সাহিত্যিকা

সানতানার সংবাদভাষ্য

সানতানার সংবাদভাষ্য
শান্তনু দে, ১৯৮৯ মেটালার্জিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং

বছর কয়েক আগে কেউ একটা হুকুম দিয়েছিলেন ,নিউটন না আইনস্টাইনের মাথায় আপেল পড়েছিল। তার পরবর্তী ঘটনাগুলো এরকম হয়েছিল…জানি না এখন কার মাথায় আপেল পড়ছে… তবে আমার মাথায় যে না, এটুকু জানি।

এদিকে স্বর্গে, আইজ্যাক নিউটনের বাড়িতে তো বিশাল শোরগোল। সারা বাড়ি কমলা পতাকা দিয়ে সাজানো। বাজি ফাটছে ,ব্যান্ড বাজছে, নিউটন গিন্নি (আইজ্যাকের মা) আর নিউটন-কর্তা (আইজ্যকের বাবা), একটা তিনফুট লম্বা লিস্টি নিয়ে লড়ে যাচ্ছেন, ওতে চারশ বছর ধরে মাথার উপর আপেল পড়া বন্ধ করতে কোথায় কি মানত করা আছে তার বিবরণ আছে….সেখানে ওলাইচন্ডী, বনবিবি, মনসা, শীতলা থেকে হাল আমলের সন্তোষী, মোহাম্মদ, যীশু, এমনকি কার্ল মার্ক্সের ও নাম আছে। নিউটন কর্তার তো মুড খুব খারাপ, ভাবছেন “শালা কত বছর যে ডিএ পাই নি, এখন এই সাতশ উনিশ জায়গায় কচি পাঁঠার যোগান দিতে তো পিএফ ভাঙতে হবে।”
“যা করার করবে, কিন্তু আমার আইজ্যাক বাছার মাথায় আপেল পড়া বন্ধ তো হল, মানসিক পূরণ করতেই হবে। না হলে ভগবান রেগে গিয়ে যদি কাঁঠাল ফেলে!”…নিউটন গিন্নির সাফ কথা।

এদিকে পাশের পাড়ায় আইনস্টাইনের বাড়ি যেন মূর্তিমান বিষাদ। গিন্নি (আলব্যার্ট-এর মা) ঘনঘন মূর্ছা যাচ্ছেন। মাথায় আপেল পড়ে পড়ে বাছার মাথায় একটা ছোট্ট আব মত গজিয়েছে। নিউটনের তো তাও বাবড়ি চুল ছিল, আমার ছেলেটার মাথার চুল তো চিরকালই পাতলা।”

আইনস্টাইন কর্তা অনেক ভেবেচিন্তে বললেন,” ওগো, আলবার্টের মা, মনটাকে একটু শক্ত করে ,একবার নিউটনের বাড়ি গিয়ে খোঁজ নিয়ে এস…কোথায় কোথায় মানত করেছে দেখ।”
আইনস্টাইন গিন্নি: “খোঁজ নিয়ে আর কি হবে শুনি? তুমি পারবে মানতের খরচা সামলাতে, না তোমার ঐ অপদার্থ ছেলে? আইজ্যাক তো রাজার টাকশালে কাজ করে দু পয়সা কামিয়েছে, তোমার ছেলের আছে কিছু? কি একটা E = mc.2 লিখে কিছু কাজ হলো? নোবেল না কি একটা পেল, সে সবই তো বড় বৌমার খোরপোষে চলে গেল। আর চারশ বছর ধরে আপেল পড়লে আমার বাছার মাথায় কি কিছু থাকবে? তুমি বরং অন্য উপায় দেখ।”

তা উপায়টা বের করলেন ,আইনস্টাইন গিন্নিই। : “ওগো আমাদের জগদীশকে ধরলে হয় না। বুঝিয়ে সুঝিয়ে যদি ওকেই আপেল গাছের তলায় রোজ বসানো হয়! ছেলেটা খুব ভাল, ফিজিক্সে এত নামডাক , কিন্তু সারা দিন ওই গাছপালা নিয়েই থাকে। তোমার ছেলে সেদিন বলছিল, রেডিও নাকি জগদীশই আবিষ্কার করেছিল, মার্কনি ছোকরা স্রেফ ঝেঁপে দিয়েছে। তাও দেখি কাল জগদীশ ,মার্কনির সাথে খুব হেসে হেসে গল্প করছে। ইন্টার-গ্যালাকটিক স্পেস ট্র্যাভেল না কি নিয়ে গবেষণার কথা আগে বাড়িয়ে বলছে। বুঝতেও পারছে না, ওই মার্কনি ছোকরা এটাও ঝেঁপে দিয়ে নিজের নামে চালাবে। আর ওই ছোঁড়ার স্বভাব চরিত্রির -ও ভাল নয় একেবারে। স্বর্গে, আমাদের বিজ্ঞানীপাড়ায় যত ছুকরি সায়েন্টিস্ট আসে, সবার সাথেই ঢলাঢলি…সে আডা লাভলেস বলো আর মারি কুরী বা হাল আমলের হেইডি লামার। যাই জগদীশকেই বলি গিয়ে একবার।”

