প্রদীপ ভৌমিক, ১৯৭৪ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং
রবিঠাকুর ও সত্যজিৎ রায় একই মাসে জন্মগ্রহন করেছিলেন। রবিঠাকুর ৭ই মে ১৮৬১, আর সত্যজিৎ রায় ২রা মে ১৯২১। প্রায় ষাট বছরের পার্থক্য। রায় বাড়ীর সঙ্গে রবিঠাকুরের সম্পর্ক উপেন্দ্র কিশোর রায়চৌধুরীর সময় থেকেই। সুকুমার রায়ের মৃত্যুশয্যায় রবিঠাকুর নিজে তাঁকে গান শোনাতে এসেছিলেন। সুকুমার রায়ের মৃত্যুর পর রবিঠাকুর শান্তিনিকেতনে শোকসভার আয়োজন ও পৌরহিত্যও করেছিলেন।
প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে B.A পাশ করে সত্যজিৎ কলকাতায় M.A পড়তে চাইলেন। ইচ্ছে মহানগরে চলচ্চিত্রের সঙ্গে যোগাযোগ ও কলকাতার শিল্পসংস্কৃতিপ্রিয় বুদ্ধিজীবী সমাজের সান্নিধ্যে থাকা। কিন্তু মা সুপ্রভা রায়ের ইচ্ছেয় উনি শান্তিনিকেতনে ফাইন আর্টস পড়তে যান। রবীন্দ্রনাথ তখন জীবন সায়াহ্নে। সত্যজিৎ প্রায় ১৮ মাস কলাভবনের ছাত্র ছিলেন যেখানে তিনি নন্দলাল বসু ও বিনোদ বিহারী মুখার্জীকে শিক্ষক হিসাবে পান। আঁকা ও দেখার চোখ’ তখন থেকেই তাঁর খুলতে শুরু করেছিল।
যদিও আমার লেখার বিষয় রবিঠাকুর ও সত্যজিৎ রায়, তবু সত্যজিৎ ও পথের পাঁচালী সম্বন্ধে আলাদা করে দু’চার কথা না লিখে পারছি না। ১৯৪৯ সালে সত্যজিৎ ফ্রান্সের বিখ্যাত চিত্রপরিচালক জঁ রেনোয়ার সঙ্গে পরিচিত হন যখন উনি ‘The river’ চলচ্চিত্রের জন্য আমাদের দেশে শুটিং করতে আসেন। জঁ রেনোয়া আমাদের গ্রামের কলাগাছ, কলসি কাঁখে মেয়েদের জল আনা, লাল কৃষ্ণচূড়া, গ্রামের সাধারন মেয়েদের শাড়ি পরার ধরন, ইত্যাদি দেখে পুলকিত হয়েছিলেন। সত্যজিৎ তখন জঁ- রেনোয়ার সহকারী হিসাবে কিছু কাজও করেন, আর বিভূতিভূষন বন্ধ্যোপাধ্যায়ের ‘পথের পাঁচালী’-র স্ক্রিপ্ট নিয়েও আলোচনা করেন। এরপরেই রেনোয়া সত্যজিৎকে চলচ্চিত্র পরিচালনার ব্যাপারে উৎসাহ দেন। ১৯৫০ সালে D.J. Keymer কোম্পানির কলকাতা অফিস থেকে সত্যজিৎকে লন্ডনের হেড অফিসে ৬ মাসের জন্য পাঠানো হয়। এবং সত্যজিৎ এই ৬ মাসে লন্ডনে থাকার সুযোগে প্রায় ৯৯ টা ছবি দেখেন। ইতালির পরিচালক Vittorio De Sica’s চলচ্চিত্র ‘Bicycle Thieves’ ছবিটা দেখার পর হল থেকে বেরিয়ে এসে ঠিক করেন তিনি চিত্রপরিচালকই হবেন। ‘পথের পাঁচালী’ স্ক্রিপ্ট তৈরি ছিলো, কিন্তু কোন প্রযোজক পাওয়া গেল না। সত্যজিৎ নিজেই প্রযোজনার কাজে হাত দিলেন। নিজের কিছু ও বন্ধুদের থেকে কিছু টাকা ধার করে শুটিং শুরু হলো। স্ত্রী বিজয়া রায়ের গহনা ও নিজের জীবনবীমার কাগজপত্র বন্ধক দিয়ে কিছু টাকার ব্যবস্থা করে শুটিং করলেন। এমনি করেও বেশিদিন চলল না। শুটিং বন্ধ হয়ে গেল। আত্মীয় ও বন্ধুরা উপদেশমতন মুখ্যমন্ত্রী বিধান রায়ের সাহায্য চাইলেন। তখন সরকারের Road Development -র ফান্ড থেকে ‘পথের পাঁচালী’-র জন্য টাকার ব্যবস্থা করার পর শুটিং শুরু ও শেষ হলো।
সঙ্গীত পরিচালনা করেছিলেন পন্ডিত রবিশঙ্কর। টালিগঞ্জের ভবানী সিনেমায় পথের পাঁচালী’র প্রজেকশন দেখলেন রবিশংকর। তারপর টানা দশ ঘন্টার এক সিটিঙে রাত জেগে সুর করলেন তিনি। পথের পাঁচালীর টাইটেল মিউজিক বাজানো হয় মাত্র তিনটি যন্ত্রের সাহায্যে,- পাখোয়াজ, সেতার আর বাঁশি। এই ছবির আলোকচিত্রে ছিলেন সুব্রত মিত্র, এডিটর দুলাল দত্ত, আর্ট ডিরেক্টর বংশীচন্দ্র গুপ্ত। ১৯৫৫ সালের তৈরি পথের পাঁচালীর সাউন্ডট্র্যককে ২০০৭ সালে লন্ডনের দ্যা গার্ডিয়ান পত্রিকা list of 50 greatest film soundtracks সম্মানীত করে।
