সাহিত্যিকা

আগমনী এবং

আগমনী এবং
সুদীপ্ত চক্রবর্তী ১৯৮২ স্থাপত্য

দূরদর্শনের বিভিন্ন জানালায় দেখা যাচ্ছে, ফাঁপানো চুল কটকটে রংচঙে নকশাদার পাঞ্জাবি সোনালী হাতঘড়ি ইয়াব্বড়ো লকেট পরা অথবা হাঁটুছেঁড়া পাত্‌লুন আর গোলগলা গেঞ্জীজামা পরা শ্রদ্ধেয় নানান শিল্পীরা সুদামী গীটার, ঢোল খোল তবলা ব্যাঞ্জো মায় ঝোলা-ঝোলা কালা-কালা তারতোরওয়ালা বিশাল বিকট এবং ততোধিক বিশাল বিকট অক্ষরে লেখা কোম্পানীর নাম সহ আদিগন্ত কীবোর্ড লয়ে দুর্গা মায়ের আগমনী গাইছেন। সুন্দরী গ্রন্থিকারা আধো-আধো মিষ্টি মিষ্টি বোলে লম্বা লম্বা করে সকল শিল্পী, সহশিল্পীর পরিচয় করাচ্ছেন, শিল্পীও নানাকথা বলতেছেন, আবার তার মধ্যেই দর্শকের দূরভাষে ছকেবাঁধা আলাপন হতেছে। এসব কান্ডকে একেবারেই হতছেদ্দা করার কোনোই প্রশ্ন নাই, এঁরা খুবই যুগোপোযোগী এবং সম্মানীয়।গানের মানও ভালোই আর সকলে শুনতে দেখতে পাচ্ছেন সে তো খুবই ভালো ব্যাপার।

কিন্তু কী যে করি, পুজো এলেই বার বার মনে পড়ে যায়, সেই-যে খুব এক গরিবানা ছোটোবেলায়, সেই-যে অপাংক্তেয় শহরতলীর উদ্বাস্তু পাড়ায়, সেই-যে ফাঁকা-ফাঁকা বাড়িঘর, খালি মাঠে কাশফুলের অমল আয়োজনের মাঝ দিয়ে, তীব্রনীল আকাশ, তাতে ভেসে চলা তুলোস্তুপের মতন মেঘরাশির নীচ দিয়ে, ঝিরি ঝিরি মিঠে মিঠে বহতা বাতাসের স্রোতে ভেসে, অমোঘ আবির্ভাব হোতো এক আগন্তুকের। কালো কুটকুটে এই এ্যাত্তোটুকু ছোট্টো পলকা চেহারা, ময়লামলিন খাট্টো ছেঁড়া ধুতি আর হাতাহীন ফতুয়া, একেবারে ফোকলা মুখ, তিলক রসকলি করা, কাঁধে এক নামাবলীর ঝোলা, হাতে এক ভাঙা একতারা।

আর মুখে গান। বছরপরে মায়ের ঘরে মেয়ে আসার আকুল আর্তির আর অসহ আনন্দের উৎসার সেই গানে। খুব মিষ্টি, আন্তরিক কিন্তু খুব নরম দুর্বল কন্ঠস্বর, সবল হাওয়ার দামাল দাপটে ঝাপটে ভেঙ্গে-ভেঙ্গেও যায় সে গানের কথাগুলি, টুকরো টুকরো শব্দের ওঠাপড়া স্বরের আবাহন আবেদন আকিঞ্চন আলাপ আনন্দ আর আশানিরাশার সেই আগমনী গান যেন উঠে আসত সেই হতদরিদ্র বৃদ্ধ দুর্বল ভিখারীর অন্তর মন্থন করে। সেই শরতের উজ্জ্বল আকাশব্যাপী আলোকে, সেই শুদ্ধ তীব্র মিষ্ট বাতাসে, সেই চরাচরব্যাপী শান্তগম্ভীর আনন্দের বিচ্ছুরণের আবহে, সেই আন্দোলিত কাশ আর আনন্দিত আকাশের মঞ্চে, শুধুমাত্র এক একতারার সামান্য আবহসঙ্গীত সহকারে সেই নির্ভেজাল আকুল আগমনী আমাদের অন্তরের একেবারে গহনে গিয়ে আঘাত করত। কিন্তু আমাদের অসাড় হৃদয়, সেই গান চোখে জল আনতে লেগে গেল ষাট বছর, আজ বুঝেছি সেই আগমনীর মহিমা, তার রোদনবেদন, তার ব্যাপ্তি আর গভীরতা, তার ঐতিহ্য আর লোকভিত্তি, আর আজ তার অবহেলা আর অবলুপ্তি।

