সাহিত্যিকা

আচার্য স্মরণে •••

আচার্য স্মরণে •••
অর্ণব চ্যাটার্জি, ১৯৮৩ সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং

সার্ভে ক্যাম্প
বি ই কলেজের এক মাসের সার্ভে ক্যাম্প ছিল সিভিলের ছাত্রদের কাছে এক বিরাট উন্মাদনা। এই একমাস বাঁধনহারা জীবন, অচেনা নতুন জায়গায় গিয়ে নানান অভিজ্ঞতা সঞ্চয়, তারপর হোস্টেলে ফিরে তারিয়ে তারিয়ে কিছুটা সত্য এবং কিছুটা অসত্য মিলিয়ে মিশিয়ে অন্যান্য বন্ধুদের সাথে সেই অভিজ্ঞতার গল্প, এটাই ছিল এক পরম্পরা। আমরা আভাসে ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিতাম, যারা সিভিলের নয়, তাঁরা ছাত্রজীবনের এক বিশেষ অভিজ্ঞতার আস্বাদ পেলো না। এরপর কোনো এক অজ্ঞাত কারণে এই সার্ভে ক্যাম্প আশির দশকের মাঝামাঝি বন্ধ হয়ে যায়।

আমাদের সার্ভে ক্যাম্প হয়েছিল তিলপারা ব্যারেজের ধারে, নিকটবর্তী শহর ছিল সিউড়ি। কনকনে ঠান্ডার এক সকালে কৈশোর থেকে যৌবনে সদ্য পা রাখা আমরা চুরাশিটি ছেলে পাঁচজন শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে হৈ হুল্লোড় করতে করতে সার্ভে ক্যাম্পে পা রেখেছিলাম।
শিক্ষক – ছাত্রের নিবিড় সম্পর্কের সেই একখানি ছবি হঠাৎই খুঁজে পেলাম। ছবিটি ১৯৮১-৮২ সালের আমাদের সার্ভে ক্যাম্পে তোলা। শ্রদ্ধার সাথে শিক্ষকদের নাম একবার স্মরণ করে প্রণাম জানাই। পিছনের সারিতে দাঁড়িয়ে বাঁ দিক থেকে প্রথম জনের নাম এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না। দ্বিতীয়জন প্রফেসর অমল দত্ত, তৃতীয়জন প্রফেসর প্রণব কুমার লাই, চতুর্থজন প্রফেসর প্রদীপ কুমার রায়, আর পঞ্চমজন প্রফেসর বিকাশ চ্যাটার্জি।

প্রফেসর প্রদীপ রায় এবং আমাদের ব্যাচ মেট আনিসুর রহমান (বসে, বাঁ দিক থেকে দ্বিতীয়) আজ আর আমাদের মধ্যে নেই। আনিসুর সম্প্রতি কভিডের দ্বিতীয় ঢেউ এ প্রাণ হারিয়েছে। স্যার এবং আনিসুর – দুজনের স্মৃতি আমাদের মনে চিরকাল অটুট থাকবে। বিদেহী আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সার্ভে ক্যাম্প এর কিছু স্মৃতিচারণ করছি।

ক্যাম্পে বেশ কিছু সময় অতিবাহিত হয়ে গেছে। একদিন চা জলখাবার হয়ে যাওয়ার পর সবে একটু থিতু হচ্ছি সকলে মিলে। এমন সময় জনা দুই তিনেক ছেলে হাঁপাতে হাঁপাতে এসে বলল বালির চরে প্রায় এক ফুট লম্বা পায়ের ছাপ দেখা গেছে। আমাদের ক্যাম্প থেকে অনতিদূরে বিস্তীর্ণ বালির চর, আর আরও কিছুটা গিয়ে একটি জলপ্রবাহ। ঐ ছেলেরা খোলা আকাশের নীচে দিনের প্রাকৃতিক ক্রিয়াকর্ম সারতে গিয়েছিল এবং সেখানে গিয়ে এই ভয়াবহ দৃশ্য দেখতে পায়। স্বাভাবিক ভাবেই সকলেই ঘাবড়ে গেলো। এমনকি স্যারেরাও। বিরাট জল্পনা কল্পনাও শুরু হয়ে গেলো। এ নির্ঘাত ভুতের পা। যারা এসব ব্যাপারে পন্ডিত তাঁরা মতামত দিলেন ভুত না বোধহয়, অতবড় পা যখন, তখন বহ্মদোত্যি ছাড়া অন্য কিছু হতেই পারে না।

