সাহিত্যিকা

যুগে যুগে ভারতীয় নারী

যুগে যুগে ভারতীয় নারী
দীপক চক্রবর্তী, ১৯৭৬ সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং

‘ত্বং স্বাহা ত্বং স্বধা ত্বং হি বষট্‌কারঃ স্বরাত্মিকা।
সুধা ত্বমক্ষরে নিত্যে ত্রিধা মাত্রাত্মিকা স্থিতা।।
অর্দ্ধমাত্রা স্থিতা নিত্যা যানুচ্চার্য্যা বিশেষতঃ।
ত্বমেব সা ত্বং সাবিত্রী ত্বং দেবী জননী পরা।।‘

ভদ্রা রান্নাঘরে কাজ করতে করতে তাঁর বাবার চণ্ডীপাঠ শুনছিল। বাবা তাঁর বাড়ীতে এসেছেন, ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে স্নান করে নিয়মিত পূজাপাঠ করেন। এই অংশটা ভদ্রা যতদূর জানে চণ্ডীর প্রথম অধ্যায়, যখন মধুকৈটভ ব্রহ্মাকে বধ করতে উদ্যত, তখন কল্পান্তে মহামায়ার আশ্রয়ে যোগনিদ্রায় মগ্ন বিষ্ণুকে জাগিয়ে তোলার জন্য ব্রহ্মা মহামায়ার স্তব করছেন। “হে নিত্যে, হে অক্ষরে। তুমি স্বাহা, তুমি স্বধা, তুমিই যজ্ঞস্বরূপা ও উদাত্তপ্রভৃতি স্বররূপিণী। তুমি সুধা, তুমিই মাত্রা ও বর্ণস্বরূপা। যা বিশেষভাবে উচ্চারণ করা যায় না, সেই অর্দ্ধমাত্রা, ব্যঞ্জনবর্ণ স্বরূপা তুমিই। তুমিই সেই গায়ত্রী। হে দেবী, তুমিই শ্রেষ্ঠা এবং সকলের মাতা।“

ব্রহ্মা তাঁর প্রাণরক্ষার জন্য মহামায়ার কাছে বিষ্ণুকে জাগিয়ে দেওয়ার জন্য অনুনয় করছেন। মহামায়া, তিনি জগন্মাতা, তিনি নারী। তিনিই শক্তিস্বরূপা। ভদ্রার মনে পড়ল এই বছরেই প্রজাতন্ত্র দিবসের পশ্চিমবঙ্গের ট্যাবলো ছিল দূর্গাপূজা এবং নারীশক্তি।

ভদ্রার মাঝেমধ্যেই চিন্তা হয় এই চণ্ডী বা সপ্তশতী কবে লেখা হয়েছিল। ওঁর বাবা বলেছিলেন মহাভারতের যুদ্ধের আগে। কারণ হিসাবে বলেছিলেন যে চণ্ডীতেই তার প্রমাণ আছে, যেখানে দেবী বলছেন,
‘বৈবস্বতেহন্তরে প্রাপ্তেহষ্টাবিংশতিতমে যুগে।
শুম্ভো নিশুম্ভোশ্চৈবান্যাবুৎপৎস্যেতে মহাসুরৌ।।
নন্দগোপগৃহে জাতা যশোদাগর্ভসম্ভবা।
ততস্তৌ নাশয়িষ্যামি বিন্ধ্যাচলনিবাসিনী।।‘
অর্থাৎ, বৈবস্বত মন্বন্তরের আঠাশতম যুগে তিনি গোরক্ষক নন্দের ঘরে জন্ম নেবেন এবং বিন্ধ্যাচলে গিয়ে শুম্ভ এবং নিশুম্ভ নামে দুইজন অসুরকে বধ করবেন।