সেই সংগ্রামকালে যখন আমাদের নিজেদেরই সঙ্গতি সংস্থান ছিল ক্ষীণতোয়া, সেই আগমনী গায়ক ভিখারীকে সামান্য একমুঠো চালের বেশী কিছুই দেয়া যেত না। কিন্তু হয়ত সেই প্রসারিত দারিদ্র্যের পটভূমি না হলে, সেই চালমুষ্টির চালচিত্র না হলে, তার প্রেক্ষিতে মায়ের মায়াবী মূর্তিটি এত আদরে এত গরবে এত আথিবিথি আকুলতায় স্থাপনা করাও যেতোনা।

সেই সময়ের অনেক গানই আংশিকভাবে মনে পড়ে। আর হারিয়ে খুঁজি সেই আবেগ, সেই কন্ঠ, সেই সারল্য, সেই অনাড়ম্বর অসচেতন নির্বিকার অথচ দুর্নিবার নিবেদনের ভঙ্গি। হায়। সেসব লিখে রাখার মত বুদ্ধি ছিলনা, তুলে রাখার মতন যন্ত্র ছিলনা। ছেঁড়াফাটা স্মৃতির চাদর রিফু করে কিছু পেশ করা যেতে পারে এরকমঃ

অরে কুটীর আলা কৈর‍্যে আইসছে আমার ঊমা
বচ্ছরের পর আইসছে রে আমার মা
আমার কোল ভর‍্যাতে আইসছে রে মা ঊমা
কী আনন্দ যে কোরিবো মেয়্যা আমার কোলে নিবো
জড়ায়ে তার মুখ্যে দিবো চুমা

সারা বছর শিবের ঘরে কতই না মা কষ্ট করে
এই কট্যা দিন মায়ের হাতের
রান্না খা আর পড়্যে পড়্যে ঘুমা

ঘর ভরা অই নাতিপুতি ছোট্টঅ ঘরে গুতাগুতি
তবু হাসি তবু খুশী পাকশালে তাই অহর্নিশি
ভালোমন্দ রান্নাবান্নার ধূমা

কুটীর আলা কর‍্যে এঞিনছে আমার ঊমা
তিনদিনে কি মায়ের মনে শান্তি হয় রে, মন যে গণে
আরো কয়দিন থাইকত যদি ও মা

বয়স হৈল কালে কালে বুঝি যা আছে কপালে
যেমন বরে হৈল বিয়া যেমন ঘরে রৈল গিয়া
মাইয়া আমার আদরের ধন তার লাইগ্যা হয় মন উচাটন
সারা বচ্ছর সব অনুখন এ মনরে হায় ভুলাই কী যে দিয়া

ঊমা আমার পরবাসী তার লেগ্যে হয় মন উদাসী
এই কটা দিন মেয়্যার হাসি দেখত্যে কী যে ভালঅবাসি
কী সুখো-সাগোরে ভাসি বাকি বরষ মরি যে কান্দিয়া
চিন্তা আমার হয় না যে লঘু মা

যাহৌক এই কট্যা দিন আইসবে আমার ঊমা
কুটীর আলা কর‍্যে বইস্যবে আমার ঊমা……।।

একেবারে নিরন্তর নিঃসহায় নিঃসম্বল গায়ক না হলে হয়তো গানের মধ্যে এই আকুতি এই অকৃত্রিম বেদনা ফুটে বেরোয় না। গান তো শুধু সুর তাল স্বরমান উচ্চারণ এবং বাদ্যভান্ড নয়, গানের প্রাণ হচ্ছে আবেগ। হীরক রাজার দেশের চরণ চারণের চেহারা এবং গানের মধ্যে সেই আগমনী গায়ক ভিখারীর কিছু ছায়া দেখা যেতে পারে।
আরেকটি গান ছিল মোটামুটি এরকমঃ