*******

কথা ছিল মঙ্গল গ্রহে বসতি স্থাপন হবে। বসতি স্থাপন তো দূরের কথা, যাওয়ার ব্যাপারেও পাবলিক কেউ খুব একটা ভাবছে না। তা হলো কী , সেদিন রাত্রেই এলন মাস্ক স্বপ্নে এলো। সে খুবই বিনয়ী ছোকরা,অনেক দুঃখ টুক্ষ করে বললো, “শান্তনুদা , চিন্তা নেই আমরা পঁচিশের মধ্যেই মঙ্গলে জি +টেন এপার্টমেন্টের একটা হাউজিং বানিয়ে ফেলবো। তুমি না হয় ওখানেই একটা ফ্ল্যাট নিও। একদম ক্রেটার ভিউ ফ্ল্যাট তোমায় টেন পার্সেন্ট ডিস্কাউন্টে দিয়ে দেবো।”

আমি বলি “কে কিনবে তোমাদের ফ্ল্যাট? ওখানে যা ধুলো ঝড় হয়…সাধ করে কে যাবে ও চুলোয়। যদি করতেই হয়, আন্ডারগ্রাউন্ড করো..জি মাইনাস টেন। উপর থেকে যত ফ্লোর নীচে যাবে ফাইভ পার্সেন্ট এক্সট্রা প্রিমিয়াম নিও। টলকিনের লর্ড অভ দ্য রিংস বা হবিট পড়েছো? মিড আর্থের মতো…মিড-মার্স। একদম হু হু করে বিকোবে।”

শুনে দেখি মাস্ক ছোকরা বাক্যিহারা, “পা ছুঁয়ে বললো, দাদা এই আইডিয়াটা কাউকে দাওনি তো! প্লিজ দিও না। তোমার জন্যে মাইনাস নাইন্থ ফ্লোরে একটা ফ্ল্যাট একদম ফ্রি।”
আমি- “একটায় হবে না, দুটো চাই। রিটায়ারমেন্টের পরে একটু রেন্টাল ইনকাম না হলে চলবে কী করে? তবে ভায়া, কাল ক্রিস্টোফার এসেছিল, ওই জে আর টলকিনের ছেলে আর কী। ওকেও তো আইডিয়াটা দিলাম। ও তো বেজায় খুশী।বললো খুব তাড়াতাড়ি লিখে ফেলবে…হবিটস ইন দ্য রেড প্ল্যানেট।”
শুনে দেখি এলন ছোকরার মুখ শুকিয়ে আমসি।
আমি বললাম, “সাহেব আর ঘুমের ডিস্টার্ব করো না। তাড়াতাড়ি যাও… ক্রিস্টোফার ছোকরার অনেক সময় লাগবে। এতো আর বাংলা থ্রিলার নয়, যে দু সপ্তাহে নামিয়ে দেবে। আর যা সাইজ হবে, মোটামুটি পাঁচ বছরের ধাক্কা। তুমি তেইশের মধ্যেই নামিয়ে দাও না…অন্তত ভূমি পুজোটা করে ফ্ল্যাট বুকিং শুরু করে দাও। ফিতে কাটতে রিডলি স্কট বা ম্যাট ডিমনকেই না হয় ডেকো। কিন্তু মনে থাকে যেন, মাইনাস নাইন্থ ফ্লোরে দুটো ফ্ল্যাট।”

কদিন ধরেই বাড়িতে পোস্ট-রিটায়ারমেন্ট কোথায় থাকা যায়, তাই নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল। ঘুম থেকে উঠে গিন্নিকে হাসি হাসি মুখে সুখবরটা দিলাম আর সঙ্গে এও বললাম, ওখানে মাটিতে অনেক আয়রন অক্সাইড, মিত্তল বা রতন কি আর স্টিল প্ল্যান্ট বানানোর চান্স ছাড়বে! তাই একটা চাকরিও বোধ হয় জুটে যাবে।”

শুনে উনি তো প্রথমেই হাত পা ছড়িয়ে কাঁদতে বসলেন ,”ওরে ডিলান (আমার ছেলের ডাক নাম),শুনে যা…তোর বাবা কি সব আবোল তাবোল বলছে।”
ঘন্টা খানেক পরে একটু সামলে নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,” হ্যাঁ গো, ওখানে ইলিশ মাছ পাওয়া যাবে।”

Sahityika Admin

Add comment