সাহিত্যিকা

ভাবতে অবাক লাগে

ভাবতে অবাক লাগে
কল্যাণ কুমার মিত্র, ১৯৬৩ সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং

কিছুকাল আগে আমি আমেরিকায় গিয়েছিলাম ছেলের কাছে। এখানে এলে অনেক বাঙালী বাডিতেই আমাদের নিমন্ত্রণ করে। শুধু কোলকাতায় কোভিডের সময় বাদ দিলে ওদেশের কেউ বাডিতে আসার জন্যে নিমন্ত্রণ করে নি। সেটাই স্বাভাবিক। মনে পড়ে যায় যখন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তাম তখন একজন প্রফেসরের কথা, ওনার নাম ছিলো কে সি দাস। উনি ম্যথস পড়াতেন, ক্লাসের মাঝে অনেকসময় ছাত্রদের সঙ্গে অকটু গল্পগুজবও করতেন। একদিন উনি ছাত্রদের জিজ্ঞাসা করলেন যে পাশ করে আমরা কে কিরকম চাকরীর চেস্টা করবো? একজন হাত তুলে বললো যে পাশ করে সে বিলেত বা আমেরিকায় গিয়ে চাকরী করতে চায়। প্রফেসার আবার পড়ানো শুরু করলেন, এবার একজন হঠাৎই শব্দ করে বিরাট হাই তুললো। স্যার বিরক্ত হয়ে পড়ানো বন্ধ করে ছাত্রদের বললেন, “দেশে তোমরা সব ঘুঘু, আর বিদেশে গিয়ে রাজহংস হবে“।

আমি ঘুঘু নই কিন্তু বিদেশে গেলে রাজহংস হয়ে যাই। নানান পরিবার ওঁদের বাডিতে আসার জন্যে ডাকাডাকি করে। এবার একজনের কথা বলি যিনি দিন তিন-চারেক আগেই আমাদের নিমন্ত্রণ করেছিলেন।

ওনার নাম অমল গুহ। ওনার আমন্ত্রণে আমি আমার স্ত্রী, ছেলে, পুত্রবধূ, নাতি আর নাতনীদের নিয়ে ওনার বাড়ি গিয়েছিলাম। প্রাথমিক পরিচয়ের পর সাধারণ কথাবার্তায় উনি আমায় জিজ্ঞাসা করলেন আমি এখন কি করি? আমি জানালাম যে ২০১৩ সালে চাকরী থেকে রিটায়ার করে এখন বাড়িতেই থাকি। উনিও বললেন যে গতমাসেই ওনার ৭৮ বছর পূর্ণ হয়েছে, উনিও চাকরী থেকে অবসর নিয়ে বাডিতে থাকার আনন্দ উপভোগ করছেন। দেখলাম ওনার চেহারা বেশ বুডোটে, কিন্তু কি করে ওনার বয়স ৭৮ হয়? সন্দেহ হচ্ছে। লোকের বয়স জানবার জন্যে আমি সর্বদাই একটা কৌশল অবলম্বন করি। জিজ্ঞাসা করি “আপনি স্কুল লেভেল থেকে কবে পাশ করেছেন?“ সেটা জানলেই মোটামুটি বয়সটা আন্দাজ করা যায়। উনি বললেন যে ১৯৫৭ সালে স্কুল ফাইনাল পাশ করেছিলেন। আমি শুনে অবাক। আমিও তো সেই ১৯৫৭ সালেই পাশ করেছি! আমার বয়স এখন ৮১, তাহলে সেই হিসাবে অমলবাবুর চেয়ে আমি তিন বছরের বড়, সুতরাং অমলবাবুর বয়স ৭৮ হওয়া সম্ভব নয়। সাধারণত ১৬ বছর বয়সেই ছেলেমেয়েরা স্কুল ফাইনাল পাশ করে। আমি ৬৫ বছর আগে স্কুল ফাইনাল পাশ করেছি, তাহলে আমার এখনের বয়স ১৬ আর ৬৫ মানে ৮১। সুতরাং অমলবাবু নিশ্চয়ই বয়স কমিয়েছেন।

