শোলে ও রামগড়ের নির্বাচন হাওয়া…
ময়ূখ দত্ত, ১৯৯০ সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং
বিশ্বস্ত সুত্রে আজ খবর পাওয়া গেল যে গতকাল রাতে রামগড়ের ওই বিখ্যাত আমবাগানের কোনে গোপন আড্ডায় মিটিঙে বসেছিল ঠাকুরের পুরো টিম, মানে জয়, ভীরু, বাসন্তী, সাথে বেশ কিছু সামনের সারিতে থাকা রামগড়ের বাসিন্দারা। জয়ের বিশেষ অনুরোধে রাধাও এসেছিল, কিন্তু সন্ধ্যে নামার পরে চারটে হ্যারিকেন জ্বালিয়ে দিয়ে রুটি তৈরী করার বাহানায় বাড়ি ফিরে গিয়েছিল। জয় অনেকদিন পরে হলেও হাটু গেড়ে বসে মাউথ অর্গান বের করে দু কলি সুর বাজিয়েছিল, তাতেও চিড়ে ভেজে নি।
যাই হোক, এই মিটিং টা বসেছিল আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে কি কি কৌশল নেওয়া হবে গব্বরের দলকে হারানোর জন্য, সেটাই ঠিক করার জন্য… গত বিধানসভা নির্বাচনে গব্বর “জয় হিড়িম্বা” শ্লোগান তুলে এই পঞ্চায়েতের যে কটা আসন ছিলো তাতে ঠাকুরের দলকে প্রায় ধরেই ফেলেছিলো। তাই এবারের নির্বাচন খুব টেনশানের…তার মধ্যে ঠাকুর আবার বাচ্চাদের মত বেশ কিছু ভুল করেছিলো। যেমন একদিন বাসন্তীর টাঙায় চেপে পাশের গ্রামের উন্নয়ন দেখতে যাচ্ছিল, দুটো ফিচকে ছেলে “জয় হিড়িম্বা” “জয় হিড়িম্বা” বলে বিরক্ত করতেই, নাকি ঠাকুর খেপে গিয়ে ওই দুটো হাফপ্যান্ট পরা ছেলেকে তাড়া করেছিল। আর তাতেই সারা রামগড়ে বেশ শোরগোল পড়ে যায়। এইসব দেখে “মোগ্যাম্বো খুশ হুয়া” স্টাইলে খৈনী মাখা বাদামী দাঁত বের করে হাসতে হাসতে গব্বর নাকি তার লোকজন কে বলেছিল যেখানেই ঠাকুরের দলের লোক কে দেখবে “জয় হিড়িম্বা” স্লোগান দিতে… তাই কে হিড়িম্বা? সে কি ভাল না খারাপ লোক, সে সব আর্ধেক লোকে না জানলেও এই স্লোগানটা এখন রামগড়ে দারুন জনপ্রিয় হয়ে গেছে!!
ঠাকুর আজকাল সাদা পাজামা-পাঞ্জাবীর ওপরে নীল রঙের একটা শাল গায়ে দেয়, পায়ে চামড়ার চটির যায়গায় হাওয়াই চপ্পল। পাশের গ্রাম থেকে এবারে ঠাকুর স্ট্র্যাটেজিস্ট হিসেবে অশান্ত কিশোর কে নিয়ে এসেছে ভোটে সাহায্য করার জন্য, আর এসেই অশান্ত কিশোর ঠাকুরের দলে বেশ কিছু পরিবর্তন এনে ফেলেছে। তার মধ্যে ঠাকুরের এই ফ্যাশান স্টেটমেন্ট এর পরিবর্তনও একটা। অশান্ত কিশোর খুব সুন্দর করে ঠাকুর কে বুঝিয়েছে যে গব্বরের দলের (জার্সির রং অনেকটাই ব্রাজিলের মতন হলুদ আর কি!!) সাথে টক্কর দিতে হলে আর্জেন্টিনার নীল-সাদা জার্সি দরকার। তাছাড়া মাদার টেরিজার সাথেও এই নীল-সাদার একটা যোগ আছে, সব মিলিয়ে ভোটের ডামাডোলের মাঝে আর্জেন্টিনার জার্সির ব্যাপারটা সবাই বেশ ভাল খাবে…। “দুয়ারে ঠাকুর” বলেও একটা স্কিম চালু করেছে আজকাল। বাড়ির বাইরে তো কেউ কোনো ঠাকুর কে বসিয়ে রাখতে পারে না, তাকে কোনো না কোনো সময় সবাই তো ঘরে ঢুকিয়ে নেবেই, এই ধারনা সম্ভবত অশান্ত কিশোরের মাথায় ঘুরেছে এই স্ট্র্যাটেজি বানাতে…