আলোচনা চলাকালীন হঠাৎই সকলের খেয়াল হলো বিজ্ঞানের ছাত্র হয়ে ভুতে বিশ্বাস? এটা প্রেস্টিজের ব্যাপার। সকলের সম্মলিত মত এই দাঁড়ালো যে ভুত বোহ্মদোত্যি বলে কিছু নেই। আর সন্দেহের তীর ঘুরে গেলো ইয়েতির দিকে। অতো বড় পা ইয়েতি ছাড়া অন্য কিছুর না। কিন্তু বরফে ঢাকা পাহাড়ের মাথা থেকে ইয়েতি এই বালির চরে আসবে কি ভাবে? স্যারেরাও চিন্তিত। এরকম রহস্য আবৃত পরিবেশে সব থেকে ভয় পেয়েছিলেন বোধহয় প্রফেসর লাই। হাবেভাবে সুষ্পষ্ট। প্রফেসর প্রদীপ রায় তাঁর স্বভাব সিদ্ধ রসিকতা করে বললেন ইয়েতি বা ভুত যাই হোক এখানে আমরা আসার পর ভয়ে পালিয়ে গেছে কারণ তার ফিরে আসার পদচিহ্ন নেই। এই রহস্য ভেদে প্রফেসর রায় যেন ফেলুদা আর প্রফেসর লাই জটায়ু।

এইরকম এক জমজমাট রহস্যঘন পরিবেশে স্থানীয় চায়ের দোকান থেকে কে যেন খবর নিয়ে এলো এখানে নাকি মাঝে মধ্যে বাঘও বের হয়। গ্রামের গরু ছাগল নিয়ে যায়। মানুষকে কিছু বলে না। “হ্যাট হ্যাট” করে তাড়িয়ে দিলে বাঘগুলো নাকি চলেও যায়। এটা সার্ভে ক্যাম্প না জঙ্গল সাফারি, কোনটা ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। অনেকের মনেই তখন একটা মানসিক অস্থিরতা। থিওডোলাইটে চোখ রাখলে মনে হয় বিশালাকার ইয়েতি এগিয়ে আসছে। বেশ একটা গা ছমছমে পরিবেশ তৈরি হয়ে হলো। সার্ভে মাথায় উঠেছে। সকলে ভয়ে সিঁটিয়ে আছে সন্ধ্যায় প্রকৃতির ডাক এলে কি হবে। সাহসে ভর দিয়ে প্রাকৃতিক ক্রিয়া কর্ম করতে গিয়ে অর্ধসমাপ্ত অবস্থাতেও চলে আসছে অনেকে, এই বুঝি ইয়েতি এসে টেনে নিয়ে যায়।

অবশেষে রহস্যভেদ হলো। স্যারেরা চাপাচাপি করাতেই সত্যিটা বেরিয়ে এলো। সন্দীপন গোস্বামী, আমাদের দেওয়া নাম হাওয়া’দা। ওর পায়ের পাতা এমনিতেই লম্বা। মাথায় দুষ্টবুদ্ধি এসেছিল। অনায়াসে নিখুঁত ভাবে বড় বড় পায়ের ছাপ তৈরি করেছিল নিছকই মজা করার জন্য। স্যারেরাও কিছু বলেন নি ওকে। ওনারাও উপভোগ করেছিলেন ব্যাপারটাকে। ছাত্ররা তো ছোটো ভাইয়ের মতো। এটুকু দুষ্টুমি কে যদি প্রশ্রয় না দি তা হলে কিসের শিক্ষক আমি? এই ছিল তখনকার শিক্ষকের চিন্তাধারা। বছরের পর বছর কতো ছাত্র আসে আর যায়। একদল ছাত্রের সাথে সম্পর্ক তৈরি হতে না হতেই নিমেষে শেষ হয়ে যায়, আবার নতুন সম্পর্ক গড়ে তোলার পালা।

