সাহিত্যিকা

BECআর জীবন, পর্ব – ১, ২

BECআর জীবন, পর্ব – ১, ২
ধীমান চক্রবর্তী, ১৯৯৮ সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং

“শাট আপ ইউ র‌্যাস্ক্যাল..!”
ব্রিটিশ আমলের বড়ো হল ঘরের দেয়ালে দেয়ালে ধাক্কা খেতে খেতে ধমক টা “আসক্যাল”.. “স্ক্যাল”.. হতে হতে “ক্যাল”.. “ক্যাল” হয়ে “অ্যাল” হয়ে থেমে গেলেও আমি কেমন যেন ঘেঁটে গেছি!
বিড়বিড় করে চলেছি.. “রক্ষা করো তিনুর হাত থেকে হে মধুসূদন স্ল্যাটার হিটন ডাউনিং.. !”

উড়ন্ত প্রোজেক্ট রিপোর্ট শিট গুলো কাটা ঘুড়ির মতো নেমে আসছে!
কোনো ক্রমে কুড়িয়ে মুড়িয়ে পালাতেই হবে! নইলে শিওর মানুষ মারার দায়ে জেল খাটতে হবে!
“তোমাকে আমি টলারেট করতে পারছি না.. আমার সেরিব্রাল হয়ে যাবে এক্ষুনি!”
গর্জে উঠলো অ্যাপ্লায়েড মেকানিক্স প্রফেসর তিনুর গলা!
ফরসা বয়স্ক মানুষটা কিছুতেই বিশ্বাস করে উঠতে পারছেন না যে কোনো রক্ত মাংসের মানুষ নিজের হাতের লেখা উত্তরকে নির্বিকার ভাবে “ওটা আমার লেখা নয় স্যার.. আমার যমজ ভাই এর ” বলে দাবি করতে পারে!
“তাড়াতাড়ি মাল পত্তর কালেক্ট করে নিয়ে কাটিয়ে দে! তিনু খুনে মেজাজে আছে! পারলে দুনিয়ার ভার্নিয়ার জড়ো করে ক্যালাবে! ”
আমার শিট গুলো কুড়িয়ে নিতে নিতে চাপা গলায় বলে উঠলো গুচ!

আমরা দুজনেই একে একে সবাইকে এগিয়ে দিয়ে অপেক্ষা করছিলাম একসঙ্গে ভাইভা দিতে ঢুকবো বলে!
আমার ভরসা ছিলো মাদার শিট এর ফাইনাল কপি। আমার নিজের হাতে আঁকা। খোট্টার কাঁটার আঘাতে আঘাতে ক্ষতবিক্ষত অরিজিনাল মাদার শিট থেকে নতুন করে বানানো।
খুব যত্নের সাথে ড্রইং করা। চমৎকার ক্যালিগ্রাফিক ছাঁদে লেজেন্ড সমেত লেখা। চারশো দুই এর সুমিত ওর পয়েন্ট ওয়ান রোটরিং টা দিয়েছিলো। সবই নিখুঁত ছিলো। শুধু খেয়াল ছিলো না মাদার শিটে খোট্টার বদলে নিজের নামটা লেখার! একেই বলে পচা শামুকে পা কাটা!
সারা রাত ধরে ড্রইং আর রিপোর্ট শিট। মাথা খাটিয়ে ডেসিম্যাল ভ্যালুর এদিক ওদিক করে নেওয়া। 28.5 হলো 28.4996..। 30.00 খুব স্মার্ট বলে 29.9998 হয়েছে!

মাথা তো আগে থেকেই খেটে খেটে ক্লান্ত। আশা ছিলো শেষে ঢুকলে বেশি টর্চার না করে ছেড়ে দেবে! কিন্তু মুখ ফসকে কেন যে বলতে গেলাম “ভার্নিয়ার হলো হার্নিয়ার অপারেশনে ব্যবহার করা এক বিশেষ ধরনের মেটিরিয়ালে তৈরি স্কেল?”

