সাহিত্যিকা

আমার বাবা প্রফেসর এ. কে. সি. থেকে আনারকলি….

আমার বাবা প্রফেসর এ. কে. সি. থেকে আনারকলি….
তিলোত্তমা চৌধুরী লাহিড়ী, ১৯৮০, আর্কিটেকচার ও প্ল্যানিং

আমি প্রফেসর আনারকলির বড় মেয়ে।
আমাকে বিই কলেজের সবাই তিলু নামেই চেনে (এবং ভাগ্যবতী যে কলেজের সিনিয়রদের দয়ায় আমার “তিলু” নামকরণ মোটামুটি খারাপ হয় নি)।

অসীমদা (’৭৭, ইটিসি) আমাকে বলেছে শিক্ষক দিবক উপলক্ষে আমার বাবা, মানে আনারকলি, মানে প্রফেসর অনিল কুমার চৌধুরীকে নিয়ে একটা লেখা দিতে। আমায় ব্রিফিংও দিয়ে দিলো “স্যারের একটা ছোট্ট বায়ো, আর তার সাথে কিভাবে আনারকলি নামটা জুড়ে গেলো, এই নিয়ে একটা সিম্পল লেখা নামিয়ে দে।“ আমিও আর না বলতে পারলাম না।

মনে আছে, অনেক বছর আগে, বাবা তখন দিল্লীতে আমার কাছে বেড়াতে এসেছেন। এরকম সময়ে একদিন অসীমদার ফোন এলো। আমি প্রথমেই বলে দিলাম যে বাবা এখন আমার কাছে। “ওঃ, তাই? কতদিন আছেন? তাহলে আমি গিয়ে একবার দেখা করতে যাবো”। আমি জানতাম যে অসীমদা কলেজের অনেকের সাথেই যোগাযোগ রাখে, তাই ওর কথায় আশ্চর্য হই নি। তবুও আমি অসীমদাকে ছোট্ট একটা প্রশ্ন করেছিলাম “অসীমদা, তুমি যে মাষ্টারমশাইয়ের সাথে দেখা করতে আসবে, ওনার নামটা বলতে পারবে?” ব্যাস এখানেই সমস্যা। তবে অসীমদার উত্তর ধারেকাছেই ছিলো, বললো অনিল চৌধুরী বা অরুন চৌধুরী, এই দুটোর যে কোন একটা। যাক, তাও নামের ধারে কাছে আছে। আমি বললাম, যদি ভুলে যাও, তবে আনারকলি স্যার বলতে পারো, আমার বা স্যারের কারোর আপত্তি নেই।

বাবাকে বললাম, তোমার একজন ছাত্র অন্তত তোমার নামের কাছাকাছি বলতে পেরেছে। বাবা একটু হেসে নিলো। বাবা জানতো উনার কি নামে সকলে চেনে, এবং এ নিয়ে উনার কোন রাগ বা ক্ষোভ ছিলো না। বরং মজাই পেতেন। আর একজন অন্তত ছাত্র যে উনার নামের কাছাকাছি বলতে পেরেছে, এটাতেও মজা পেয়েছিলেন।

অসীমদার নির্দেশে, কিভাবে আমার বাবার নাম অনিল কুমার চৌধুরী সংক্ষেপে এ. কে. সি. ধীরে ধীরে আনারকলিতে পরিণত হল এই নিয়ে কয়েক লাইন লিখতে বসলাম। এই নিয়ে একাধিক গল্প প্রচলিত আছে, কিন্তু আসল নামকরণের ইতিহাস অনেকেই জানেন না। আমার বাবাও অনেক খোঁজ নিয়েছিলেন, কেন ওনার এইরকম একটা নাম হয়েছিলো। একজন পুরুষমানুষের নাম আনারকলি? পরে বাবাও মেনে নিয়েছিলেন যে সারা যে বিই কলেজের সঙ্গে যুক্ত সকলে ওনাকে এই নামেই অমর করে রাখবে।