দীর্ঘ তিন বছর ধরে পথের পাঁচালীর শুটিং চলেছিল। কয়েকটি বিষয়ে সত্যজিতের দুঃশ্চিন্তা ছিল। এই তিন বছরে বয়স বাড়ার সঙ্গে অপুর গলার স্বর যাতে না ভাঙ্গে, বয়স বাড়ার সঙ্গে দুর্গার চেহারা যাতে বেশী বড়সড় না হয়ে যায় আর বৃদ্ধা ইন্দির ঠাকুরন (চূনিবালা দেবী) যেন মারা না যান। সৌভাগ্যক্রমে কোনটাই হয়নি। অবশেষে ১৯৫৫ সালে পথের পাঁচালী কলকাতায় মুক্তি পায়। আর ভারতবর্ষে চলচ্চিত্রের ইতিহাসে এক বিপ্লব ঘটে গেলো।
সত্যজিতের পথের পাঁচালীর দৌলতে ভারতীয় তথা বাংলা সিনেমা বিশ্বচলচ্চিত্রে নিজের আলাদা জায়গা করে নিল। এরপরের চার বছরে (১৯৫৫-১৯৫৯) তিনি অপুর ট্রিলজি শেষ করলেন। ‘পথের পাঁচালী’র পর ‘অপরাজিত’ ও ‘অপুর সংসার’ সিনেমা করে তিনি ভারতবর্ষ তথা বিশ্বে চলচ্চিত্রে নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করলেন।
তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু রবীন্দ্রনাথের রবীন্দ্র শতবর্ষ (১৯৬১ সালে) উপলক্ষে একটি তথ্যচিত্র নির্মানের জন্য সত্যজিৎকে অনুরোধ করেন। সত্যজিৎ ১৯৫৮ সালে এই তথ্যচিত্র নির্মানের কাজ শুরু করেন। তখন রবিঠাকুরের তিনটি ছোট গল্প পোস্ট মাস্টার, মনিহারা ও সমাপ্তি নিয়ে নিজের ‘তিন কন্য’ সিনেমার শুটিং এর পাশাপাশি ‘রবীন্দ্রনাথ’ তথ্যচিত্রটিও নির্মানের কাজ শুরু করলেন।
রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে এক ঘন্টার তথ্যচিত্র তৈরি করবার জন্য সত্যজিৎকে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছিল। কারণ কবি রবীন্দ্রনাথের থেকেও মানুষ রবীন্দ্রনাথকে জানার বা জানাবার জন্য তাঁর আগ্রহ ছিলো বেশি। তাই লন্ডন, প্যারিস, বার্লিন শহরের ওয়ার মিউজিয়াম থেকে মুভি ক্লিপ, স্থির চিত্র, খবরের কাগজের কাটিং সংগ্রহ করে আনেন। রবিঠাকুরের ছোট বা মধ্যবয়স পর্যন্ত স্থির চিত্রের সংগ্রহ খুব একটা ছিল না। মুভিক্লিপতো প্রায় ছিলই না। তবে উনার নোবেল প্রাইজ পাবার পর দেশেবিদেশ মুভি ক্যামেরা দিয়ে অনেক ছবি তোলা হয়েছিল, যা ছিল প্রধানত সভাসমিতি কেন্দ্রিক। তাই দিয়ে মানুষ রবীন্দ্রনাথকে ভাল করে জানা যায় না।
এই তথ্যচিত্র সত্যজিতের ধারাবিবরণী দিয়ে শুরু, যেখানে প্রথমেই রবীন্দ্রনাথের অন্তিম যাত্রা দেখানো হয়েছে। এখানে আমরা পাই দ্বারকানাথ ঠাকুরের পুত্র দেবেন্দ্রনাথের সাথে রাজা রামমোহন রায়ের সম্পর্ক, আর ফলস্বরূপ রবীন্দ্রনাথের মুক্ত চিন্তাধারা। আমরা দেখি কিশোর রবীন্দ্রনাথের চিন্তাভাবনার ফসল একটি অপেরা, বাল্মিকী প্রতিভা, অভিনয়ে রবীন্দ্রনাথ নিজেই, আর পাই রাগাশ্রয়ী পাশ্চাত্য ঘরানার সংগীত। শান্তিনিকেতনের পর পাই ১৯১২ সালে রবীন্দ্রনাথের বিলেত যাত্রার কিছু ক্লিপিং, যেখানে উইলিয়াম রোদেনস্টাইনের সাথে পরিচয়।
সত্যজিৎ দেখিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ কিভাবে শান্তিনিকেতন প্রতিষ্ঠার জন্য অর্থ সংগ্রহ করেন। উনার ৭০ তম জন্মদিন উপলক্ষ্যে প্রকাশিত হয় The Golden Book of Tagore যেখানে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছিলেন, Romain Rolland, Albert Einstein, গ্রীক কবি Kostis Palamas, জগদীশ চন্দ্র বসু, আর গান্ধীজী। আর এই তথ্যচিত্রের সমাপ্তিতে আছে মানবসভ্যতার উপর রবীন্দ্রনাথের শেষ বাণী, Civilization in Crisis, যেখানে দেখা যায় পাশ্চাত্য সভ্যতার