সাহিত্যিকা

খেলার মাঠে অনিল কুমার চৌধুরী বা AKC বা আনারকলি স্যার

খেলার মাঠে অনিল কুমার চৌধুরী বা AKC বা আনারকলি স্যার
অজয় দেবনাথ, ১৯৭০ ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং

অনিল কুমার চৌধুরী বা AKC …সেই নামটা কেমন করে বি ই কলেজে ছাত্রদের মাঝে আনারকলি হয়ে গেল তার ইতিহাস অন্ততঃ আমি জানিনা বা শুনিনি। ওনার প্রথম ক্লাস ….অত্যন্ত সুদর্শন, সুদেহী,সুবেশধারী, মাথায় একরাশ কালো কোঁকড়ানো চুল, শ্যাম বর্ণের একজন স্যার আমাদের ক্লাসে ঢুকে পড়লেন। কেমন করে জানিনা সেই সাবজেক্ট আর স্যার কে আমার অত্যন্ত ভাল লেগে গেল। সেই প্রথম দিনের নোট আমার কাছে এখন ও আছে কিন্তু এই মুহূর্তে খুঁজে পাচ্ছিনা। ক্লাস শেষ হতেই গুজগুজ ফুসফুস শুরু হয়ে গেল…..এই স্যারের নাম নাকি ‘আনারকলি’। কি অবাক কান্ড! এই রকম এক জন টল, ডার্ক, হ্যান্ডসাম স্যারের নাম আনারকলি !!!

ক্লাস রুমের কোন ছবিতো আমাদের সময়ে ভাবা যেত না কিন্তু মাঠের ছবি যে কেউ নিতে পারতো তাই ওনার সঙ্গে একটা মাঠের ছবি আমার কাছে রয়ে গিয়েছে। ওপরের ছবিতে দেখা (অস্পষ্ট হলেও) যাচ্ছে উনি একেবারে প্রস্তুত; আমরাও মোটা মুটি তাই। এটি ১৯৭০ সালের শীতকালের….প্রথমে তরুণ ব্যানার্জি… স্যারের মুখের দিকেই তাকিয়ে আছে , তার পরে অজয় দেবনাথ…তীব্র মনঃসংযোগে ব্যস্ত,, আশীষ সাহা (ইঞ্জিন) সেও মনঃসংযোগে ব্যস্ত (কিছুদিন আগে আমাদের ছেড়ে চলে গেছে), সমীর পাল (আমাদের ইলেক্ট্রিকালের প্রফেসর ও পরে জলপাইগুড়ি/ নর্থ বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের প্রিন্সিপাল আর সি পালের সুপুত্র)….উত্তেজনায় দাঁড়িয়েই স্টার্ট নিতে চাইছে, তাপস রায় ফিনিশিং লাইনটা ভাল করে দেখে নিচ্ছে, তারপরের নামগুলো আর চিনতে পারছি না। ওভাল মাঠের ছবি দেখলেই ‘মনটা আমার যেন কেমন কেমন করে’। এই ছবিটা বোধহয় শাসমল (নামটা আর মনে নেই) বলে একটা ছেলে তুলে ছিল। আমার কলেজের সব ছবি ওরই তোলা। ওকে কেউ বলেনি কিন্তু নিজের আগ্রহেই তুলতো আর আমাকে প্রিন্ট করে দিতো। অসীম কৃতজ্ঞতা জানাই ওই ভাইটিকে। যেখানেই থাকো ভাল থেকো।

যাই হোক AKC বা আনারকলি স্যারের সাথে আমার কলেজ জীবনের যোগাযোগ ছিল হচ্ছে ওভাল গ্রাউন্ডে। এথলেটিক স্পোর্টস ফাইনাল রাউন্ডে উনি ছিলেন আমাদের স্টার্টার। ফাইনালের দিন আমরা যখন এক একেকটা ইভেন্টে মনে উদ্বেগ বা টেনশন নিয়ে স্টার্টিং লাইনের কাছে এগিয়ে যে যার ল্যাপ এ দাঁড়িয়ে বা হাঁটু গেঁড়ে বসে প্রস্তুতি নিচ্ছি, সেই সময়ে স্যার জেড ব্ল্যাক কালারের স্যুট,সঙ্গে মানানসই টাই পরিহিত হয়ে এক হাতে পিস্তল আর গলায় ঝোলান হুইসেল নিয়ে লাইনের আড়াআড়ি দাঁড়িয়ে দেখে নিচ্ছেন কেউ লাইন ক্রস করছে কিনা। তার একটু আগে দূরে গিয়ে দেখে নিয়েছেন হুইসেলটি বাজছে তো !

স্যার প্রথমেই ‘অন ইওর মার্ক, গেট সেট’ বলে পিস্তলটি ফায়ার করবেন। দু একজন তার আগেই বেরিয়ে গেলে বকাবকি করবেন; আর বলে দেবেন তারা যদি আরেকবার এরকম করে তবে তাদের ডিসকোয়ালিফাই করে বের করে দেবেন। এরপর যদি পিস্তলটি বিস্বাসঘাতকতা করে তবে তিনি সেকন্ড লাইন অফ ডিফেন্স মানে ওই হুইসেলটি বাজিয়ে দেবেন। এরপর প্রতিযোগীদের ‘নিজের দায়িত্বে নিজের মাল সামলাতে হবে’ । ফিনিশিং লাইন নিয়ে AKC স্যারের আর কোন মাথা ব্যাথা নেই।

বিই কলেজ আথলেটিক ক্লাব, ১৯৬৮-৬৯, ‘ডি রতনের’ পিন হোল ক্যামেরায় তোলা অসাধারণ স্মৃতি ফলক। অন্যান্য দিকপাল স্যার দের সঙ্গে AKC বসে রয়েছেন বাঁ দিক থেকে ষষ্ঠ আর আমি সেবারে জিমনাসিয়ামের ক্যাপ্টেন, দাঁড়িয়ে আছি মাঝের সারিতে বাঁ দিক থেকে দ্বিতীয়।

 

Sahityika Admin

Add comment