যাকগে চুলোয় যাক ওনার বয়সের কথা। জানতে চাইলাম যে উনি কবে আমেরিকায় এসেছিলেন? জানালেন যে ১৯৬৬ সালে আমেরিকায় পড়তে এসেছিলেন। আমি আবার জিজ্ঞাসা করলাম উনি ছোটোবেলায় কোন স্কুলে পড়তেন? জানালেন এক অজ পাডাগাঁয়ের স্কুলে, বললেন নাম বললেও আমি চিনতে পারবো না। এবার আমি জিজ্ঞাসা করলাম গ্রামটা কোন ডিস্ট্রিক্টে? উত্তর এলো “মুর্শিদাবাদ“।

এবার আমার উৎসাহ হঠাৎই অনেকটাই বেড়ে গেলো। আমিও তো আমার আট বছর বয়স পর্যন্ত মুর্শিদাবাদ জেলার এক গ্রামের স্কুলে পড়েছিলাম। জানতে চাইলাম, ওনারা কোন গ্রামে থাকতেন? অমলবাবু বললেন গ্রামের নাম নশীপুর। ওনার বাবা নশীপুর রাজার স্টেটের ডাক্তার ছিলেন। শুনে আমি স্তম্ভিত। আরে!!! আমার বাবাও তো সেই নশীপুরের রাজার স্টেটেরই ডাক্তার ছিলেন। আমার আট বছরের সময় মায়ের অনুরোধে, ছেলেমেয়েদের কোলকাতায় ভালো স্কুলে পড়ানোর জন্যে চাকরীতে ইস্তাফা দিয়ে আমার বাবা সবাইকে নিয়ে কোলকাতায় চলে এসেছিলেন।

আমার মনে এবার প্রশ্ন এসে গেলো যে একটা ছোট্ট স্টেটে কি করে দুজন ডাক্তার একই সময়ে থাকতে পারেন? অমলবাবুকে বললাম যে আমার বাবাও তো নশীপুর রাজার স্টেটের ডাক্তার ছিলেন। শুনে অমলবাবু আমাকে প্রশ্ন করে বসলেন “আপনার বাবার নাম কি ডক্টর মিত্র?“ আমি হ্যাঁ বলায় অমলবাবু জানালেন যে আমার বাবা চাকরী ছেডে দেবার পর রাজা ওনার বাবাকে স্টেটের ডাক্তার হিসেবে নিয়োগ করেন, আর যে বাডিতে আমরা ছিলাম, ওটাও ছিল রাজার বাড়ি। অমলবাবুর বাবাকেও ওই বাডিতেই থাকতে দেওয়া হয়েছিলো।

ফান্ডা ক্লিয়ার হলো কিন্তু অবাক হয়ে ভাবতে লাগলাম যে নশীপুরের মতো ছোট্ট একটা গ্রামে এক সময়ে একই বাড়িতে সামান্য কিছুদিনের ব্যাবধানে পর পর দুজন ডাক্তার থাকতেন, অথচ তাঁদের দুই ছেলের আলাপ হলো ভারতবর্ষ থেকে দশ হাজার মাইল দূরের এক অন্য প্রান্তে।

উপসংহারে বলি।
অমলবাবু জানালেন ওনার জীবনকাহিনী। বাল্যজীবনে কঠিন সংগ্রাম থেকে শুরু করে কর্মক্ষেত্রে সাফল্যের উত্তরণের সেই ধাপগুলো। অমলবাবুরা আট ভাইবোন, অমলবাবু বাবা মায়ের জ্যেষ্ঠ পুত্র। তিন ভাই এক বোনের পর ওনার মা মারা যান। বাবা আবার বিয়ে করেন, সৎমায়ের মাতৃগর্ভে আরও চার ভাইবোনের জন্ম হয়। অমলবাবু যখন স্কুলের ক্লাস নাইনে, তখন ওনাকে পঠন পাঠনের জন্যে মামার বাডিতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিলো। বরানগরে ওনার মামার বাডি, বড় মামা ওনাকে বরানগরের এক অনামী স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিলেন। সেখান থেকেই অমলবাবু স্কুল ফাইনাল ও আইএসসি পাশ করলেন। বড়মামার অভাবের সংসার, ভাগ্নেকে বলেছিলেন পড়াশুনা করে আর কাজ নেই। উনি ওনার কোম্পানীর বসকে অনুরোধ করেছিলেন ভাগ্নেকে যদি কারখানায় ঢুকিয়ে দিতে পারেন। মামা জানালেন যে আগামীকাল বস সন্ধ্যায় ওনার বাডিতে এসে ভাগ্নেকে চাক্ষুস পরখ করে নেবেন, এক কথায় চাকরির ইন্টারভিউ। অমলবাবু তখন অনেকগুলো টিউশানি করেন। মামা জানালেন অমলবাবু যেন আগামীকাল বিকেলে বাডি থাকে।