ব্যর্থতার ভারে তিনি ক্ষুব্ধ ও পীড়িত। সত্যজিৎ রবিঠাকুরের শেষ বয়সের সাম্রাজ্যবাদ, ফ্যাসিসিজম ও পশ্চিমী সভ্যতার উপর হতাশা গোপন রাখে নি। একটি দৄশ্য আছে যেখানে ট্রেঞ্চ খুড়ে হাজার হাজার মানুষের মৄতদেহ কবর দেওয়া হচ্ছে। সম্ভবত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, যে যুদ্ধে ও জাতিগত বিদ্বেষে কোটি কোটি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। হিটলারের জাতিগত বিদ্বেষ ও ঘৃনায় ষাট লক্ষ ইহুদিকে Concentration Camp-এ হত্যা করা হয়েছিল। রবীন্দ্রনাথের আগে সম্ভবত আর কেউ এইভাবে সভ্যতার সংকটের কথা লিখে জানাননি। সত্যজিৎ তাঁর সেই হতাশা ও আর্ত রূপ গভীরভাবে উপলব্ধি করেছিলেন, তাই তথ্যচিত্রেও রবিঠাকুরের ‘সভ্যতার সংকটে’র বিষয়ে বিশেষভাবে জোর দিয়েছিলেন।
এই তথ্যচিত্রে সত্যজিৎ ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনে দেখিয়েছেন কিভাবে রবীন্দ্রনাথ রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন, বহু স্বদেশী গান লিখেছিলেন, রাখীবন্ধন উৎসবের আয়োজন করেছিলেন। আবার যখন হিংসা দেখেছেন আন্দোলন থেকে সরে এসেছেন। স্বদেশী দলের হিংসাতেও তাঁর বিশ্বাস ছিলনা। আবার জালিয়নাবাগের গনহত্যার প্রতিবাদে ইংরেজ সরকারের কাছে নাইটহুডের পদত্যাগ পত্র পাঠিয়ে দেন। ১৯৪০ সালে জার্মানী যখন ফ্রান্স আক্রমন ও অধিকার করলো, রবিঠাকুর তখন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ফ্র্যাংকলিন রুজভেল্টকে চিঠি লিখে যুদ্ধে অংশগ্রহন করতে অনুরোধ করেন, যাতে ফ্যাসিষ্ট জার্মানিকে পরাস্ত করা যায়। জার্মানি যখন রাশিয়া আক্রমন করে, মৃত্যুশয্যা থেকে তিনি প্রশান্ত মহলানবীশকে বলেছিলেন যে এই যুদ্ধে রাশিয়া জিতবে। রবিঠাকুর ছিলেন মানবতাবাদী, ধর্মনিরপেক্ষ। বিশ্বভাতৃত্বে বিশ্বাস করতেন। সত্যজিৎ তাঁর তথ্যচিত্রে নানান ভাবে রবীন্দ্রনাথের সেই চিন্তাভাবনাগুলিকে দেখিয়েছেন।
তথ্যচিত্রে শান্তিনিকেতনের শিক্ষাব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে। রবিঠাকুর বলেছেন নৃত্য ও সঙ্গীত ছাড়া শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পূর্ন হয় না। তথ্যচিত্রে দেখা যায় বৃদ্ধ রবিঠাকুর সাদা চুল দাড়ি নিয়ে ক্লাশের মাঝখানে বসে আছেন আর তাঁকে ঘিরে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা নাচতে নাচতে গাইতে গাইতে ঘুরছে। আর একটা দৃশ্যে দেখি নন্দলাল বসুকে। উনি ছাত্রদের একটি গাছ আঁকা শেখাচ্ছেন। মাটি থেকে শুরু করে উপরের দিকে গাছ আঁকা শেখাচ্ছেন। উনার মতে গাছ মাটি থেকে উপরে ওঠে। ইউরোপে গাছ আঁকা শেখানো হয় উপর থেকে নিচের দিকে। নন্দলাল বসু শান্তিনিকেতনে সত্যজিৎ রায়ের শিক্ষক ছিলেন। আর নন্দলাল বসু ছিলেন অবনীন্দ্র নাথ ঠাকুরের ছাত্র।
৮০ র দশকে ইউরোপের বুদাপেস্ট শহরে রবিঠাকুরের এক ভাস্কর্য মূর্তি প্রতিষ্ঠিত হয়, তৈরি করেন রামকিঙ্কর। পরে এই মূর্তি নিয়ে অনেক তর্কবিতর্ক হয়। মূর্তিতে রবিঠাকুরের মাথা ঘাড় থেকে নীচে নামানো। শরীরে বার্ধক্যের ছাপ। অনেকে নানারকম সমালোচনা করলেন। রবিঠাকুর মানবতার উজ্জ্বল প্রতীক। তাঁর সেই চেহারার সৌন্দর্য কোথায়! সত্যজিৎ খবরের কাগজে চিঠি লিখে রামকিঙ্করকে সমর্থন করেছিলেন। বলেছিলেন, রামকিঙ্কর যখন মূর্তিটি করেন তখন রবিঠাকুরের শরীর ও মন দুইই ভেঙ্গে গেছে। সুতরাং তাঁর যৌবন বা মধ্য বয়সের চেহারা আসবে কোথা থেকে! এতে প্রমানিত হয় সত্যজিতের তথ্যচিত্রে সভ্যতার সংকটে পীড়িত রবীন্দ্রনাথ অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ন স্থান পেয়েছেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের চেয়ে।
