ছোটমামার VO রহস্য
ইন্দ্রনীল ঘোষ, ১৯৮৬ ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং
ছোটমামার রহস্য সমাধানের যত গল্প আজ পর্যন্ত আপনাদের শুনিয়েছি, তার সবকটিতেই আমি ডিংকা, সরাসরি জড়িয়ে থেকেছি, মামার সহকারী হিসাবে। কিন্তু যে গল্পটি আজ আপনাদের শোনাব, তাতে আমি থাকতে পারি নি, অ্যানুয়াল পরীক্ষার জন্য। গল্পটি পরে মামার মুখে শোনা। তাই এখানে পুরো গল্পটাই মামার জবানবন্দীতে পেশ করলাম। অর্থাৎ, এখানে ‘আমি’ মানে, ছোটমামা তার নিজের কথা বলছে।
*************
সকলেই আজকাল একটা দুটো হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের মেম্বার। আমাদেরও এরকম একটা গ্রুপ আছে, স্কুলের উচ্চমাধ্যমিক ব্যাচের। সেখানে প্রতিদিন শুরু হয় ‘গুড মর্নিং’ এর ছবি দিয়ে, যাতে চাইনিজ ভাইরাস থাকার প্রবল সম্ভাবনা। দুই একজন অবশ্যই ব্যতিক্রম। তাঁরা নিজের বাগানে বা টবে সদ্য ফোটা ফুলের ছবি, কিংবা মর্নিং ওয়াকে বেরিয়ে, কুয়াশাবৃত দিগন্ত, বা বৃষ্টি ভেজা পথে মায়ের হাত ধরে রেইনকোট পরিহিত স্কুলগামী শিশু পড়ুয়ার ছবি, নিজের হাতে ক্যামেরাবন্দী ক’রে পোস্ট করে। তবে অধিকাংশেরই, কেন জানি না, নিজের আঙুলে দু’চারটে শব্দ টাইপ ক’রে, পরস্পরের খবরাখবর নিতে, বড়ই আলস্য বা অনীহা। যাই হোক, সে ভিন্ন প্রসঙ্গ। এবার আসল ঘটনায় আসা যাক।
এরকম অনাড়ম্বর দিনযাপনের মাঝে, গ্রুপে হঠাতই একদিন মৃদু আলোড়ন এলো। কেউ কেউ নাকি, একরকম অদ্ভুত উড়ো ফোন পাচ্ছে। যে ফোন করছে, সে নিজের পরিচয় দিচ্ছে না। কিন্তু যাকে ফোন করছে, তাঁর নাড়ি নক্ষত্র নখদর্পণে। কেউ বুঝে উঠতে পারছে না, কে সেই ব্যক্তি হতে পারে? স্বভাবতই জন্ম নিচ্ছে কৌতূহল, রাগ, হতাশা, ভয়।
আজকাল সকলেই ব্যাঙ্কের ক্রেডিট কার্ড, লোন, এটা-সেটার অফার, ইত্যাদি ফোনের জ্বালায় অল্পবিস্তর ব্যতিব্যস্ত। তার উপর জালিয়াতদের নিত্যনতুন পদ্ধতি। তাই এই রকম ফোন পেলে, একটু শঙ্কিত হওয়া অমূলক নয়। সেই অজ্ঞাতকুলশীল দূরভাষী অবশ্য কোনও রকম ভীতি প্রদর্শন করছেন, তা নয়। কিন্তু নিজের উদ্দেশ্যও খোলসা ক’রে কিছু বলছেন না। শুধু এটুকু বুঝিয়ে দিচ্ছেন যে, তাঁর এবং তার বন্ধুবান্ধবদের সম্পর্কে তার অজানা কিছুই নেই।
আমি নিজে কয়েকদিন একটু ব্যস্ত ছিলাম। যখন নজরে এল, তখন গ্রুপের গত সাতদিনের পোস্টগুলো একে একে পড়ে ফেললাম। সত্যিকারের রহস্যের গন্ধ পেয়ে অ্যান্টেনা সজাগ হয়ে উঠল। টুকরো টুকরো বক্তব্যগুলোকে ঘটনাক্রম অনুযায়ী এইভাবে সাজালাম।
(১) প্রথম ফোনকলটি আসে Mrs. T এর কাছে। তিনি হাসপাতালে নিজের পেশায় অত্যন্ত ব্যস্ত থাকেন। ফলে এই ধরণের কলে প্রথমে বিরক্ত বোধ করলেও, যখন বক্তা তার ব্যক্তিগত বিষয়ে কিছু তথ্য পেশ করলেন, তখন স্বভাবতই মনে হল, নিশ্চয়ই পরিচিত কেউ। কিন্তু বারবার ‘আপনি কে?’ জিজ্ঞাসা করেও কিছু সদুত্তর মিলল না। “পরে আবার কথা হবে” বলে বক্তা ফোন ছেড়ে দেয়।
