সাহিত্যিকা

সন্দেশী’র চোখে সত্যজিৎ রায় – দীপক চক্রবর্ত্তী

দীপক চক্রবর্ত্তী, ১৯৭৬ সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং

কোনও বঙ্গসন্তান, আজকাল যাঁদের ঢং করে, সহজ সংক্ষিপ্ত করে, “বং” বলা হয়ে থাকে, তাঁদের কাউকে যদি কেউ কখনও সত্যজিৎ রায়ের সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করেন, তাহলে চোখ বন্ধ করে, নিশ্চিত করেই বলে দেওয়া যেতে পারে যে সবাই চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের কথাই বলবেন। আরও নিশ্চিত যে তাঁরা সকলেই ওঁনার নামের বানানটা ‘সত্যজিত’ লিখবেন।

ওঁনার যে আরও কতগুলো পরিচয় আছে সেই কথা বেশীরভাগ লোকেই জানেন না।

১৯৬১ সাল, আমাদের সাউথ পয়েন্ট স্কুল থেকে আমাদের সবাইকে একটা লিফলেট দেওয়া হয়েছিল, বাড়ীতে মা-বাবাকে দেওয়ার জন্য। আমার জানা আরও বেশ কিছু স্কুলেও এই রকম লিফলেট বিলি হয়েছিলো। সেখানে ‘সন্দেশ’-এর গ্রাহক হওয়ার অনুরোধ, আর এর জন্য কি কি করতে হবে, সেই সমস্ত তথ্য দেওয়াছিল। সেই সময় সন্দেশ বলতে তো তখন আমরা একটি বিশেষ মিষ্টি’র কথাই জানতাম, তাই সেই মিষ্টি’র কথা মনে করেই, প্রতিমাসে সন্দেশ খেতে পাওয়া যাবে ভেবে নিয়ে, সযত্নে সেই কাগজটা বাড়িতে নিয়ে গিয়ে, হাসি হাসি মুখ করে, বাবা’র হাতে দিয়েছিলাম। তারপরের দিনই অন্যরকম এক ‘সন্দেশ’ দেখতে পেলাম এবং তারপর প্রতিমাসেই আসতে থাকল ‘সন্দেশ’। সত্যজিৎ রায় এবং সুভাষ মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত “ছোটদের সচিত্র মাসিকপত্র সন্দেশ”, এবং আসামাত্রই আমাদের ভাইবোনেদের কাজ ছিল সেটা আক্ষরিক অর্থেই গোগ্রাসে খাওয়া।

এর কয়েকদিন পরে জেনেছিলাম যে সন্দেশ-এর প্রথম প্রকাশ হয় ১৯১৩ সালের এপ্রিল মাসে পয়লা বৈশাখে, বাংলা সাল ১৩২০। সন্দেশ-এর প্রথম সম্পাদক উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী তাঁর নিজের ছাপাখানায়, সম্পূর্ণ নিজের খরচে ছোটদের জন্য এই পত্রিকাটি প্রকাশ করেন। প্রথম সংখ্যায় তিনি লিখেছিলেন, “আমরা যে সন্দেশ খাই তার দুটি গুণ আছে। উহা খাইতে ভাল লাগে আর উহাতে শরীরে বল হয়। আমাদের এই যে পত্রিকাখানি ‘সন্দেশ’ নাম লইয়া সকলের নিকট উপস্থিত হইতেছে, ইহাতেও যদি এই দুটি গুণ থাকে – অর্থাৎ ইহা পড়িয়া যদি সকলের ভাল লাগে আর কিছু উপকার হয়, তবেই ইহার সন্দেশ নাম সার্থক হইবে।“

এর আগে ছোটদের জন্য আরও দুটি পত্রিকা বেরিয়েছিল, প্রথমে “সখা ও সখী”, সম্ভবতঃ বাংলা ভাষায় প্রথম শিশুদের জন্য পত্রিকা এবং তার কয়েক বছর পরে “মুকুল”। দুটিরই প্রধান উদ্যোক্তা উপেন্দ্রকিশোর এবং লেখকদের তালিকার পুরোভাগে ছিলেন তিনি ও তাঁর পরিবারের অন্যান্যেরা। স্বাভাবিকভাবেই জানতে ইচ্ছা হবে এই উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী কে ছিলেন? তাঁর ছোটদের জন্য লেখা বিভিন্ন গল্পের বইয়ের অন্যতম “টুনটুনিরগল্প”, যা এখনও ছোটদের কাছে জনপ্রিয়। এঁনার লেখা “গুপী গাইন বাঘা বাইন” গল্প নিয়ে সত্যজিৎ রায় ছোটদের জন্য সিনেমা বানিয়েছিলেন। এই উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী হচ্ছেন সত্যজিৎ রায়ের ঠাকুর্দা।