সত্যজিৎ তাঁর ‘রবীন্দ্রনাথ’ তথ্যচিত্রের সাথে সাথে তিনকন্যা সিনেমার শুটিংও চালিয়ে যান। রবিঠাকুরের তিনটি ছোট গল্প নিয়ে তৈরি ‘তিনকন্যা’ সিনেমা। প্রসঙ্গত বলা ভালো, সত্যজিৎ নিজে এই সিনেমাটির প্রযোজনা করেছিলেন। এর প্রথম গল্প পোস্টমাস্টার নির্জন গ্রামের এক পোস্টমাস্টারকে নিয়ে। গল্পটি লেখা হয়েছিল ১৮৯১ সালে যখন রবিঠাকুর পূর্ববঙ্গের শিলাইদহে থাকতেন জমিদারীর কাজকর্ম দেখাশোনার জন্য। এই পোস্টমাষ্টার সিনেমার প্রধান চরিত্রে রতন, অভিনয় করেছে চন্দনা ব্যানার্জি নামের একটি ছোট মেয়ে, যার অভিনয়ের কোন তালিমই ছিলো না। অথচ সত্যজিৎ এই ছোট্ট মেয়েটিকে নিয়েই সিনেমার কথা ভাবলেন।
Mrinmoyee and Ratan, played in the film are both newcomers. I discovered (I generally do my own talent scouting) Chandana Bannerji in a dancing school taking her first lessons in Bharatanatyam. A pair of myopic glasses couldn’t hide the glint in her eyes, and the buck tooth showed with the very first words she spoke.
রবীন্দ্রনাথের গল্পে রতনের বয়স বলা হয়েছে ১২/১৩। তখনকার সময়ে বিয়ের বয়স। সত্যজিৎ সিনেমার কারনে রতনের বয়স কমিয়ে নয় বছরের কাছাকাছি নিয়ে এলেন। রতন এখানে বালিকা। নিঃসঙ্গ ও উৎপীড়িতা। সে গ্রামের পোস্টমাস্টার নন্দবাবুর বাড়িতে কাজ করে। নন্দ কলকাতার ছেলে। বয়স সম্ভবতঃ ২৩-২৪ বছর। সত্যজিৎ অল্পবয়সী রতনকে খুঁজে নিয়েছিলেন, উদ্দেশ্য দুজনের মধ্যে যেন প্রেমের কোন রেশ না থাকে। নন্দ বন্ধুবান্ধবহীন অজপাড়াগাঁয়ে এসে প্রায়ই ম্যালেরিয়াতে ভুগতে লাগলো। সে চাকরি ছেড়ে কলকাতার বাড়িতে চলে যায়। রবিঠাকুরের লেখা গল্পের শেষে আছে রতনের কান্নায় ভেঙ্গে পড়া। কিন্তু সত্যজিতের সিনেমার শেষ দৃশ্যে নন্দকে দেখি সে রতনের সঙ্গে দেখা করে কিছু টাকা দিতে যায়। আর রতন তাকে গ্রাহ্য না করে একটিও কথা না বলে নতুন পোস্টমাস্টারের স্নানের জন্য বালতি করে জল আনতে চলে যায়। এখানেই সত্যজিৎ দেখিয়েছেন কিভাবে স্নেহ ভালবাসার বন্ধনটা ছিন্ন হয়ে গেলো। বাকী রইল শুধু দাসত্ব। বিষাদের সুরের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এই সিনেমার আউটডোর শুটিং হয়েছিল বর্ষাকালে। আকাশ মেঘে ঢাকা থাকতো। ছবির শুটিং হয়েছিল বোরাল গ্রাম ও তার আশেপাশের জায়গায়। এখানেই পথের পাঁচালীরও শুটিং হয়েছিল। ইন্ডোর শুটিং হয়েছিল স্টুডিয়োতে সেট তৈরি করে।
তিনকন্যা সিনেমার দ্বিতীয় পর্বে আছে মনিহারা, বলা যায় একটা ব্যর্থ প্রেমের গল্প। রবীন্দ্রানাথ এই ছোট গল্পটি লিখেছিলেন ১৮৯৮ সালে। সত্যজিৎ একই নাম দিয়ে চলচ্চিত্রটি তৈরি করেন। গল্পের মূল চরিত্র ফনিভূষন ও মনিমালিকা। অভিনয়ে কালী ব্যানার্জী আর কণিকা মজুমদার, অর্থাৎ স্টার তারকাদের নিয়ে কাস্টিং নয়।
এই সিনেমায় একটি রবীন্দ্রসংগীত আছে মনিমালিকার লিপে, গেয়েছিলেন রুমা গুহঠাকুরতা। নায়িকা কণিকা মজুমদার লিপ দিয়েছিলেন। তিনি নিজেও গান গাইতে পারতেন, কিন্তু সত্যজিৎ ছিলেন perfectionist, তাই তিনি কনিকা মজুমদারকে দিয়ে রেকর্ডিং না করিয়ে, বললেন বিজয়া রায়ের থেকে গানটা ভাল করে শিখে নিতে। এরপর কণিকা মজুমদার লেক টেম্পল রোডের বাড়িতে যেতেন বিজয়া রায়ের কাছে গানটা শিখতে। এছাড়া রুমা গুহঠাকুরতার অরিজিনাল গানের টেপও কণিকাকে দেওয়া হয়েছিল বাড়ীতে practice করবার জন্য।
