ ও অভিনন্দন, তাদের ঐকান্তিক প্রয়াস, ও উপস্থাপনার জন্য ।
    আরও শ্রীবৃদ্ধি হোক, এই আশা রাখি।