সন্দেশ-এর প্রকাশের সাথে বাঙলা ভাষায় শিশুসাহিত্যে এক নতুন যুগের সূচনা হয়। বাংলা ১৩২১ সালের একটি সংখ্যায় প্রকাশিত হ’ল এক উদ্ভট কবিতা যা আজও লোকের মুখে মুখে ফেরে। “হাঁস ছিল, সজারু, ব্যাকরণ মানি না, হয়ে গেল হাঁসজারু কেমনে তা জানিনা”, সুকুমার রায়ের “খিচুড়ি”। “আবোলতাবোল” সিরিজের জন্য লেখা প্রথম কবিতা। সুকুমার রায় হলেন উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী’র ছেলে এবং সত্যজিৎ রায়ের বাবা। উপেন্দ্রকিশোর মারা যাওয়ার পর সুকুমার রায় সন্দেশ-এর হাল ধরেন, কিন্তু কালাজ্বরে আক্রান্ত হয়ে ১৯২৩ সালে সুকুমার রায় মারা যাওয়ার পরে সন্দেশ পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ হয়ে যায়।

১৯৬১ সালে সত্যজিৎ রায়, তাঁর মা সুপ্রভা রায়ের ইচ্ছা’র মর্যাদা দিয়ে কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে নতুন ভাবে সন্দেশ পত্রিকা বের করলেন। তার ভূমিকা লিখেছিলেন, সত্যজিৎ রায়ের মেজপিসি, পুণ্যলতা চক্রবর্তী। তিনি লিখেছিলেন “এতদিন পরে সন্দেশ আবার এসেছে, কত আশা আর আনন্দের সঙ্গে তাকে আদরে বরণ করছি। আবার সন্দেশ ঘরে ঘরে নির্মল হাসি আর আনন্দের ভাণ্ডার খুলে দিক, হাসি ও আনন্দের মধ্যে দিয়ে ছেলেমেয়েদের জ্ঞানবুদ্ধি ফুটিয়ে তুলুক, তাদের মনের সুকুমার বৃত্তিগুলি বিকশিত করে দিক।“

সত্যজিৎ রায় তাই, ছোটদের জন্য যে ভাববেন, সেটাই স্বাভাবিক। আর তাই তাঁর কলমে আমরা পাই ছোটদের জন্য লেখা বিভিন্ন ধরণের গল্প, অসংখ্য কল্প-বিজ্ঞান, গোয়েন্দা ফেলুদা’র নানান গল্প, যেখান থেকে আমরা ওঁনাকে একজন শিশু সাহিত্যিক হিসাবে জানতে পারি।

ওঁনার সম্পাদনায় নতুন ভাবে প্রকাশিত সন্দেশ পত্রিকায় পাঠকদের নানান ভাবে ভাবতে শেখানো হ’ত। আমরা যারা সন্দেশী, অর্থাৎ তৎকালীন সন্দেশ পত্রিকা’র গ্রাহক এবং পাঠককূল তাদের উৎসাহিত করা হ’ত নতুন কিছু ভাবতে এবং লিখতে। সন্দেশ-এর গ্রাহক এবং পাঠকদের জন্য একটা আসর ছিল “হাত পাকাবার আসর”। সেখানে আমরা অনেকেই লেখা পাঠাতাম। ছাপা হ’ত আবার হ’তনা। কখনও কখনও আবার সেই লেখা সম্পাদিত হয়েও বের হ’ত। এই আসরে পড়া একটা কবিতা খুব সম্ভবতঃ বাঙলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় লেখা – “এক যে ছিল সৈনিক, শত্রু মারে দৈনিক, একদিন সে বললে হেঁকে, সবাই আমার সই নিক।“

এছাড়াও ছিল জীবন সর্দারের “প্রকৃতি পড়ুয়ার দপ্তর”, যার স্লোগান ছিল “চোখ, কান, হাত, মাথা। আর চাই দু’টো খাতা”। আজকের অনেক বাঙ্গালী প্রকৃতি এবং পক্ষীবিশারদের হাতে খড়ি এই প্রকৃতি পড়ুয়ার দপ্তরেই।