এই সিনেমায় একটি দৃশ্য আছে ফুল সাজানোর কাজ করতে করতে মনিমালিকার আঙ্গুলে ছুঁচ বেঁধে যায়। শুটিং-এ কনিকার expression সত্যজিতের পছন্দ হচ্ছিলো না। তখন সত্যজিৎ কনিকাকে বোঝানোর জন্য নিজের আঙ্গুলে ছুঁচ ফুটিয়ে দিলেন। আঙুলের রক্ত দেখে তাঁর মুখের চমকটা কনিকা লক্ষ্য করলেন। এরপরই সত্যজিতের দেখাদেখি শুটিং-র সময় কনিকা নিজের আঙ্গুলে ছুঁচ ফুটিয়ে মুখের চমকট এনেছিলেন।
‘মনিহারা’ শুটিং-র সময় সমস্ত গহনা ছিল আসল, বিজয়া রায় ও সুপ্রভা রায়ের। সিনেমায় পাঁচ আঙুলে হীরের আংটি পরা কংকালের একটা হাতের দরকার হয়েছিল। শেষ দৃশ্যে আছে মনিমালিকার প্রেতাত্মা গভীর রাত্রে কংকালের হাত দিয়ে কলকাতা থেকে আনা গহনা ফনিভূষনের হাত থেকে ছিনিয়ে নেবে। কংকালের হাত বাদে মনিমালিকার সারা শরীর চাদরে ঢাকা ছিল। একজন ম্যাজিসিয়ানকে দিয়ে Special Prop দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল জীবন্ত কংকালের হাত। খুব সরু সরু স্ট্রিং দিয়ে আঙুল গুলোকে খোলা বা বন্ধ করা যেতো।
‘তিন কন্যা’ সিনেমার তৃতীয় পর্বে ‘সমাপ্তি’। রবিঠাকুর ১৮৯৩ সালে এই সফল প্রেমের গল্পটি লিখেছিলেন। গল্পের ও সিনেমার মূল দুই চরিত্র – অমূল্য ও মৃন্ময়ী। অমূল্যর চরিত্রে সত্যজিতের প্রিয় অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।
‘সমাপ্তি’ শুধু প্রাপ্তির গল্প নয়। উত্তরণেরও গল্প। অমূল্য যে বাড়িতে মেয়ে দেখতে যায়, সেই বাড়ির দেওয়ালে লক্ষ্য করা যায় ইংল্যান্ডের রাজা-রানীর ছবি টাঙ্গানো আছে। আর অমূল্যর নিজের ঘরে টাঙ্গানো আছে নেপোলিয়ানের ছবি। অনেকেরই জানা আছে নেপোলিয়ান, ইংল্যান্ডের রাজা ও কাদা – এই তিনটে বিষয়ের মধ্যে গুরুত্বপূর্ন সংযোগ আছে। নেপোলিয়ানের ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে জীবনের শেষ লড়াইটা ছিলো বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেল-র অদূরে ওয়াটারলু প্রান্তরে। যে নেপোলিয়ান অনেক কঠিন যুদ্ধে অনায়াসে জিতে এসেছেন, সেই নেপোলিয়ান ইংল্যান্ডের সামান্য সৈন্যদলের বিরুদ্ধে তুচ্ছ কারনে পরাজিত হলেন। তুচ্ছ কারনটা হচ্ছে বৃষ্টি ও কর্দমাক্ত পিচ্ছিল পথ। রনক্লান্ত নেপোলিয়ান তাঁর সমস্ত সন্মান হারিয়ে বসলেন ওয়াটারলুর কর্দমাক্ত প্রান্তরে। খুব হালকা চালে সত্যজিৎ সকৌতুক ভঙ্গিতে নেপোলিয়ান ও কাদার সংযোগটা অমূল্যর সন্মানহানির সঙ্গে এমনভাবে জুড়ে দিলেন যাতে রসিক দর্শকের কাছে নতুন মাত্রা যোগ হলো। শেষ পর্যন্ত নিজের গ্রামটাই হয়ে উঠলো ইংরাজী শিক্ষায় শিক্ষিত যুবক অমূল্যর পরাজয়ের ‘ওয়াটারলু’।
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, সত্যজিৎ তিনকন্যার ইন্টারন্যাশনাল ভার্সন বানিয়েছিলেন শুধু দুটি গল্প নিয়ে, মনিহারা বাদ দিয়ে। সত্যজিতের নিজের কথায়
There is, in fact, less dispute over the greatness of his short stories than of his poems, and the frequent comparison with Chekov is by no means an idle one. Both Postmaster and Samapti which comprise of Two Daughters, as well as good many others he wrote, bring the Russian master to mind.