কারখানার চাকরীতে অনীহার জন্যেই হোক, বা খানিক প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্যেই হোক,বা ছাত্র পড়ানোয় সময় বেশি দেবার কারণেই হোক, অমলবাবুর সেদিন বাডি ফিরতে দেরী হয়েছিলো, বড় মামার বস অপেক্ষা করে করে বাড়ি ফিরে গিয়েছিলেন, অমলবাবুর সঙ্গে আর দেখা হয়নি। এরপর বড় মামা বিরক্ত হয়ে অমলবাবুকে বলেছিলেন নিজের পথ দেখে নিতে। অমলবাবু তখন টিউশানি বাডিয়ে দিলেন, সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে ম্যথস অনার্স আর ক্যলকাটা ইউনিভার্সিটি থেকে ম্যথসে এমএসসি পাশ করলেন। তারপর কিছুদিন বরানগরে ইন্ডিয়ান স্ট্যটিসটিকাল ইনস্টিটিউটে কমপিউটার ডেটা অপারেটরের কাজ করলেন। এবার উনি আমেরিকান ইউনিভার্সিটিতে কম্পিউটার সায়েন্স এ কম্বাইন্ড মাস্টার্স আর পিএইচডি পোগ্রামে এডমিশানের জন্যে কয়েকটি জায়গায় দরখাস্ত করেন। ঈশ্বর মুখ তুলে চেয়েছিলেন। মিচিগান ইউনিভার্সিটিতে স্কলারশীপ সহ এক পোগ্রামে চান্স পান। সেটা ১৯৬৬ সাল। ১৯৭১ সালে কম্পিউটার সায়েন্সে ডক্টরেট ডিগ্রী অর্জন করে তিনি হলেন কম্পিউটার সায়েন্সের তৃতীয় বাঙালী ডক্টরেট। তারপর অনেক দেশেই ভিসিটিং প্রফেসার হিসেবে গিয়েছেন। আইআইটি খড়্গপুর ওনাকে কম্পিউটার ইনিজীনিয়ারিং বিভাগের প্রধান হয়ে জয়েন করার প্রস্তাব দেয়, কিন্তু অমলবাবু দেশে ফেরার চিন্তা ততদিনে মাথা থেকে ঝেডেই ফেলেছিলেন।

উনি স্ত্রী রত্নাদেবীকে নিয়ে বিশাল দোতলা বাড়ি ঘুরে দেখালেন। বাড়ির পেছনে একটা লেক আছে, সেই লেকের ডকে দুটো বোট বাঁধা, উনি মাঝেমাঝেই সেখানে নৌকা বিহার করেন।

অমলবাবু শেষবার কলকাতায় এসেছিলেন ২০০৭ সালে, পনেরো বছর দেশে যান নি। এখন বেশ স্থুলকায়া চেহারা, প্লেনে লং ডিসটেন্স ট্র্যভেল করতে কস্ট হয়। পাশে বসে রত্নাদেবী অমলবাবুর কথা শুনছিলেন। ওনার চোখে মুখেও দেখেছিলাম শান্তি আর আনন্দের রেখা।