ভদ্রার মনে পড়ল প্রতি বছরই হোয়াটসএপ বিশ্ববিদ্যালয়ে এই দেবীকে নিয়ে কটাক্ষ করা হয়। তিনি গেলেন কোথায়, এই প্রশ্ন তুলে। বলিহারী আমাদের সমাজকে, যাঁরা নিজেদের সংস্কৃতি, রীতি-রেওয়াজ ভুলে গিয়ে ভিনদেশীদের মাথায় তুলে নিয়ে তাঁদের রীতিনীতিকে মালার মত গলায় ঝুলিয়ে নিয়ে নর্ত্তনকুর্দ্দন করছে। তাঁরা বোঝেও না যে এইভাবে তাঁরা নিজেদের সংস্কৃতিকে দূরে ঠেলে দিয়ে বিদেশীদের ব্যবসায়িক স্বার্থে তাঁদেরই বাজার ধরা শুরু করে দিয়েছে। আগে কেউ জানতও না ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’ কি। ভদ্রাদের কলেজে পড়ার সময় একদিনই হ’ত ১৪ই ফেব্রুয়ারীতে। ভদ্রা তাঁর মা’র কাছে শুনেছে যে তাঁরা যখন কলেজে পড়তেন তখন ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’-র নামই কেউ শোনেনি। আর আজকাল তো এক সপ্তাহ আগে থেকেই নানান দিবসের নাম করে বিক্রীবাটা শুরু হয়ে যায়। মাতৃদিবস যেই ভদ্রমহিলা তাঁর মা’র স্মরণে শুরু করেছিলেন, সেই আনা জারভিসকেও তাঁদের ব্যবসায়িক লাভের জন্য এই ব্যবসায়ীরা ধরে জেলে পুরে দিতে দ্বিধা করে নি।

এই যে প্রতি বছর নারী দিবস নিয়ে লাফালাফি করে সংবাদমাধ্যম, যেন কি একটা করে ফেলা গেছে। সেইটাও তো ব্যবসায়িক কারণে। নারীদিবস নিয়ে বিশেষ সংখ্যা বের করা হবে। দৈনিক কাগজে বিশেষ ক্রোড়পত্র বের করা হবে। আর স্বাভাবিকভাবেই সেখানে লেখা যতটা না থাকবে তার থেকে বেশী থাকবে বিজ্ঞাপন। সেটা যদি জুতোর দোকানের বিজ্ঞাপন হয় তাহলেও কোন অসুবিধা নেই। পয়সা পাওয়া গেলেই হ’ল। কাজের কাজ আসলে কিছুই হয় না। নারীরা যেই তিমিরে থাকার সেই তিমিরেই পড়ে থাকে।

ভদ্রা মনে করে যে এইভাবে আমাদের দেশের সনাতন ধর্ম নারীকে যেই সর্ব্বোচ্চ সম্মান আর অধিকার দিয়েছে সেটাকে ভুলিয়ে দেওয়ারই চেষ্টা করা হচ্ছে, প্রয়োজনে তথ্য বিকৃতি করে।

সনাতন ধর্মে নারী যতটা স্বাধীনতা ও মর্যাদা পায় তা বিশ্বের আর কোন ধর্ম ও সমাজে পায় না। সনাতনী ধর্মে নারী-পুরুষকে একসাথে পূজা করতে অনুমতি দেওয়া হয়েছে, এছাড়াও উল্লেখ আছে স্ত্রী ছাড়া স্বামীর কোন পূজা বা যজ্ঞ সম্পন্ন হতে পারে না, তাই স্ত্রীকে সহধর্মিনী ও অর্ধাঙ্গিনী বলা হয়।

মন্দিরে নারী দেবী পূজিতা হন এবং নারীরা পৌরহিত্যও করতে পারেন। নারীর নেতৃত্ব সনাতন ধর্ম ও সমাজে স্বীকৃত। বিশ্বের অন্য কোন ধর্মের গ্রন্থ রচনাতে নারীর কোন অবদান স্বীকার করাই হয়নি। আমাদের মূল ধর্ম্মগ্রন্থ বেদ রচয়িতা ঋষিদের মধ্যে গার্গী, মৈত্রেয়ী, ঘোষা প্রভৃতি ২৭ জন বিদূষী ঋষিকা ছিলেন, এই কথা আমরা ভুলেই গেছি। আমাদের বেদ, পুরাণ এবং অন্যান্য নানান সাহিত্যে এই কথার হাজার প্রমাণ রয়েছে।