I knew I would have to turn to Tagore sooner or later for film subjects. The centenary of the poet’s birth in 1961 provided an excellent excuse. Two Daughters was really as much a homage to Tagore as a fulfilment of a long felt urge to make short story films. The choice of these particular stories as against at least fifty other equally translatable ones was naturally dictated by my own temperament.
In re-reading the stories, my sympathies turned the quickest to Ratan, the wistful little waif of Postmaster, grown beyond her years, holding her grief with a stubbornness befitting an adult four times her age – and to Mrinmoyee, the rustic tomboy of Samapti whose marriage with a young scholar from the city gives rise to such hectic developments. Both these films provided opportunities for exploring the subtle nuances of human relationships that have fascinated me ever since my first film, Pather Panchali.
The main problem in Samapti, from the cinematic point of view, was to convey the fact of Mrinmoyee suddenly, almost magically, outgrowing her adolescence. Tagore conveys this in a single line of lyrical prose. One could do it with words in the film too, of course. “Mother, I think there’s something happening inside of me. I don’t want to go out and play with the boys anymore,” or words to that effect.
But such devices didn’t appeal to me; I strongly believe that the most crucial developments in a film should be conveyed as far as possible in predominantly visual terms. I write my own dialogue, and like doing it, but I still find grappling with visual problems a far more exciting task than finding the right words to put into the mouths of my characters. Thus, it was that the squirrel motif in Samapti came into being.
Aparna Das Gupta, who plays Mrinmoyee, was the daughter of a film critic friend of mine and was doing her last term at school. The rest of the cast was mainly professional. As always, I found it helped to have the pros and the non-pros playing together. The non-pros feel flattered and elated to be put on a par with the pros, while the pros, faced with the competition of untutored ease and unnaturalness, find themselves suppressing their mannerisms.
Postmaster was shot in one week in a village only five miles beyond the city limits to the south of Calcutta. When the wind blew in from the north, it brought with it the faint buzz of city traffic. And yet, there were snakes and lizards around, and insects we barely knew the names of.
For Samapti, we had to move a hundred and fifty miles to the east. The river in the film, the famous Padma, runs between Bengal and Pakistan, and if you rowed out beyond a certain point, you would be trespassing on foreign waters. We chose the rainy season because we needed muddy roads for a certain key scene.
The river was in full flow fringed with muddy water. The Padma flowed. But we found the roads to be dry. It hadn’t, we were told, rained hard enough. We prayed for rain, but it didn’t come. On the last day of our shoot, we took buckets and hosepipes and garden sprays and set about watering the road with pondwater. We did this for four hours, and then we watched the parched earth soak up each bucketful in a monstrous, unquenchable thirst. And then the shower came, the best awesome downpour you can think of, and in less than ten minutes we had all the mud and slush and puddles we needed. And we had our shots.
Acknowledgement & Thanks. It is excerpted from Satyajit Ray Miscellany – On Life, Cinema, People and Much More, edited by Sandip Ray, Penguin Random House India.
‘তিন কন্যা’ সিনেমার পর সত্যজিৎ রবিঠাকুরের গল্প ‘নষ্ট নীড়’ নিয়ে সিনেমা করলেন। চারুলতা ১৯৬৪ সালে। রবি ঠাকুর গল্পটা লিখেছিলেন ১৯০১ সালে। চারুলতা সিনেমাটি উনবিংশ শতাব্দীর নবজাগরিত বাঙালি নিয়ে সত্যজিতের সশ্রদ্ধ আলোচনা। সত্যজিতের নিজের কথায় one which has the least defects. ‘Cineaste’ ম্যাগাজিনের ইন্টার্ভিউয়ে সত্যজিৎ বলেছেন “Well, the one film that I would make the same way, if I had to do it again, is Charulata.”