(২) দ্বিতীয়বার কল আসে, আবার Mrs. T এর কাছে। দু’দিন বাদে। কাজের চাপে প্রায় ভুলেই গিয়েছিলেন। কোনও বন্ধু বা প্রিয়জন মজা করেছে নিশ্চয়। কিন্তু এবার বক্তব্য কিছুটা বোধগম্য হল। অন্যান্য কথার সঙ্গে এটাও যেন শোনা গেল – “আপনাকে আমার খুব ভাল লাগত।”
সেরেছে, এই বয়সে পৌঁছে কার আবার পুরানো প্রেম জাগ্রত হল? স্কুল কলেজের স্মৃতি হাতড়ে তেমন কোনও মুখের ছবি ভেসে উঠল না। বাড়ি ফিরে সোজা বরের হাতে ফোনটা সমর্পন করে, বলে দিলেন, এবার ফোন এলে যেন তিনিই ধরেন।
(৩) তৃতীয় কলে রহস্য অন্য দিকে মোড় নিল। এবার কোনও মহিলা নয়। ফোন পেলেন আমাদের গ্রুপ অ্যাডমিন Mr. P। তিনি মার্কেটিংয়ের পোড় খাওয়া ব্যক্তি। তবু নাজেহাল হলেন। বক্তব্য প্রায় প্রথম কলের মত। চমকে যাওয়ার মত কিছু ব্যক্তিগত তথ্য, শুধু তার সম্পর্কে নয়, আমাদের কয়েকজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও বান্ধবীর সম্পর্কেও।
(৪) Mr.P ঘটনাটি গ্রুপে লেখার পর, আমাদের আরও এক বন্ধু Mr. C জানালেন, তিনিও একই রকম ফোন পেয়েছেন, সেই অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তির কাছ থেকে, প্রায় একই সময়ে। অর্থাৎ, Mr. C এর পাওয়া কলটি ছিল চতুর্থ কল।
(৫) দিন তিনেক চুপচাপ। সকলেই ব্যস্ত। পঞ্চম কল এলো, Mrs. T এর ফোনে। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ফোন ধরলেন তার স্বামী। ভদ্রলোক জেলার হলেও রসিক মানুষ। ফোন ধ’রে জানতে চাইলেন, “কে বলছেন?”
– Mrs. T আছেন?
– তিনি তো নেই।
– ও, কখন পাওয়া যাবে?
– আর পাওয়া যাবে না।
– কেন?
– তিনি তো মারা গেছেন।
– সে কী! কবে?
– এই তো, গত পরশু।”
ওপ্রান্তে ক্ষণিক নৈঃশব্দ। তারপর ফোন কেটে গেল।
(৬) ষষ্ঠ ফোন এলো না। উল্টে তাকেই করা হল। ক’রল আরেক বন্ধু Mr.S, স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে। যদি কিছু কিনারা করা যায়, সেই উদ্দেশ্যে। কিনারা তো হলই না, উল্টে তার সম্পর্কে এমন সব তথ্য, যেমন এন্জিনীয়ারিং কলেজে পড়তে গিয়ে যেসব অপকীর্তি ক’রেছিলেন, সেই স্মৃতি রোমন্থন করে, এমন ঘোল খাওয়াল যে, বেচারি আরও মুষড়ে পড়লেন।
তবে, একেবারে বৃথা হয় নি। একটা নতুন তথ্য ওগরানো গেল। “আপনি কি আমাদের স্কুলের প্রাক্তনী?” এই প্রশ্নের উত্তরে “হ্যাঁ” বলেই ফোন কেটে দেয় রহস্যময় বক্তা।
(৭) এরপর লাগাতার ফোন আসতে লাগল। বেশিরভাগ Mr.P এর কাছে। তার মার্কেটিং-এর চাকরি ডকে ওঠার মত পরিস্থিতি। শেষ পর্যন্ত বলতে বাধ্য হলেন, “দেখুন, আপনি যদি নিজের পরিচয় না দেন, তবে বাধ্য হব, সাইবার ক্রাইম সেলে, আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করতে।”
– আহা, এত ব্যস্ততার কী আছে?