*******

এই ঘটনায় আমার ছোটবেলার সেই নশীপুরের কিছু স্মৃতি মনের মঝে ভেসে উঠলো।
আমার বাবা লেখাপড়াতে খুবই ভালো ছিলেন। হিন্দু স্কুল ও স্কটিশচার্চ কলেজে পড়াশুনা করেছিলেন। খুব ভালো ইংরেজী লিখতেন। ISc পরীক্ষায় ইংরেজীতে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছিলেন। ১৯২৮ সালে মেডিকাল কলেজ থেকে ডাক্তারি পাশ করেছিলেন। মায়ের মুখে শুনেছিলাম বাবা খুব উচ্চাকাঙ্খী ছিলেন না। ডাক্তারী পাশ করে Birla Insurance কোম্পানীতে যোগ দিয়েছিলেন, বছর চৌদ্দ কাজ করার পর হঠাৎ একদিন চাকরীটা ছেড়ে দিলেন কারণ ওই কোম্পানীর একজন উর্ধতন ব্যক্তি একজন গুরুতর অসুস্থ লোককে fit certificate দিতে বলেছিলেন। বাবা রাজী হন নি, পদত্যাগপত্র পেশ করেছিলেন। আমার ঠাকুরদাদা গভর্ণমেন্ট চাকরী করতেন, পরে একাউন্ট জেনারেল হয়েছিলেন, সরকার থেকে উনি রায়সাহেব উপাধি পেয়েছিলেন। ঠাকুরদাদার সঙ্গে মুর্শিদাবাদ জেলার নশিপুর গ্রামের রাজা নৃপেন্দ্র নাপায়ণ সিংহের পরিচয় ছিলো। ওনার স্টেটের জন্যে একজন ডাক্তারের প্রয়োজন ছিলো, রাজা বাবাকে নশিপুর স্টেটের ডাক্তার হিসেবে নীয়োগ করলে বাবা আমাদের নিয়ে নশিপুর গ্রামে চলে এসেছিলেন। তখন আমার বয়স দুই, আমরা তিন ভাইবোন। সবচেয়ে বড় দিদি, তারপরে দাদা, সবচেয়ে ছোটো আমি।

নশিপুরের রাজার যে বাড়িতে আমাদের থাকতে জিতেছিলেন সেই বাড়ির অল্প কিছু কিছু কথা মনে আছে, যদিও সে অনেকদিন আগেকার কথা। বাড়িটি ছিলো মেন রাস্তার ওপরে দোতলা। একতলায় দুটো ঘর, একটা বড়, বাবার চেম্বার, একটা কোণে পর্দা দিয়ে ঘেরা, সেখানে একটা লম্বা টেবিল ও একটা টুল ছিলো রোগীদের শারীরিক পরীক্ষার জন্যে। বাবার জন্যে ছিলো একটা বড় টেবিল ও চেয়ার, আর উল্টোদিকে রোগীদের বসবার জন্যে একটা লম্বা বেঞ্চ। বিরাট হাতপাখা টাঙানো ছিলো, কাজের লোক ছিলো দুজন, একজন পুরুষ নাম কৈলাশ আর একজন মহিলা নাম দামিনী।

বাড়ির সামনে ফুট চারেক চওডা একটা রোয়াক, ওখানে রোগীদের বসবার জন্যে দুটো বেন্চ পাতা ছিলো। গ্রামে তখন ইলেকট্রিসিটি ছিলো না, ফাঁক পেলে কৈলাসকে পাখা টানতে হতো। পাশের ঘরটা ছিলো কম্পাউন্ডারবাবু নিবারণ ঘোষের। ওষুধ হিসেবে তখন শুধু পুরিয়া আর মিক্সচারের প্রচলন ছিলো।

১৯৭০ সালে আমি আবার নশিপুরে গিয়েছিলাম। বাড়িটা সেই একইরকম আছে। নতুন ডাক্তারবাবু তখন ছিলেন। আমি নিজেকে আগেকার ডাক্তারবাবুর ছেলে বলে পরিচয় দিলে উনি একজনকে ডেকে আমাকে বাড়ির ভেতরে নিয়ে যেতে বললেন। দেখলাম সব কিছু একইরকম রয়েছে, সেই একতলার বাগান, দোতলায় তিন খানা ঘর, ছাদ, সব একই রকম।