চারুলতা, এবং ঘরে বাইরে, এই দুটি সিনেমায় রবীন্দ্রনাথ-সতজিৎ তৎকালীন আধুনিকমনস্কা মহিলাদের দেখাতে চেয়েছেন। “… emergence of the modern woman in the upper-class of colonial India. One can not help drawing parallels with Ibsen’s A Doll’s House.” সিনেমার শুরুতেই চারুলতা সিনেমার কবিতা পড়ছে, আর জানলার খড়খড়ির ফাঁকে অপেরা গ্লাস দিয়ে বাইরের জগতকে বোঝার চেস্টা করছে। দুটি দৃশ্যই গভীর অর্থবহ।
She is like a caged bird in her mansion. We sense her curiosity and desire to know the outside world. As she moves to the interior corridor of the house, we see her intellectual husband. He is too engrossed in a book and walks past her without even noticing her presence. She watches him as he walks away and stands reading. Charu raises her opera glasses and looks again as if he too belongs to the outside world. As Bhupati disappears from the view, she is expressionless and lets the opera glasses slip down. The camera is pulled back sharply, “like a flourish with a pen at the end of an essay …” in Ray’s words. Without a dialogue being spoken, we know Charulata is condemned to her loneliness and boredom.
Bhaskar Chattopadhyay, author and translator. His translations include 14: Stories That Inspired Satyajit Ray,
আরেকটি দৃশ্যে চারুলতা দোলনায় অমলের প্রতি নিজের অনুভূতির কথা চিন্তা করছে। প্রায় আট মিনিটের এই সিকুয়েন্সে সত্যজিৎ একটিও ডায়লগ ব্যাবহার করেন নি।
To quote from Chidananda Dasgupta, “The exquisite period flavour is Ray’s own, and distinguishes the film from the story which Tagore takes for granted. The sunlit garden, the swing, the embroidery, the floral motifs on the doors and walls, the horse-drawn carriage, the evocative settings created by [Ray’s art director] Bansi Chandragupta are, however, more than exquisite decorations; they frame the action and set it at a distance — the distance of contemplation” (The Cinema of Sayajit Ray, p39).
‘চারুলতা’ ছবির অন্যতম প্রধান আকর্ষন, এই ছবিতে ব্যবহৃত প্রাচীন আসবাবপত্র ও আভ্যন্তরীণ সজ্জাসামগ্রী। ছবির অন্তর্দৃশ্যের শুটিং করা হয়েছিল নিউথিয়েটার্স স্টুডিয়োতে। কোন বনেদি বাড়ীতে নয়। উনবিংশ শতকের কোন শিক্ষিত, রুচিশীল, ধনী পরিবারের বাড়ির আভ্যন্তরীণ সজ্জারীতি ও আসবাবপত্র কেমন হবে সেই ব্যাপারে সত্যজিতের একটা ধারনা ছিল। সেই হিসাবে উনি অনুরূপ একটি বাড়ি খুজে বের করেন। সেটি হলো উত্তর কলকাতায় মিত্রবাড়ি। বাড়িতে প্রবেশ করলে মনে হবে ঊনবিংশ শতাব্দীর কোন ধনী ব্যক্তির বাড়ি, কোন কিছুই পাল্টায়নি। ভূপতির বসার ঘরের দেওয়ালে মোড়া ছিল সুন্দর নকশা করা ওয়াল পেপার। সত্যজিৎ ও প্রধান শিল্প নির্দেশক বংশী চন্দ্রগুপ্ত সেই মিত্র বাড়িতে ওয়াল পেপারের ওপর অর্ধস্বচ্ছ পাতলা কাগজ দিয়ে নকশার হুবহু নকল করেন। তারপর সেট তৈরি করবার সময় ওয়াল পেপারের সেইমত ডিজাইন করা হয়। বসবার ঘর ও বারান্দায় বিশাল দরজার কাঁচেও দেখা যায় সুন্দর কারুকার্য। তখনকার দিনে নকশা করা কাঁচ আসতো ইউরোপের বেলজিয়াম দেশ থেকে। আজও সুন্দর কাজকর্ম করা কাঁচের সামগ্রীর জন্য দেশটা বিখ্যাত। এই ধরনের নকশা করা কাঁচ এদেশে ‘বেলোয়ারী’ কাচ বলে পরিচিত ছিল। এই কাঁচের নকশা নকল করে স্টুডিয়োর সেটে কাঁচের দরজায় ডিজাইন করা হয়।
চারু একটা রুমালের কোনে ভূপতির আদ্য অক্ষর সুতো দিয়ে নকশা করেছিল। বিজয়া রায় নিজে এই নকশাটা সেলাই করে দিয়েছিলেন। বেশির ভাগটাই তিনি বুনে দেন। বাকিটা শুটিংয়ের সময় চারুর অভিনেত্রী মাধবী মুখার্জী শেষ করেন। ছবিতে চারু পশম দিয়ে চটিজুতোর নকশা তুলেছিল, পরে অমলকে উপহার দেয়। সেই চটির নকশাও বুনে দিয়েছিলেন বিজয়া রায়। ওয়াজেদ আলী শাহর লেখা গান ‘যব ছোড় চলে লখনও নগরী’ গানটা সৌমিত্র সত্যজিতের কাছে শিখেছিলেন। সৌমিত্রর পিয়ানো বাজানোর হাতেখড়িও সত্যজিতের কাছে হয়েছিল।
