সাহিত্যিকা

কুরূপদর্শী ধীমাচান চাকির কলমে

কুরূপদর্শী ধীমাচান চাকির কলমে
ধীমান চক্রবর্তী, ১৯৯৮ সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং

ফেলুদা ভুরু কুঁচকে পরপর তিনটে ধোঁয়ার রিং ছেড়ে বললো..
“ভালো লাগছে না রে তোপসে. ভালো লাগছে না।”
আমি তাকাতে বললো.. “আগে ছিলো তিন প্রধান। মাঝে এসে দাঁড়িয়েছিলো দুই প্রধান। এখন ভাবছি এই যদি হাল হয় তাহলে ডার্বিটা খেলবো কার সঙ্গে?”
বললাম.. “কিন্তু পুরোনো এক প্রধান তো এবার ডুরান্ড জিতলো।”
সেই একপেশে হাসিটা ফেলুদার মুখে। মকাইবাড়ির চায়ে একটা চুমুক দিয়ে বললো.. “তা হয়তো ঠিক। কিন্তু তাদের সঙ্গে তো আর ডার্বি খেলার উপায় নেই। হিসেবটাই তো মিলছে না রে। আর সেই জন্যই ভালো লাগছে না।”

রজনী সেন রোডের বাইরে চেনা গাড়ির হর্নের শব্দ। ফেলুদার গম্ভীর মুখে এক চিলতে হাসির আভাস। কিছুক্ষণের মধ্যেই লালমোহনবাবু ঢুকলেন ঝড়ের মতো। জটায়ূর হাতে তাঁর ফেভারিট সেই ‘মন্ডলস ফাইভ মিক্স সুইট মিটস’ এবং অবশ্যই জানি মাঝখানে থাকবে সেই পলকাটা রুপোলি তবক দেওয়া ‘ডায়মন্ডা।’
“কী ব্যাপার মিস্টার জটায়ূ? একাশিতম উপনিয়াস প্রকাশ হলো বুঝি?”

বেশ ক’মাস আগে নিউটাউনে পাঞ্জাবের কুখ্যাত গ্যাংস্টারের সঙ্গে পুলিশের ভয়াবহ এনকাউন্টারের ওপরে লালমোহনবাবু তাঁর প্রথম সত্যি ঘটনা অবলম্বনে লেখা উপন্যাস ‘রাজারহাটে মারমার কাটকাট’ লিখেছিলেন। ফেলুদা সেটার কথাই বলছে।
কিন্তু সেসবে কান না দিয়ে বলে উঠলেন ভদ্রলোক.. “আরে দ্দুর মশাই রাজারহাট! পেয়ে গেছি পেয়ে গেছি তার পরের উপন্যাসের নাম! .. ‘লুটলিয়া লোটাকো।’ নামটি কেমন ফেলুবাবু?”
ফেলুদা একটু ভুরু কুঁচকে বললো..
“কেন এবার কি আপনি হিন্দিতে উপন্যাস লিখবেন না কি?”
“ও, হলো না বুঝি?”

মুখটা একটু অসহায় হয়ে গেল জটায়ূর।
একটু সান্ত্বনা মেশানো গলায় ফেলুদার উত্তর.. “আঃ হা, হবে না কেন? এখন তো সবই হয়, হওয়ালেই হয়। এক অনন্য প্রতিভা তো হিব্রু ল্যাটিন আর গ্রিক ছাড়া প্রায় সব ভাষাই বলতে পারেন, লিখতেও পারেন। তাঁর থেকে অনুপ্রাণিত হলে আপনার ওই ‘লুট লিয়া লোটাকো’ ও দিব্যি হিট হবে। চাই কি আপনার ভাষায় ‘সেলিং লাইক হট কচুরিজ’ ও হয়ে যেতে পারে।”
“তা আপনি একটু আলো দেখান না মহাই। লেখালেখির ব্যাপারে সেই উটের পাকস্থলীর কথাটা জানার পর থেকেই তো আপনাকে গুরু মেনিচি।?”
.. জটায়ূর গলায় আর্তি।
“ফেলু মিত্তিরের কল্পনাশক্তির দৌড় তো আর প্রখর রুদ্রের স্রষ্টার মতো প্রখর নয়।
তবে ‘মাচাম্যাচে লোটালুটপাট’ বা ‘লোটা খায় লুটোপুটি’ কিম্বা ‘লুটিয়ে লুকোলো লোটাগণ’.. এগুলোও খারাপ অপশন নয়। ভেবে দেখতে পারেন।”
“উফফফ্, ভাবা যায় না! আপনাকে চিরকাল কাল্টিভেট করতে হচ্চে মহাই! নামের জোরেই তো গপ্পো উতরে যাবে!”

উত্তেজিত হয়ে ডিশের ওপর চা চলকে ফেলে বলে উঠলেন জটায়ূ।
আবার পরপর তিনটে ধোঁয়ার রিং ছেড়ে বললো ফেলুদা.. “তবুও সেয়ানে সেয়ানে কোলাকুলি হলে লড়ে মজা। আপনি ভাবুন লালমোহনবাবু, মগনলাল মেঘরাজ না হয়ে পাতি ছিঁচকে চোরের সঙ্গে টক্কর দিয়ে কি ফেলু মিত্তিরের মগজাস্ত্রে যথেষ্ট পরিমাণে শান পড়ে? নাকি সেটাকে আদৌ টক্কর বলা উচিত?”

Sahityika Admin

Add comment