“আব্বে চল না..!” চমক ভাঙলো গুচের ডাকে।
“তুই ভাইভা দিবি না?”
“দরকার নেই শালা তিনুর সাথে ভাইভাই খেলে..! কাঁচা খেয়ে নেবে এখন ওর সামনে দাঁড়ালে! কাটা না!”
তিনকড়ি মুখার্জি থরথর করে কাঁপতে থাকা আঙুল তুলে গুচ কে বললেন.. “আই উইল বি কামিং টু ইউ!”
“বিশ্বাস করুন স্যার.. যা দোষ সব আমার! ইন্দ্রজিৎ গত দু সপ্তাহ কলেজ করতেই পারেনি ওর ছোটো পিসেমশাই ঘুম চোখে ভোরবেলা বাজার করতে বেরিয়েই রোড অ্যাক্সিডেন্টে মারা যাওয়ায়!.. ”
কপাল ঠুকে বলতে বলতে খেয়াল রাখছি তিনুর মুখের মাসকুলার কনফিগারেশন কেমন করে চেঞ্জ হচ্ছে..!
“ওহ আয়্যাম সরি ইন্দ্রজিৎ..!”
তিনুর চোখ ছলছল করছে!
গুচ আমার দিকে একটা অবিশ্বাসের চাউনি সমেত চোখ টিপলো! তারপর গলাটা যতোটা সম্ভব ধরা ধরা করে অস্ফূটে বললো.. “থাক স্যার মনে করাবেন না প্লিজ.. আমি এখনও ভেবে উঠতে পারছি না!
আমি তো ভাইভা দিতেই আসতাম না। একমাত্র এই বন্ধুটি আমায় আগলে আগলে রেখেছিলো। সারাক্ষণ বলে গেছে ভাইভা মিস না করার কথা। নিজের টা করে উঠতে পারেনি। কিন্তু আমার ড্রইং টা ও নিজে করে দিয়েছে!”
আমি মুখ তুললেই হেসে ফেলবো..!
কাঁচা নির্জলা ঢপ ! কিন্তু কি আশ্চর্য মোক্ষম তার এফেক্ট মাইরি!
“ওহ হো হো..! আগে বলবে তো.. ভাইভা টা না হয় অন্য কোনো..!”
এবার আমি ঝাঁপিয়ে পড়লাম..” না না স্যার! সেই অপবাদ সহ্য করতে পারবো না! সিমপ্যাথি গ্রাউন্ডে ভাইভা কাটাতে পারবো না! ফেল করান আমাদের..! কিন্তু ভাইভা আমরা আজই দেবো!”
সম্মতিসূচক একটা গোঙানি ভেসে এলো গুচের দিক থেকে। দুজনেই মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে! বুক ঢিপ ঢিপ করছে! ফাঁড়া কাটবে কি কাটবে না! ওদিকে একেকটা সেকেন্ড সময় কেটে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে একটা গোটা দিনের সমান!
“আজ তোমরা এসো..! আরে ভাই মেশিন নিয়ে মাস্টারি করি বলে কি আমি হৃদয়হীন ভেবেছো?
একে অন্যের পাশে দাঁড়াতে শিখে নিতে পারলে ভার্নিয়ার এর লিস্ট কাউন্ট ও শিখে নিতে পারবে তোমরা! ইউ আর স্মার্ট এনাফ গাইজ!
আমিও তো সান অফ দিস সয়েল! কী হবে যন্ত্রচালনা মুখস্থ করে, যদি জীবনে কাজেই না লাগলো?”

কিন্তু এ কি! আমাদের যতোটা আনন্দ পাবার কথা ছিলো, ততোটা পাচ্ছে না তো!
তিনুর দুটো চোখের দিকে চোখ তুলে তাকাতেই পারছি না যে!
স্ট্রেনথ অফ মেটিরিয়ালে কতোটা স্ট্রং হয়ে উঠতে পেরেছিলাম জানি না।
তবে ষোলো নম্বর হোস্টেলে ফেরার পথেই দুজনে ঠিক করে নিয়েছিলাম এভাবে নয়।
পরে একদিন ভালো করে পড়ে ভাইভা দিতেই হবে!

সেই ভাইভা আজও দেওয়া হয় নি!
পড়ে চলেছি বিক্কলেজি হ্যান্ডবুক অফ শেয়ারিং অ্যান্ড কেয়ারিং!
পঁচিশ বছর হতে চললো। মনে হয় ফার্স্ট ইয়ার হিসেবে এই তো সেদিন পা রেখেছিলাম কোম্পানি বাগানের পাশের সেই আজব দেশের মাটিতে!
যেখানে স্বাধীনতা নিজের হাতে পরখ করে বুঝতে শেখার শুরু।
শুরু জীবন নামক গ্র্যান্ডভাইভায় তিনুর চেয়েও খতরনাক প্রফেসর এর সঙ্গে যুঝতে শেখার ও!