আনারকলি নামের ইতিহাস, যেটা আমি বাবার কাছেই শুনেছি তা হলো যে বাবা খুব ভালো গান গাইতেন। ১৯৫১ সালে যখন বি ই কলেজ জয়েন করেন সেই সময়ে অনেক পাড়ার প্রোগ্রামে গান করতেন। এরপর ১৯৫৫ সালে বাবা যখন Wisconsin ইউনিভার্সিটিতে MS করছিলেন সেই সময় ওখানকার বাঙালি অ্যাসোসিয়েশন-এর বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও বাবা গান গাইতেন। একবার এরকমই এক অনুষ্ঠানের পরে ওখানের কয়েকজন ভদ্রলোক এসে বাবাকে জিজ্ঞেস করেন বাবা সলিল চৌধুরীর ভাই কিনা। কেন এই কৌতুহল হয়েছিলো জানিনা! বাবা সেই সময়ে প্রচুর আই পি টি এর গান করতেন, যেগুলোর অনেক সুর সলিল চৌধুরীর দেওয়া। আইপিটিএ-র নাম তখন ধীরে ধীরে লোকে জানতে পারছে, সলিল চৌধুরীর পরিচিতিও বাড়ছে। প্রশ্নটা বাবাকে করা হয়েছিল কারণ বাবার নামের সাথে সলিল চৌধুরীর নামের মিল আছে আর চেহারায় মিল না থাকলেও ডেফিনিটলি গায়ের রঙে মিল তো ছিলই!

সম্প্রতি আমাদের এক সিনিয়র অজয় দেবনাথদা (১৯৭০, সিভিল) বাবার জন্মদিনে উপলক্ষে বিই কলেজ ফেসবুক গ্রুপে একটা পোস্ট করে। সেখানেও সিনিয়র দাদাদের বাবার আনারকলি নামকরণের ইতিহাস নিয়ে নানান রকম জল্পনা কল্পনা চলে। যেমন একদল বলেন ১৯৫৩ সালে বাবা নাকি ব্যাতাইতলায় ঝর্ণা সিনেমায় তখনকার দিনের সুপারহিট আনারকলি দেখতে গিয়েছিলেন, আর একটা গান গুনগুন করে গাইছিলেন। ছাত্ররা শুনতে পায় আর তখনই নাম হয় আনারকলি। আবার ভিন্ন মতও আছে, যেমন আনারকলি সিনেমায় পায়রা ওড়াবার একটা দৃশ্য ছিল। ১৯৫৬ সালে কলেজের সেন্টিনারিতে কলেজ থেকে শান্তির প্রতীক হিসেবে পায়রা ওড়ানো হয়েছিল এবং বাবা নাকি ওই পায়রাগুলো উড়িয়েছিলেন। তখন থেকেই বাবার নাম আনারকলি হয়ে যায়। আবার আরেকজন আনারকলি নামকরণের অন্য আরেক গল্প শোনান। তার ধারণা ‘A’ of Anil stands for ‘Anar’ & ‘K’ of Kumar stands for ‘Kali’ (I guess it is because if his complexion) & AKC became Anarkali.

বাবার ছোট্ট একটা Bio দিলাম।

Prof. Anil Kumar Chaudhuri was born on 5th July 1926 in a small village named Kanchan in Narayangunj Mahokuma (sub division), District Dhaka of the then East Bengal. He was the 6th child of 7 siblings. His father was a practicing lawyer at Narayangunj Munsef Court. Prof. Chaudhuri moved to Narayangunj from his ancestral village at the age of 5, and was admitted to a school called Bar Academy. He studied in that school till the 5th standard, and then moved to Narayangunj High School in the 6th standard. He completed his matriculation with distinction in 1942, and joined Hooghly Mohsin College thereafter. He passed the Intermediate Science (I.Sc.) in 1944 with a Gold Medal called KATYANI GOLD MEDAL and then took admission at Ripon College in 1946 and enrolled at Benaras Hindu
University for the undergraduate course in Engineering. After Graduation as an Electro-Mechanical Engineer in 1950, he joined B.E. College in 1951 as a Demonstrator.