অথর্ব বেদে নারীকে জ্ঞানের ধারক, মঙ্গলময়ী লক্ষ্মী বলে বর্ণনা করা হয়েছে। যিনি পিতৃগৃহে পড়াশোনা শেষ করে পতিগৃহে যাবেন। আরও বলা হয়েছে যে নারীই তাঁর সন্তানের প্রথম জ্ঞানদাতা।

ঋক বেদে বলা হয়েছে যে একজন নারীর তাঁর পিতার ধনসম্পত্তিতে তাঁর ভাইয়ের সঙ্গে সমান অধিকার রয়েছে। শুধু তাই নয় বেদ, পরাশর সংহিতায় নারীকে পুনর্বিবাহেরও অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সেই সূত্র ধরেই সমাজে পুনরায় বিধবা বিবাহের সূচনা করেছিলেন।

বৈদিক যুগের প্রথম পর্বে নারীরা জীবনের সকল ক্ষেত্রেই পুরুষদের সঙ্গে সমানাধিকার ভোগ করেছে। পতঞ্জলি বা কাত্যায়ণের মতো প্রাচীণ ভারতীয় বৈয়াকরণদের লেখা থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে আদি বৈদিক যুগে নারীরা শিক্ষিত ছিলেন। ঋক বেদের শ্লোক থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে নারীরা পরিণত বয়সে বিবাহ করতেন এবং স্বয়ম্বরা নামক প্রথায় নিজের স্বামী নির্বাচনের বা গান্ধর্ব বিবাহ নামক প্রথায় সহবাসের স্বাধীনতাও তাঁদের ছিল। ঋক বেদ, উপনিষদের মতো গ্রন্থে বহু প্রাজ্ঞ ও ভবিষ্যৎদ্রষ্টা ঋষিকার উল্লেখ আছে, গার্গী ও মৈত্রেয়ী যাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য। বৈষয়িক শিক্ষার ক্ষেত্রেও নারীরা সমান সুযোগের অধিকারী ছিলেন। কবি হালের কাব্যসংকলন ‘গাথা সপ্তশতী’তে আটজন কাব্যরচয়িত্রীর নাম পাওয়া যায়, যাঁরা চারুকলা বিদ্যা শিক্ষাতেও সমান পারদর্শী ছিলেন।

মনু’র রচিত শাস্ত্রের নাম ‘মানব শাস্ত্র’ বা ‘মনুসংহিতা’ এবং তাঁর ধর্মের নাম ‘মানব ধর্ম’। বর্তমান মানবিক মূল্যবোধের সম্পূর্ণ বিপরীতে মনুর ‘মানব ধর্ম’ প্রকৃতপক্ষে ছিল ‘দানব ধর্ম’, শোষণ-বঞ্চনার এক মারণাস্ত্র। মনুকে হিন্দু সমাজের আইন-কানুনের মূল প্রবক্তাও বলা যেতে পারে। মনু তাঁর লেখা মনুসংহিতায় নারীদের সমস্ত রকম অধিকার ক্ষুণ্ণ করেছিলেন। বলা যেতে পারে এই মনুসংহিতাতে নারীকে জঘন্যভাবে উপস্থাপন করেছেন মনু, এবং হরণ করেছেন তাঁদের সকল মৌলিক এবং মানবিক অধিকার। তখনকার সমাজ কোনও এক অজ্ঞাত কারণে তাঁর সেই অনুশাসন মেনে নেয়।