সেদিন ষোলো নম্বরে হোস্টেলে ফিরতে ফিরতে আমরা, মানে আমি আর গুচ, ঠিক করেছিলাম পড়াশোনা করবো।
পড়াশোনা কতোদূর কী করে উঠতে পারলাম সেটা তো জানা হয়নি। দুটো কারণ।
সব জেনে ফেললে জানার তাগিদ চলে যায়, প্লাস..
“জানার কোনো শেষ নাই
দেবেন জানা নেবেন তাই
মুরগিরা সব ভাই ভাই
অজানা দাদাকে জানতে চাই!”
আত্মরক্ষার জন্যে মুখে মুখে বানানো আমার প্রথম কবিতা!
হয়তো তুচ্ছাতিতুচ্ছ, কিন্তু পরীক্ষার খাতায় উত্তর লেখার বাধ্যবাধকতা নেই। মনের কথা সোজাসুজি অন্যের ভাষায় অন্যের হয়ে বলতে শেখার শুরু। আর এটাও বোঝার শুরু.. চোখ কান মাথা খোলা রেখে আর মুখ যতোটা সম্ভব কম খুলে স্ট্রিট-স্মার্ট থাকতে হবে! মুখ নিতান্ত খুললেও মুখ থেকে বেরিয়ে যাওয়া কথাগুলো যেন ছোঁড়া তিরের মতোই অব্যর্থ লক্ষ্যে পৌঁছতে পারে!

সেই সময়ে ঊনিশশো চুরানব্বই সালে প্রবেশ এক টালমাটাল পর্বের শেষে বি ই কলেজ বা ‘বিক্কলেজ’ নামের আজব দেশে! সারা মাথায় মনে মেখে নিচ্ছি তখন সমসাময়িক চলমান জীবনের টুকরো টুকরো ছবি! সেইসময় যখন বাংলা গানে টাটকা হাওয়া এসে সব কিছু বেজায় অগোছালো করে দিচ্ছে, বিশেষ করে মনের অন্দরে মাঝেমাঝেই হানাদারি করছে “এক কাপ চায়ে আমি তোমাকে চাই, ডাইনে ও বাঁয়ে আমি..” কিম্বা “যখন সময় থমকে দাঁড়ায়..” বা “শুনতে কি চাও তুমি..!”

পদ্য লেখার দরকার পড়ে নি। কারণ আমার কথা আমার হয়ে গায়ক তথা নাগরিক গীতিকবিরা বলে দিচ্ছে! অগুনতি প্রেমের চিঠি ছাড়া আর অন্য কিছু লিখিনি ততোদিনে! সে সব নেহাতই ব্যক্তিগত। আমার নৈর্ব্যক্তিক লেখা শুরু হবে একটু পরে। চুপচাপ চোখ কান মাথা খোলা রেখে দেখে শুনে বুঝে.. তারপর হাতে উঠবে কলম! মাথার মধ্যে শুরু হলো ভাবনা লেখা, ভাবনা শেখা! আগে মার্কেটে নিজেকে ফেলে যাচাই করি!

“ছাত্রাণাং অধ্যয়নং তপো” আপ্তবাক্যে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েও সব কিছু ছুঁয়ে দেখতে চেয়েছি চিরকাল। ক্লাস নাইন থেকে সিরিয়াসলি প্রেমে পড়া ও প্রেমে ওড়া আমায় শিখিয়েছে আমার নিজের মার্কেট ভ্যালু! হাওড়ার বিবেকানন্দ ইনস্টিটিউশন এর ঝকঝকে ছাত্র, গান গায়, বাঁশি বাজায়, নাটক করে.. আবার প্রেম ও! কিন্তু এটাই কি আমি? নাকি আমার তৈরি করা ইমেজ? কোনটা বেশি প্রিয়, জানতেই হবে! আর চিনতে হবে আসল আমাকে। দরকারে অন্য ছাঁচে ঢেলে।