কিশোর মনকে বিকশিত করার জন্য এই সন্দেশ পত্রিকাতেই আমরা পেয়েছিলাম শরদিন্দু বন্দোপাধ্যায়ের সদাশিবকে। সাহসী সদাশিব শিবাজীর সৈন্য দলে যোগ দিয়ে খুবই অল্প সময়ে তাঁর বুদ্ধি এবং সাহসের পরিচয় দিয়ে সকলের নজরে পড়ে যায়। এই গল্পগুলিতে সঠিক ঐতিহাসিক তথ্য, স্বদেশ প্রেম ও অ্যাডভেঞ্চারের সঙ্গে ভাষার সজীবতা আর রসবোধ, আমাদের কিশোর মনকে কল্পনায় সেই রুক্ষ, পাহাড়ি সপ্তদশ শতাব্দীর মারাঠা দেশে নিয়ে যেত।

সত্যজিৎ রায়ের পিসতুতো বোন, বেথুন কলেজের প্রিন্সিপাল নলিনী দাস, পরবর্ত্তী কালে সন্দেশের সম্পাদকও হয়েছিলেন, তিনি চারজন কিশোরীকে নিয়ে গোয়েন্দা গল্প লিখলেন “গোয়েন্দা গণ্ডালু”। তাঁরা স্কুলের হোস্টেলে থেকে বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে যেত এবং নানান ঘটনায় জড়িয়ে পড়ত। তাঁর লেখা এই ‘গোয়েন্দা গণ্ডালু’ মেয়েদের মনে ভয় ভাঙ্গাতে এবং প্রত্যুৎপন্নমতি’র সাথে সমস্যা সমধানের রাস্তা দেখায়। আর সত্যজিৎ-এর পিসি স্বনামধন্যা লেখিকা লীলা মজুমদার তো ছিলেনই। তাঁর লেখা ‘টং লিং’ আমাদের সন্দেশের পাতা’র মধ্যেই আটকে রাখত।

মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে যে সন্দেশ মাসিকপত্রে এমন কি থাকত, যার জন্য আমরা সন্দেশ পড়তে ভালোবাসতাম? থাকতো সব কিছু – গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, ছড়া, শিকার কাহিনী, গোয়েন্দা গল্প, এমন কি রূপকথাও। অ্যাডভেঞ্চার, ইতিহাস, বিজ্ঞান আর তাদের ফাঁকে ফাঁকে ম্যাজিক, ধাঁধাঁ, হেঁয়ালি, ছবি আর শব্দের খেলা, কার্টুন। এছাড়াও বাংলা’র নানান প্রাচীন ঘরোয়া খেলা এবং দেশ-বিদেশের অন্যান্য আরও নানান খেলা সম্বন্ধেও আমরা এই সন্দেশ পত্রিকাতেই জানতে পারি। সত্যজিৎ রায়ের ব্যক্তিগত নজরদারীতে সন্দেশ সেই সময়কার কিশোর-কিশোরী এবং ছোটদের খুবই পছন্দসই মাসিক পত্রিকা হয়ে উঠেছিল। কোনও একটি সংখ্যায় সত্যজিৎ রায় শুরু করেছিলেন চিত্রনাট্য লেখার প্রতিযোগিতা, দেওয়া হয়েছিল একটা গল্পের কাঠামো। পরের সংখ্যাগুলিতে ছাপা হল পাঠক-পাঠিকাদের লেখা সেরা তিনটি চিত্রনাট্য। এবং সত্যজিৎ রায় সহজ ভাষায় উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দিলেন কিভাবে সেই চিত্রনাট্য অবলম্বনে চলচ্চিত্র নির্মাণ হয়, কিভাবে এক শট থেকে অন্য শটে, দৃশ্য থেকে দৃশ্যান্তরে যেতে হয়।