শোলে হিট হয়ে যাওয়ার সময় থেকেই বাসন্তী রামগড়ের টাঙা Association এর জেনারেল সেক্রেটারি হয়ে কাজ করে চলছে। প্রতি নির্বাচনে বেশ কয়েক হাজার ভোট ওখান থেকেই আসে। কিন্তু গত কয়েকবছর ধরে দেখা যাচ্ছে যে কোনো অনুষ্ঠানে ঠাকুর বাসন্তীর যায়গায় রাধাকেই বেশী প্রাধান্য দিচ্ছেন। জনতার ওপরে খুব বেশী কতৃত্ব না থাকলেও বাতাসে কান পাতলে পরিবারতন্ত্রের কথা আজকাল শোনা যাচ্ছে…। ঠাকুর নাকি অকাল বিধবা বৌমাকে দলের মাথা হিসেবে প্রোজেক্ট করছেন। এই সব নিয়ে আরো কিছু লোকজনের সাথে বাসন্তীও বেশ ক্ষুব্ধ ছিল। ভীরুকে বারবার জানিয়েও কাজ হচ্ছিল না। শেষে অনেক চিন্তা করে পরপর কয়েকদিন ফেসবুক লাইভ করল, “মানুষের সাথে, মানুষের জন্য আমি বরাবর কাজ করতে চাই, কিন্তু ঠাকুরের দলে কিছু উইপোকা আছে যারা আমাকে কাজ করতে দিচ্ছে না…দলে সব কথা জানিয়েছি..দেখা যাক…” ইত্যাদি কিছু বাছা বাছা ডায়ালগ দিল। কে আবার কোথা থেকে একটা ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে দিল যাতে দেখা যাচ্ছে গব্বর ধন্নোর দুধেল গালে হাত দিয়ে আদর করছে। গব্বরের সাথে ধন্নোর কোথায় দেখা হল, সেসব নিয়ে চারদিকে কদিন খুব চর্চা… ।
গব্বরের দলে বাসন্তীর যোগদানের সম্ভাবনা নিয়ে তিনদিন আবাপ নিত্যানন্দ চ্যানেলে প্রাইম টাইম ডিবেট হয়ে গেল। এইবার ঠাকুর প্রমাদ গুনল, অশান্ত কিশোর আর ভীরুকে তড়িঘড়ি ঠাকুর পাঠালো ‘বেসুরো’ বাসন্তীকে বুঝিয়ে শান্ত করতে। কিন্তু ধন্নোর সাথে আলোচনা করে বাসন্তী ওদের ভাগিয়েই দিলো। তার সাথে আবার একদিন বলেও বসল “আমি পাহাড়ের ওপারে পরের সপ্তাহে যাব, কিছু কাজ আছে…”। সবাই আশংকা করছিল বাসন্তীও কি তাহলে ভীরু আর ঠাকুর কে ছেড়ে গব্বরের দলে যোগ দেবে? সুযোগ বুঝে গব্বরের দলের মুখপাত্র কালিয়া একদিন টিভিতে বাইট দিল – ” বাসন্তী দেবী বরাবরই শিল্পী মানুষ, গব্বর ও আমরা সবাই এখনো ভুলতে পারি না কঠিন পরিস্থিতিতে ওনার সেই বিখ্যাত নাচ ‘ওহ, যব তক হ্যায় জান, জানে জাহা, ম্যায় নাচুংগি…’ এরকম এক শিল্পীসত্বা কে ঠাকুরের দলে কেউ যোগ্য সম্মান দিচ্ছে না।“