In 1955 he went to Wisconsin University, Madison, U.S.A. for higher studies. He came back to India in 1956 after completing his M.S. in Hydraulics & Hydraulics Machines and continued to teach in B.E. College. He did extensive Research Work on various Govt. of India sponsored projects like Development of Electro Hydraulic Actuator, Hydraulic Transportation of Solids, sponsored by BCCL, Lake Town water Treatment Plant – Model Study, Development of 60 ft. Tilting Flume etc. to name a few. 60 ft Tilting Flume was developed at the Hydraulics Laboratory, of Applied Mechanics Department, B.E. College and is still being used by PG students and Research Scholars. In 1972 he represented Govt. of India as a delegate of 13th International Congress of Theoretical & Applied Mechanics held in Russia & visited a number of Hydel Power Plants of Europe. Prof. Chaudhuri became Head of the Applied Mechanics department in 1975 and continued in that capacity till his retirement in 1986. He got an extension for two years, and finally demitted office in 1988 after a long association of 37 years with B.E. College.

He was the Superintendent of Hostel No.13 since its inception and continued in that capacity till 1978.

After a brief illness he passed away on 11th September 2008 at Delhi while on a visit to my place.

আমার বাবা খুব নাটক করতেন। এলবাম থেকে একটা পুরনো ফটো দিলাম।

১৯৫৩ সালের আনারকলি সিনেমায় অনেক গান ছিল। যদিও বাবা জীবনে কোনদিন হিন্দি গান করতেন না এবং খুব একটা পছন্দও করতেন না কিন্তু আনারকলি রিলিজ হওয়ার পর থেকেই হঠাৎই বাবার নাম আনারকলি হয়ে গেল! কিন্তু এটা নিশ্চিত যে বাবা কোনদিনই আনারকলির গান গাননি বা কোন হিন্দি সিনেমার গান গাননি। হয়তো বাবার ইনিশিয়াল এবং যেহেতু গান-বাজনা করতেন আর আনারকলি মুভিতে অনেক গান ছিল সবকিছু মিলিয়ে কারুর উর্বর মস্তিষ্ক থেকে এই নামটার উৎপত্তি হয়েছিল। কিন্তু সেই “উৎপত্তি” যে এরকম ব্যাপক পরিচিতি লাভ করবে যে চার দশক ধরে ছাত্ররা যে আমার বাবাকে এই একটা নামেই চিনবে, এটা বাবা ভাবতেই পারে নি।

মজার ব্যাপার এখনো, মানে এই ২০২৩ সালেও অনেক সময় কোন এক্স-স্টুডেন্ট এর সঙ্গে প্রথম আলাপে বাবার নাম বলতে ঠিক মনে করতে না পারলেও যেই মুহুর্তে আমি আনারকলি বলেছি এক মুহুর্তে চিনে ফেলেছেন। এতই পপুলার ছিল বাবার এই আনারকলি নাম। কিন্তু, আগেও বলেছি, আবার বলছি, এই নিয়ে বাবার কোন রাগ বা ক্ষোভ ছিলো না, বরং মজাই পেতেন।

Sahityika Admin

2 comments

  • Prof Anil Kumar Choudhury was very friendly with the students.In fact he was more close to student community than the college administration . He was not an alumni of B.E.College but we all used to consider him as part and parcel of our beloved Institution Bengal Engineering College. He was a chain smoker. After retirement he used to live in Deshapriya Park Area very close to our house . I used to often meet him . Once he came to our house for a short time. Initially he was not willing to give his house for promoting but one day he told me “Asok ,Bari ta ar rakhte parlam na , Chele meyera to Keu asbe na Tai promoter Kumarkei Die Dichhi. ” Barita ekhan Flat Bari Hoeche . Ke thaken Jani Na. My pronam to Sir Prof ANIL KUMAR CHOUDHURI .

  • শুধু পড়ানো নয়, আমাদের সব প্রোগ্রামে স্পোর্টস, রিইউনিয়ন, হস্টেল সুপারিন্টেন্ডেন্ট, অসুস্থ ছাত্রকে নিজের গাড়িতে হাসপাতালে পাঠানো, সবকিছুতেই তিনি ছিলেন অগ্রনী। আমরা অনেক ভাগ্যবান যে এমন শিক্ষকের সান্নিধ্যে এসেছিলাম