উপনয়ন সংস্কারের মাধ্যমেই বৈদিক সমাজে পুরুষ এবং নারীরা তাঁদের শিক্ষাজীবনে প্রবেশ করতো কিন্তু মনু তাঁর রচিত গ্রন্থে স্ত্রীদের উপনয়ন সংস্কার নিষিদ্ধ করেছেন। শিক্ষাবঞ্চিত নারীদের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে, ‘বিবাহ সংস্কারই স্ত্রীলোকের বৈদিক উপনয়ন সংস্কার।‘ মনু তাঁর শাস্ত্রে জানিয়েছেন যে স্মৃতি, শাস্ত্র ও বেদ প্রভৃতি ধর্ম শাস্ত্রের ওপর স্ত্রীজাতির কোনও অধিকার নেই। তিনি ঋতুমতী নারীকে অশুচি বলে ঘোষণা করেছেন, তিনি বলেছেন যে ‘চণ্ডাল, ঋতুমতী স্ত্রী, ব্রহ্মবধ করেছেন এমন পতিত ব্যক্তি, দশদিন পর্যন্ত নবপ্রসূতা সূতিকা, শব ও শবস্পর্শী, এঁদের স্পর্শ করলে স্নানের মাধ্যমেই শুদ্ধ হওয়া যায়।‘ মনুসংহিতায় আরও বলা হয়েছে যে ‘নারী বাল্যকালে পিতার বশে, যৌবনে স্বামীর বশে এবং স্বামীর মৃত্যু হলে পুত্রের বশে থাকবেন। পুত্র না থাকলে স্বামীর সপিণ্ডের বশে থাকবেন।‘ অর্থাৎ স্ত্রীলোক কখনওই স্বাধীনভাবে অবস্থান করবেন না। আরও বলা হয়েছে যে ‘স্ত্রীলোক কখনোই পিতা, স্বামী বা পুত্রের থেকে বিচ্ছিন্ন থাকার চেষ্টা করবেন না। কারণ এদের থেকে পৃথক হলে পিতৃকূল ও পতিকূল, উভয় কূলকেই তাঁরা কলঙ্কিত করবেন।‘ এইভাবেই একদিকে নারীদের বাল্যবিবাহের বিধান দেওয়া হয়েছে এবং অপরদিকে শিশুকন্যার সাথে তাঁর তিনগুণ বয়সের পুরুষের বিবাহের নিয়মও তৈরি করা হয়েছে।

এই পরিস্থিতিতেও, রাজনীতি, সাহিত্য, শিক্ষা ও ধর্ম সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বহু বিশিষ্ট নারীর সন্ধান পাওয়া যায়। রাজিয়া সুলতান, একমাত্র মহিলা সুলতান, যিনি দিল্লি শাসন করেছেন। ১৫৬৪ খ্রিষ্টাব্দে মোগল সম্রাট আকবরের সেনাপতি আসফ খানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে প্রাণ হারানোর আগে গোন্দ রানী দুর্গাবতী ১৫ বছর রাজ্যশাসন করেছিলেন। চাঁদ বিবি ১৫৯০ খ্রিষ্টাব্দে আকবরের শক্তিশালী মোগল বাহিনীর বিরুদ্ধে আহমদনগরকে রক্ষা করেছিলেন। জাহাঙ্গীরের স্ত্রী নূরজাহানের রাজ্যশাসনে কার্যকরী ভূমিকা ছিল এবং তিনি মুঘল সিংহাসনের পিছনে প্রকৃত ক্ষমতা হিসেবে পরিগণিত হতেন। মুঘল রাজকুমারী জাহানারা ও জিবন্নুসিসা ছিলেন বিখ্যাত কবি এবং তারা ক্ষমতাসীন শাসকদেরও প্রভাবিত করেছিলেন। যোদ্ধা এবং প্রশাসক হিসেবে তাঁর দক্ষতা শিবাজীর মা জিজাবাইকে শাসক বা রাজপ্রতিনিধির মর্যাদা দিয়েছিল। তারাবাই ছিলেন আরেকজন দক্ষ মহিলা মারাঠা শাসক। দক্ষিণ ভারতে অনেক নারী গ্রাম, শহর ও বিভাগ পরিচালনা করেন এবং নতুন সামাজিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। ভক্তি আন্দোলন নারীদের অবস্থা পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করে এবং তাদের উপর হওয়া বিভিন্ন নিপীড়নের বিষয়ে প্রশ্ন তোলে।

মধ্যযুগে ভারতীয় সমাজে নারীদের অবস্থার আরও অবনতি ঘটে এবং বাল্যবিবাহের প্রচলন এবং বিধবাদের পুনর্বিবাহের নিষেধাজ্ঞা ভারতে কিছু সম্প্রদায়ের সামাজিক জীবনের অংশ হয়ে ওঠে। পরবর্তীকালে ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলমান শাসকদের আধিপত্য বিস্তারের সঙ্গেসঙ্গেই ভারতীয় সমাজে পর্দা প্রথারও প্রচলন ঘটে।

