আমার কয়েকটি কবিতা
রামু দত্ত, ১৯৭৯ ইলেকট্রনিকস ও টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং
সেদিন ছিলো একখান করে খাট
একটা ঘরে খাট আছে চারখান
তবুও সবাই এক খাটেতেই বসে
একটা খাটেই সব রাজার সিংহাসন।
গলা ফাটায় কারণে অকারণে
মেরুদন্ড তখনও রয়েছে সোজা
‘বোকার’ মতো বললে কেউ কথা
কথার পিঠে কথা রাখে এক ‘হাঁদা’।
ফ্রি কিক কি জানে হাবিব মিঁয়া?
পিচ নয়, বল বাঁক নেয় কারো মুখে
প্যাঙলা শরীর ধরমেন্দর সাজার সখ
‘মান্না’ গাইছে খোলা বাথরুমেতে।
আজ মেরুদন্ডে ধরেছে কত ঘূণ
আমরাই সাদা বাকী সব ব্যাটা কালো
বোবার শুনেছি শত্রু হয় না কোনো
সব ভুলে যাওয়া আরো অনেক ভালো।
***********
মনখারাপ করা হেমন্তের সন্ধ্যা
ছাদ থেকে দেখি পাড়ার আকাশ
ধোঁয়া বা কুয়াশার একটা টুকরো
মশারীর ঝুলের মতো এসেছে নেমে।
আকাশ জুড়ে জ্বলছে প্রদীপ
লম্বা বাঁশের মাথায় ফুলের সাজি
সাজির ভেতর প্রদীপ নয় ছোট বাল্ব
পূর্বপুরুষেরা আকাশ থেকে
আসে নেমে, আলোর পথ চিনে।
সারা মাস ধরে তাদের মনে করা।
প্রদীপ জ্বালিয়েছে শ্যামলদাও
অবিবাহিত অবিশ্বাসী শ্যামল বিশ্বাস।
জ্বালিয়েছে এ পাড়ার তোতনদির জন্য
বিয়ের আগেই যার প্রদীপ নিভে যায়
মিশে যায় অন্ধকার আকাশে।
********
সারা অঙ্গে রূপ ফুটিয়ে দাঁড়িয়ে
অনেক মুগ্ধ চোখের অপেক্ষায় আমি।
আকাশে মেঘের সামিয়ানা গেছে গুটিয়ে
বাতাসে বইছে বেশ ছুটি ছুটি ভাব
পাঁচ হাজার ফুট উঁচুতে উঠেও
সবাই মন ফেলে এসেছে নীচে।
তাই পূজোর শাড়ির গল্পে ঢুকে যায়
শাশুড়ি-ননদ-বৌয়ের পুরোনো স্ক্রিপ্ট
অফিসের বড়ো সাহেবকে ফোন ছোটোর
পাহাড়ের আড়ালে চলে যায় মেয়েটি
ধারাবিবরণী দিয়ে চলে ফোনের ওপারে।
সবাই এসে নির্বাক হয় আমার কাছে
অস্ফুট আওয়াজ বেরিয়ে আসে ‘ওয়াও’ !
সারা অঙ্গ থেকে রূপ ঝড়িয়ে
ঝলমলে সকালে আমিও উঠি হেসে।
*******
এই পৃথিবীর তিনটে ভাগ জল
একটা ভাগে শুয়ে রাস্তাখানি
রাস্তা তো নয়, মানুষমারা কল
দেখি নগ্ন পা ফেলে সাবধানী।
আঁকা আছে কত আলপনা
খোঁজো নকশা, না শুধু জলরাশি
ডিঙিয়ে ওকে যাবার কি দরকার ?
ঘাপটি দেয় জ্বলন্ত বিড়ি শয়তান হাসি।
নীল আকাশের ছবি হলো চৌচির
মেঘ লুকালো ঘোলা একটু জলে
বৃষ্টি হলেই আমরা বাঁধি জোট
সুযোগ পেলে সূয্যি মেরে ফেলে।
একটুখানি বসো না গো পাশে
আর কটা দিন বাঁচার বড়ো আশ
মুখে না হয় ফুটুক কথার খই
জানি পৌষ এলেই মোদের সর্ব্বনাশ।
ওর গায়ের গন্ধ খুঁজি, পাইনে –
বাক্স খুললে গন্ধ শুধু ন্যাপথলিনের।
এই মেরুন সোয়েটারের অনেক বয়স হলো
সে বছর পূজোর পর সিমলা যাওয়ার আগে
দিল্লীতে কিনে দিয়েছিলাম।
এটা খবরের কাগজ কিনতে আসা
লোকটাকে দেবো, কাটবে ওর শীত।
*********
কাল সারারাত গা ধুয়েছি হেমন্ত শিশিরে
মিটিমিটি চোখে সে সিনান দেখেছিল
আকাশ ভরা অগণিত তারা আর বেহায়া চাঁদ।
গা ধোয়া শিশির টুপ টুপ ঝরে পড়ে
নীচে শুয়ে থাকা ঘাসের ওপর।
আজ প্রভাতে দেখি ঘাসেদের খুশি
শিশির টুপি পড়ে মাথা দোলায় এদিক ওদিক।
কোথাও কুয়াশা ঢাকে সে খুশি অকারণে
লুকিয়ে রাখে তার চাদরে।
ভোরের আলো চুমো দেয় সবার গায়ে
শিহরিত হই পুলকিত হই
চিৎকার জুড়ে দেয় রক্ষণশীল পাখির দল
তারা উড়ে যায় অনেক দূরে,
বোধহয় পালিয়ে বাঁচে।
এ বেত্তান্ত রোজের — দিনের রাতের।
Add comment