বেদনাতুর এক শিক্ষকের করুন স্মৃতিচারণের সুর আমরা শুনতে পাই কবি কালিদাস রায়ের “ছাত্রধারা” কবিতায়•••
“রাজপথে দেখা হলে কেহ যদি গুরু ব’লে
হাত তুলে করে নমস্কার,
বলি তবে হাসিমুখে – ‘ বেঁচে বর্তে থাকো সুখে’,
স্পর্শ করি কেশগুলি তার।
ভাবিতে ভাবিতে যাই – কী নাম ? মনে তো নাই,
ছাত্র ছিল কত দিন আগে;
স্মৃতিসূত্র ধরি টানি, কৈশোরের মুখখানি
দেখি মনে জাগে কি না জাগে।”

********

প্রফেসর সনৎ কুমার বিশ্বাস
আমাদের সময়ে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কোনো বিষয় পড়ানোর সাথে তাঁর প্রত্যক্ষ যোগ ছিল না। কিন্তু তিনি কলেজে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ছিলেন আর ছিলেন এক বর্ণময় চরিত্রের রাশভারি মানুষ, যাকে বলে প্রথম দর্শনেই সম্ভ্রম জাগানো ব্যক্তিত্ব। আজ এমনই এক আচার্যকে স্মরণ করব ।

রোজকার মতো সেইদিনও জানাদা’র স্টেশনারি দোকান আর হরেনদা’র ক্যান্টিনের সামনে রাস্তার ধার দিয়ে হলদে রঙের খাটো পাঁচিল টা যেখানে সামান্য বেঁকে গিয়ে ফার্স্ট লবির দিকে চলে গিয়েছে ঐ জায়গায় ক্লাস পালিয়ে আসা কিছু ছাত্রের একটা আড্ডা বেশ জমে উঠেছে। দু’চারজন ৮১-৮২ সালের দাদারাও ছিলেন সে আড্ডায় । এমন সময় দেখলাম এক ভদ্রলোক, স্বল্প স্থুলাকায়, চশমার ফাঁক দিয়ে ডানদিক বাঁদিক জরিপ করতে করতে গটগট করে ফার্স্ট গেটের দিক থেকে এগিয়ে আসছেন। তাঁর গলায় চওড়া নেকটাই আর ঠোঁটের কোণ থেকে ঝুলছে ধূমায়িত একটি পাইপ । আমি এর আগে কোনো দিন দেখিনি ওনাকে। দাদাদের মধ্যে দু একজন চাপা স্বরে বলে উঠল, পাইপ আসছে।

আড্ডার রঙ মূহুর্তের মধ্যেই ফিকে হয়ে গেলো। দেখলাম আমাদের মধ্যে উপস্থিত অনেকেই মুখে সিগারেট/ বিড়ির ধোঁয়া কিছুটা গলার মধ্যে পুরে আর কিছুটা বাইরে ছেড়ে যে যার জলন্ত সিগারেট/বিড়ি আড়াল করতে ব্যস্ত। আমরা যারা ফার্স্ট ইয়ারের ছিলাম তারা ঘটনার আকস্মিকতায় বেশ নার্ভাস। তৎকালীন তদানীন্তন বিই কলেজের জীবনযাত্রার বিশেষ অঙ্গ চারমিনার আর বিড়ির দেশি ধোঁয়ার সাথেই আমরা পরিচিত। সেখানে পাইপ নির্গত অভিজাত সাহেবী ধোঁয়া? বেশ একটা কসমোপলিটান পরিবেশের মধ্যে জানলাম যে রাশভারি ঐ ভদ্রলোক ট্রেনিং আর প্লেসমেণ্ট ডিপার্টমেন্টের বিভাগীয় প্রধান, ড: সনৎ কুমার বিশ্বাস, উনি নিজের পরিচয় দেন ড: প্রফেসর সনৎ কুমার বিশ্বাস। আরও জানলাম, ওনাকে নাকি কেউ কোনো দিন মুখে পাইপ ছাড়া দেখে নি, সে পাইপে তামাক থাকুক বা নাই থাকুক। ঠোঁটের কোণে সদাসর্বদা থাকতো ঝুলন্ত একটি পাইপ আর এই পাইপই ছিলো ওনার স্বাক্ষর চিহ্ণ। ৬০ এর দশকে থেকেই ওনার নাম ছিলো চিমনী আর তারপরে হয়েছিলো পাইপ। ছাত্ররা ওনাকে পাইপ বিশ্বাস বলেই চিনতো। বলা যায় উনি নিজেই নিজের নিক নেম তৈরি র কারিগর । আমাদের বেশ কিছু শিক্ষক তাঁদের নিজ নিজ নিক্ নেম সম্পর্কে অবগত ছিলেন । কিন্তু ড: বিশ্বাসও ছাত্রদের দেওয়া নিজের “ডাকনাম”টি জানতেন।

