আজব খাওয়া
প্রবীর কুমার সেনগুপ্ত, ১৯৬৯ ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং
পচাত্তরে পা দিয়েছি আমরা নেহাৎ শিশু,
রাস্তা ঘাটে যখন তখন পাচ্ছে পটি হিসু।
সবাই বলে – রোগের ডিপো, ওষুধ মুঠো মুঠো –
সে সব কেনার খরচ দিতে পকেট হল ফুটো।
হাঁটা চলায় ক্লান্তি ভীষণ সারা শরীর বাতে,
দিনের বেলা ঘরেই কাটাই, ঘুম আসে না রাতে।
খাওয়া দাওয়া – বলবো কি আর, সব কিছুতেই বাঁধা
পায়েস মানা, মিষ্টি মানা, খাবার থালায় ধাঁধা।
ঘুগনি লুচি – সে সব অতীত, মশলা ছাড়া সিদ্ধ,
সবাই বলে – আমরা না কি এই বয়সেই বৃদ্ধ।
বয়স বয়স করছো কেন – সেঞ্চুরি তো বাকী –
আসল কথা – এ সব বলে দিচ্ছ আমায় ফাঁকি।
সর্ষে ইলিশ, চিতল পেটি মেনুর থেকে বাদ,
চিংড়ি মালাই, মাছ পাতুরী – ভুলেই গেছি স্বাদ।
ফুল কফিতে রোস্ট হয়েছে – আমার পাতে ফাঁকা –
আমার জন্য পুটি মাছের ঝোল রয়েছে রাখা।
যে সব খাবার পাতে পড়ে তাহাতে নেই রুচি,
বাদ পড়েছে মণ্ডা মিঠাই, বাদ পড়েছে লুচি।
রবি বারের পাঠার মাংস – সে সব গেছি ভূলে,
বাঁধানো দাত – নেই প্রয়োজন যত্নে রাখি তুলে।
ফোকলা দাতে সুরুৎ সুরুৎ গরম গরম স্যুপ –
এ সব নিয়েই কাটছে জীবন এটাই আসল রূপ ।
রক্তে আমার অনেক চিনি, মিস্টি খাওয়া মানা,
জোর করে তাই খেতেই হবে ঘরের তৈরী ছানা।
বলবো কী আর – আগে খেতাম নানান রকম মিস্টি,
সব গুলো কে লিখতে গেলে বিরাট হবে লিস্টি।
কনকচুরের ধানের খই – জয়নগরের মোয়া –
দেওঘরে সেই প্যারা যেন নরম ক্ষীরের খোয়া।
শক্তিগড়ের ল্যাংচা খেতাম ডজন হিসাব করে,
সিতাভোগ আর মিহি দানা বর্ধমানের গড়ে।
সকাল সকাল গরম গরম জিলাপী আর বোদে,
রসগোল্লা জমতো ভালোই একটু বেলার রোদে।
কী যে বলি কী যে লিখি পাই না ভেবে আর –
সবার শেষে রাবড়ি আছে মাঝারী এক ভাড় ।
বরফি যদি কাজুর হবে তার হবে না জুড়ি,
এ সব নিয়েই বার বাড়ন্ত বিরাট বেঢপ ভুঁড়ি।
বিকাল বেলা মাঝে মাঝেই ফুচকা কিম্বা চাট,
বয়স টাকে নামিয়ে আনে আশির থেকে আট।
ছেলে-মে-রা শালের পাতার ঠোঙা নিয়ে হাতে
হিসেব কষে একটা দুটো পড়লো কটা পাতে।
কল কলানি শুনে আমি আড় চোখে দিই উকি –
ইচ্ছা করে শিং টা ভেঙে বাছুর দলে ঢুকি।
কিম্বা যদি ইডলি ধোসা, ধোঁয়া কফির কাপে,
পরের দিনে সকাল বেলায় মরি পেটের চাপে।
এ সব কথা লিখছি বটে, আসল সবই ধাঁধা,
নানা রকম নিয়ম মেনে সারাটা দিন বাঁধা।
চিরতা আর নীমের পাতা শীল নোড়াতে বেটে –
নাকটা চেপে গলায় ঢেলে চালান করি পেটে।
Add comment