কদিন ধরে রামগড়ের বিভিন্ন যায়গাতে, রাস্তার মোড়ে মোড়ে কে বা কারা যেন “আমরা বাসন্তী দিদির অনুগামী” বলে পোস্টার মেরে যাচ্ছিল, তাতে জল্পনা-কল্পনা আরোই বাড়ছিল। এইসব দেখে আর টাঙা Association এর ভোটব্যাঙ্ক এর কথা মাথায় রেখে ঠাকুর আর দেরী করে নি, একদিন বাসন্তী কে ডিনারে আমন্ত্রন করে স্পেশাল গাজর ইডলি-সম্বর- স্পিনাচ ধোসা খাওয়াল। অনেকবছর পরে চেন্নাই এর মাটির গন্ধে কিনা জানা নেই ডিনারের শেষে বাসন্তী এক্কেবারে গদগদ হয়ে ঠাকুরের পায়ে হাত দিয়ে প্রনাম করে বলল “আমি তো আমার বড় দাদাকে ভাইফোঁটা দিতে এসেছিলাম, ঠাকুরসাহেবের কাছে অনেকদিন ধরেই অভিযোগ করেছিলাম যে ভাল ইডলি ধোসা এই রামগড়ে পাওয়া যায় না, তাই বাড়িতে রাধা এই স্পেশাল খাবারের ব্যাবস্থা করেছিল!! এর মধ্যে আপনারা কোনো রাজনীতি দেখবেন না যেন…আমি দলের একনিষ্ঠ সৈনিক, ঠাকুরসাহেব আমাকে টাঙা চালাতে বললে ‘চল ধোন্নো’ বলে টাঙা চালাব, আবার নাচ করতে বললে তাও করব।” এই শুনে ভীড়ের মধ্যে বসে থাকা স্ত্রৈণ ভীরুর মুখটা অনেকটাই আশ্বস্ত দেখাল। নাহলে বাসন্তীর দলত্যাগের গুজবে ভীরুরও বেশ টেনশান ছিল। কি করবে বুঝে উঠতে পারছিল না। জয়ের সাথে এই ব্যাপারে কথা বলাটা ঠিক হবে কিনা সেটাও বুঝতে পারছিল না। গব্বরের ওপরে ভিরুর রাগ আরো বেড়েছে যবে থেকে গব্বর ভীরু-বাসন্তীর জুটিকে “ডাল-ভাত” বলে খোরাক করেছিল। কিন্তু রাধার সাথে ব্যাপারটা কিছুতেই আর আগে বাড়ছে না দেখে জয় আজকাল ফ্রেঞ্চকাট দাড়ি রেখে লুক বদলে ফেলেছে, যদি ভাগ্যের চাকাটা বদলায়… তাই এসব ব্যাপারে জয়ের আজকাল আর পরামর্শ পাওয়া যায় না…
গব্বর বেশ কিছুদিন ধরেই চেষ্টা করছিল কি করে রামগড়ের কৃষকদের দীর্ঘদিন ধরে চলা আন্দোলন এর হাওয়াকে নিজের পালে নিয়ে আসবে। গব্বর যতই সাদা দাড়ি রেখে “রভীন্দ্রনাথ ট্যাগোর” সেজে রামগড়ের দেহাতী ভাষায় কবিতা আবৃত্তি করার চেষ্টা করুক, বা “স্বামী ভিভেকামুনড” এর বানী প্রচার করুক, ব্যাটারা কিছুতেই মানতে চায় না যে গব্বর আসলে তাদের ভাল করার চেষ্টা করে। পচাশ পচাশ ক্রোশ দূরের সব বাচ্চা-মা-বুড়োগুলো ভয়ের চোটে তার কথা অক্ষ্যরে অক্ষরে মেনে চললেও এই নিরক্ষ্যর গাধাগুলো কিছুতেই গব্বরকে ভরসা করতে পারে না। বেশ কয়েকবার গব্বরের প্রতিনিধি হিসেবে সাম্বা ওই কৃষকদের সাথে মিটিং করেছে, তবে ঠাকুরের দলের থেকে জয় চারদিকে প্রচার করে দিয়েছিল এগুলো নাকি গব্বরের সময় কেনার চেষ্টা মাত্র। আসলে কৃষকদের প্রতি গব্বরের নাকি কোনো সহানুভূতিই নেই। ও নাকি চাল-গম ট্যাক্স হিসেবে নিতেই ব্যাস্ত আর সেটাতে নিজের সংসার চালাতে না পারলে রামগড়ের আশেপাশের সব জমি, পাহাড়, নদী এক এক করে বিক্রি করে কোষাগারে পয়সা আনছে !!