মাগোরে তোর আগমনী গাই
ভাদর যেয়ে আশ্বিন এলে ঘরকন্নার কাজ ফেলে ফেলে
ঘনঘন দুয়ারে দাঁড়াই
মাগোরে ওই নাড়ির টানে বড় ব্যথা মন না মানে,
জানি এখনি তোর আসার আশা নাই
তবু মা তোর আগমনী গাই
সারা বছর পরের ঘরে আদরের মা কি যে করে
না জানি কি কষ্টে থাকে সারা বছর ভাবি আমি তাই
বুঝি আমি মেয়ের বাপে থাকে দুঃখে মনস্তাপে
পাগল বরের হাতে দিয়ে মেয়ে
থাকে চিন্তনে সদাই
কি করে ভুলিতে পারি যোগী জামাই সন্তান চারি
ঊমার মনে বুঝি শান্তি নাই
তবু আমার মেয়ে ঊমা এলে দিবো মুখে চুমা
বুকে ধরে পোড়া বুক জুড়াই
তাকায়ে মেয়ের মুখে হেসেকেঁদে সুখেদুখে
আমি বুঝি পাগল হয়ে যাই

আর এই গানটি বুঝি কিছু-বা উঁচু স্বরে আনন্দ, দুঃখ, দাবী, কাকুতি, আকূতি মিলিয়ে মিশিয়ে গাওয়া হতঃ

ওরে আসিবে আসিবে তুমি
সেজ্যেছে সেজ্যেছে ভূমি
নীলাকাশে সাদা আসে মেঘ
হরিত মাঠে শ্বেত কাশ দিয়াছে আশার আভাস
পদ্ম আর শেফালিকা ফুট্যেছে যতেক
ওরে আয় আয় আয় আয় রে মেইয়্যে চক্ষু গেল পথ চেইয়্যে
চোখের জলে বুঝি অন্ধ হয়ে যাই
মাগো রে তোর আগমনী গাই

তখন বুঝি নি, এখন বুঝি কিছুটা, সেই সব গানে যেমন একদিকে মিশে যেত গায়ক গায়িকার ব্যক্তিগত আবেগ, আবার ভাষা আর উচ্চারণের দিক দিয়েও তাতে থাকত দোকনো, এদেসী, প্রামাণ্য বাংলা আর বহুবিধ লৌকিক আঞ্চলিক বাঙাল ভাষার প্রভাব। সবমিলিয়ে সে ছিল অতুলনীয়। সে জিনিষ কৃত্রিম আলোর তলায় কায়দাকারী ক্যামেরার সামনে জগঝম্প বাদ্যশব্দ সহযোগে ধরা দেয় না দেবে না। যাই হোক যুগে যুগে নানা রূপে আগমনী গান দেখেছি শুনেছি, সবেরই মূল সুর ওই মেয়ের পথ চেয়ে থাকা।

তারপরে আসে মহালয়ার কথা। বেশী না বলে একটি পদ্যে মনোভাব বর্ণন করার চেষ্টা করা যাকঃ

প্রবাসে মহা-আলয়া
সময় কেমন বদলে গিয়েছে ভাবি
আজ সকালেও শুনেছি তো মহালয়া
একদম চাপা স্বরে রেডিওর চাবি
স্বর বিকৃত, বহুদূরাগত, ক্ষয়া-ক্ষয়া

নিউ টালিগঞ্জ মনে পড়ে, ছোটো বাড়ি
আগের রাতেও ঘুম নেই কারো চোখে
ষোলোটা মানুষ থাকা হত, এক হাঁড়ি,
রেডিও শুনতে জড়ো হোতো আরো লোকে