– আপনি যেহেতু স্কুলের প্রাক্তনী, হয় তো সহপাঠী, তাই এখনও কিছু করি নি। কিন্তু এবার বাধ্য হব।”
এবার সুর একটু নরম হল, “ঠিক আছে, আগামী রবিবার বেলা ৪টে পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। ঐদিন ঐ সময় এই খেলার সাতদিন পূর্ণ হবে। আর ঠিক সেই মুহূর্তেই আমি আত্মপরিচয় প্রকাশ ক’রব। বাই বাই।”
ফোন কেটে গেল।
কথা শেষ হবার পরও কিছুক্ষণ হতভম্ব হয়ে বসে রইলেন Mr.P। কারণ, এবার গলার স্বরটা যেন একটু অন্য রকম লাগল। যেন পুরুষ কন্ঠ নয়, কেমন যেন মেয়েলি। তবে কি বান্ধবীদের মধ্যে কারও এই কাজ?
এটা নতুন আঙ্গিক। রহস্যের জট খোলার পরিবর্তে আরও পাকিয়ে গেল।
***********
সন্ধ্যা সাতটা। এক কাপ গরম কফি নিয়ে, খুব ঠান্ডা মাথায় পুরো ঘটনাবলীর পর্যালোচনা করতে বসলাম। কিছু জবানবন্দি প্রয়োজন। এতক্ষণ যা কিছু জেনেছি, সবই গ্রুপে পোস্টের মাধ্যমে। এবার কয়েকজন ভিক্টিমের সাথে সরাসরি কথা বলতে হবে। শুরু হল অ্যাকশন।
(১) প্রথম ফোন Mrs. T কে। রিং হয়ে গেল। বুঝলাম ব্যস্ত। কোই বাত নেহি।
(২) কল করলাম Mr. P কে। বেচারি এত রেগে আছে যে, কথা বলাই দায়। সরাসরি জানিয়ে দিলেন, “কাল সকালে উঠে, আগে আমি সাইবার ক্রাইম সেলে কমপ্লেইন লজ করব, তারপর ব্রেকফাস্ট ক’রব”। কোনও ক্রমে তাকে শান্ত করলাম। বুঝিয়ে বললাম, “রবিবার পর্যন্ত অপেক্ষা করেই দেখ না। ঘটনাক্রম যেদিকে ইঙ্গিত করছে, তাতে মনে হচ্ছে, আমাদের মধ্যেই কেউ। মজা করতে গিয়ে, প্র্যাঙ্ক বা প্র্যাকটিক্যাল জোকের পর্যায়ে চলে গেছে। তাই বলে তাকে হাজতবাস করানো ঠিক হবে না”।
– কিন্তু যদি বাইরের কেউ হয়? কোনও ফ্রডস্টার বা সেরকম কেউ?
– সে সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। সেক্ষেত্রে তোকে আটকাবো না। আমাকে আজকের দিনটা সময় দে। আপাতত কিছু প্রশ্নের জবাব দে। তোর কেন মনে হচ্ছে যে, সে মহিলাও হতে পারে? আগে যারা কথা বলেছে, তারা তো পুরুষকন্ঠই শুনেছে।
– আমারও আগে তাই মনে হয়েছে। কিন্তু শেষদিন কথা বলার সময় দুই একবার মনে হল যেন, গলাটা মহিলাদের মত মিহি। কোনও মহিলা যদি মুখে রুমাল দিয়ে পুরুষ কন্ঠের অনুকরণ করে, তবে এটা সম্ভব।
– হুমম। বুঝলাম।”
আসলে কিছুই বুঝি নি। সন্দেহ তালিকার বৃত্ত ছোট হবার বদলে আরও বড় হয়ে গেল। এবার যে প্রশ্নটা স্বাভাবিক ভাবে আজকাল প্রথমেই সবার মনে আসে, সেটা জানতে চাইলাম, “আচ্ছা, Truecaller -এ কী দেখাচ্ছে?” মোবাইলে Truecaller app থাকলে, কেউ কল করলে তার নাম দেখায়, অচেনা হলেও।
– ওই দুনম্বরীদের যেমন থাকে, VO sir না কী যেন।”
এবার Mr. P দুম করে এমন একটা মন্তব্য করলেন যে, শুনে হাসব না কাঁদব, বুঝে পেলাম না।
– আমি কিন্তু জানি, কালপ্রিট কে।”
অবাক হয়ে জানতে চাইলাম, “সে কী? কে সে? আর এতক্ষণ বলিস নি কেন?”