আমার প্রথম দিনে স্কুলে যাওয়ার ঘটনাও স্পস্ট মনে আছে।, মা আমাকে নতুন শার্ট আর হাফপ্যন্ট পরিয়ে দিয়েছিলো। কপালে দই এর ফোঁটা দিয়ে দাদার সঙ্গে স্কুলে পাঠালো। নতুন বই খাতা পেয়ে মনে আর আনন্দ ধরে না। মন দিয়ে পড়াশুনা করতে লাগলাম, স্যারেরা পড়া ধরলে ঠিক ঠিক বলতে পারতাম, হোমটাস্ক ঠিক করে আনতাম। খালি রবীন পালের সঙ্গে এঁটে উঠতে পারতাম না। সে সমস্ত প্রশ্নেরই সঠিক উত্তর দিত। হাফ ইয়ার্লি পরীক্ষার রেজাল্ট বেরোলো, রবীন ফার্স্ট আর আমি সেকেন্ড। ও আমার চেয়ে অনেক বেশী নম্বর পেয়েছে। বাবা পুরো খুশী হয় নি, কিন্তু মা বলল আমি সেকেন্ড হয়েছি, এটাও খুব খুশীর খবর। দাদা আমাকে উৎসাহ দিত, বলতো “তুই দেখিস এনুয়ালে ফার্স্ট হবি।“ কিন্তু আমি জানতাম যে আমি রবীনকে কোনদিনই হারাতে পারব না। এনুয়াল পরীক্ষার কয়েকদিন আগে দেখলাম রবীন স্কুলেই আসছে না, ওর খুব অসুখ। এনুয়াল পরীক্ষা সে দিতেই পারলো না। ওর জন্যে খুবই খারাপ লাগল। কিন্তু ভাবলাম এবার আমাকে ফার্স্ট হতেই হবে।

এনুয়াল পরীক্ষা হয়ে গেল, এবার রেজাল্ট বেরোবে। হেডমাস্টারমশাই প্রথমে ক্লাস টেনে যারা যারা উঠবে সেই ক্লাস থেকে রেসাল্ট ডিক্লেয়ার করতে শুরু করলেন, প্রথমে উনি পড়ে শোনালেন কারা কারা পরীক্ষায় পাশ করেছে, সেই লিস্ট পড়া হয়ে গেলে কে কে ফার্স্ট, সেকেন্ড আর থার্ড হয়েছে তাদের নাম বললেন।

এবার হেডমাস্টার স্যার ঢুকলেন ক্লাস থ্রীতে। দেখতে পেলাম দাদা ক্লাসের বাইরে দাঁডিয়ে ক্লাসের দিকে উঁকি দিচ্ছে। হেডমাস্টার মশাই প্রথমে যারা পরের শ্রেণীতে প্রোমোটেড হয়েছে তাদের নাম পড়লেন। তারপর পড়লেন ফার্স্ট হয়েছে কল্যাণ কুমার মিত্র। তারপর সেকেন্ড আর থার্ড পজিশন হোল্ডারদের নাম ঘোষণা করা মাত্রই আমি পাঁই পাঁই করে দৌড়ে গিয়ে মাকে জডিয়ে ধরে বললাম “মা, আমিও দাদার মতো ফার্স্ট হয়েছি।”

সুদীর্ঘ দিন পরে এইসব কথাগুলো মনে ভেসে উঠলো।

এতই যখন বললাম, তখন নশীপুর রাজবাড়ি নিয়ে কিছু কথা বলি। এই রাজবাড়ি রাজা দেবী সিংহের পুরনো রাজবাড়ির পাশেই। ১৮৬৫ সালে বর্তমান রাজবাড়িটি নির্মান করেছিলেন রাজা কীর্তি চন্দ্র সিংহ বাহাদুর। পরে এখানেই রাজা দেবী সিংহের রাজসভা ছিলো। উনি পানিপত থেকে একজন সাধারণ বনিক হয়ে এসেছিলেন। নিজের দক্ষতায় দেওয়ান রাজা খানের সাথে পরিচয় করে উনার রাজস্ব বিভাগে যোগ দেন। রাজস্ব আদায়ে তিনি ছিলেন কড়া প্রশাসক। ক্রমে তিনি ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সাথে হাত মিলিয়ে রাজস্ব বিভাগের প্রধান হন। এই দেবী সিংহই নশীপুর রাজ পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা।

** কভারের ছবিটা নশিপুরের রাজবাড়ির

 

Sahityika Admin

Add comment