ভদ্রা তাঁর বাবাকে জিজ্ঞাসা করেছিল যে নারীদের বৈদিক যুগে যদি এতটাই সম্মান দেওয়া হ’ত, তাহলে পরবর্তীকালে সতীদাহ ইত্যাদি প্রথা চালু হয় কিভাবে? ভদ্রাকে তাঁর বাবা বলেছিলেন যে এখন যেমন তালিবানী শাসনে আফগানিস্থানের নারীদের অবস্থা বা বর্তমান বিভিন্ন মুসলিম দেশে মহিলাদের যেই অবস্থা, প্রায় সেইরকমই অবস্থা শুরু হয়েছিল মনু’র সময়ে।

বিগত কয়েক সহস্রাব্দে ভারতীয় নারীদের অবস্থা বহু পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে গেছে। প্রাচীণযুগ থেকে মধ্যযুগে, তাদের অবস্থার অবনতি, আর কয়েকজন সমাজসংস্কারকের প্রচেষ্টায় আবার সমমর্যাদার অধিকারে উত্তরণের ইতিহাস বেশ ঘটনাবহুল। আধুনিক ভারতে নারীরা রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, লোকসভার অধ্যক্ষ, বিরোধী দলনেতা, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী, রাজ্যপাল সহ বহু গুরুত্বপূর্ণ পদ অলংকৃত করেছেন।

ভারতের নারীরা এখন শিক্ষা, ক্রীড়া, রাজনীতি, গণমাধ্যম, শিল্প ও সংস্কৃতি, সেবা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রভৃতি ক্ষেত্রে পূর্ণরূপে অংশগ্রহণ করছেন। ভারতের সংবিধান সমস্ত ভারতীয় নারীকে সাম্য, রাষ্ট্রের দ্বারা কোন বৈষম্যের মুখোমুখি না হওয়া, সমান সুযোগলাভ এবং একই কাজের জন্য সমান বেতন এবং লাভের অধিকার দিয়েছে। এছাড়াও, সংবিধান নারী ও শিশুদের সুবিধার্থে রাজ্য কর্তৃক বিশেষ বিধান প্রণয়নকে মান্যতা দেয়। নারীর প্রতি অবমাননামূলক আচরণের বিরোধিতা করে এবং কাজকর্মের অনুকূল সুস্থ স্বাভাবিক পরিবেশ তৈরি করার ও মাতৃত্বকালীন সুযোগসুবিধা প্রাপ্তির ব্যবস্থা যাতে রাজ্য করতে পারে, সেই সংস্থান রাখে।

ভারতে নারীবাদী কর্মকান্ডের সক্রিয়তা ১৯৭০এর দশকের শেষের দিকে গতি লাভ করে। শিশুকন্যা হত্যা, লিঙ্গ বৈষম্য, নারীস্বাস্থ্য, নারী নিরাপত্তা এবং নারীশিক্ষার মতো বিষয়গুলি নিয়েও নারী আন্দোলনের কর্মীরা একতাবদ্ধ হন। ভারত সরকার ২০০১ সালকে নারীর ক্ষমতায়ন বা স্বশক্তি বর্ষ হিসাবে ঘোষণা করে। নারী ক্ষমতায়নের জন্য জাতীয় নীতি পাস হয় ২০০১ সালে। ৯ই মার্চ ২০১০ তারিখে, আন্তর্জাতিক মহিলা দিবসের একদিন পরে, রাজ্যসভায় মহিলা সংরক্ষণ বিল পাস হয়, যা ভারতের সংসদ ও রাজ্য বিধানসভাগুলিতে মহিলাদের জন্য ৩৩% আসন সংরক্ষিত করে।

ভদ্রা রান্না করতে করতে আপন মনে কাজী নজরুল ইসলামের লেখা “নারী” কবিতার প্রথম পংক্তি আওড়ায়,
“আমার চক্ষে পুরুষ-রমণী কোনো ভেদাভেদ নাই!
বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চিরকল্যাণকর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।
বিশ্বে যা কিছু এল পাপ তাপ বেদনা অশ্রুবারি,
অর্ধেক তার আনিয়াছে নর অর্ধেক তার নারী।“

Sahityika Admin

Add comment