– সে আর কেউ নয়। সেটা তুই।”
রহস্য সমাধান করতে গিয়ে, নিজেও যে সন্দেহভাজনের তালিকাভুক্ত হতে পারি, সেটা উপলব্ধি করে, দুঃখ পাব, না খুশি হব, বুঝলাম না।
– শেষ পর্যন্ত আমাকেই সন্দেহ করে বসলি?
এই ভয়টাই পাচ্ছিলাম। আসল ব্যক্তিকে ধরতে না পারলে, পরস্পরের প্রতি এই সন্দেহের তীর ছোঁড়াছুঁড়ি শুরু হয়ে যাবে। মনে মনে ঠিক করলাম, যেমন করেই হোক, এই রহস্যের সমাধান করবোই। “ঠিক আছে, ঠিক দু ঘন্টা সময় দে। যদি আমি হই, তা হলেও স্বীকার করে নেব। আর যদি অন্য কেউ হয়, সে ক্ষেত্রে তার আইডেন্টিটি তোর সামনে হাজির করবো, প্রমানসহ। এতক্ষণ আমার অ্যাপ্রোচ ছিল অ্যামেচারিশ, নাউ আই অ্যাম টোট্যালি প্রফেশনাল।” শেষের দিকে আমার স্বর ছিল শান্ত অথচ কঠিন।
চ্যালেঞ্জ তো নিলাম। কিন্তু যে তিমিরে ছিলাম, এখনও যে সেই তিমিরেই আছি। এদিকে হাতে মাত্র দুই ঘন্টা সময়। কোনও ক্লু নেই। সবচেয়ে বড় অসুবিধা, অজ্ঞাত ব্যক্তির মোটিভ কী, সে বিষয়েও ধোঁয়াশা।
(৩) নিয়ম মাফিক পরের ফোনটা করলাম Mr.C কে। জানতে চাইলাম, তার অভিজ্ঞতার কথা। সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। কোনও নতুন সূত্র পেলাম না। শুধু বলল, সে নাকি আমারও নাম নিয়েছে এবং আমার সম্পর্কেও যা বলেছে, তা সবই ঠিক। ওরও ধারণা, অজ্ঞাত ব্যক্তি আমাদের মধ্যেই কেউ না হয়ে যায় না।
এই প্রসঙ্গ ছেড়ে মামুলি দু’চারটে কথাও হল। পরিবারের কথা, ছেলে মেয়েদের কথা, চাকরির পরিস্থিতি, এই সব। Mr. C পেশায় পশু চিকিৎসক। পশ্চিমবঙ্গের কয়েকটি জেলায় বদলি হবার পর, আপাতত নিজের জেলায় পোস্টিং।
(৪) শেষ ভিক্টিম, অর্থাৎ Mr. S কে আর ফোন করলাম না। কোনও লাভ হবে না। সেই একই কথা শুনতে হবে।
আশ্চর্য ব্যাপার। চেনা কেউ হলে, তার গলার স্বর কেন পরিচিত হবে না? তার উপর পুরুষ নাকি নারী, তাতেও কনফিউশন। একজন মহিলা একজন পুরুষের গলা কতখানি নিখুঁতভাবে নকল করতে সক্ষম? খুব চাইছিলাম, সেই অজ্ঞাত দূরভাষী আমাকেও একটা ফোন করুক। নিজের কানে শুনলে, কিছু একটা সূত্র নিশ্চয়ই পেতাম।
এইসব ভাবতে ভাবতে, বারান্দায় পায়চারি করলাম। আর বুদ্ধির গোড়ায় একটু ধোঁয়া দিয়ে এলাম। ঘরে এসে সামনে ফেলে রাখা নোটপ্যাডের উপর লেখাটা চোখে পড়ল, VO sir। Mr.P এর সাথে কথা বলার সময় আনমনে লিখেছি। Truecaller -এ এই নামটাই নাকি দেখাচ্ছে। কী অদ্ভুত নাম! এরকম কারও নাম হয় নাকি? আচ্ছা, VO কোনও অ্যাব্রিভিয়েশন বা শর্ট ফর্ম নয় তো? কী হতে পারে? কী হতে পারে?