তখন নানান রকম দ্বন্দ্ব, প্রেম, কামনা, স্বপ্ন, নিজেকে ভেঙে চুরমার করে নতুন করে খুঁজে পাওয়ার আর্তি ছুটিয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছিলো! সবচেয়ে বড়ো ব্যাপার ছিলো সেই নিষিদ্ধ স্বাধীনতা নিজের হাতে চেখে, চুমুক দিয়ে, ধোঁয়ায় টেনে পরখ করে দেখার! নিজেকে ধ্বংসের স্বাধীনতাকে বেড়ি পরানোর জন্যই দরকার ছিলো সেই চার বছর ও তার পরবর্তী জীবন!
স্বাধীনতার নামে স্বেচ্ছাচারিতার উদযাপন কিন্তু করতে দেয় নি সেই অবুঝ সবুজ মন, অগোছালো খেয়ালি যাপন! ভেতরে ছাপ রেখে গেছে। তবে প্রাচীন সেপিয়া টোন নয়। ঊনিশশো তিরাশির ক্রিকেট বিশ্বকাপ জয়, ছিয়াশির টিভিতে দেখা মারাদোনাময় মেক্সিকো বা পরের বছর গাভাসকারের একমাত্র বিশ্বকাপ সেঞ্চুরি! একেক দেখার রং একেক রকম।

এ রং কিন্তু অন্যরকম। প্রতি পদেই কিছু না কিছু ঘটনা ঘটেছিলো.. ঘটে চলেছিলো স্কুলের গণ্ডী পেরোনো সদ্য যৌবনের চার কি পাঁচ বছরের সেই যৌথ জীবনযাপনে! ঘটনাগুলোর বাস্তবোচিত মূল্য হয়তো কিস্যু নেই। এখনকার হুঁশিয়ার প্রজন্ম হয়তো “সো উইয়্যার্ড ইউ নো বাবাই..” বলে ফোড়ন কাটবে।

সেই সময়েই চোখের সামনে ভেসে উঠতে থাকে ‘টেলেরামা’, ‘বুশ’, ‘সোনোডাইন’, ‘ই.সি.’ র সাদা কালো, কখনো নীলচে সাদা কালোর বদলে এক সবুজ চলমান জীবনের অবুঝ ঘটনার মিছিল! সে রং কাঁচা মনে যে ছাপ ফেলেছিলো, সেটা একদম পাকা!
প্রথম পা রাখা সেই আজব দেশের সজীব সবুজ ডাঙায়! সোজা চলে যাওয়া একটা পিচের রাস্তা ডালপালা মেলে ছড়িয়ে পড়েছে সেই সবুজ সহজ পুরোনো জমিতে!
সেখানে পিচকালো, মেঠোমেটে, মোরামহলুদ, সুরকিলাল.. সব রকম রাস্তা নানান রকম সবুজের ছাউনির আদরে ঢাকা।
অদ্ভুত এক আদুরে আলোর আলপনা খেলে যেতো!
তিরতির করে কাঁপতে থাকা আলোর একটা সমবাহু ত্রিভুজ কখনো সমদ্বিবাহু বা বিষমবাহু হয়ে যাচ্ছে আয়তাকার লাল ইঁটের পুরোনো বাড়ির দেয়ালে। জাফরির নকশা কাটছে পেন্টাগন হেক্সাগন পলিগনের ছায়াবাজি! কখনো বর্গক্ষেত্র হয়ে যাওয়া একটা রম্বস ঝিলিক দিলো আলোয় ছায়ায়! কখনো এ পাড়া ও পাড়া পায়ে হেঁটে পারাপার! আপন মনে গ্রেভইয়ার্ড পার হওয়ার সময়ে কমলা ভেপার ল্যাম্পের আলোয় ক্রমদীর্ঘায়মান নিজের ছায়ামূর্তি দেখে মনের ভেতর অপার্থিব ত্রিকোণমিতির গোপন অভিসার! কোথাও নীল আকাশ লুটোপুটি খেতে চাইছে উপবৃত্তাকার পুরোনো রূপকথার নতুন তেপান্তরে ঘাসের চাদরে! সামনে ঝিম মেরে দাঁড়িয়ে শতকেরও বেশি প্রাচীন পেল্লায় এক কেল্লা! গল্পদাদুর আসরের মতো ঘটনার ঝাঁপি থেকে কচি পাতার মর্মরকণ্ঠে ফিসফিস দীর্ঘ নটেগাছটি না মুড়োনো গপ্পো শোনায়!
চার দিকে কতো যৌবনের শুরুর সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে মাথা দোলায় প্রাচীন মহীরুহের দল!
হঠাৎ গঙ্গার দামাল সোঁদা হাওয়ায় ভেসে আসা মন্দ্র-গভীর জাহাজের ‘ভোঁ!’ শাঁখের ডাকের মতো!
কতো ঝলমলে সকাল, গনগনে দুপুর পেরিয়ে ঝিরিঝিরি বিকেল সন্ধে ছুঁয়ে পা রাখতো আলগোছে আলো-আঁধারি রাতের মায়াবী শিশিরভেজা ঘাসের মাটিতে!