মনে আছে, যাতে সবাই শুনতে পায়
জোরে দেয়া হোতো রেডিওটার ভলুম
আজ মহালয়া শুনছি চোরের মতো
ভেঙ্গে যায় যদি পড়োশীর গাঢ় ঘুম

মহালয়া শুনে মনে ভরে যেতো খুশি
ছেয়ে যেতো এক শ্রদ্ধা ও সম্ভ্রম
সাধ বা সাধ্য কিছুই ছিলো না বেশি
আয়োজন আর প্রয়োজন সবই কম

তখনো গরীব বাবা-কাকাদের হাতে
হয়তো জোগাড় নেই যথেষ্ট টাকা
বাড়ি ফিরে রোজ উদাস ওই দাওয়াতে
বসে থাকে তারা, মন ভারী, হাত ফাঁকা

তবু কেন যেন ছোটো নদীটির তীরে
কাশবনে আর আকাশের গাঢ় নীলে
প্রগাঢ় ব্যথার মত খুশী ছিলো ঘিরে
শেষদিনে ঠিক নয়া জামা যেতো মিলে

আজকে জামার পাহাড় আমার ঘরে
দরকার নেই তবু কতো উপহার
কতো তেল দেখি তেলালো মাথায় চড়ে
ফিরে পাওয়া যায় একান্ন পরিবার ???

তবে সত্যি কথা বলতে কি আজকাল মহালয়া শোনার এত বছরের অভ্যাসের প্রবল টানের সঙ্গে সঙ্গে একটা ভয়ানক বিকর্ষণও বোধ করি। জাতি হিসেবে বাঙালি যে একেবারে শেষ হয়ে গেছে বা যেতে বসেছে সেটার প্রমাণ হলো, বছরে একটা দিন পবিত্র ব্রাহ্ম মুহূর্তে একটা অতি পবিত্র শুদ্ধ সুন্দর ভাবগম্ভীর অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার আগে ঘ্যান ঘ্যান খ্যান খ্যান স্বরে শাড়ির বিজ্ঞাপন এবং অন্যান্য ছুটকো ছাটকা জিনিসের বিজ্ঞাপন না দিলে কি একান্তই চলত না। একটি মাত্র অনুষ্ঠানকে কি এই অত্যাচার থেকে মুক্তি দেয়া যেত না। বাঙালির তো কোন প্রতিবাদ নেই দেখি। অন্ততঃ বিজ্ঞাপনগুলি যদি শান্ত সুন্দর সম্ভ্রমপূর্ণ হোতো!

তার পরে মায়ের আগমনের একেবারে আগের দিন খুব মনে হয়,

মা আসছে মা আসছে

হোক না যতই ঘোর কলিকাল
ন্যায়ের যতই হোক না আকাল
ভালো যতই হোক না নাকাল
আজ না হলেও ঠিক হবে কাল
অসুর নিধন হবে, হবেই, হবে

বাড়বাড়ন্ত হোক না যত
পাপের লতা সাপের মত
হোক না বিচার রোজ আহত
শেষ কথা তো হয়নি গত
কেউ সে কথা সময়মতো কবে

ধৈর্য ধরো ধৈর্য ধরো
একটুখানি সবুর করো,
ভালো কাজের নজির গড়ো
ওই দেখো পাপ পড়ো-পড়ো
শিকড়ছাড়া আর কতকাল রবে

মা আসছে মা আসছে রে ওই
মনের কথা প্রাণ ভরে কই
সারা বছর যে দুঃখ সই
সব ঢেলে দি মায়ের দু’পায়
সব শুনে মা করবে উপায় তবে

মা আমাদের নরম যত
মায়ের বিচার কঠিন তত
পাপীর দেয়া যতেক ক্ষত
হিসাব হবে বিচার হবে
শাস্তি হবে শান্তি হবে ভবে

অসুরনিধন হবে, হবেই, হবে !!!