আমরা যখন সত্যজিৎ রায়কে সিনেমা জগতের জ্যোতিষ্ক বলে ভাবি, তখন অনেকেরই খেয়াল থাকেনা ওঁনার স্কেচিং আর ছোটদের জন্য সাহিত্য রচনা। একটা বড় সত্য এই যে সন্দেশ-এর মাধ্যমেই আমাদের প্রাপ্তি লেখক সত্যজিৎকে। পরে অবশ্য আরও অন্যান্য পত্রিকায় তিনি লিখেছেন। ১৯৬১ সালে (বাংলা ১৩৬৮ সালের আশ্বিন, কার্তিক, অগ্রহায়ন মাসে) শিশু এবং কিশোরদের জন্য ধারাবাহিকভাবে আমরা সন্দেশ পত্রিকায় পেলাম বাঙলা কল্প-বিজ্ঞান গল্পের অন্যতম  চরিত্র, সত্যজিৎ রায় সৃষ্ট, বিজ্ঞানী এবং উদ্ভাবক স্কটিশ চার্চ কলেজের প্রবীণ অধ্যাপক ত্রিলোকেশ্বর শঙ্কু’র প্রথম মহাকাশ যাত্রা “ব্যোমযাত্রীর ডায়েরী”। ডায়েরি যেমনভাবে লেখা হয়, তারিখ দিয়ে, সেইভাবেই প্রোফেসর শঙ্কুর ডায়েরি লেখা হয়েছে। তার সাথে আছে সত্যজিৎ-এর নিজের হাতে আঁকা ছবি। এই গল্পে আমরা প্রোফেসর শঙ্কু’র তৈরী রোবোট বিধুশেখর-এর সাথেও পরিচিত হই এবং তার যান্ত্রিক গলায় ‘ধনধান্য পুষ্প ভরা’ গানটা শুনি। শুধু তাই নয়, মঙ্গল গ্রহে তাঁদের মহাকাশযান নামার পরে মঙ্গল গ্রহের প্রাণীদের  আক্রমণের হাত থেকে বিধুশেখর-ই তার উপস্থিত বুদ্ধি দিয়ে মঙ্গল গ্রহ থেকে সবাইকে নিয়ে পালিয়ে আসে। এখান থেকেই প্রোফেসর শঙ্কু সিরিজের শুরু, আমরা আজ যখন রোবোট এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্ত্বা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করছি, তা সত্যজিৎ রায় তাঁর গল্পের পাঠকদের জন্য ১৯৬১ সালেই সৃষ্টি করে বসে আছেন।

বাংলা ১৩৬৮ সালের মাঘ মাসের সন্দেশ পত্রিকায় পেলাম “বঙ্কুবাবুর বন্ধু”। এই গল্পটি নিয়ে যেটা খুবই চর্চা’র মধ্যে আছে, তা হ’ল বঙ্কুবাবু’র বন্ধু অ্যাং-এর সঙ্গে স্টিভন স্পিলবার্গের “এলিয়েন”-এর মিল। পরবর্তীকালে যেটা জানা গেছে সংক্ষেপে তা হ’ল – ১৯৬৬ সালে তিনি এবং ‘আশ্চর্য’ পত্রিকার সম্পাদক অদ্রীশ বর্দ্ধন, দুইজনে মিলে পৃথিবী’র প্রথম “সাইন্স ফিক্‌শন্‌ সিনে ক্লাব” তৈরী করেন। সেই সূত্রেই ১৯৬৬ সালে তাঁর আলাপ হয় আর্থার সি ক্লার্কের সঙ্গে এবং তাঁর মারফৎ শ্রীলঙ্কার চলচ্চিত্র প্রযোজক মাইক উইলসনের। তিনি সত্যজিৎ রায়ের কাছ থেকে তাঁর লেখা “এলিয়েন”-এর চিত্রনাট্য শুনে সেটা নিয়ে চলচ্চিত্র করবেন বলে ঠিক করেন এবং সেই অনুযায়ী স্কেচ্‌ সমেত চিত্রনাট্য লিখে উইলসনকে দেন। উইলসন সেইটি আবার কলম্বিয়াকে দেন। কোনও অজানা কারণে সেই সিনেমাটি তখন আর হয়নি। কিন্তু, যখন স্পিলবার্গ তাঁর তিনটে ছবি বানান, তখন ক্লার্ক থেকে আরও অনেকেই সত্যজিৎ রায়ের গল্পের সাথে অনেক মিল খুঁজে পান, শুধু তাই নয়, ভিনগ্রহের প্রাণীদেরও একদম হুবহু সত্যজিৎ রায়ের স্কেচের সঙ্গে মিল খুঁজে পান।

১৯৬৫ সালে এই সন্দেশ পত্রিকায় আমরা পেলাম দার্জিলিং এর পটভূমিকায় লেখা “ফেলুদার গোয়েন্দাগিরি”, ব্যোমকেশ বক্সী’র মতনই আরও একজন গোয়েন্দা, যিনি তাঁর মগজাস্ত্র ব্যবহার করেই অপরাধী শনাক্ত করতেন। এই মগজাস্ত্রের প্রয়োগে তিনি কখনও বিরত হ’ন নি। তিনি হচ্ছেন প্রদোষ চন্দ্র মিত্র, যাঁকে আমরা ফেলুদা বলেই জেনে এসেছি তাঁর খুড়তুতো ভাই তোপসে ওরফে তপেশ রঞ্জন মিত্রের মাধ্যমে, যিনি ফেলুদা’র গোয়েন্দাগিরির সব গল্প আমাদের কাছে বলেছেন। পরবর্তীকালে ওঁনাদের সাথে যোগ দিয়েছিলেন সত্যজিৎ রায় সৃষ্ট আরও একটি অনবদ্য চরিত্র, যাঁকে ছাড়া ফেলুদা আর তোপসেকে ভাবাই যায় না। তিনি হলেন গোয়েন্দা গল্প লেখক ‘জটায়ূ’, ওরফে লাল মোহন মিত্র।

