সাহিত্যিকা

আমার কথা (শিক্ষক দিবস)

আমার কথা (শিক্ষক দিবস)
সুকৃৎ বসু, ১৯৭৩ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং

শিক্ষক দিবস এ সমস্ত শিক্ষা গুরু কে সশ্রদ্ধ প্রণাম !
জীবনের গোধূলি বেলায় যখন স্মৃতি রোমন্থন করি – অনেক শিক্ষাগুরু কে মনে পড়ে- বাবা,মা, দিদি থেকে শুরু করে -স্কুলের শিক্ষক, কলেজের প্রফেসর, বিশেষ কিছু বন্ধু বান্ধব, কর্মক্ষেত্রের ম্যানেজমেন্ট গুরু ও কিছু আত্মীয় স্বজন। তাঁরা সকলেই আকাশ ভরা তারকা মন্ডলী !
তাঁদের সকলের কাছেই আমি ঋণী – ও কৃতজ্ঞ !!

কিন্তু সব থেকে উজ্জ্বল নক্ষত্র – আমার শ্রদ্ধেয় স্কুল শিক্ষক – বর্ধমান টাউন স্কুলের বিজ্ঞান এর শিক্ষক -অজিত কুমার ঘোষ- আমার শিক্ষার ভীতের মন্ত্রমশলা ! ওনার কৌশল , ওনার একাগ্রতা, ওনার আন্তরিকতা পূর্ণ শাসন মনে রাখার মতো। কখনো ভুলতে পারবো না।
মাটিতে মাদুর পেতে উনি পড়াতে বসতেন। আমরা সাত আট জন একসঙ্গে পড়তাম। উনি ধুতি ও গেঞ্জি পড়ে পড়াতে বসতেন – হাতে থাকতো একটা ছড়ি ! দোষ করলে – পড়া তৈরি করে না এলে – ভীষণ রেগে যেতেন। ছড়ি দিয়ে হাতে মারতেন।
বলতেন – ” হাত পাত – সপাং ছড়ি চালাতেন!”

মনে পড়ে আমি কিন্তু কোনদিন ছড়ি খাইনি। বরাবর পড়া তৈরি করে ওনার কাছে যেতাম। ওনার সামনে বসে উত্তর লিখতে হতো। উত্তর ঠিক হলে উনি খুব খুসী হতেন। উৎসাহ দিতেন ভীষণ!
বিজ্ঞান এর শিক্ষক হলেও ইংরেজি ও পড়াতেন নিজস্ব কায়দায়। ইংরেজি রচনা অন্ততঃ একশো টা লেখাতেন ও মুখস্থ করাতেন । ওনার সামনে বসে লিখতে হতো। এতো রচনা তৈরি করানোর পর কিছু একটা লিখে ফেলা কঠিন হতো না।

Chemistry এর Definition লিখতে বলতেন- ” “একদম লাইন বাই লাইন মুখস্থ করবে- দাড়ি কমা বাদ দিলে চলবে না”! আমরাও সেভাবেই মুখস্থ করতাম।
মনে আছে ক্লাশ টেনে – Chemistry তে ৯৯/১০০ পেয়েছিলাম। অজিত স্যার মহাখুশি হয়েছিলেন!

মনে পড়ে লাল কালির দোয়াতে পেন ডুবিয়ে খাতা চেক করতেন। কখনো কখনো ভুল করে পাশে রাখা চায়ের গ্লাস এ পেনটা ডুবিয়ে ফেলতেন ! সে এক মজার দৃশ্য হতো! বেজায় রেগে যেতেন!

পড়া শেষে আমরা সাইকেল বার করে বাড়ি ফিরতাম।
উনি সস্নেহে দাঁড়িয়ে থেকে বলতেন – “ধীরে ধীরে গাড়ি বার কর!” সাইকেল কে গাড়ি বলাতে আমরা মুচকি মুচকি হাসতাম!

আজ ও সেকথা মনে করলে অজিত স্যারকে সেলাম করতে ইচ্ছে করে!!
আজ উনি কোথায় …. প্রণাম স্যার …

Sahityika Admin

Add comment