বছর ঘুরে যায়, সময় এগিয়ে চলে। চাকরি নিয়ে চিন্তা ভাবনা মাথায় এসে ভিড় জমায়। ড: বিশ্বাস কে আরও কাছ থেকে দেখা বা জানা চেনার সুযোগ বাড়তে থাকে কারণ ছাত্রদের ক্যাম্পাস ইন্টারভিউ এর পাসপোর্টে ছাপ মারার দায়িত্ব ছিল উনার উপর।

ছাত্রদের পোশাক আশাক এর দিকে ওনার ছিল বিশেষ নজর। প্যান্টের মধ্যে জামা গুঁজে না পরলে আর পায়ে চপ্পল দেখলে ভীষণ রেগে যেতেন। একই দৃশ্য বারকয়েক চোখে পড়েছে। ওনার সামনে কোনো ছাত্র মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আর উনি নিজের কোমরে একটা হাত আর অন্য হাতে পাইপটা ধরে এক বিশেষ ভঙ্গিতে ছাত্র টিকে বেশভূষার ব্যাকরণ পাঠ করাচ্ছেন। ছাত্রটি বাংলায় কিছু বলার চেষ্টা করলেই ভীষণ তিরস্কার করে বলতেন Oh! you won’t get any job because you can’t speak in English. আমাদের কলেজ ছিল ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার আঁতুড়ঘর। কিন্তু সেখানে তো ইংরেজিতে কথা বলা বা সাহেবী আদবকায়দা শেখানো হতো না। সেই সময়ে বিইকলেজে যেসব ছেলেমেয়ে আসত তাদের অনেকেই মফস্বলের আটপৌরে বাঙালি পরিবেশ আর পরিমণ্ডলে মানুষ, স্কুলে বাংলা মাধ্যমেই পড়াশুনা করেছে। ইংরেজি লেখায় আমাদের কোনো খামতি নেই কিন্তু বলার অভ্যাস না থাকায় ডঃ বিশ্বাসের সামনে অসহায় আত্মসমর্পণ করা ছাড়া অন্য আর উপায় থাকতো না। হোস্টেলে ফিরে সান্ধ্য আড্ডায় পাইপের উপর পুঞ্জীভূত ক্ষোভ আমাদের আলোচনায় বিশেষ স্থান পেতো।

আমাদের তখন থার্ড ইয়ার। একদিন আমি আর আমার এক বন্ধু ট্রেনিং ডিপার্টমেন্টের করিডোর ধরে এলোমেলো পায়ে হাঁটছি। উপরে কয়েকটি লাইট কেটে গেছে। আলোআঁধারি পরিবেশে খেয়ালই করিনি এটি ড: বিশ্বাসের সাম্রাজ্য, আর করিডোরের পাশেই ওনার বসার ঘর। ঐ যে কথায় বলে যেখানে বাঘের ভয়। এক্কেবারে ড: বিশ্বাসের মুখোমুখি আমরা দুজন, উমেশ আর আমি। উমেশ কে উনি নিজের ঘরে নিয়ে গেলেন ••• hey come here. আমাকে বোধহয় ওনার ঠিক মনে ধরে নি. আমি বাইরে একটু সরে গিয়ে উমেশের ফেরার অপেক্ষায় রইলাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই চওড়া হাসি মুখে নিয়ে ড: বিশ্বাসের ঘর থেকে বেরলো উমেশ যেন চাকরিটাই হয়ে গেছে। কি বলল রে পাইপ? আমি আগ্রহ সহকারে জিজ্ঞেস করলাম। কারণ তখন পাইপ মানেই এক অজানা উত্তেজনার বারুদ। উমেশের উপরেও ড: বিশ্বাস ইংরেজিতে কথা না বলার জন্য যখন সবে সুর চড়াতে শুরু করেছেন উমেশ তখন আত্ম পক্ষ সমর্থনে একটা যুক্তি খাড়া করে । উমেশ খুব সহজ বাংলায় কলেজের আদ্যক্ষর “বেঙ্গল” শব্দটির উপর বিশেষ জোর প্রদান করে বলেছিল, স্যার এইটা তো “বেঙ্গল” ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, তাই, স্যার, বাংলাতে কথা বলছি. অসুবিধা কোথায়? তারপর নাকি ড: বিশ্বাস আর কথা বাড়ান নি। মনে হয় উমেশে র সহজ সরল চিন্তা ধারায় স্যারের মন অন্তত তাৎক্ষণিক ভাবে ভিজে গিয়েছিল।