রবীন্দ্রনাথের কাহিনী নিয়ে সত্যজিতের ১৯৮৪ সালের সিনেমা ঘরে বাইরে, রবীন্দ্রনাথের ১৯১৬ সালে লেখা উপন্যাস নিয়ে। প্রসঙ্গত বলা ভালো, সত্যজিৎ ১৯৪৮ সালেই এই ঘরে বাইরের স্ক্রিপ্ট লিখেছিলেন, অর্থাৎ পথের পাঁচালীরও অনেক আগে। Ray always retained a deep regard for Tagore’s work, and when, in 1948, he was planning a career in the cinema, he collaborated with a friend on a screen adaptation of one of Tagore’s novels, Ghare baire (The Home and the World). The project fell through, and some years later, rereading the script, Ray found it “an amateurish, Hollywoodish effort which would have ruined our reputation and put an end to whatever thoughts I might have had about a film career.” Ray eventually did film the novel, from a totally new script, in 1984. “The film is an insight into the consequential effect that political movements have on the life and functioning of individuals, whether it is in their interpersonal relationships, their business, or their education. Ray uses his characters to pull the spectator into a whirlwind of emotions and their consequences.“
১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ স্বদেশী আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে এই সিনেমার গল্প। সিনেমা ও উপন্যাসে নিখিলেশ, বিমলা ও সন্দীপের ত্রিকোন প্রেমের মাধ্যমে চরিত্রগুলি বিশ্লেষন করা হয়েছে। মনে করা হয় উপন্যাস বা সিনেমায় রবিঠাকুরের জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা, ব্যাক্তি স্বাধীনতা, স্বদেশী আন্দোলনের চিন্তাভাবনা মূল চরিত্র নিখিলেশের মাধ্যমে বলা হয়েছে।
চারুলতা ও ঘরে বাইরে দুটি সিনেমারই কেন্দ্রবিন্দুতে প্রেম। ‘চারুলতা’র ভূপতির চেয়ে ‘ঘরবাইরে’র নিখিলেশের বাস্তব বুদ্ধি অনেক গভীর। চারুর বাড়ানো হাতে হাত রাখতে পারেনি ভূপতি। কিন্তু নিখিলেশ অনায়াসে গ্রহন করে বিমলাকে। সমালোচকদের মতে ‘ঘরে বাইরে’ Cinematic poetry হয়ে উঠতে পারেনি ‘চারুলতা’র মত।
সিনেমায় আমরা দেখি মানুষ রবীন্দ্রনাথের পরিচয়। তাঁর মানবতা, ধর্মনিরপেক্ষতা, বিশ্বভাতৃত্ব, ব্যক্তি স্বাধীনতার পরিচয় পাই সত্যজিতের সিনেমাতে। রবিঠাকুর মানবতা ও ব্যক্তি স্বাধীনতাকে সবার উপরে স্থান দিয়েছিলেন। সত্যজিৎ রায় যথার্থ ভাবে তার চলচ্চিত্রে রবীন্দ্রদর্শনের সঙ্গে দর্শকদের পরিচয় করে দিয়েছিলেন।
পরিশেষে বলি, সত্যজিৎ রায় দেশে ও বিদেশে বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে সর্বোচ্চ সন্মান পেয়েছিলেন। তাঁর পুরষ্কারের সমস্ত তথ্য দিতে গেলে কয়েক পাতা জুড়ে লিখতে হবে। আমাদের দেশে সর্বোচ্চ সন্মান ‘ভারত রত্ন’ পেয়েছিলেন। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট কলকাতায় এসে সত্যজিতকে তাঁর দেশের Legion of Honor পুরষ্কার প্রদান করেন। Legion of Honor ফ্রান্সের সবচেয়ে বড় পুরষ্কার। ১৯৯২ সালে তিনি Oscar award পান life time achievement র জন্য। উনি তখন কলকাতায় হাসপাতালে শয্যাশায়ী। হলিউডের legendary actress Audrey Hepburn পুরষ্কারটি প্রদান করেন। সত্যজিতের Video clip করা ভাষন হলিউডের উৎসব অনুষ্ঠানে দেখানো হয়েছিল।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ
১) পাঁচালী থেকে অস্কার – অনিরুদ্ধ ধর/ উজ্জ্বল চক্রবর্তী/অতনু চক্রবর্তী।
২) দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের ইতিহাস – বিবেকানন্দ মুখোপাধ্যায়।
৩) উইকিপিডিয়া
Add comment