বকুলতলায় গুটিকয়েক চিত্তচঞ্চল অবুঝ ছেলেমেয়েদের বিরামহীন জমায়েত। দূর থেকে “ঢং.. ঢং.. ” কানে ভেসে আসা এক প্রাচীন ঘণ্টার শব্দ। যুগ থেকে যুগে বহমান সময়ের আবহমান সাক্ষী ওই ঘড়িওলা গম্বুজ! সেই ডাক অনুরণন তুলতো ভেজা থমথমে হাওয়ায়, ঘণ্টায় ঘণ্টায়। আজও তোলে, বিস্মৃতির পুকুরে স্মৃতির ঢেউ।
সেখানে জীবন এক আশ্চর্য জাদুকরী ছোঁয়ায় বেঁচে থাকার নানান সামান্য তুচ্ছ মুহূর্তের মধ্যেও এনে দিয়েছে অনির্বচনীয়ের স্বাদ।
যেখানে অভাব ছিলো, অভিযোগ ছিলো না। নিজে না পাওয়ার দুঃখ ভুলিয়ে দেওয়া আনন্দের ঝলকানি লেগে চোখের কোণে জ্বালা করতো। সেই আশ্চর্য আনন্দ অন্যের পাওয়ার জন্য!
“কী হলো, কোথায় হারিয়ে গেলে?”
ঠোঁটের ওপরে সদ্য গোঁফের রেখা, চশমার ওপারে কৌতূহলী এক জোড়া চোখের কোণে কৌতুক!
মুচকি হেসে উত্তর দিই.. “মে বি উইয়্যার্ড, কিন্তু ষোলো আনা খাঁটি যে রে পাগলা!”
“একদিন নিয়ে যাবে?”
“কী হবে ফালতু সময় নষ্ট করে?”
সপ্রতিভ উত্তর আসে.. “না, বোঝার চেষ্টা করতাম!”
একটু আশ্চর্য হই..”কী বুঝতে চাস?”
“মা বলে তুমি ফালতু সময় নষ্ট করেছো ওখানে। ইন ফ্যাক্ট এখনো করো। জায়গাটা সত্যিই সময় নষ্টের, না কি নিজের মতো করে নিজের সময় তৈরি করে নেওয়ার, সেটাই বোঝার!”
“ডেঁপোমি হচ্চে! দেবো কানের গোড়ায় যে সি.জি. চেঞ্জ হয়ে যাবে!”
“আবার তোমার সেই সি.জি. চেঞ্জ!.. বাপরে!”
সদ্য কৈশোরোত্তীর্ণ আমার মুখের ছাঁদের অন্য এক মুখে হাসি!
“কাঁচা রং, পাকা ছাপ!”
অজান্তেই বেরিয়ে এলো!
বললাম বটে, কিন্তু মন কখন উধাও হয়ে গেছে সেই প্রথম দিনের খোঁজে। সিকি শতক হয়ে গেছে। তবু ধুলো পড়ে নি। আত্মার যেমন ছেদ নেই, বিনাশ নেই, ক্ষয় নেই, লয় নেই। “নৈনং ছিন্দন্তি শস্ত্রানি নৈনং দহতি পাবকঃ..!”
মনে হয় পূর্বজন্মের কথা! কিন্তু কি স্পষ্ট, কি ভীষণ ভাবে জ্যান্ত!.. আজও!
আমরা বোধহয় সবাই জাতিস্মর!

Sahityika Admin

Add comment