বিরোধীদের এই সব অভিযোগের চোটে গব্বর আজকাল খুব ব্যাথিত। দাড়িতে হাত বোলাতে বোলাতে সেদিন আর থাকতে না পেরে সাম্বাকে দুঃখ করে বলেই বসল – “বান্টি আউর বাবলি তে যখন অমিতাভ বচ্চনের ছেলে গোটা তাজমহল টাই বেচে দিল, তখন সবাই হল হাউসফুল করে হাততালি দিল, আর আমি শুধু কটা পাহাড় আর নদী বিক্রি করেছি চাবানী আর রম্ভানীকে, তাতেই এত শোরগোল?”
আশ্চর্যের বিষয়, এই আইটি সেল / পাব্লিক টিভি / হোয়াটসঅ্যাপ ইউনিভার্সিটির এত প্রচারের পরেও ওই চাষাগুলো কিছুতেই গব্বরকে বিশ্বাস করল না। দেশের দুশমন মোগলদের হাতে তৈরী বুদির কেল্লা বড় ব্যাবসায়ী চালমিয়া কে লীজ দিয়ে, বা সুদূর আমেরিকার নির্বাচনে গব্বরের “আব কি বার ট্রাম্প সরকার…” স্লোগান রামগড়ের কত যে উপকার করেছে – এইসব মাস্টারস্ট্রোক ওই মাথামোটা কৃষকদের মাথায় কি করে ঢুকবে?
আজকাল গব্বরের ডানহাত কালিয়াকে লোকে ‘মোটাভাই’ হিসেবেই জানে…কোনো মিটীং শেষ হওয়ার পরে এখন গব্বর কে জিজ্ঞাসাও করতে হয় না “কিতনে আদমি থে?”। তার আগেই কালিয়া মোটাভাই এর নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সব তথ্য হাতে এসে যায়। কেউ কেউ আবার কালিয়া কে আজকাল “চানক্য” বলেও ডাকে। গত কয়েকবছরে মাঝরাতে বেশ কিছু গরু কেনাবেচা করে বিরাট সাফল্য পেয়েছে ‘মোটাভাই’ কালিয়া। লোকে আড়ালে বলে যে ওই সব গরুর দুধ থেকে কালিয়া নাকি প্রায় চার কিলো সোনা বের করে সেটা ওর বৌ এর কাছে হাওয়ালা করে দিয়েছে।
গব্বরের খৈনী খাওয়া বা হাতে খৈনী ডলা আজকাল বেশ ফ্যাশান স্টেটমেন্ট। লোকজন অবাক চোখে ওই খৈনী র দিকেই তাকিয়ে থাকে, তাই সারা বছরে এগারো মাস রামগড়ের বাইরে বাইরে ঘুরে বেড়ালেও প্রচুর লোকে এখনো গব্বরের কথা মহাপুরুষ এর বানী বলেই মনে করে… দুর্জনেরা বলেন যে ওই খৈনীর নেশা তেই নাকি প্রচুর মানুষকে বুদ করে রেখেছে গব্বর!!…
এই ডামাডোলের মাঝে আমরা প্রায় ভুলেই যাচ্ছিলাম যে রামগড় এলাকার দুজন একদা প্রভাবশালী ব্যাক্তিত্বকে…”আংরেজ জামানা কে জেলর” এবং এককালের বিখ্যাত জনসংযোগ বিশেষঞ্জ সুরমা ভুপালী। এরা দুজনেই একসময়ে রামগড় এলাকায় বেশ জনপ্রিয় এবং শক্তিশালী বা প্রভাবশালী ছিলেন। কিন্তু সেই যে জয়-ভীরু জুটি বেধে হরিরাম কেষ্টা কে ঘোল খাইয়ে জেলর সাহেবের পেছনে আখের টুকরো ধরে জেলের বাইরে বেরিয়ে গেল, তারপর থেকেই জেলর সাহেবের কিরকম যেন দিনদিন শুকিয়ে যাচ্ছেন। লোকে বলে ৩৪ বছর ধরে জেলের সব কয়েদীদের সামলাতে সামলাতে উনি নাকি শেষের দিকে বাইরের জগতে কি ঘটছে সে সম্পর্কে কিছুটা উদাসীন হয়ে গিয়েছিলেন, উনি নাকি মাটির দু ইঞ্চি ওপর দিয়ে হাটতেন, মুখে কর্মসংস্থানের কথা বললেও, কিছুটা হয়ত ওভার-কনফিডেন্স এসে গিয়েছিল, তাই