হঠাত মস্তিষ্কে ঝিলিক খেলে গেল। VO মানে, আমি যা ভাবছি, তা যদি সত্যি হয়, তবে তো মিলে যাচ্ছে। তখন এটাও মনে পড়ে গেল যে, ছোটবেলায় কথা বলতে গিয়ে অনেক সময় ওর মেয়েদের মত মিহি কন্ঠস্বর বেরিয়ে যেত। খুব অস্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য, লাখে একজনের থাকে। কিন্তু, ওর ছিল। তা নিয়ে আমরা হাসাহাসিও করেছি। তার মানে, কোনও মহিলা পুরুষের কন্ঠস্বর নকল করে নি, এক্ষেত্রে উল্টোটাই ঘটেছে। উত্তেজনার বশে অজান্তে মহিলা কন্ঠস্বর বেরিয়ে গেছে।
আরও মনে পড়ে গেল যে, Mrs. T এর লেগ-পুল করা, মানে সুযোগ পেলেই মজা করাটা ওর একটা হবি। এখানেও Mrs. T কে দিয়েই খেলাটা শুরু হয়েছে। তার মানে এটাও মিলে যাচ্ছে।
কিন্তু মনটা আনন্দে নেচে উঠতে গিয়েও আবার থমকে গেল। দুয়ে দুয়ে চার হতে গিয়ে, সাড়ে তিনে আটকে গেল। কারণ, সেক্ষেত্রে একটা প্রশ্ন যে থেকে যাচ্ছে। যার কথা ভাবছি, সে নিজেও তো একজন ভিক্টিম। তবে তাকে ফোনটা করল কে? ভুতুড়ে ব্যাপার নাকি?
কয়েক মিনিট পরে আবার মুখে হাসি ফিরে এল। হয়ে গেছে। মিলে গেছে। এক্কেবারে তিনে তিনে ছয়। অনেক রহস্য গল্পেই পড়েছি, অপরাধী নিজেই ভিক্টিমের রোল প্লে করে। বা আগ বাড়িয়ে, পুলিশের কাছে যায়। এখানেও যে সেটা হবে, তা ভাবতেই পারি নি। তাই এতক্ষণ ঘোল খেয়েছি।
আর, আমাকে ফোন না করাটাও তো একটা ক্লু। সে ভালভাবেই জানে, আমাকে ফাঁকি দেওয়া সির্ফ মুস্কিল হি নেহি, না-মুমকিন হ্যায়। তাই সে পথ মাড়ায় নি।
যাক, আর কোনও সন্দেহ নেই। এবার শুধু স্বীকারোক্তি আদায়ের পালা।
মোবাইলটা তুলে নিয়ে, ওকে দ্বিতীয়বার কল করলাম। দুবার রিং হতেই সাড়া মিলল, “হ্যাঁ বল।”
– VO sir, আপনার খেলা শেষ।
– মা-মানে?
– মানে আর কিছুই নয়। Truecaller এ তোর মোবাইলের caller ID হিসাবে VO sir কথাটা আসছে। আর VO মানে যে, Veterinary Officer, সেটা বুঝতে আমার বেশি সময় লাগে নি।
স্বীকারোক্তি আদায় করতে যতটা বেগ পেতে হবে ভেবেছিলাম, তার সিকিভাগও লাগল না। শুধু বললাম, “Mr.P যদি সত্যি সত্যি কাল সাইবার ক্রাইম সেলে অভিযোগটা করত, তবে কী হত, ভেবে দেখেছিস?”
শুনেই প্রায় ভেঙ্গে পড়ল Mr. C, “মাইরি, আমি নিজেও ভাবি নি যে, এতদূর গড়াবে।”
– এবার বল, এই বদ বুদ্ধিটা তোর মাথায় এল কী করে?
– সব এই নতুন সিমটার জন্য। নতুন নাম্বার থেকে পরিচিত একজনকে কল করাতে সে প্রথমে আমাকে চিনতেই পারল না। তখনই আইডিয়াটা এল যে, গ্রুপের বন্ধুদের সাথে একটু মজা করা যাক। তাই Mrs.T কে ফোন করলাম। তোরা তো জানিস, ওকে একটু খেপিয়ে খুব মজা পাই।
– তা বাকিরা কী দোষ করেছিল? ওদের সাথে ওরকম করতে গেলি কেন?
– ওই যে বললাম, যখন দেখলাম, কেউ চিনতে পারছে না, এমনকি গলা শুনেও বুঝতে পারছে না, তখন মজা করার লোভ বেড়ে গেল। ভেবেছিলাম রবিবার বিকেল ৪টেয় নাটকীয় ভাবে আত্মপ্রকাশ করব।
– তোর নাটকের জন্য, ওরা যে অযথা কষ্ট পেল, সে বেলায়? হাজতবাসই তোর যোগ্য শাস্তি।
– আরে, না না। আমি এখনই আত্মসমর্পণ করে, গ্রুপে পোস্ট করে জানিয়ে দিচ্ছি। আর ওদের কাছেও মাফ চেয়ে নিচ্ছি।
Add comment