ড: বিশ্বাসের সম্পর্কে ছাত্রদের মুখে মুখে ফেরা একটা ঘটনা বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। বোধহয় উনিই ওনার কোন প্রিয় পাত্রকে ঘটনা টি বলেছিলেন। উনি একবার আমেরিকার রাস্তায় গাড়ি চালিয়ে চলেছেন; হঠাত যান্ত্রিক গোলোযোগে ওনার গাড়িটা থেমে যায়। ওনার ঠিক পেছনে একটি গাড়ি ক্রমাগত হর্ণ দেওয়ার ফলে উনি বিরক্ত হয়ে গাড়ি থেকে নেমে আসেন আর সাথে সাথে ওই হর্ণ দেওয়া গাড়ির চালকও বেশ উত্তেজিত হয়ে গাড়ি থেকে নেমে পরস্পরের দিকে বাকযুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে অগ্রসর হতে থাকেন। ছ’ ফুটের উপর লম্বা অত্যন্ত সুদর্শন ওই ভদ্রলোক আমাদের স্যারের কাছাকাছি হ’তেই নাকি নিজের ভুল বুঝতে পারেন আর তাঁর সমস্ত রাগ জল হয়ে যায়। অত্যন্ত লজ্জিত হয়ে স্যারের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে ভদ্রলোক বলেছিলেন •••• Oh you are Dr. Biswas … that great scientist from India … I’m extremely sorry, Sir….. I disturbed you by repeatedly pressing the horn. কে এই ভদ্রলোক জানেন যিনি লজ্জিত হয়ে আমাদের স্যারের কাছে বারংবার ক্ষমা চেয়েছিলেন সেদিন? উনি ছিলেন গ্রেগরি পেক। স্যার সেরকমই বলেছিলেন তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলে। আমাদের স্যারের সঙ্গে রোম্যান হলিডের নায়কের এরকম একটা সাক্ষাত কলেজ প্রাঙ্গনে প্রায় লোকগাথায় পরিণত হয়েছিল। ঘটনার খুঁটিনাটি বিবরণ স্যারের কাছ থেকে শুনতে গেলে আবার সেই ইংরেজিতে কথা বলার প্রশ্ন উঠবে। এই ভেবে বোধহয় আর কেউ কোনোদিন অগ্রসর হয় নি।

ক্যাম্পাস ইন্টারভিউয়ের হাত ধরে একটি বিরাট সংখ্যক ছাত্র ছাত্রীদের চাকরি র পিছনে স্যারের অবদান অনস্বীকার্য । আজ উনি জীবিতাবস্থায় থাকলে উমেশকে নিয়ে ওনার সাথে দেখা করে আমেরিকার রাস্তায় গ্রেগরি পেকের সঙ্গে সেদিনের সাক্ষাতের বিশদ বিবরণ শুনতে চাইতাম। উনিও হয়তো আজ আর ইংরেজিতে কথা বলার জন্য এই বৃদ্ধ ছাত্রদের পীড়াপীড়ি করতেন না।

পরবর্তী কালে ড: বিশ্বাস কলকাতার শেরিফ হয়েছিলেন।
যেখানেই থাকুক ভালো থাকবেন স্যার প্রণাম ।

Sahityika Admin

Add comment