ওই জেলের ভেতরের কিছু লোক ছাড়া তামাম রামগড়ে ওনার লোকবল বেশ কমে গিয়েছে। “আধা বায়ে, আধা ডাইনে, আর বাকি আধা মেরে পিছে” বলে আদেশ দিলেও এখন ওনার পেছনে আর কাউকে বিশেষ একটা দেখা যায় না…তার ওপরে বটতলার বিকেলের ঠেকে কিছু লোকে আজও গল্প করে যে আগের ভোটে জেলারের লাল রঙের পতাকার ওপরে কে বা কারা নাকি কাঁচা হলুদ ঘষে দেওয়ার পরে ওটা দেখতে গব্বরের গেরুয়া পতাকার মত হয়ে গিয়েছিল, তাতে অনেকেই ভুল বুঝে জেলারের দলের বদলে গব্বরকেই ভোট দিয়ে এসেছিল আর জেলারের ভোট কমে মাত্র ৭% হয়ে গিয়েছিল। চার বোতল চুল্লু খেয়ে জেলরের ডানহাত হরিরাম কিছু কিছু কর্মীসভায় যুক্তি দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করেছিল যে কাচা হলুদ খেলে নাকি ইমিউনিটি বাড়ে, তাই লাল পতাকার ওপরে হলুদ ঘষা হয়েছিল। ঐতিহাসিক ভুল। তবে জেলার সাহেব বিচক্ষ্ন ব্যাক্তি, উনি এইরকম “ঐতিহাসিক” কিছু ভুল মাঝে মাঝে করে থাকেন কিন্তু পরে শুধরে নেওয়ারও চেষ্টা করেন। অনেক সমীক্ষা করে এবারের নির্বাচনে সুরমা ভুপালীকে সাথে নিয়ে লড়াইয়ের ময়দানে নেমেছেন জেলার সাহেব, যদি কিছু হারানো মাটি ফিরে পাওয়া যায়। এই সুরমা ভুপালীর কাছে রামগড়ের অনেক খাস খবর থাকে। উনি এখন প্রায় অথর্ব, সারা শরীরেরই কিছু না কিছু রোগ বাসা বেধেছে, কিন্তু দীর্ঘ সত্তর বছর এই উনিই রামগড়ের যাবতীয় সুখ-দুঃখের খবর রাখতেন, এর কথা ওকে লাগিয়ে গ্রামের শান্তি বজায় রাখতেন। কিন্তু গব্বর যবে থেকে ওই “জয় হড়িম্বা” শ্লোগানে আর খৈনী খাইয়ে সবাইকে নিজের দিকে টেনে নিয়েছে, সুরমা ভুপালীর শেষের দিন শুরু হয়ে গিয়েছে – অনেকেরই এরকম মতামত!!
মা-মাটি-মানুষ সবাই এখন রামগড়ের উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে, নোটবন্দীতে কারুর এখন কিছু আসে যায় না, গব্বর সবার ব্যাংকে পনেরো লাখ টাকা ফেলে দিয়েছে, জয়-ভীরু এখনো মিনমিন করে হলেও “ইয়ে দোস্তী, হাম নেহী তোড়েংগে..” গেয়ে যায়, পেট্রোলের দাম সেঞ্চুরীর দোরগোড়ায় চলে যাওয়ায় ওরা আজকাল বাইকে খুব একটা আর চড়তে পারে না…ধন্নো এখনো বিশ্বস্ততার ঘাস আর বিচালী খেয়েই টাঙা টানছে, কিন্তু চারদিকে এখন এত ‘বেসুরো’ কথাবার্তার মাঝে কে যে কখন কোন গ্রামে হাওয়া খেতে যাচ্ছে সেটা বুঝতে রামগড়ের আমজনতার খুবই মুশকিল হচ্ছে। তুলসী তলায় প্রদীপ জ্বেলে সবাই সন্ধ্যেবেলা এখন টিভীর সামনে।
আপনারাও তাই করুন, আমি তো আছিই, মাঝেমাঝে বিশেষ বিশেষ খবর এনে দেব এক্কেবারে খোদ রামগড়ের কেন্দ্রস্থল থেকে….দেখতে থাকুন “মিনিট খানেক সংগে কুমন”….জয় হিড়িম্বা!!!
আমার এই লেখা ফেব্রুয়ারী ২০২১ “সিনেমাময় জীবন” সিরিজের ১৬ নম্বর গল্প।
Add comment