সন্দেশ ও অন্যন্য পত্রিকায় সত্যজিতের কলমে আমরা পেয়েছি আরও তিনটি উল্লেখযোগ্য চরিত্র প্রফেসর হিজিবিজিবিজ, তারিণীখুড়ো, ও অভিনেতা অংশুমান। আর পেয়েছি নানান ধরণের অলীক গল্প, যেমন একটি গাছের ক্ষিদে (সেপ্টোপাসের খিদে, সন্দেশ, বৈশাখ, ১৩৬৯), টেরোড্যাকটিলের ডিম (সন্দেশ, ফাল্গুন ১৩৬৮), একটি গল্প যেখানে মানুষ ধীরে ধীরে সাপ হয়ে গেলো (খগম, ফাল্গুন-চৈত্র ১৩৭৯), ফটিকচাঁদ (আনন্দমেলা, পূজাবার্ষিকী, ১৩৮২, এই গল্প নিয়ে সত্যজিৎ সিনেমাও করেছেন), ইত্যাদি একশো’র ও বেশি কিশোর সাহিত্যের গল্প।

গুপী গাইন বাঘা বাইন সিনেমা’র পরের দুটি সিনেমা ‘গুপী বাঘা ফিরে এল’ আর ‘হীরক রাজার দেশে’ গল্প দু’টিও সত্যজিৎ রায়ের নিজেরই লেখা। এছাড়াও আধিভৌতিক, ভৌতিক এবং নানান অলীক গল্পও আমরা তাঁর লেখনী’র থেকে পেয়েছি।

‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’ সিনেমা’র পরের দুটি সিনেমা ‘গুপী বাঘা ফিরে এল’ আর ‘হীরক রাজার দেশে’ গল্প দু’টিও সত্যজিৎ রায়ের নিজেরই লেখা। এছাড়াও আধিভৌতিক, ভৌতিক এবং নানান অলীক গল্পও আমরা তাঁর লেখনী’র থেকে পেয়েছি।

সন্দেশ ছাড়াও সত্যজিৎ রায় অন্যান্য নানান সাহিত্য পত্রিকায় অনেক গল্প লিখেছেন এবং সেখানে নানান চরিত্রের সৃষ্টিও করেছেন, যেগুলো আমি এখানে আর উল্লেখ করছি না।

ছোটদের সচিত্র মাসিকপত্র সন্দেশ-এর মাধ্যমে আসলে সত্যজিৎ রায় বাঙ্গালী ছেলেমেয়েদের কি শেখাতে এবং ভাবাতে চেয়েছিলেন, সেটা আমরা সন্দেশ পত্রিকার প্রথম কুড়ি বছরের প্রকাশিত লেখা ও ছবি দিয়ে বের করা এক নির্বাচিত সংকলনের ভূমিকায় ওঁনার পিসিমা লীলা মজুমদারের লেখা থেকেই জানতে পারি। তিনি জানিয়েছেন – “ছোটদের দেখাতে চাই এই জীবনটা কত ভালো। জানাতে চাই ব্রহ্মাণ্ডের কোথায় কি ঘটেছে, ঘটছে, ঘটতে যাচ্ছে। মানুষের মত মানুষ দেখাতে চাই। এমন মানুষ যাদের সাহস আছে, যারা ভালোকে ভালো আর মন্দকে মন্দ বলে। যারা দলাদলির বাইরে; যারা ঘৃণা করে শুধু মিথ্যাকে নিষ্ঠুরতাকে আর কুঁড়েমিকে। বাদ দেয় যত রাজ্যের ন্যাকামি আর ঢং। যারা বিশ্বপ্রকৃতিকে তার ন্যায্য জায়গা দিতে প্রস্তুত। যাদের মন উদার। এত সবের সঙ্গে আমরা পাঠকদের খুশিও করতে চাই। খুশি করতে না পারলে আমাদের সব চেষ্টাই বৃথা।”

Sahityika Admin

1 comment

  • Very well done. After so many years , seeing “Sahityika” again I felt so delighted. It takes a lot of work to keep something alive. Many thanks to this generation for their effort. PinakiChakrabarti. Civil 1961. 5-1-2024.
    PS: I am a retired professor. I left india in 1964. However, I visited BEC many times. Presented my lectures to our CE department , and to other Indian Engineering colleges and Indian conferences. Best wishes to all.