এর পরেও থাকে মায়ের মর্ত্যে থাকাকালীন সন্তানদলের আবেগ উচ্ছ্বাস আনন্দ ইত্যাদির বর্ণনা, আবার অবধারিতভাবেই আসে মুদ্রার আরেক পিঠ। মন্ডপের পাশের আধো-আলো আধো-অন্ধকারে সামান্য কিছু অবিক্রীত ফঙ্গবেনে পণ্য নিয়ে বসা রুগ্ন হতাশ বৃদ্ধের মুখে কেন যে আমার পিতার মুখ দেখতে পাই, কেন যে এক অনেক আশায় হাত-পাতা বুড়ি ভিখারিণীর চেহারা একেবারে আমার ঠাকুমার মতো লাগে, আমার লাল জামা ফ্যাকাশে মেরে যায়, আমার হাতের পিজ্জা বিরস হয়ে পড়ে, চারিদিকের উৎসব- কোলাহল হলাহল মনে হয়। আবার কিছু পরে চাঙ্গা হই, নাচিগাই মজা করি অবশ্য।

কিছুটা মনে আছে, অল্পবয়েসের উদ্দীপনার তাড়নায় এক পদ্য ফেঁদেছিলাম এই নিয়ে, তার এক্টুখানি মনে পড়েঃ

সরোদের সুরে শরতের শুরু ঢাকের আওয়াজে শেষ
শুধু পেট ভরে যারা খেতে পায় তাদের নিয়েই দেশ?
যাদের জন্য লাঞ্ছনা আর যাদের জন্য বঞ্চনা
তাদের জন্য পূজামন্ডপ সুখ বিলোনোর মঞ্চ না
ঠাকুর থাকবে কতক্ষণ ঠাকুর যাবে বিসর্জন
ঠাকুর ধনীর বাড়ি ফুর্তি করে গরিবরা সব শোন
যাদের বাড়ি সাধ্যি আছে তাদের বাড়ি বাদ্যি বাজে
অবুঝ গরিব পায় না পিরাণ কান্দে অনুক্ষণ ………… ইত্যাদি।

আরো অনেক অনেক কিছুই বলা যায় বলার আছেও কিন্তু এক জায়গায় এতো বেশী বলে ফেলা ঠিক নয়। আরো পরে সাহস করে দুর্গা মায়ের উপর আরো অনেক কিছু লিখেটিখে ফেলেছিলাম। অসীম সৌভাগ্য যে আমাদের কলেজেরই গুণী ভায়া তাপস মৌলিক তার থেকে একটি গীতি-আলেখ্য নিয়ে অতি চমৎকার ভাবে গেয়ে আন্তর্জালে দিয়ে রেখেছে। মায়ের পায়ে সেও এক প্রণাম।

আপাততঃ শেষ করার সময় বলা যায় যে সব কিছু বলা ভাবা গাওয়া লেখার পরেও আজও এই ক্লিন্ন ক্লিষ্ট পৃথিবীতেও সমস্ত রোগশোক দুঃখ বেদনা হাহাকার ছাপিয়ে জেগে থাকে এক আশা, সাহস, ন্যায় আর অন্তিম সুবিচারের কামনা। মা দুর্গা সেই আশা আর সাহসেরই প্রতীক। আজও যখন এমনকি কোনো বারোয়ারী মণ্ডপেও মায়ের আরতি হয়, সেই সময় ধূপধুনোর ধোঁয়ার মধ্যে, মগ্ন তেজীয়ান শ্রান্তিহীন ঢাকবাদ্যের উদ্দীপনে, আরতির নৃত্যপর পঞ্চপ্রদীপের শিখাশোভায়, দশপ্রহরণধারিণী বিস্ফারিতাক্ষী গর্জনতৈলোজ্জ্বল দীপ্যমান মাতৃমুখে একইসঙ্গে খেলা করে ন্যায়দাত্রী প্রচন্ডপ্রহারকারিণী চন্ডীরূপ আর নির্মলা কোমলা বরাভয়দাত্রীর আস্যে মৃদু হাস্যরেখা। মৃন্ময়ী মায়ের এই চিন্ময়ী রূপ বারংবার দেখার লোভেই বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করে। মায়ের কাছে কোনো প্রার্থনা নেই, মা জানেন কী দরকার আর কী দেয়া দরকার। শুধু প্রণাম জানাই।

Sahityika Admin

1 comment