কয়েকটি কবিতা
অপূর্ব চক্রবর্তী, ১৯৭৭ মেকনিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং
ওরা চেয়েছিল
ছেলেটা চেয়েছিলো আকাশ হতে যার বিস্তার অসীম।
আর মেয়েটা বলেছিল ও হবে বাতাস,
বয়ে যাবে আকাশের বুকে পরম নির্ভরতায়।
আকাশের ক্লান্ত শ্রান্ত মন জুড়িয়ে দেবে একটু ভালোবাসার ছোঁয়ায়
আর স্নেহের পরশে।
ছেলেটা আর আকাশ হতে পারেনি,
আর মেয়েটাও বাতাস হতে যখন চেষ্টা করেছিলো
ঠিক তখন আকাশটা ভরে গেল কালো মেঘে
গর্জে উঠলো উত্তর পূর্ব দিগন্ত।
কর্কশ স্বরে নেমে এলো লেলিহান বিদ্যুতের শিখা আকাশের বুক ছিঁড়ে।
বাতাসকে নিয়ে গেল ছিনিয়ে
আকাশ পালাতে চাইলো বাতাসের বুক থেকে
সাইক্লোন এলো ঘনঘন
চেতাগ্নী দিলো নদী, মাঠ, ঘাট, বন, জঙ্গল ,পশু,পাখিকে
আর মানুষকেও।
নিমেষে হারিয়ে গেল স্বপ্ন
মোহ গেল ভেঙ্গে
আকাশ আর বাতাস দুজনেরই।
********
ডরানি
আর কতো দূর যেতি হবে গো?
না, না। দূর নয় গো। আর খুব বেশি দূর নয়,
পুরাণো সড়ক ধরে ঠিক তিনটি কোশ দক্কিণে গেলেই মধুকপি নামের সেই গাঁ।
গাঁয়ের পাশেই পাবে সেই ডরানি নামে
সেই ছোট নদীটিও আছে।
বোশেখ মাসেও যে নদীতে পাবে তোমার হাঁটু জল।
আর ওই যে দুইটো পাহাড়
ছোটকালু আর বড় কালু,
তারাও আছে।
সেই পাহাড় দুটো লাগে যেন কাদামাখা মোষের গায়ের মত কালো কালো
আর মেটে মেটে রঙের সে দুটো বেঁটে আকারের টিলা।
বোশেখের ভয়ানক শুকনো দুপুরে
ডরানির স্রোতের কিনারে
কোনো বকও বসে থাকে না তখন।
ছাগল চরে বেড়ায় এই দুইটো পাহাড়ে
ছোটকালু আর বড় কালুর গায়ের ওপরে।
ছাগলের দল কচি কচি বটের পাতা খায়,
আর শ্রাবণের শেষে পাহাড়ের গায়ে
এমনকি পাহাড়ের মাথার উপরে
পাথরের ফাঁকে ফাঁকে যখন সবুজ ঘাস ঘন হয়ে গজিয়ে ওঠে
তখন গাঁয়ের রোগা রোগা গরুর দল
কাঁকুরে ডাঙার কুলে ঘাস ছেড়ে দিয়ে
ছোট কালু আর বড় কালুর কোলে বুকে
আর মাথায় চড়ে ভালোবাসে
তাজা ঘাসের গোছা খেতে ওরা।
ডরানির কুল ঘেঁষে দেখা যায় পাহাড়ের চুড়া,
আর বেশি দূর নয় মধুকুপি গাঁ।
*********
শিরোনাম -আছো কেউ
কৈ গো আছো কেউ?
কই কেউ কি আছো?
মাঝরাতে কে যেন হাঁক পাড়ে।
পাড়ার ওই গোল দিঘীর ধারে।
দিঘীর জলে মাছ আর সাপ একই সাথে চড়ে,
শাপলা ফোটে দিঘীর জলে মেলা,
দিঘির জলে ষ্ফটিকের স্বচ্ছতা
বছর ভর গাছের ছায়ায় ঘেরা।
লোকটা নির্ঘাত হুশ হারিয়েছে আজ।
মাস পয়লায় পকেট ভরা থাকলেই
একই কান্ড ঘটে যে মাঝ রাতে।
গলা সপ্তমে চড়ায় নিঝুম রাতে লোকটা,
লোকটার হাঁক প্রতিধ্বনি করে।
কি যেন নাম ওর?
হবে হয়তো ননী কিংবা ফনী গোছের কিছু।
ঘরে শুয়ে তার অভুক্ত বউ ছেলে,
আবার ডাকে সে কৈ আছো কি তোমরা কেউ?
দরজা খোলো ওওওও।
তবুও দরজা খোলে না আজ কেউ।
Add comment